ইমাম সাদিক (আ)’র বিস্ময়কর কয়েকটি ঘটনা

  • মদীনায় জান্নাতুল বাকিতে ওয়াহাবিদের হাতে ধ্বংস হওয়ার আগে ও পরে ইমাম সাদিক (আ.)সহ বিশ্বনবীর (সা.) পবিত্র আহলে বাইতের চার সদস্যের মাজার

১৪৮ হিজরির ২৫ শাওয়াল ইসলামের ইতিহাসে এক গভীর শোকাবহ দিন। এই দিনে শাহাদত বরণ করেন মুসলিম বিশ্বের প্রাণপ্রিয় প্রবাদপুরুষ ইমাম আবু আব্দুল্লাহ জাফর আস সাদিক (আ.)।

 ইসলাম ও এর প্রকৃত শিক্ষা তাঁর কাছে চিরঋণী। সব ধরনের ইসলামী ও বস্তুগত জ্ঞান এবং বিশেষ করে ইসলামের ফিকাহ  শাস্ত্র বা ইসলামী আইনসহ এই মহান ধর্মের নানা দিক বিকশিত হয়েছিল মহান ইমাম হযরত ইমাম জাফর আস সাদিক (আ.)’র মাধ্যমে। তাঁর হাজার হাজার উচ্চ-শিক্ষিত ছাত্রের মধ্যে অনেক উচ্চ পর্যায়ের বিশেষজ্ঞ ও খ্যাতনামা বিজ্ঞানীও ছিলেন। রসায়ন বিজ্ঞানের জনক জাবির ইবনে হাইয়ান ছিল তাঁর ছাত্র।

ইমাম আবু হানিফাসহ সুন্নি মাজহাবের কয়েকজন বড় ইমাম ছিলেন এই নিষ্পাপ ইমামের ছাত্র।

ইসলামের সার্বিক উন্নয়নের জন্য ও এ ধর্মকে সাংস্কৃতিক বা চিন্তাগত হামলাসহ সার্বিক ক্ষতিকর দিক থেকে সুরক্ষার জন্য যা যা করার দরকার তার সবই তিনি করেছিলেন। ৩৪ বছর ধরে মুসলিম জাহানের নেতৃত্ব দেয়ার পর ১৪৭ হিজরির ২৫ শে শাওয়াল শাহাদত বরণ করেন। আব্বাসিয় শাসক মানসুর দাওয়ানিকি বিষ প্রয়োগ করে এই মহান ইমামকে শহীদ করে।

ইমাম জাফর আস সাদিক (আ.)’র অনেক অলৌকিক ক্ষমতা বা মু’জেজার ঘটনা রয়েছে। সেইসবের মধ্য থেকে আমরা এখানে কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরছি:

এক. ইমাম জয়নুল আবিদিন (আ.)’র পুত্র হযরত জাইদ (আ.) জালিম উমাইয়া শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছিলেন এবং বীরের মত যুদ্ধ করে শহীদ হন। পরবর্তীকালে তার বড় ছেলে ইয়াহিয়া (আ.)ও ইরানিদের একটি দলকে সংঘবদ্ধ করে বিদ্রোহ করে একইভাবে শহীদ হন। তার লাশও বাবার মতই শহরের দরজায় ঝোলানো ছিল। কয়েক বছর পর আবু মুসলিমের নেতৃত্বে উমাইয়াদের বিরুদ্ধে সফল গণ-বিদ্রোহের সুবাদে উমাইয়া শাসকদের পতন ঘটলে আবু মুসলিম ইয়াহিয়ার লাশ নামিয়ে এনে সসম্মানে দাফন করেন।

(জাইদ (আ.)’র কিয়ামের উদ্দেশ্য ছিল জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ও বিদ্রোহে সফল হলে ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-কে মুসলমানদের খলিফার পদে আসীন করা।)

