সাহাবাদের ন্যায়পরায়ণতা
আল্লাহর রাসূল (সাঃ)অহুদের শহীদ গণের সম্পর্কে বলেন ঃআমি এ দলের সত্যের উপর থাকার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিব । আবু বকর বললো ঃ হে আল্লাহর রাসূল ! তাহলে কি আমরা তাদের ভাই নই ঃ তাদের মতই আমরা ইসলাম গ্রহণ করেছি, তাদেরমত জিহাদ করেছি ? আললাহর রসূল (সাঃ) বলেন ; হ্যাঁ, তবে আমি জানি না আমার পর কী বেদআতসমূহ সংগঠিত হবে! [মুয়াত্তা মালেক,কিতাবে জিহাদ, খঃ২ পৃঃ৪৬২, হাদীস নং ৩২]
আহলে সুন্নাত ও আহলে বাইতের অনুসারীদের দৃষ্টিতে সাহাবার সংজ্ঞা
আহলে সুন্নতের দৃষ্টিতে সাহাবীর সংজ্ঞা
‘ইবনে হাজার’ তার ‘আল আসাবা’ মামক গ্রন্থের ভূমিকায় সাহাবীর সংজ্ঞায় বলেন ঃ
সাহাবী হলো এমন কেউ যে মহানবী (সাঃ)Ñকে দেখছেন , তাঁর উপর ঈমান এনেছেন ও মুসলমান হিসেবে মৃত্যুবরণ করেছেন ঃ চাই মহানবীর সাথে তার নৈকট্য ক্ষনিকের বা সুদীর্ঘ যাইহোক না কেন; মহানবীর (সাঃ) নিকট থেকে হাদীস বর্ণনা করুক বা না করুক, মহানবীর (সাঃ) সাথে যুদ্ধে যাক বা না যাক । ইবনে হাজার বলেন এ সমস্ত ব্যক্তিই আমাদের বর্ণনায় ঃ ‘যে মহানবীকে (সাঃ) দেখেছেন’ –তার আত্ততাভুক্ত হয়, এমন কি একবার মহানবীকে দেখলে হবে এবং তার নিকট না বসলে ও কিংবা অন্ধত্বের কারণে হযরত (সাঃ)-কে চর্মচক্ষুর মাধ্যমে না দেখনেও। [আল আসাবাহ খঃ১, পৃঃ১০]
তিনি তার কিতাবের অন্য অংশে বলেন ঃ “যে মানদন্ডের আলোকে অনেক দলের সাহাবী হওয়াটা নির্ধারিত হয় তা হলো
ক)- তারা (খলিফারা) জয়যুদ্ধে কেবলমাত্র সাহাবাদেরকেই কমন্ডার নিযুক্ত করতেন
খ)- দশম হিজরীতে মক্কা ও তায়েফে এমন কেউ ছিল না যে ইসলাম গ্রহণ করেনি। বিদায় হজ্জে তারা মহানবীর (সাঃ) সাথে উপস্থিত ছিলেন।
গ) আওস ও খাযরাজ উভয় গোত্রের সমস্ত লোকই মহানবীর (সাঃ) জীবনের শেষ দিকে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন।
ঘ) মহানবীর (সাঃ) ও ফাতের পরও তাদের কেউ কাফের হয়নি” [আল আসাবাহ পৃঃ ১৬]
আমরা বলবো ঃ যে কোন গবেষকই আমার পুস্তক “১৫০ জন বানায়াট সাহাবী” এর বিভিন্ন অংশ পর্যালোচনা করবে সাহাবা ও এলমে হাদীসের উপর এর ক্ষতির ব্যাপারে বর্ণিত প্রতিষ্ঠানটির উদাসীনতা ও পদস্খলনের গভীরতা দেখতে পাবে।”
আহলে বাইত (আঃ)-এর অনুসারীদের দৃষ্টিতে ‘সাহাবীর’সংজ্ঞা ঃ
‘সাহাবা’ (صحابه) হলো সাহেব (صاحب)-এর বহুবচন,যার অর্থ একসাথে জীবন যাপনকারী, সাথী বা সর্বদা সংশ্লিষ্ট। অর্থাৎ আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) প্রত্যেক সাহাবী ছিলেন ‘মহানবীর (সাঃ) সাথে জীবনযাপন কারী, সাথী ও সর্বদা সংশ্লিষ্ট । সুতরাং এটা কেবল তার ব্যাপারেই সত্য হবে যার সংশ্লিষ্টতা ও সঙ্গ অত্যন্ত দীর্ঘ। কারণ, মোসাহেবাত ((مصا حبتবা সংশ্লিষ্টতার যথার্থতা হলো সুদীর্ঘ সময় ধরে একসাথে থাকা। [লিসানুল আরব ও মোফরাদাতে রাগেবের ‘‘صحب ’’ শব্দ দ্রষ্টব্য ]
অপরদিকে যেহেতু দুজকের মধ্যে মেবসাহেবাত বা সাথীত্ব সেহেতু সাহেব,(صاحب) শব্দটি (যার বহু বচন হলো সাহাবাহ)বাক্যে অন্য কোন ( سم ) বা নামের সাথে যুক্ত হতে বাধ্য (মোযাফ ও মোযাপুন ইলাইহী )। যেমন ঃ পবিত্র কুরআনে ও এরূপ আছে يا صاحِبَي السِّجن হে আমার দু কারাবন্দী সাহাবী [সূরা ইয়ূসুফ ২৯] ওاصحاب مُوسی এবং মহানবীর (সাঃ) সমসারিক কালে বলা হত ) মূসার সাথীরা [সূরা শূয়ার-৬১] (اَصحابُ رَسُولِ الله অর্থাৎ اصحاباصحاب শব্দটিকে رسول الله শব্দের সাথে যুক্ত করা হত।
