ইমাম খোমেইনীর দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামী জাগরণ

এ.কে.এম. বদরুদ্দোজা

১৯৭৯ সনে সফলতায় পর্যবেসিত ইরানের ইসলামী বিপ্লব নিছক একটি রাজনৈতিক বিপ্লব নয়, এটি একটি আদর্শিক জাগরণ। দ্রুত ইসলামী বিপ্লবের ঢেউ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অনস্বীকার্য বাস্তবতায় পরিণত হয়। ইরানের ইসলামী বিপ্লব ক্ষমতা বদলের ঠুনকো লক্ষ্যে সংগঠিত হয়নি। বিপ্লবের নেতা তেহরানে ক্ষমতার প্রাণকেন্দ্রে  শাসনদণ্ড হাতে তুলে নেননি। তিনি স্থির হন আধ্যাত্মিক নগরী কোমে। বিপ্লবের বাতিঘর হয়ে দিতে থাকেন পথনির্দেশনা। তাঁর কোনো রাজনৈতিক প্রশাসনিক ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু তাঁর নৈতিক ও আধ্যাত্মিক নেতৃত্বই ছিল বিপ্লবের চালিকাশক্তি। সমসাময়িককালে লি কুয়ান ইউ, ড. মাহাথির মোহাম্মদ, নেলসন ম্যান্ডেলা নিজ নিজ দেশে অনেক বড় সংস্কার ও উন্নতি সাধন করেন। তাতে উপরিকাঠামো ব্যাপক বদলালেও মনন ও চেতনায় খুব বেশি পরিবর্তন আসেনি। ইমাম খোমেইনীর নেতৃত্বের অসাধারণত্ব এই যে, তিনি বিপ্লবোত্তর ইরানের ক্ষমতার হাল ধরেননি। গ্রহণ করেছিলেন রাহবার বা পথনির্দেশকের এক অনন্য ভূমিকা। তিনি দেশ শাসনের বিষয়টি যোগ্য লোকদের হাওয়ালা করে নিজে পালন করেছেন আদর্শিক নেতৃত্বের গুরুদায়িত্ব।

ইমাম খোমেইনী বিশ্বাসের অমোঘ শক্তির ওপর সর্বোচ্চ আস্থা রেখেছিলেন। দীর্ঘ প্রবাস জীবনে তিনি ইরানী জনতার আধ্যাত্মিক শক্তি ও বিশ্বাসকে শাণিত করার চেষ্টা চালিয়েছেন। কেননা, তিনি জানতেন, শক্তি ও ক্ষমতা ব্যতিরেকেই নৈতিক মূল্যবোধের অপার শক্তি মানুষকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই বাহ্যত ইরানের বাইরে অবস্থান করেও তিনি তাঁর লেখনী ও বক্তব্যের মাধ্যমে ইরানী জনতার মননে বিশ্বাসের ভীত পোক্ত করেছিলেন, তাদের চেতনায় প্রোথিত করেছিলেন ইসলামী বিপ্লবের আকাক্সক্ষা। ফলে ইরানের আপামর মানুষ ইসলামী জাগরণের স্বপ্নে জেগে ওঠে। শাহের পুলিশী রাষ্ট্র প্রভু যুক্তরাষ্টের মদদে সর্বশক্তি নিয়োগ করেও সেই জাগরণ ঠেকাতে পারেনি। ইমাম খোমেইনী বিপ্লবের বীজ বুনেছিলেন ইরানী জনতার মনন, মেধা ও চেতনায়। একটা জাতি তিলে তিলে বদলে গিয়েছিল। আর তারা বদলে দিয়েছিল ইরানকেও। ইমাম খোমেইনী ইরানকে অন্ধকার যুগে ফিরিয়ে নেননি। প্রযুুক্তি আর বিজ্ঞানচর্চায় যোজন যোজন পথ পাড়ি দিয়েছে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান। পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে ইরানের সক্ষমতা আজ বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। ইমাম খোমেইনীর দিকনির্দেশনায় ইরানের ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিজ্ঞানচর্চার প্রসার ঈর্ষণীয়। এমনকি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডেও ইরানের সাফল্য অনবদ্য। ইরানী চলচ্চিত্র বিশ্ব চলচ্চিত্রের অঙ্গনে এক বিস্ময়কর মডেল। তারজা, লিটল বার্ড অব হ্যাপিনেসের মতো চলচ্চিত্র প্রচলিত চলচ্চিত্রের আঙ্গিকে প্রচণ্ড ঝাঁকুনি দিয়ে নতুন এক দিগন্ত খুলে দিয়েছে। প্রায় ৩৫ বছর ধরে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান ইমাম খোমেইনীর নির্দেশিত পথে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, সুশাসন, নির্মল সংস্কৃতির এক উজ্জ্বল মডেল হিসেবে বিশ্বকে পথ দেখাচ্ছে।