বিদ্রোহের আগে ইয়াহিয়া (আ.) যখন খোরাসানের দিকে যাচ্ছিলেন তখন মুতাওয়াক্কিল বিন হারুন নামে ইমাম জাফর সাদিক (আ.)-‘র এক ভক্তের সঙ্গে তার দেখা হয়। মুতাওয়াক্কিল হজ করে মদীনায় ইমামের সঙ্গে দেখা করে ফিরে আসছিলেন। ইয়াহিয়া নিজ চাচা তথা ইমামের ও নিজের বাড়ীর লোকদের কুশলাদি জানতে চাইলে মুতাওয়াক্কিল যা যা জানত তা তাকে জানান। এক পর্যায়ে ইয়াহিয়া বলেন: আমার চাচা তথা ইমাম জাফর সাদিক (আ.) আমার বাবার (জাইদ-আ.’র) পরিণতি কি হবে তা জানতেন। এক পর্যায়ে ইয়াহিয়া বললেন: আমার চাচা আমার সম্পর্কে তোমাকে কি কিছু বলেছেন? মুতাওয়াক্কিল বলেন, বলেছেন কিছু অপছন্দনীয় কথা, তাই তোমাকে বলতে চাই না।

ইয়াহিয়া বললেন: তুমি কি আমাকে মৃত্যুর ভয় দেখাচ্ছ? যা কিছু শুনেছ বল।

মুতাওয়াক্কিল বললেন: তুমিও নিহত হবে তোমার বাবার মতই এবং শহরের সদর দরজায় ঝোলানো হবে তোমার লাশ।

ইয়াহিয়া তা শুনে ‘সহিফায়ে সাজ্জাদিয়া’র (ইমাম জয়নুল আবেদিন-আ’র দোয়া ও মুনাজাতের বই) একটি পাতা আমানত হিসেবে মদীনায় নিজ আত্মীয়-স্বজনের কাছে পৌঁছে দিতে মুতাওয়াক্কিলকে অনুরোধ জানান। এরপর বলেন: আমার চাচা আমার নিহত হওয়ার ভবিষ্যদ্বাণী করায় এটা তোমাকে দিলাম, নইলে কখনও তা দিতাম না… কিন্তু আমি জানি, তিনি যা বলেছেন তা সত্য। কারণ, এই আধ্যাত্মিকতা তিনি তাঁর বাবার (ইমাম বাকির-আ.) কাছ থেকে পেয়েছেন। কিছু দিন পর ইয়াহিয়ার ব্যাপারে ইমাম যা যা বলেছিলেন তার সবই ঘটেছিল। ( কাফি, খণ্ড-১, পৃ-৪৭৫, বিহারুল আনোয়ার, খণ্ড-৪৭, পৃ-৭৪, মানাকিব, খণ্ড-৪, পৃ-২২০ এবং ১২ ইমামের সংক্ষিপ্ত জীবনী, পৃ-১৪২-৪৩)

দুই. সাফওয়ান বিন ইয়াহিয়া বলেন: জাফার বিন মুহাম্মাদ বিন আশআস বলেছেন, একদিন আব্বাসীয় শাসক মানসুর ইমাম জাফর আস সাদিক (আ.)-কে জব্দ করার জন্য আমার বাবার মামাকে কিছু টাকা দিয়ে বলে: মদীনায় গিয়ে আবদুল্লাহ বিন হাসান বিন হাসানের (ইমাম হাসান-আ.’র বংশধর) সঙ্গে ও তার আত্মীয়দের সঙ্গে বিশেষ করে, ইমাম জাফর আস সাদিক (আ.)’র সঙ্গে সাক্ষাত করবে। তাদেরকে বলবে যে তুমি খোরাসান থেকে এসেছ। খোরাসানে তাঁদের (নবী বংশ তথা ইমাম পরিবারের) অনুসারীরা হাদিয়া হিসেবে তাঁদের জন্য টাকা পাঠিয়েছে। আমি রিসিপ্ট বা রসিদ নিয়ে টাকা বুঝিয়ে দিতে চাই যাতে সেই রসিদ তাদেরকে দেখাতে পারি।

আমার বাবার মামা এই মিশন নিয়ে মদীনা গেলেন এবং ইমাম ও নবী-পরিবারের উক্ত সদস্যদের সঙ্গে দেখা করে মানসুরের কাছে ফিরে আসেন। মানসুর জিজ্ঞেস করে: কি করলে?