যেমন ভাবে বলা হত ঃاصحاب بيعت الشجر বাইআতে শাজারার সাহাবীরা এবং আসহাবুস সুফ্ফা বা সুফ্ফার সাহাবীরা এবং আর্থাৎ সবগুলোকে নিজ ভিন্ন অন্যের সাথে যুক্ত করে আনা হয়েছে।সাহেব (صاحب) শব্দটি ও আসহাব (اصحاب)শব্দটি তখন একাকী ও মোযাফুন ইলাইহী (অর্থাৎ যার সাথে যুক্ত হয়) ব্যতীত আসহাবে রাসূলের নাম ছিলো না;কিন্তু মাকতাবে খোলাফার মুসলমানরা ধীরে ধীরে আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) সাহাবীদেরকে সাহাবী এবং আসহাব রূপে নামকরণ করেন। সুতরাং এ নামকরন মুসলমানদের নামকরনেরমত এবং শরীয়ত বিশেষজ্ঞদের পরিভাষা সাহীবীর সংজ্ঞা প্রদানের ক্ষেত্রে এটা ছিল দু’প্রতিষ্ঠিানের দৃষ্টিভঙ্গি ।
৩। মাকতাবে খোলাফা বা আহলে সুন্নতের দৃষ্টিতে সাহাবীদেরকে শনাক্তকরণের মানদন্ড ঃ
যা কিছু বলেছি সেই সাথে যোগ করবো, যারা মাকতাবে খোলাফায় যারা সাহাবীদেরকে পরিচয় তুলে ধরেছেন, তারা শনাক্ত করণের মানদন্ডও উল্লেখ করেছেন। যেমনঃ ইবনে হাজার তার ‘আল আসহাব’ নামক গ্রন্থে বলেন ঃ সাহাবীদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনার ও তার পরিচয় সম্পর্কে সামগ্রিক ভাবে হাদীসবেত্তাদের যে বক্তব্য গুলো আমাদের নিকট পৌঁছেছে ( যদিও এর কোন দলিল নেই ) তার মধ্যে ইবনে আবি শাইবা স্বীয় মোসান্নাফে অপ্রশিদ্ধ পথে উল্লেখ করেছেন যে, তারা (খলিফারা ) তাদের জয়যুদ্ধে কেবলমাত্র সাহাবাদেরকেই অধিনায়কত্ব প্রদান করতেন। [আলআসাবাহ খঃ১, পৃঃ১৩]
উল্লেখিত অপ্রশিদ্ধ পন্থা হলো একটি রেওয়ায়েত যা তাবারী ও ইবনে আসাকির নিজম্ব সনদের সাথে ‘সাইফ’ থেকে আবু ওসমান থেকে খালেদ ও এবাদা থেকে উল্লেখ করেছেন। ঐ রেওয়ায়েতটিতে বলা হয়।
“ কমান্ডার বা অধিনায়করা সর্বদা সাহাবাদের থেকে ছিলেন। তবে যদি ঐ পদের জন্য উপযুক্ত তাদের মধ্যে কাউকে না পেতেন তা হলে সাহাবা ভিন্ন অন্য কেউ কমান্ডার হতেন। [তারিখে তাবারী খঃ১, পৃঃ২১৫১,ইউরোপে মুদ্রিত]
তাবারী ‘সাইফ’ থেকে অপর এক বর্ণনায় বলেন ঃ ‘খালিফা ওমর যতক্ষণ পর্যন্ত সাহাবাদের মধ্যে যোগ্য ও যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী কাউকে পেতেন, ততক্ষণ পর্যন্ত (সাহাবা ভিন্ন ) অন্য কাউকে বিকল্প হিসেবে চিন্তা করতেন না। যদি এমন কাউকে না পেতেন তবে তাবেঈনদের মধ্যে উপযুক্ত কাউকে দায়িত্ব প্রদান করতেন। রাবিদের স্তবে কেউই কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বের ব্যাপারে লোভ করতেন না। [তারিখে তাবারী খঃ১, পৃঃ২৪৫৭ ও ২৪৫৮]
৪। সাহাবাদেরকে শনাক্তকরণ মানদন্ডের সমস্যা ঃ
দলিলের উভয় হাদীসই ‘সাইফ ইবনে ওমর’। হাদীস বিশারদদের দৃষ্টিতে তিনি হাদীস জাল’করণ ও নাস্তিক হওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত । [আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা খঃ১,সাইফ সম্পর্কে বর্ণনা ।]
সাইফ, এ রেওয়ায়েতটিকে আবু ওসমান থেকে বর্ণনা করেন। সেই আবু ওসমান যিনি সাইফের বর্ণনায় খালেদ ও এবাদা থেকে বর্ণনা করেছেন এবং সাইফ নিজের খেয়াল খুশী মত তাকে ‘ইযাযিদ ইবনে ওসাইদ গাসসানী’ নামকরণ করেছেন। যা হাদীসের রাবিদের মধ্যে সাইফ কর্তৃক বানানো ও সাজানো। [‘রোয়াতুমোখতালাকুন’ হস্তলিখিত, আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা খঃ১,পৃঃ১১৭, বৈরুত থেকে প্রকাশিত, ১৪০৩ হিজরী দ্রষ্টব্য।]
এ রেওয়ায়েতের রাবিদের কথা বাদ দিলেও যে বা যা-ই থাকুক না কেন ) বর্ণনার বিষয়বস্তু ও ঐতিহাসিক বাস্তবতার সাথে সামঞ্জস্যহীন। কারণ, ‘আগানীর’ লেখক বর্ণনা করেন এবং বলেন ঃ ইমরুল কায়েস। (কবি) ওমরের হাতে ইসলাম গ্রহণ করেন এবং ওমর তাকে (এমন কি একরাকআত নামাযপড়ার পূর্বেই) বেলায়াত ও অধিনায়কত্ব দান করেন।