ইমাম খোমেইনী ইসলামী বিপ্লবকে সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সারা বিশ্বের সকল প্রান্ত থেকে প্রতিধ্বনি না শোনা পর্যন্ত বিপ্লবের প্রচার অব্যাহত থাকবে। বিশেষ করে যতক্ষণ বিশ্বের কোনো না কোনো অংশে জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। তিনি বিশ্বাস করতেন সর্বত্র ইসলামী বিপ্লবের বার্তা পৌঁছে দেয়া একটি দায়িত্ব। মানবসভ্যতার প্রতি ইসলামী বিপ্লব তার দায় এড়াতে পারে না। প্রত্যেক মানুষের ইসলামী বিপ্লবের দাওয়াত পাওয়ার অধিকার রয়েছে। ইমাম খোমেইনী কখনই ভয় ও শক্তি প্রয়োগে ইসলামী বিপ্লব প্রসারের দিকনির্দেশনা দেননি। যেমনটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন কমিউনিজম রপ্তানির ক্ষেত্রে করেছে। বরং ইমাম খোমেইনী মুসলিম সত্তা ও হৃদয়কে জেগে উঠতে প্রণোদনা দিয়েছেন, বিপ্লবী সাহিত্যের উপাদানে সমৃদ্ধ হয়ে জাগরণের জোয়ার তৈরি করতে বলেছেন। বিপ্লবের ডাক যে সম্প্রসারণবাদ নয় তাও স্পষ্ট করেছেন ইমাম খোমেইনী। তিনি ইসলামী বিপ্লবের প্রচারকে একটি চিন্তাধারা বা মননের বিপ্লব হিসেবে চিহ্নিত করে সম্প্রসারণবাদের ভ্রান্ত ধারণাকে নাকচ করে দিয়েছেন। তিনি ইসলামী বিপ্লবের চিন্তাধারাকে মুসতাদআফিনের অনুসৃত পথ বলেও অভিহিত করেছেন।

ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের ইসলামী বিপ্লব এক নতুন রাষ্ট্র, নতুন সমাজ, নতুন সংস্কৃতি তৈরি করেছে। ক্ষমতা, ব্যক্তি ও সম্পদকেন্দ্রিক রাজনীতির স্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছেন আদর্শনিষ্ঠ রাজনীতিক ও প্রশাসকরা। তাঁদের মাথার ওপর আছেন রাহবার বা সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা এবং গার্ডিয়ান কাউন্সিল। ইসলামী বিপ্লবের মৌল চেতনা কেউ যাতে ব্যাহত করতে না পারে সে জন্য এই অনন্যসাধারণ ব্যবস্থা। যে কারণে ইমাম খোমেইনীর ওফাতের  পরও ইসলামী বিপ্লব অক্ষুণ্ন-সজীব। তার সুবাতাস ছড়িয়ে পড়ছে সর্বত্র। অগ্নিগর্ভ মধ্যপ্রাচ্যে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান স্বমহিমায় বিরাজমান। কেননা, ইমাম খোমেইনী ইরানী জনতার চেতনার ভিত্তিমূলে প্রোথিত করেছিলেন বিপ্লবের বার্তা। বিশ্বাসের শক্তি আর বিপ্লবী চেতনার অনন্য প্রণোদনায় ইরান বিকশিত হচ্ছে। ইসলামী বিপ্লবের বার্তা জোরালোভাবে ছড়িয়ে পড়ছে আরব-আজম সর্বত্র। এখন আর ইসলামকে পারলৌকিক ব্যাপার বলে অগ্রাহ্য করা যাচ্ছে না। খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্টকেও রমজান মাসে ইফতার পার্টি ডেকে ইসলামকে স্পেস দিতে হচ্ছে।