তিনি (আমার বাবার মামা) বললেন: ”তাদের সবার সঙ্গে দেখা করেছি ও টাকাও দিয়েছি, তবে শুধু জাফর আস সাদিক (আ.) ছাড়া সবার কাছ থেকে রসিদও নিয়েছি। ইমামের কাছে যখন গিয়েছিলাম তিনি তখন মসজিদে নববীতে নামাজ পড়ছিলেন। নামাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমি তাঁর পেছনে বসেছিলাম। জাফর আস সাদিক (আ.) নামাজ শেষে আমার দিকে ফিরে বলেছেন, আল্লাহকে ভয় কর এবং নবীর (দরুদ) আহলে বাইতকে ধোঁকা দিও না। আর মানসুরকে বলবে সে যেন আল্লাহকে ভয় করে ও নবী-পরিবারকে ধোঁকা না দেয়।

বললাম, আপনার (ইমামের) ধারণাটি কি?

তিনি বললেন, সামনে এসো। এরপর যা কিছু তোমার ও আমার (মানসুর) মধ্যে কথাবার্তা হয়েছিল ও আমাকে যে মিশন বা দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল সে বিষয়ে সবকিছু এমনভাবে বর্ণনা দিলেন যেন মনে হয় তোমার ও আমার আলোচনার সময়ে তিনি আমাদের সঙ্গেই ছিলেন।

জাফার বিন মুহাম্মাদ বিন আশআস বলেন, এই ঘটনার প্রভাবেই আমরা শিয়া তথা নবীর (দরুদ) আহলে বাইতের অনুসারী হয়েছি। (বিহারুল আনোয়ার, খণ্ড-৪৭, পৃ-১২৯ এবং মানাকিব, খণ্ড-৪, পৃ-২২৫)

তিন. সাদির সাইরাফি বলেন: ইমাম সাদিক (আ.)’র কিছু সম্পদ আমার কাছে ছিল। তাঁর কাছে তা পৌঁছে দেয়ার সময় এক দিনার নিজের কাছে রেখে দেই। উদ্দেশ্য ইমাম জানতে পারেন কিনা তা পরীক্ষা করা। ইমাম বললেন: ওহে সাদির! আমার সঙ্গে খিয়ানত করলে? তোমার এই কাজের পরিণাম আমাদের থেকে দূরে সরে যাওয়া নয়কি? আমি (না জানার ভান করে) বললাম: আপনার জন্য নিজেকে কুরবানি করব, কিন্তু বিষয়টা কি?

তিনি বললেন: আমাদের ন্যায্য প্রাপ্য থেকে কিছু অংশ রেখে দিয়েছ। কারণ, তুমি আমাদের পরীক্ষা করতে চাও।

আমি বললাম: আমাকে ক্ষমা করুন, আপনি সত্যই বলেছেন। আমি চেয়েছিলাম আপনার অনুসারীরা আপনার সম্পর্কে যা বলে তা নিজেও (পরীক্ষার মাধ্যমে) জানব।

ইমাম বললেন: তুমি কি জান না, আমাদের যা যা জানার দরকার তা আমরা জেনে যাই। ……নবীদের জ্ঞান আমাদের জ্ঞানগর্ভের মধ্যে সুপ্ত ও গচ্ছিত রয়েছে। আমাদের জ্ঞান নবীদের জ্ঞানের মতই। (রেজাল কাশশি, পৃ-১৭৬)