এ খবরের বিস্তারিত বর্ণনা তার পরবর্তী রেওয়ায়েতে আউফ বিন খারেজা মাররী’ থেকে তিনি বলেনঃ আল্লাহর শপথ, আমি ওমর ইবনে খাত্তাবের খেলাফতকালে আমি তার নিকট ছিলাম । দেখলাম কিঞ্চিত গোড়ালী বাকা পায়ের এক ব্যাক্ত মানুষের উপর দিয়ে ডিঙ্গিয়ে হেঁটে ওমরের সম্মুখে আসলেন এবং ওমরকে তার খেলাফতের জন্য অভিনন্দন জানালেন। ওমর তাকে জিজ্ঞাসা করলেন তুমি কে জবাবে তিনি বললেন ঃ আমি একজন নাসারা, আমি ইমরুল কায়েস বিন ওদাই কালবী ঃ ওমর তাকে চিনলেন ও বললেনঃ কী চাও? বললেন ঃ ইসলাম । ওমর তার নিকট ইসলাম স্থাপন করলেন এবং তিনি গ্রহণ করলেন। অতঃপর বর্ষা চাইলেন এবং শামের ‘কাযায়ে [‘কাযায়ে’ হলো একটি বৃহৎ গোত্র, এগুলোর মধ্যেঃ হায়দান, বোহরা, বালা ও জাহিনার কথা উল্লেখযোগ্য। এগুলো সম্পর্কে জামহারে ইনসাবের ইবনে হাযারের ৩৪০-৪৬০ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে। তাদের বসতি ছিল সাহার, অতঃপর নাজরান, এরপয় শামে। বিস্তারিত জানার জন্য মোজামে কাবায়েলে আবাবের ‘কাজায়ে’ শব্দ, খঃ৩, পৃঃ৯৫৭ দ্রষ্টব্য।] এর মুসমানদের উপর তার নেতৃত্বের পতাকা বাঁধলেন। ঐ ব্যক্তি এমন ভাবে বের হলেন যে ঐ পতাকা তার মাথার উপর উড্ডীন ছিল। [আগ¦ামী, খঃ১৪,পৃঃ ১৫৭, সাসী প্রকাশনা, এর সার সংক্ষেপ জোমহুবোর ইনসাবিল আরব পৃঃ২৮৪তে আছে।]
মুর্তাদ হওয়ার আল কামাহ বিন আলচাহ কালবীকে অধিনায়ক নিযুক্ত করার ঘটনা ও সেরূপ। যেমন ‘আগ¦ানী’ ও আযাবা হতে [আসাবাহ, খঃ২, পৃঃ৪৯৬-৪৯৮ আগানী খঃ২৫ পৃঃ৫৬ সাসী প্রকাশনা]তার সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনায় এসেছে যে,
আলক্বামা আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) জীবদ্দশায় ইসলাম গ্রহণ করেছিল এবংআল্লাহর রাসূলের কথা শুনার সৌভাগ্য হয়েছিল। অতঃপর,আবুব করের সময় মুর্তাদ হয়েছিল। আবু বকর খালেদকে তার নিকট পাঠালে সে ক্রন্দন করলো। বলা হয় ; এরপর সে ফিরে আসলো ও ইসলাম গ্রহণ করলো ।
এ ঘটনাটি ‘আসাবাহ’-তে এরূপভাবে বর্ণিত হয়েছে ঃ সে ওমরের সময় মদ পান করেছিল এবং ওমর তাকে দোররা মেরেছিল। ফলে সে মুরতাদ হয়ে রোমের সাথে যোগ দিয়েছিল। রোমের বাদশা তাকে সম্মান করলো এবং তাকে বললো ঃ তুমি আমের বিন তোফাইলের চাচাত ভাই !
সে ক্ষুব্দ হলো ও বললো ঃ আমি আমের [আলক্বামাহ ও আমেরের মধ্যে তিক্ততা দেখা দিয়েছিল যে সম্পর্কে জ্ঞাতজন বর্ণনা করেছে এবং আগানী খঃ১৫, পৃঃ৫০, সাসী প্রকাশিত, পুস্তকে বর্ণিত হয়েছে। ফলে আলকামার পরিচয়ে সম্মান পাওয়াটা তার পছন্দনীয় ছিলনা ( সে আমের যে তার প্রতি বিরক্ত ছিল )] ছাড়া পরিচিত নই ! অতঃপর ফিরে এসে ইসলাম গ্রহণ করলো ।
আগানী ও আসাবাহতে এসেছেঃ বর্ণনাটি আগানী থেকে নেয়া ) যখন আলকামাহ (মুর্তাদ হওয়ার পর) মদীনায় ফিরে আসলো। রাতের অন্ধকারে ওমর ইবনে খাত্তারে নিকট গেলো। যেহেতু ওমর খালেদের মত ছিলো আর খালেদ ছিলো তার বন্ধ,সে ওমরকে ভাবলো যে সে হলো খালেদ। সুতরাং সে তাকে সালাম করলো এবং তাকে বললোঃ ওমর তোমাকে সেনা পতির পদ থেকে অপসারণ করেছি ? ওমর বললোঃ হ্যাঁ তাই। আলক্বামাহ বললো ঃ আল্লাহর কসম ! তোমার অপমারণ হলো কৃপণতা ও হিংসা বশতঃ। ওমর বললো ! আমাদের সাহায্যে তোমার। থলিতে কী, আছে ? সে বললো ঃ আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই ! ওমর আমাদের ওপর আনুগত্যে ও কথা শুনে চলার অধিকার রাখে এবং আমরা তার বিরুদ্ধে কোন কাজই করবো না!
পরদিন সকালে ওমর মানুষকে সাক্ষাতের অনুমতি দিলে খালেদ ও আলকামাহ ও তার সাক্ষাতে গেলেন। আলকামাহ খালেদেও পাশে বসলো। ওমর আলকামাহর দিকে ফিরে বললো ঃ আল কামাহ বলতো দেখি, তুমিই কি খালেদকে সে কথা গুলো বলেছিলে ? আলকামাহ খালেদের দিকে তাকিয়ে বললো ঃ হে আবা সোলাইমান ! যা তোমাকে বলেছিলাম তা কি বলে দিলে ?