পৃথিবীর সকল পরাশক্তি, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের দরিদ্র জাতিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ ও শাসনের অপপ্রয়াসে লিপ্ত। জ্বালানি তেলের সরবরাহের ওপর আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র তেলসমৃদ্ধ ইরাকে দখলদারিত্ব কায়েম করেছে। অন্যদিকে কৌশলগত ভূ-রাজনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করে আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালিয়েছে। কিন্তু ইরানের বিপ্লব সে দিক থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই বিপ্লবের আদল, সংগ্রামের কৌশল এবং প্রণোদনা অন্য যে কোনো বিপ্লবের চেয়ে আলাদা। ইমাম খোমেইনী  ইসলামী বিপ্লবকে বিশ্বব্যাপী প্রচারের উদাত্ত আহ্বান  জানালেও বল প্রয়োগে বিপ্লব রপ্তানি বা প্রসারের কোনো দিকনির্দেশনা দেননি। তিনি শুধু মুসলিম বিশ্বেই বিপ্লব প্রসারের কথা বলেননি; বরং তিনি বিশ্বের সকল মুসতাদআফিন তথা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর নিকট এই বিপ্লবের বার্তা পৌঁছে দিতে বলেছেন। ইমাম খোমেইনী আরো বলেছেন, বিপ্লব ছড়িয়ে দিতে হবে সেই সব দেশে যেখানে রাষ্ট্র নির্যাতনকারীদের মোকাবিলায় দুর্বল। বরং এমন সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে যা সাম্রাজ্যবাদের দোসর, নিপীড়ক, হত্যাকারীর সরকার নয়। এক্ষেত্রে তিনি ইরানী মডেলের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। যেখানে মানুষ জেগে উঠেছে এবং সাম্রাজ্যবাদ থেকে নিজেকে মুক্ত করেছে। ইমাম খোমেইনী জনগণের ইসলামী জাগরণী শক্তির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বেয়নেটের মাধ্যমে বিপ্লব প্রচারের কথা বলেননি; বরং তাঁর মতে বিপ্লবের প্রকৃত প্রসারের লক্ষণ হলো ইসলাম, ইসলামী ধ্যানধারণা এবং ইসলামিক ও মানবিক নৈতিকতাবোধের ব্যাপক উন্নয়ন।

ইমাম খোমেইনীর মতে বিপ্লব রপ্তানি মানে ইসলামকে অবিকৃত অবস্থায় উপস্থাপন, ইসলামের সৌন্দর্যের প্রচার এবং জনগণের মধ্যে ইসলামের প্রতি আগ্রহ ও আসক্তি সঞ্চার করা। ইমাম খোমেইনী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেছেন বিপ্লব মানে কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ নয়; বরং বিপ্লব হলো চিন্তা ও চেতনার আমূল পরিবর্তন। তিনি ইসলামী বিপ্লবের ধারণা ও মূল্যবোধ পাকাপোক্ত করার পাশাপাশি সামাজিক, সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে তা চর্চা করতে বলেছেন । সেজন্য  ইমাম খোমেইনীর বিপ্লব রপ্তানির তত্ত্ব কোনো রণনীতি নয়; বরং এটি ইসলামী চেতনা ও মূল্যবোধ প্রচার ও প্রসারের এক কার্যক্রম যার মাধ্যমে প্রকৃতপক্ষে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের দ্রোহী চেতনা এবং  আধ্যাত্মিকতাবাদ প্রসারিত হয়।