চার: এক বর্ণনা থেকে জানা যায় কোনো এক ব্যক্তি সিরিয়ার একজন আব্বাসীয় শাসকের হাতে মৃত্যুর আশঙ্কা করছিল। এই শাসকের সঙ্গে তার সাক্ষাত করার কথা ছিল। কিন্তু সে জানতো সাক্ষাতের সময় তাকে হত্যা করবে ওই শাসক। কারণ, সে ছিল রক্তপিপাসু প্রকৃতির। যদিও বিশ্বনবীর (আ) আহলে বাইতের প্রতিও এই রাজ-কর্মকর্তার কোনো শ্রদ্ধাবোধ ছিল না, তা সত্ত্বেও ভীত-সন্ত্রস্ত এই ব্যক্তি ইমাম জাফর সাদিক (আ)’র শরণাপন্ন হয় ও তার আশঙ্কার কথা খুলে বলে। ইমাম তাকে বলেন, তার কাছে গিয়ে আমার সালাম দিবে ও বলবে যে আমি জাফর ইবনে মুহাম্মাদ সাদিকের আশ্রয়ে রয়েছি।

ওই ব্যক্তি এই আশ্বাসের ভিত্তিতে ওই সিরিয় শাসকের সঙ্গে দেখা করতে গেলে সে তাকে দেখেই তরবারি হাতে নিয়ে বলে: তুমি তাহলে নিজেই নিজ মৃত্যুকে বরণ করে নিতে এসেছো! ওই ব্যক্তি বলে: কেউ কি স্বেচ্ছায় নিজ ঘাতকের সঙ্গে দেখা করতে চায়? আমি একটি বার্তা নিয়ে এসেছি।

সিরিয় শাসক: কি সেই বার্তা? কার বার্তা?

-তা সবার সামনে বলবো না।

উপস্থিতি সবাইকে বিদায় করে দিয়ে সিরিয় শাসক বলে: এবার বলো তোমার সেই বার্তা!

– ইমাম জাফর সাদিক (আ) তোমায় সালাম দিয়েছেন ও বলেছেন তোমাকে এটা বলতে যে আমি তাঁর আশ্রয়ে আছি।

একথা শুনেই সিরিয় কর্মকর্তার মধ্যে যেন তড়িৎ প্রবাহ খেলে গেল। গায়ে দেখা গেল কাঁপন। চোখ বেয়ে নেমে এলো অশ্রু। সে তার আসন হতে নেমে নিজ আংটি ওই ব্যক্তির আঙ্গুলে পরিয়ে দেয় এবং বলে যে আমার এই সিংহাসনে তুমি বস এবং তুমি যা বলবে আমি তা-ই করব। আমি তোমারই সেবক এখন।

ওই ব্যক্তি তাকে ধন্যবাদ জানায় এবং এতটুকু সম্মান পাওয়ার পর তার কাছ থেকে আর কিছুই চাওয়ার নেই বলে জানায় ও বিদায় নেয়ার অনুমতি চায়। সিরিয় শাসক ইমামের কাছে তার সালাম পৌঁছে দিতে বলে ও তাকে বিদায় দেয়।

এর আগে পথিমধ্যে এক বিজ্ঞ ব্যক্তি তাকে দেখে বলেছিল: কোথায় যাচ্ছ! তোমার হাতের মধ্যে তো মৃত্যুর আলামত দেখছি। কিন্তু পরক্ষণেই জিহ্বা দেখে বলে: কিন্তু তোমার জিহ্বার মধ্যে এমন বাণী দেখতে পাচ্ছি যে তা পাহাড়কে বিদীর্ণ করতে বা টলিয়ে দিতে সক্ষম।

পাঁচ.