খালেদ বললো ঃ ধিক্ তোমাকে ! আল্লাহর কসম ইতিপূর্বে তোমার সাথে আমার দেখাই হয়নি ।আমার মনে হয় তাকে দেখেছ?
আলকামাহ বললো ঃ আল্লাহর কসম তাকে দেখেছি। অতঃপর ওমরের দিকে ফিরে বললো, হে আমীরুল মূমিনীন ! ভালো ছাড়া কিছুই শুনেননি।
ওমর বললো ঃ হ্যাঁ, এমনটিই। তমি কি চাও তোমাকে হাওয়ারনের [হাওয়ারণ ছিলো দামেশকের নিয়ন্ত্রণাধীন বিস্তৃত এলাকা খাতে ছিল অসংখ্য গ্রাম ও কৃষি জমি ।মোজামূল বোলদান,খঃ২ পৃঃ ৩৫৮] গভর্ণর নিযুক্ত করি ? আলক্বামাহ বললোঃ জী !
ওমর তাকে হাওয়ারনের গর্ভনর নিযুক্ত করলেন এবং সে আমৃত্যু সেখানেই ছিল।
‘আসাবাহ’-তে আরো বলা হয় যে, ওমর বললেন ঃ যদি আমার পরবর্তী ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তোমার মত মনে করতো, তবে এর চেয়ে বেশী কী আমার নিকট প্রিয় হতো । যা কিছু বর্ণনা করলাম, তা ঠিক ঐতিহাসিক বাস্তবতা। কিন্তু মাকতাবে খোলাফার পন্ডিতগণ যা কিছু বর্ণনা করেছেন সনদ দিয়েছেন। আর নিজেদের বর্ণনা থেকে আল্লাহর রাসূলেন (সাঃ) সাহাবীদেরকে মানদন্ড আবিষ্কার করেছেন। এর ফলে সাইফ বিন ওমরের (যে নাগি¦ক বলে অভিযুক্ত) মত বানানো ও সাজানো বক্তিবর্গকে ও রাসূলের (সাঃ) সাহাবাদের মধ্যে গণনা করেছেন। বানানো সাহাবী ‘সাইফ’ ও তার রেওয়াযাত সম্পর্কে তাফা আমাদের পুস্তক “ একশত পঞ্চাশ বানানো সাহাবীতে আলোচনা করেছি।
সাহাবীর সংজ্ঞা বর্ণনার ক্ষেত্রে দু’প্রতিষ্ঠানের দৃষ্টি ভঙ্গি তুলে ধরার পর, সাহাবীদের ন্যায়পরায়ণতা সম্পর্কে দুটি প্রতিষ্ঠানের দ্রষ্টি ভঙ্গি তুলে ধরব।
উভয় মাযহাবের দৃষ্টিতে সাহাবাদের ন্যায়পরায়ণতা
১। সাহাবাদের ন্যায়পরায়ণতা সম্পর্কে আহলে সুন্নতের দৃষ্টি ভঙ্গি ঃ
আহলে সুন্নত সমস্তসাহাবাকেই আদেল বা ন্যায়পরায়ণ মনে করে এবং দ্বীনের জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে তাদের সকলের শরনাপন্ন হয়।
আবু হাতেম রাযি, [আবু মোহাম্মদ আদূর রহমান চিন আবি হাতেমরাযি ( মৃত্যু ৩২৭ হিজরী) “তাকাদ্দামাতুল মা’ রেফাতি লিকিতাবিল জরাহ ওয়াল তা’দীল” এর লেখক যা ১৩৭৯ হিজরীতে হায়দারাযাদ থেকে প্রকাশিত। যা বলেছি তা এ পুস্তকের ৭-৯ পৃষ্ঠায় আছে।
] আহলে জারাহ ও তা দীলের (সংশোধন ও ভারসাম্য বিধানের অুুসারী) নেতা, তার কিতাবের ভূমিকায লিখেন ঃ
“ কিন্তু আল্লাহর রাসূলের (আঃ) সাহাবী,হলেন তারাই যারা ওহী ও কোরআন নাযিলের সময়কালে ছিলেন, এর তাফসীর ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে জেনেছেন,যাদেরকে মহান আল্লাহ তাঁর রাসূলের (সাঃ) সাথে কপোপকথন ও সহাবস্থানের জন্য নির্বাচন করেছেন, মহান আল্লাহ নিজ সাহায্যে দ্বিন প্রতিষ্ঠা ও তাঁর অধিকার প্রকাশ করার দায়িত্ব যাদের উপর অর্পন করেছেন; আর তাদেরকে মহানবীর (সাঃ) সাহাবারুপে পছন্দ করেছেন এবং আমাদের গুরুজন নেতা নিযুক্ত করেছেন। সাহাবী হলেন তারাই যারা মহানবীর (সাঃ) উপর যা কিছু নাবিল হয়েছে,যা কিছু সুন্নত ও বিধান রূপে এসেছে, যা কিছু আদেশ দিয়েছেন মোস্তাহাব ও ওয়াজিব ফরেছেন, যা কিছু আদেশ, নিষেধ ও শিষ্ট করেছেন, তাই গ্রহণ ও রক্ষা করেছেন এবং প্রতিষ্ঠা করেছেন। অতএব, দ্বীনে ফকীহ হয়েছেন, আল্লাহর আমর ও নাহী ও উদ্দেশ্যকে, আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) উপস্থিতিতে কিতাবের ব্যাখ্যা ও অর্থ জানতে পেরেছেন এবং তাঁর মাধ্যমে আদের্শ নিষেধ সম্পর্কে জেনেছেন। মহান আল্লাহ তাদেরকে এবং মাধ্যমে সম্মানিত করেছেন এবং তাদেরকে আমাদের সেতৃত্বের আসনে বসিয়ে মর্যাদা বান করেছেন।