ইমাম খোমেইনী ইরানের ইসলামী বিপ্লবের আসল শক্তি নির্দেশ করতে গিয়ে বলেছেন, বিশ্বাস ছাড়া ইরানের আর কোনো শক্তি নেই। বিশ্বাসের জোরে ইরানী জাতি সকল অপশক্তিকে  পরাহত করেছে। এই বিপ্লব অবর্তীন হয়নি বা চাপিয়ে দেয়া নয়; বরং ইরানের ইসলামী বিপ্লবের কুশিলব ইরানী জনগণ। আর যখন জনগণ হয় বিপ্লবের চালিকাশক্তি, তখন কোনো গোষ্ঠী বা চক্র তা দমন করতে পারে না। আজকের ইরানী বিপ্লব, ইরানের সংবিধান ও সরকার ইরানী জনগণের সৃষ্টি। বিশ্বের যে কোনো প্রান্তে ইসলামী বিপ্লবকে চরিতার্থ করতে হলে সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীকে ইসলামী বিপ্লবের চেতনায় জেগে উঠতে হবে এবং বিপ্লব সংগঠিত করতে হবে। এক্ষেত্রে ইরানী জনগণের সাহস এবং উদ্দীপনা পাথেয় হতে পারে।

ইমাম খোমেইনী বর্তমান বিশ্বে পরাক্রমশালী মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচারণার বিষয়ে ওয়াকেবহাল এবং সচেতন ছিলেন। তিনি প্রচারণাকে ইসলামী আদর্শ প্রচারের বাহন হিসেবে দেখেছেন এবং এর মাধ্যমে বিশ্বমানবতাকে সঠিক পথ দেখানোর তাগিদ দিয়েছেন। ইমাম খোমেইনী প্রচারণার মাত্রাকে ক্ষুরধার ও জোরদার করতে তাগিদ দিয়েছেন। বর্তমান বিশ্ব নানামুখী প্রচারণার ওপর দাঁড়িয়ে আছে। প্রচারণাই সকল কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। দুর্ভাগ্যের বিষয় হলো বর্তমান বিশ্বে অধিকাংশ প্রচারণাই যায়নবাদ-নিয়ন্ত্রিত। যা মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনৈক্য ও ভুল বুঝাবুঝি তৈরি করছে। সে ক্ষেত্রে ইসলামী বিপ্লবের ধারকদের ঐক্য ও সংহতি বজায় রাখার জন্য সঠিক প্রচারণা  চালানোর বিকল্প নেই।

গণমাধ্যমের গুরুত্ব সম্পর্কে ইমাম খোমেইনী সজাগ ছিলেন। তিনি গণমাধ্যমকে একটি দেশের শিক্ষাদাতা হিসেবে বিবেচনা করেছেন। যাদের কর্তব্য হলো প্রতিটি ব্যক্তি এবং সামগ্রিকভাবে জাতিকে শিক্ষিত করা এবং সর্বোপরি জাতির সেবা করা। ইমাম খোমেইনী জানতেন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করা কৃষকও আজকাল রেডিও শোনে। তাই  গণমাধ্যমে ইসলামের প্রচারণা বাড়াতে হবে। কেননা, ইসলামী বিপ্লবের দায়িত্ব হলো ইসলামকে বিশ্বের সর্বত্র উপস্থাপন করা।

ইমাম খোমেইনী জোর দিয়ে বলেছেন, মসজিদ হবে ইসলামী বিপ্লবের কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। যেমনটি ছিল ইসলামের প্রাথমিক দিনগুলোতে। মসজিদ ইসলাম প্রচারের মূল কেন্দ্র । ইসলামের ঊষা লগ্নে এখান থেকে সেনাদল গঠিত এবং সংগ্রাম সূচিত হতো। ইমাম খোমেইনীর মতে প্রচারণার দায়িত্ব কেবল বিশেষ কোনো মন্ত্রণালয়ের বা দপ্তরের নয়; বরং এটি সকল লেখক, বক্তা, শিল্পী এবং পণ্ডিত ব্যক্তির পবিত্র কর্তব্য। তাঁদের ইসলামকে সঠিকরূপে তুলে ধরতে হবে ।