একবার এক ব্যক্তি খলিফা মানসূরের কাছে তাঁর সম্পর্কে মিথ্যা রটনা করল (যে ইমাম সাদিক মানসূরের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন)। অতঃপর মানসুর যখন হজ্বে আসল যে ব্যক্তি অপবাদ দিয়েছিল তাকে ডেকে পাঠাল এবং জাফর সাদিকের সামনে তাকে বলল, তুমি যা বলেছিলে তা সত্য প্রমাণের জন্য আল্লাহর নামে কসম করতে রাজি আছ? সে বলল, হ্যাঁ।  ইমাম জাফর সাদিক মানসুরকে বললেন, ঠিক আছে, সে যা দাবি করছে সে অনুযায়ী তাকে কসম করতে বল। মানসুর তাকে বলল, তাঁর সামনে কসম কর। জাফর সাদিক ঐ ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন এভাবে কসম কর, ‘আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতা থেকে আমি বিচ্ছিন্ন হই এবং আমার শক্তি ও ক্ষমতার আশ্রয় চাই। সত্যিই জাফর এমন বলেছেন ও এমন করেছেন।’ ঐ ব্যক্তি প্রথমে এরূপে কসম করতে রাজী হল না। পরে তা করলো। তার কসম খাওয়া সমাপ্ত হওয়া মাত্রই ঐ লোকটি মানসূরের সামনে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ল।

অন্য একটি ঘটনা এরূপ বর্ণিত হয়েছে যে, এক জালেম ব্যক্তি তাঁর দাসকে হত্যা করে। তিনি ভোর রাত্রিতে নামাজ পড়ে তার প্রতি অভিশাপ বর্ষণ করেন। তিনি এরূপ করার কিছুক্ষণের মধ্যেই ঐ জালেম ব্যক্তির মৃত্যুর কারণে তার ঘর থেকে কান্নার ধ্বনি শোনা গেল।

ছয়.

মানসুর ১৪৭ হিজরিতে হজ্বের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে মদীনায় পৌঁছায়। সে রাবি নামক এক ব্যক্তিকে ইমামের কাছে পাঠিয়ে তাঁকে তার সামনে হাজির করার নির্দেশ দিল। মানসুর তাকে বলল, আল্লাহ আমাকে হত্যা করুন যদি তাঁকে হত্যা না করি। রাবি প্রথমে মানসুরের নির্দেশকে না শোনার ভান করল যাতে হয়তো মানসুর তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে অথবা বিষয়টি একেবারে ভুলে যায়। কিন্তু মানসুর তার নির্দেশের পুনরাবৃত্তি করে বলে, তাঁকে কষ্ট দিয়ে অপমানজনক অবস্থায় আমার সামনে উপস্থিত কর। যখন ইমাম তার কাছে গেলেন সে তাঁর সঙ্গে অত্যন্ত রূঢ় আচরণ করে এবং অশোভনীয় ভঙ্গিতে বলে যে, ইরাকের লোকেরা তোমাকে নিজেদের ইমাম মনে করে এবং তোমার কাছে তাদের সম্পদের জাকাত পাঠায়। আর তাই পূর্ণশক্তি নিয়ে আমার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছো এবং সংঘাত সৃষ্টি করছো। আল্লাহ আমাকে হত্যা করুন যদি আমি তোমাকে হত্যা না করি। ইমাম সাদিক (আ.) বললেন : হে আমির (শাসক)! আল্লাহ সুলাইমান (আ.) কে নিয়ামত দিয়েছিলেন। আর তিনি তার শোকর আদায় করেছিলেন। তিনি আইয়ুব (আ.)কে বিপদাপদ দিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন। আর তিনি তাতে ধৈর্য ধধারণ করেছিলেন। হযরত ইউসুফ (আ.) এর প্রতি জুলুম করা হয়েছিল। আর তিনি তাঁর ওপর অবিচারকারীদের ক্ষমা করেছিলেন। মানসুর তখন বলল, “আমার কাছে আস। তুমি নিরপরাধ প্রমাণিত হয়েছো। তাই তোমাকে নিরাপত্তা দিচ্ছি। তুমি আমার জন্য কোন সমস্যা নও। এক আত্মীয় তার আত্মীয়দের থেকে যা নিয়েছে আল্লাহ তার থেকে অনেক বেশী তোমাকে দান করুন।” এরপর সে ইমামের হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের পাশে বসাল এবং বলল, উপহারের বক্সটি আমার কাছে নিয়ে এস। সুগন্ধি আতরের পাত্র আনা হলে মানসুর নিজের হাতে ইমামকে তা মাখিয়ে দিল ও বলল, আল্লাহর আশ্রয় ও সংরক্ষণে থাক। অতঃপর রাবিকে বলল, হে রাবি! আবা আব্দিল্লাহর উপহার ও জোব্বা তার ঘরে পৌঁছে দিয়ে এস। রাবি ইমামের কাছ জিনিসগুলো পৌঁছে দিয়ে বলল, আমি আপনার কাছে প্রথমবার আসার পূর্বে যা দেখেছিলাম আপনি তা দেখেননি। আর তারপর যা দেখলাম তা আপনি জানেন। হে আবা আব্দিল্লাহ, আপনি মানসূরের কাছে গিয়ে কি বলেছিলেন। ইমাম বললেন, “(মনে মনে এ দোয়া করেছিলাম) হে আল্লাহ, আপনি আমাকে আপনার সেই চোখ দিয়ে হেফাজত করুন যা কখনও নিদ্রা যায় না এবং আপনার অপরাজেয় দুর্গে আমাকে আশ্রয় দিন। আমার ওপর আপনার অসীম ক্ষমতা দিয়ে আমাকে ক্ষমা করুন। কারণ আপনিই আমার সেই আশার স্থল যা আমাকে ধ্বংস থেকে রক্ষা করবে। হে আল্লাহ! আপনি ঐ ব্যক্তি হতে মহান ও শ্রেষ্ঠ যাকে আমি আমার জন্য অনিষ্টকারী বলে ভয় করি। হে আমার প্রতিপালক! তার রক্তপাতের ইচ্ছাকে আপনার মাধ্যমে প্রতিরোধ করছি এবং তার কাঙ্ক্ষিত মন্দ থেকে আপনার আশ্রয় চাইছি।”