সন্দেহ, মিথ্যা, ভুল, দ্বিধা-দ্বন্দ, অহংকার ও ক্রটি ইত্যাদি থেকে তাদেরকে মুক্ত রেখেছেন। মহান আল্লাহ তাদেরকে উম্মতের বিারক বলে নামকরণ করেছেনএবং স্বীয় কিতাবে (কুরআনে ) বলেছেন।
وَ كَذلِكَ جَعَلْناكُمْ اُمَّةً وَسَطاً لِتَكُونُوا شُهَداءَ عَلَى النَّاسِ
এবং এভাবে তোমাদেরকে এক মধ্যপন্থী উম্মত রূপে প্রতিষ্ঠা করেছি যাতে তোমরা সাক্ষীস্বরূপ হবে। (সূরা বাকারা-১৪৩)
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) মহান মানবাতির জন্য আল্লাহর বাণী “وسطَا” কে ‘ ‘অর্থাৎ ‘ন্যায়বিচারক’ রূপেঅর্থ করেছেন। অতএব, তারা হলেন জাতির জন্য ন্যায়বিচারক, হেদায়াতের নেতা, দ্বীনের হুজ্জাত, কিতাব ও সুন্নত বর্ণনাকারী মহান আল্লাহ তাদের অনুগামী হওয়াকে পছন্দনীয় বলেছেন ও নির্দেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন ঃ
… وَ يَتَّبِعْ غَيْرَ سَبيلِ الْمُؤْمِنينَ نُوَلِّهِ ما تَوَلَّى
এবং যে কেউ মুমিনদের পথ ভিন্ন অন্য কোন পথ অনুসরণ করে, তবে সে যেদিকে সে ফিরে যেতে চায় সেদিকেই তাকে ফিরিয়ে দেয়া হবে।, [আহলে বাইতের (আঃ) অনুসারীগণ এগুলোর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মুমিন ও সাহায্য বলে মনে করে। যেমনটি আয়াত থেকে সুস্পষ্ট রূপেপ্রতীয়মান হয়। এ সম্পর্কে বিস্তারিত আল্লাহার সাহায্যে আসেবে] (সূরা নিসা-১১৫)
আমরা অনেক বর্ণনা থেকে জানি যে, মহানবী সেন্য নিজ সাহাবাদেরকে তার বানী অন্যের নিকট পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে উৎসাহ ও প্রেরনা দিয়েছেন এবং তাদেরকে বলেছেন ঃ
نَضَّرَ اللَّهُ امْرِءاً سَمِعَ مَقالَتى فَحَفظَها وَ وَعاها حَتّى يُبلِّغها غَيْرَه
‘মহান আল্লাহ তাকে খুশী করেন যে আমার বক্তব্য শুনে, সংরক্ষণ করে এবং অপরের নিকট পৌঁছায়।’
মহানবী (সাঃ) তাঁর খোতবায় বলেন ঃ ‘তোমাদের’ উপস্থিতরা (আর কথা) অনুপস্থিতদেরকে পৌঁছে দিবে। এবং বলেন ঃ
بَلِّغُوا عَنّى وَ لَو آيةً وَ حَدِّثُوا عَنّى وَ لا حَرَجَ.
‘আমার পক্ষ থেকে প্রচার’ কর এক আয়াত হলেও এবং আমার হাদীসসমূহ বর্ণনা কর এতে তোমাদের কোন গুণাহ নেই।
এরপর সাহাবাগণ (রাঃ) শহর, প্রত্যন্ত অব্জল ও সীমান্তে ছড়িয়ে সপড়েছিলন এবং যুদ্ধ, সাম্রাজ্য বিস্তার, সেনাপতিত বিচারকার্য এবংশাসন কার্য সম্পাদল করলেন ; তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ আশ্রয়স্থলে যা কিছু মহানবী (সাঃ) এর নিকট থেকে পেয়েছিলেন তার প্রচার ও প্রসার এবং ফতওয়া এবং মহানবীর (সাঃ) শিক্ষা থেকে স্বয়ং যা পেয়েছিলেন তার মাধ্যমে মানুষের প্রশ্নের উত্তর দিতেন। তারা মানুষকে ফরজসমূহ, আহকাম, সুন্নত, হালাল ও হারাম শিক্ষা দেয়ার জন্য সুনিয়্যাতে ও আল্লাহর নৈকট্যের আশায় উৎসর্গ করেছিলেন যতক্ষন পর্যন্ত না মহান আল্লাহ তাদেরকে ডেকেছেন ও তার রূহ বা আত্মা গ্রহণ করেছেন। তাদের সকলের উপর মহান আল্লাহর রহমত, ক্ষমা ও তুষ্টি বর্ষিত হোক উবনে অদ্রুল বের, তার কিতাব ‘আলইস্তিয়ার [‘আল ইস্তিয়ার ফি আসমাইল আসহাব, লেখক হাফেজ মোহামেদ আবু ওমর ইউসূফ বিন আব্দুল্লাহ বিন মোহাম্মদ বিন আব্দুল বের নোমারী কুরতুবী মালিকী (জন্ম ৩৬৩হিঃ ও মৃত্যু৪৬৩হিঃ তার বর্ণনাটি‘আলআসাবার’ পাদটীকা থেকে এনেছি।]এর ভূমিকায় বলেন, “ সকল সাহাবীর ন্যায়পরায়ণতা স্থিতিশীল’
