এই দুনিয়ায় অাজ পর্যন্ত ১লক্ষ ২৪হাজার অাম্বিয়া এসেছেন ৷
সকল অাম্বিয়া জান্নাত থেকে কিছু না কিছু জিনিষ পেয়েছেন , বা তিনি নিজে এনেছেন ৷
যেমন , হযরত অাদম (অাঃ) জান্নাত থেকে লাঙ্গল এনেছিলেন ৷ চাষ করে খাবার জন্য ৷
এইভাবে সকল নবী রাসুল জন্য জান্নাত থেকে কিছু না কিছু জিনিষ নিয়ে এসেছিলেন ৷
অাবার নবী নন , এমন ব্যক্তিত্বের জন্যও জান্নাত থেকে মূল্যবান জিনিষ এসেছে ৷
যেমন , হযরত মা মারিয়াম (অাঃ) , তিনি নবী না হলেও তাঁর জন্য জান্নাত নিয়মিত ফল আসত ৷
এখন মূল প্রশ্ন হল ,
অামাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) জান্নাত থেকে কি এনেছিলেন ?
….এ প্রসঙ্গে অাসার পূর্বে অাসুন হযরত মুসা (অাঃ) এর জামানার….. প্রাসঙ্গিক এক ঘটনার উল্লেখ করছি ৷
হযরত মুসা (অাঃ) বণি ইসরাঈল জাতির বেশ কিছু লোককে ফেরাউনের হাত থেকে উদ্ধার করেছিলেন । যারা ছিল সে জানামায় সব থেকে লাঞ্চিত ও অপমানিত ৷ তারা ফেরাউন জাহেলিয়াতের অন্ধকারে নিমজ্জিত ছিল ৷
সেই ঘন অন্ধকার থেকে নবী মুসা (আঃ) তাদের অালোর পথে এনেছিলেন , মানবিকতার সংগ্রামের সম্মুখে হাজির করেছিলেন এবং উপহার হিসাবে তারা জান্নাত থেকে “মান্না-সালওয়া” নামক এক ধরনের খাবার পেত , সম্পূর্ন বিনা পরিশ্রমেই পেত ৷
وَظَلَّلْنَا عَلَيْكُمُ الْغَمَامَ وَأَنزَلْنَا عَلَيْكُمُ الْمَنَّ وَالسَّلْوَى كُلُواْ مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ وَمَا ظَلَمُونَا وَلَـكِن كَانُواْ أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ
অর্থাৎ –
” — আর আমি তোমাদের উপর ছায়া দান করেছি মেঘমালার দ্বারা এবং তোমাদের জন্য খাবার পাঠিয়েছি ’মান্না’ ও সালওয়া ’। সেসব পবিত্র বস্তু তোমরা ভক্ষন কর , যা আমি তোমাদেরকে দান করেছি । বস্তুতঃ তারা আমার কোন ক্ষতি করতে পারে নি , বরং নিজেদেরই ক্ষতি সাধন করেছে —।”
সুরা বাকারা / ৫৭ ।
মহান আল্লাহ কতৃক প্রদত্ত নিয়ামতের বদলা হিসাবে তাদের সংগ্রাম করতে বলা হয়েছিল ৷
কিন্ত তারা সংগ্রাম করে নি… ।
তারা উদ্বত্তভাবে বলেছিল , ” হে মুশা ! তুমি ও তোমার অাল্লাহ সংগ্রাম কর ৷” … তারা নির্লজ্জের মত এই ভাষা ব্যবহার করেছিল ৷
শুধু তাই নয় … তারা অাল্লাহপাকের পাঠানো জান্নাতি নিয়ামত বর্জন করে জন্মভূমিতে উৎপন্ন শাক সব্জি , কাঁকুড়, গম, রসুন, পিয়াজ, ডাল ইত্যাদি পেতে চেয়েছিল ৷