ইমাম খোমেইনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যায়নবাদীদের নেতৃত্বে বিশ্বব্যাপী ইসলামবিরোধী প্রচারণার বিষয়েও গভীরভাবে সচেতন ছিলেন। তাদের প্রচারণার মূল বিষয় হলো ইসলামবিরোধীতা। তাদের মতে ইসলাম কোনো বৈশ্বিক ধর্মও নয়। কিংবা ইসলাম জীবনঘনিষ্ঠ ধর্ম নয়। এর মধ্যে সমাজগঠনের নীতিমালা ও ভিত্তি এবং সরকার পরিচালনার নীতিমালা বা কাঠামো অনুপস্থিত। এমনকি ইসলামকে ‘প্রক্রিয়াশীল ধর্ম’ আখ্যা দিয়ে বর্তমান সময়ে এটিকে অচল প্রতীয়মানের চেষ্টা চলছে। ইসলামবিরোধীরা এমন ধুয়াও তুলছে যে, ইসলাম সভ্যতার বিকাশ এবং প্রযুক্তিগত উন্নতি ও উদ্ভাবনের বিরুদ্ধে। তারা আরও যুক্তি দেয় যে, আধুনিক রাষ্ট্রগুলো বিশ্বসভ্যতা ও তার সাম্প্রতিক অগ্রযাত্রাকে অস্বীকার করতে পারবে না। এক্ষেত্রে ইমাম খোমেইনী পণ্ডিত এবং গবেষকদের ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি সঠিকভাবে অনুধাবন করে ইসলামকে সঠিকভাবে তুলে ধরার তাগিদ দিয়েছেন। এক্ষেত্রে তিনি ধর্মবেত্তা ও ধর্মপ্রচারকদের দুর্বলতার দিকটিও তুলে ধরেছেন। ইমাম খোমেইনীর দৃষ্টিতে তাঁরা ইসলামের তত্ত্ব, নীতিমালা ও আদর্শকে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত সময় না দিয়ে নানা আনুষ্ঠানিকতায় ব্যস্ত থাকেন।

ইমাম খোমেইনী সার্বিক অবস্থার আলোকে পরিবর্তন এবং অভীষ্ট লক্ষ্যের দিকে যাত্রার জন্য জাতিসমূহের প্রতি জাগরণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মুসলিম উম্মাহর ঐক্য এবং জাগরণকে পরস্পর নির্ভরশীল বলে আখ্যা দিয়ে বলেছেন যে, ক্ষুদ্র মতপার্থক্য ভুলে মুসলিম উম্মাহকে সচেতন, সজাগ এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে ইসলামকে রক্ষা করতে হবে। কেননা, তাঁর ভাষায় এ সময়টি হচ্ছে জালিমের বিরুদ্ধে মুসতাদআফিনের এবং মিথ্যার বিরুদ্ধে সত্যের বিজয়ের সময়। তিনি মুসলিম বিশ্বকে মতানৈক্য ও বিভক্তির নৈতিবাচক পরিণতি সম্পর্কে সাবধান করে দিয়েছেন। তাঁর ভাষায় : “ইসলাম এসেছে বিশ্বের সকল জাতি তথা আরব-আজম-তুর্কী প্রাচ্যকে একত্র করতে এবং একটি মহান উম্মাহ প্রতিষ্ঠিত করতে, যার নাম হবে ‘ইসলামী উম্মাহ’।” তিনি ইসলামকে ঐক্যের ধর্ম বলে অভিহিত করে বলেছেন, ইসলামী বিপ্লব সকল দেশে এই বার্তাই পৌঁছে দিতে চায় যে, ইসলামের ভিত্তি হলো সমতা, ভ্রাতৃত্ব এবং ঐক্য। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি আহ্বান জানিয়েছেন : ‘বিশ্বের মুসলিম যারা ইসলামের সত্যতায় বিশ্বাসী তারা জেগে উঠবে এবং তাওহীদের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরবে এবং স্ব স্ব দেশে সম্প্রসারণবাদীদের হাত কেটে দেবে এবং ইসলামের গৌরব ও প্রভা পুনরুজ্জীবিত করবে।’

ইমাম খোমেইনী বিশ্বাস করতেন, ইসলামী মূল্যবোধ এবং নীতিমালার ভিত্তিতে বিশ্বব্যাপী গণজাগরণ মানবতার প্রকৃত মুক্তির নিয়ামক। এই জাগরণের স্রোতধারায় ইসলাম সারা বিশ্বে বিজয়ী হবে এবং সাম্রাজ্যবাদের মূলোৎপাটন হবে।

লেখক : এডভোকেট,  বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.