অতঃপর (যেমনটি রাযির বক্তব্য থেকে এনেছি) মুমিনদের সম্পর্কে আয়াত ও রেওয়ায়েতসমূহ বর্ণনা করতে শুরু করেন। ইবনে আসির ‘উসদুল গাবার’
ভূমিকায় লিখেন “আহকামের ব্যাখ্যায় এবং দ্বীনের বিষয়াবলী হালাল, হারাম ইত্যাদি শনাক্তকরণ যে সকল সুন্নাত আছে সেগুলো কেবলমাত্র তখনই প্রমাণিত হবে যখন সনদসমূহের বর্ণনাকারীগণ পরিচিত থাকবে। আর সকলের পূর্বে আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) সাহাবীরাই অগ্রগণ্য। যদি কেউ তাদেরকে না চিনে তবে তার অজ্ঞতা অন্যদের চেয়ে মাবাত্বক এবং তাকে অস্বীকারের মাত্রা অপেক্ষাকৃত বেশী। অতএব, তার বংশ বা নাসাব ও পরিবার পরিজন খুব ভালভাবে পরিচিত হতে হবে ।
আল্লাহর রাসূলের সাহাবীগণ (রাঃ) অন্যান্য রাবিদের সাথে এ সমুদয় ক্ষেত্রে অভিন্ন । তবে ‘ ’বা ন্যায় নীতি ক্ষেত্রে অন্যকথা। কারণ, তাদের সকলেই আদেশ বনেন্যায় পরায়ণ এবং তাদের ক্রটি ধরা ও দোষারোপ করা নিষিদ্ধ। [উসদুল গারা ফি মারেফাতিস আহাবা” লেখক আবুল হাসান ইজ্জুদ্দনি আলী ইবনে মোহাম্মাদ ইবনে আব্দুল কারিম জায়রি যিনি ‘ইবনে আসির’ নামে সুপরিষ্ঠিত (মৃত্যু ৬৩০ হিঃ) খঃ১, পৃঃ৩]
‘ইবনে হাজার’ তার আলআসাবাহ’ পুস্তকের ভূমিকার তৃতীয় অধ্যায়ে সাহাবাদের অবস্থা ও তাদের ন্যায়পরায়ণ তা সম্পর্কে বলেন ঃ
‘আহলে সুন্নত ‘সমস্ত সাহাবীই ন্যায়পরায়ণ, এ ব্যাপারে একমত এবং কেউই এ সম্পর্কে বিরোধিতা করেনি, একমাত্র অল্পসংখ্যাক বেদআতকারী ব্যতীত।
তিনি ‘আবু যারা’হ’ থেকে বর্ণনা করেছেন যে, “ যখন কাউকে দেখবে যে, আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) কোন একজন সাহাবাকে খন্ডন করছে ও প্রত্যাখ্যান করছে তার জেনে রাখ সে হল ‘নাস্তিক’। কারণ, রাসূল (সাঃ) সত্য, কুরআন সত্য এবং তিনি যা কিছু এনেছেন সত্য। এগুলো সবই সাহ্যাবারা আমাদের নিকট পৌছিয়েছেন। আর এ দলটি আমাদের সাক্ষীদেরকে (সাহাবা) খন্ডন ও সমালোচনা করে কিতাব ও সুন্নতকে বাতিল ও ধবংশ করার চেষ্টায় রত। সুতরাং নিজেদের সমালোচনা ও খন্ডন এক্ষেত্রে সমীচীন।তারা হল নাস্তিক। [আল এসাবাতু ফি তামিযিস্ সাহাবা, লেখক হাফেজ শাহাবুদ্দীন আহমাদ ইবনে আলী ইবনে মুহাম্মাদ কেমাম আসকালানী শাফেয়ী যিনি ইবনে হাজার (জন্ম ৭৭৩ হিঃ ও মৃঃ৮৫৩ নামে সুপরিচিত। প্রকাশ না। মিশর, আলমাকতা বাতুত জোরিয়্যা, ১৩৫৮হিঃ খঃ১ পৃঃ১৭-২২
আবু যারয়াহ, আদ্বল¬াহবিন আব্দুল কারিম বিন ইয়াবিদ। ইবনে হাজার তার ‘ুাদ্বরীবুত তাহযীব (খঃ২ পৃঃ৫৩৬, সংখ্যা ১৪৭৯) তার সম্পর্কে বলেনঃ ইমাম হাফেজ প্রখ্যাত সেক্বাহ যিনি রাবিদের এসাবতম স্তরে আছেন। ২৬৪ হিঃ মৃত্যুবরণ করেন। মুসলিম, তিরমিযি, নাসাঈ, ইবনে মাফ সেহীসমূহের লেখক) তার থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। বলবো ঃ সত্যিবলতে কি আমরা বুঝতে পারিনা ইমাম আবু যারআহ আল¬াহর রাসূলের (সাঃ) সাহাাদের মধ্যে মুনাফিকদের সম্পর্কে কী বলেন ?]