وَإِذْ قُلْتُمْ يَا مُوسَى لَن نَّصْبِرَ عَلَىَ طَعَامٍ وَاحِدٍ فَادْعُ لَنَا رَبَّكَ يُخْرِجْ لَنَا مِمَّا تُنبِتُ الأَرْضُ مِن بَقْلِهَا وَقِثَّآئِهَا وَفُومِهَا وَعَدَسِهَا وَبَصَلِهَا قَالَ أَتَسْتَبْدِلُونَ الَّذِي هُوَ أَدْنَى بِالَّذِي هُوَ خَيْرٌ اهْبِطُواْ مِصْراً فَإِنَّ لَكُم مَّا سَأَلْتُمْ وَضُرِبَتْ عَلَيْهِمُ الذِّلَّةُ وَالْمَسْكَنَةُ وَبَآؤُوْاْ بِغَضَبٍ مِّنَ اللَّهِ ذَلِكَ بِأَنَّهُمْ كَانُواْ يَكْفُرُونَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَيَقْتُلُونَ النَّبِيِّينَ بِغَيْرِ الْحَقِّ ذَلِكَ بِمَا عَصَواْ وَّكَانُواْ يَعْتَدُونَ
অর্থাৎ-
” — আর তোমরা যখন বললে , হে মূসা , আমরা একই ধরনের খাদ্য-দ্রব্যে কখনও ধৈর্য্যধারণ করব না । কাজেই তুমি তোমার পালনকর্তার নিকট আমাদের পক্ষে প্রার্থনা কর , তিনি যেন আমাদের জন্যে এমন বস্তুসামগ্রী দান করেন যা জমিতে উৎপন্ন হয় , তরকারী , কাকড়ী , গম , মসুরি , পেঁয়াজ প্রভৃতি । মূসা (আঃ) বললেন , তোমরা কি এমন বস্তু নিতে চাও যা নিকৃষ্ট সে বস্তুর পরিবর্তে যা উত্তম ? তোমরা কোন নগরীতে উপনীত হও , তাহলেই পাবে যা তোমরা কামনা করছ । আর তাদের উপর আরোপ করা হল লাঞ্ছনা ও পরমুখাপেক্ষিতা । তারা আল্লাহর রোষানলে পতিত হয়ে ঘুরতে থাকল । এমন হলো এ জন্য যে , তারা আল্লাহর বিধি বিধান মানতো না এবং নবীগনকে অন্যায়ভাবে হত্যা করত । তার কারণ , তারা ছিল নাফরমান সীমালংঘকারী —–।”
সুরা – বাকারা /৬১ ।
বণি ইসরাঈলগণ এর থেকেও জঘণ্য কর্মে লিপ্ত হয়েছিল .. তারা হযরত মুসা (অাঃ) এর ভাই হারুণের নেতৃত্ব বর্জন করে গরু পূজাতে লিপ্ত হয়ে উঠেছিল ৷
মহান অাল্লাহপাক এসব ঘটনা বিস্তারিতভাবে সুরা বাকারাতে উল্লেখ করে দিলেন ৷
কারন মানুষ এই সুরা অধ্যয়ন করে জানতে পারে যে , আল্লাহর রাসুল কতৃক নির্বাচিত উত্তরাধিকারীকে পরিত্যাগ করলে শেষ পর্যন্ত গোপূজা করা ছাড়া অন্য কোন উপায় থাকে না ।
সেই সাথে দয়ালু আল্লাহ এটাও চান নি যে , সর্বশ্রেষ্ঠ নবী (সাঃ) এর উম্মতের অবস্থা যেন মুসা নবীর উম্মতের মত না হয় ।