সাত.

বর্ণিত হয়েছে, যখন তাঁর কাছে এ সংবাদ পৌঁছল যে, হাকাম ইবনে আব্বাস কালবি ইমামের চাচা যাইদ (ইবনে আলী) সম্পর্কে এ কবিতাটি (ব্যঙ্গ করে) পাঠ করেছে :

আপনাদের কারণেই আমরা যাইদকে খেজুর গাছে ঝুলিয়ে হত্যা করেছি। আমরা কখনও দেখিনি কোন সৎপথপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে খেজুর গাছের কাণ্ডে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়। তখন ইমাম তাকে অভিশাপ দিয়ে বললেন, হে আল্লাহ আপনার কুকুরগুলো থেকে একটি কুকুরকে তার ওপর প্রবল করে দিন। কিছুদিন অতিবাহিত না হতেই একটি সিংহ তাকে ছিন্ন ভিন্ন করে (খায়)।

আট.

তাঁর অন্যতম কারামত তাশরী ইবনে ওয়াহাব বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, লাইস ইবনে সাদকে বলতে শুনেছি, আমি ১১৩ হিজরিতে হজ্বে গিয়েছিলাম। যখন আসরের নামাজ শেষ করে আবু কুবাইস পাহাড়ে উঠলাম সেখানে এ ব্যক্তিকে বসে দোয়া করতে দেখলাম। তিনি ‘ইয়া রাব’ ‘ইয়া রাব’ বললেন ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ তাঁর নিশ্বাসের টান ছিল। এরপর ‘ইয়া হাইয়ু’ বলা শুরু করলেন যতক্ষণ তার দম থাকে। এরপর বললেন, হে আল্লাহ আমি আঙ্গুর খেতে চাই। আমাকে আঙ্গুর দিন। আমার গায়ের চাদরও ছিঁড়ে গেছে, আমাকে বস্ত্র দান করুন। তখনও তাঁর দোয়া শেষ হয়নি দেখলাম তাঁর সামনে এক ঝুড়ি আঙ্গুর উপস্থিত দেখলাম… #

#

পার্সটুডে/মু.আ.হুসাইন/৩০

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.