এটা ছিল সাহাবাদের ন্যায়পরায়নতা সম্পর্কে মাকতাবে খোলাফার দৃষ্টি ভঙ্গি।
এরপর আমরা এ সম্পর্কে আহলে বাইত (সাঃ)-এর অুুসারীদের দৃষ্টি ভঙ্গি তুলে ধরবো।
২। সাহাবাদের ন্যায়পরায়ণতা সম্পর্কে আহলে বাইত (আঃ) এর মাযহাবের দৃষ্টিভঙ্গি ঃ
আহলে বাইত (আঃ)Ñমর প্রতিষ্ঠান পবিত্র কুরআনের অনুসরণে বলে ঃ
সাহাবাদের মধ্যে এমন কিছু মুমিন আছেন, পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তাদের প্রশংসা করেছেন এবং বাই য়াতে শাজারা সম্পর্কে বলা হয় ঃ
لَقَدْ رَضِيَ اللَّهُ عَنِ الْمُؤْمِنينَ إِذْ يُبايِعُونَكَ تَحْتَ الشَّجَرَةِ فَعَلِمَ ما فى قُلُوبِهِمْ فَأَنْزَلَ السَّكينَةَ عَلَيْهِمْ وَ أَثابَهُمْ فَتْحاً قَريبا؛
“ মহান আল্লাহ মুমিনদের উপর সন্তুষ্ট হলেন যখন তারা বৃক্ষতলে তোমার নিকট বাইয়াত গ্রহণ করলো, তাদের অন্তরে যা ছিল তা তিনি অবগত ছিলেন; তাদেরকে তিনি দান করলেন প্রশান্তি এবং তাদেরকে পুরষ্কার দিলেন আসন্ন বিজয়।” (সূরা ফাতহ্-১৮)
যেমন ভাবে প্রমাণিত হলো যে, এ প্রশংসা বিশেষ করে বাইয়াতে শাজারায় উপস্থিত মুমিনদের জন্য এবং সে সাথে সমন্বিত হয় আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই তার মত অন্যান্য মুনাফিকরাও। [বাইয়াতে শাজারা (বাইয়াতে রেজওয়ান)-এর ঘটনা সম্পর্কে মাগজী ওয়াদ্বদী ও খাতাতু মোকরেপী দ্রষ্ঠব্য]
আহলে বাইতের (আঃ) প্রতিষ্ঠান অনুরূপ পবিত্র কুরআনের অনুসরনে সাহাবাদের মধ্যে মুনাফিকদেরকে ও দেখতে পায়। মহান আল্লাহ বিভিন্ন আয়াতে তাদেরকে ভৎর্সনা করেছেন। যেমন মহান আল্লাহর এ বাণী ঃ
وَ مِمَّنْ حَوْلَكُمْ مِنَ الأعْرابِ مُنافِقُونَ وَ مِنْ أَهْلِ الْمَدينَةِ مَرَدُوا عَلَى النِّفاقِ لا تَعْلَمُهُمْ نَحْنُ نَعْلَمُهُمْ سَنُعَذِّبُهُمْ مَرَّتَيْنِ ثُمَّ يُرَدُّونَ إِلى عَذابٍ عَظيم.
“ মরুবাসীদের মধ্যে যারা তোমাদের আশেপাশে আছে তাদের কেউ কেউ মুনাফিক এবং মদিনাবাসীদের মধ্যেও কেউ কেউ, তারা কপটতায় সিদ্ধ। তুমি তাদেরকে চিননা কিন্তু আমি তাদেরকে চিনি । আমি তাদেরকে দু’বার শান্তি দিব, অতঃপর তারা প্রত্যাবর্তিত হবে মহাশাস্তির দিকে। ” (সূরা তরবাÑ১০১)
হ্যাঁ, সাহাবাদের মধ্যে এমন কেউ ছিলো যাদের কপট তা [সূরা নুরের ১১-১৭ নং আয়াত কপট তার ঘঁনার প্রতি ইঙ্গিত করতে নাযিল হয়েছে। হযরত আয়শাকে অপবাদ ( যা তার নিয়ে বর্ণনা )থেকে মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে ( হযরত আয়শা ব্যাতীত অন্য কারো বর্ণনায়) । যেমনটি আহাদীসে উ¤মূল মুমিনিন আয়শা বিষয়বস্তু) দ্বিতীয় খন্ডে বর্ণিত হয়েছে ।] সম্পর্কে ও তাদের দ্বরা রাসূলের (সাঃ) মর্যাদার উপর অপবাদ দেয়া সম্পর্কে খবর দিয়েছিলেন। এ ধরণের কথা থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই !!
অনুরূপ সাহাবীদের মধ্যে কেউ কেউ ছিলেন যাদের সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে বলা হয়ঃ
وَ إِذا رَأَوْا تِجارَةً أَوْ لَهْواً انْفَضُّوا إِلَيْها وَ تَرَكُوكَ قائِماً
যখন তারা ব্যবসা কিংবা ক্রীড়াৎ কোতুক দেখলো তখন তারা তোমাকে দাঁড়ানো অবস্থায় রেখে সে দিকেয়ুটে গেল। [সূরা জুমুআঃ আয়াত-১১] ( সূরা জুমু’আ-১১)
এ ঘটনাটি এমন অবস্থায় ঘটেছিল, যখন মহানবী (সাঃ) মসজিদে নাবাভীতে দাঁড়িয়ে জুম্মার খোতবা দিচ্ছেলেন। সাহাবাদের মধ্যে এমন কেউ ছিলো যারা তাবুক [মুসনাদে আহমাদ খঃ৫, পৃঃ৩৯০ও ৪৫৩, সহী মুসলিম খঃ৮ পৃঃ১২২ও১২৩, সেফাতে মুনাফেকীন অধ্যায় মাজমাউল যাওয়ায়েদ খঃ১ পৃঃ১১০ খঃ৬ পৃঃ১৯৫। মাগাযীয়ে ওয়াক্বদী খঃ৩, পৃঃ১০৪২। আমতাউল আসমা মাক্বরীযী, পৃঃ৪৭৭, তাফসীরে দূররুল মানসূও খঃ৩, পৃঃ২৫৮ও ২৫৯।‘সূরা তওবা আয়াত৭৪,همّوا بما لم ينالوا Ñএর তাফসীর।
] থেকে ফিরে আসার সময় কিংবা এবদায় হজ্জ্ব ২৬ থেকে ফিরে আসার সময় ‘ধাকাবা হারশী’-তে গোপনে রাসূল (সাঃ)-কে হত্যা করতে চেয়েছিলো।
নিঃসন্দেহে রাসূলের সংস্পর্শ ও সাহাচার্যের গৌরব রাসীলের (সাঃ) সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার গৌরবের চেয়ে বেশী নয়। কারণ, রাসূলের (সাঃ) স্ত্রীদের সাথে তাঁর সাহাচার্য ও সংস্পর্শ ছিলো সর্বেচ্চ মাত্রার । তথাপি, মহান আল্লাহ তাদের উদ্দেশ্যে বলেন ঃ
يا نِساءَ النَّبِيِّ مَنْ يَأْتِ مِنْكُنَّ بِفاحِشَةٍ مُبَيِّنَةٍ يُضاعَفْ لَهَا الْعَذابُ ضِعْفَيْنِ وَ كانَ ذلِكَ عَلَى اللَّهِ يَسيراً وَ مَنْ يَقْنُتْ مِنْكُنَّ لِلَّهِ وَ رَسُولِهِ وَ تَعْمَلْ صالِحاً نُؤْتِها أَجْرَها مَرَّتَيْنِ وَ أَعْتَدْنا لَها رِزْقاً كَريماً يا نِساءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّساء….