শুধু তাই নয়, …..নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মত যাতে বলদ গরুর মুখাপেক্ষী না হয়ে প্রকৃত মুমিন মুসলমান হতে পারে …তারজন্য জান্নাত থেকে দয়াল নবী (সাঃ) সমগ্র মানবজাতির জন্য সর্বোৎকৃষ্ট পুতঃপবিত্র মাসুমিন ও মাসুমগনকে সঙ্গে করে নিয়ে এলেন ৷
নারীদের জান্নাতের নেত্রী হিসাবে নিয়ে এলেন হযরত মা ফাতিমা (সাঃঅাঃ) কে ,
জান্নাত জাহান্নামের বন্টনকারী সর্দার মাওলা আলী (আঃ) ,
অার যুবকদের জান্নাতের নেতা হিসাবে নিয়ে এলেন হযরত হাসনাঈন (অাঃ) কে ,
এছাড়া কেয়ামত পর্যন্ত সমগ্র মানবজাতি বিশেষ করে মুসলমান জাতি যাতে পথভ্রষ্ঠ না হয় সেজন্যে আরও নয়জন পবিত্র ইমামগনকে নিয়ে এলেন ।
সর্বমোট বারজন পবিত্র ইমাম (আঃ) গনকে নেয়ামত হিসাবে নিয়ে এলেন ।
মহান আল্লাহ সুরা কাওসারে এই ঘোষনাটি দিয়ে দিলেন ।
কিন্ত আফসোস ! বেশীরভাগ উম্মত মহান আল্লাহ কতৃক প্রদত্ত জান্নাতের নিয়ামতকে উপেক্ষা করে নিজেদের নির্বাচিত দেশীয় নেতাকে বনু সকিফার এঁদো গলিতে বরণ করে নিল ৷
ঠিক যেভাবে মুসার উম্মত জান্নাতি বেহেশতী খাবার
” মান্না-সালওয়া ” বর্জন করে দেশীয় জন্মভূমীতে রসুন , অাদা , গম , ইত্যাদি বরন করে নিয়েছিল …
ঠিক যেভাবে মুসা নবী (আঃ) এর উম্মত হারুন (আঃ) কে পরিত্যাগ করে গরু পূজা তথা সামেরীর খপ্পরে পড়েছিল । সামেরী তাদেরকে আল্লাহর পথ থেকে সরিয়ে নিয়ে সোজা জাহান্নামের পথে নিয়ে গিয়েছিল ।
সুপ্রিয় পাঠক ,
এবারে মিলিয়ে নিন , ঠিক তেমনি ভাবে মুহাম্মদ (সাঃ) এর উম্মতও জান্নাতের নেতা-নেত্রীদের উপেক্ষা করে দেশীয় নেতা ..অাবু বকর ও উমর বা ওসমানদের বরণ করে নিল ৷
এই বনু সকীফার গর্ভ থেকে জন্ম নিল কারবালার মর্মান্তিক ঘটনা ।
এই বনু সকীফার গর্ভ থেকে জন্ম নিল মূয়াবীয়ার উমাঈয়া রাজতন্ত্র , আব্বাসীয় রাজতন্ত্র এবং বর্তমানে সালাফী ওহাবী আই এস আই এস ।
মুসা (আঃ) কতৃক মনোনীত ও নির্বাচিত হারুন (আঃ) কে পরিত্যাগ করে মুসার (আঃ) উম্মত পড়েছিল সামেরীর খপ্পরে ।
বিশ্বনবী (সাঃ) এর উম্মত ঠিক তেমনি ভাবে রাসুল (সাঃ) এর ওফাতের পরে নবীজী (সাঃ) কতৃক নির্বাচিত খলীফা বা ইমামকে পরিত্যাগ করে আরেক সামেরীর খপ্পরে পড়ল ৷
সেই যে মুশিবত শুরু হল ৷ অদ্যবধি পৃথিবীর বেশীর ভাগ মুসলমান ভয়াল সেই মুসিবত থেকে অাজও মুক্তি পেল না !
সুরা বাকারা পড়েও কিছুই উপলব্ধি করল না ৷
কবে আমাদের ঘুম ভাংগিবে !
এখনও কি ভাববেন না , বিষয়টি ।