হে নবী-পতিœহণ! যে কাজ স্পষ্পত অশ¬ীল, তোমাদের মধ্যে কেউ তা করলে, তাকে দ্বিগুণ শাস্তি দেয়া হবে এবং এটা আল¬াহর জন্য সহজ। তোমাদের মধ্যে যে কেউ আল¬াহ এবং তাঁর রাসূলের প্রতি অনুগত হবে ও সৎকার্য করবে তাকে আমি পুরস্কার দিব দু’বার এবং তার জন্য আমি প্রস্তুত রেখিছি সম্মানজনক রিয্ক। হে নবী পতিœগণ! তোমারা অন্য নারীদেরমত নও, যদি আল¬াহকে ভয় কর (সূরা আহযাবঃ৩০-৩২)
মহান আল্লাহ তাদের দু’জন সম্পর্কে বলেছেন ঃ
إِنْ تَتُوبا إِلَى اللَّهِ فَقَدْ صَغَتْ قُلُوبُكُما وَ إِنْ تَظاهَرا عَلَيْهِ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ مَوْلاهُ وَ جِبْريلُ وَ صالِحُ الْمُؤْمِنينَ وَ الْمَلائِكَةُ بَعْدَ ذلِكَ ظَهير – الى قوله تعالى- ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلاً لِلَّذينَ كَفَرُوا امْرَأَتَ نُوحٍ وَ امْرَأَتَ لُوطٍ كانَتا تَحْتَ عَبْدَيْنِ مِنْ عِبادِنا صالِحَيْنِ فَخانَتاهُما فَلَمْ يُغْنِيا عَنْهُما مِنَ اللَّهِ شَيْئاً وَ قيلَ ادْخُلاَ النَّارَ مَعَ الدَّاخِلين وَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلاً لِلَّذينَ آمَنُوا امْرَأَتَ فِرْعَوْنَ إِذْ قالَتْ رَبِّ ابْنِ لي عِنْدَكَ بَيْتاً فِي الْجَنَّةِ … وَ مَرْيَمَ ابْنَتَ عِمْران….
যদি তোমরা উভয়ে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন কর (তবে ভাল), কারণ, তোমাদের হৃদয় (সত্য থেকে) বিচ্যুত হয়ে পড়েছে। কিন্তু তোমরা যদি তাঁর নবীর বিরুদ্ধে একে অপরের পোষকতা কর, তবে (জেনে রাখ) স্থনিশ্চতভাবে আল্লাহই তাঁর বন্ধ এবং জিবরাইল ও সৎকর্মপরায়ণ মু’মিনগণও, তাছাড়া অন্যান্য ফেরেশতা ও তার সাহায্যকারী। (সূরা তাহরীম-৪)
অনুরূপ বলেন ঃ
الي قوله تعالي—وَضَرَبَ الله مَثَلاً لِلَّذينَ کَفَرُوا امرَأةَ نُوحٍ وَ امرَأةَ لُوطٍ کانَتا تَحتَ عَبدينِ مِن عِبادبا صالِحَينِ فَخانَتا هُما فَلَن يُغنِيا عَنهُما مِنَ الله شَيئاً وَ قيلَ ادخُلِ النّارَ مََعَ الدّاخِلين..وَ ضَرَبَ الله مَثَلاً لِلَّذينَ اَمَنُواامرَأةَ فِرعَون اِذ قالت رَبِّ ابنِ لي عِندَکَ بَيتاً فِي الجَنَّة….وَ مَريَمَ ابنَتَ عِمرانَ
আল্লাহ কাফেরদের জন্য নূহের স্ত্রী ও লূতের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন, তারা ছিল আমার বান্দাদের মধ্যে দুই সৎ কর্মপরায়ণ বান্দার অধীন। কিন্তু তারা তাদের প্রতি বিশ্বাস ঘাতকতা করেছিল। ফলে ঐ দু’জন সঙ্গী কোন কিছুতেই মহান আল্লাহর মুখাপেক্ষীতা থেকে তাদেরকে মুক্ত করেনি। এবং তাদেরকে বলা হলঃ তোমরা উভয়ে দোয়খে প্রবেশকারীদের সাথে দোযখে প্রবেশ কর।’
আল্লাহ মুমিনদের জন্য দিচ্ছেন ফির ’আত্তন পতœীর দৃষ্টান্ত, প্রার্থণা করেছিলঃ হে আমার প্রতিপালক ! তোমার সন্নিধানে জান্নাতে আমার জন্য একটি গৃহ নির্মাণ করো এবং আমাকে উদ্ধার কর ফির’আত্তন ও তার দুষ্কৃতি হতে এবং আমাকে উদ্ধার কর যালিম সম্প্রদায় হতে আরও দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন ‘নমরান তনয়া মারইয়ামের……..।(সূরা তাহরীমঃ১০-১২)
আল্লাহর রাসূল (সাঃ) কিয়ামত দিবসে কোন কোন সাহাবার অবস্থা সম্পর্কে বলেনঃ
وَ انَّهُ يُجاءُ مِنْ اُمَّتى، فَيُؤخَذ بِهِم ذاتَ الشِّمالِ فَأقُولُ يا رَبِّ اُصَيْحابى، فَيُقال: إنَّكَ لاتَدْرى ما اَحْدَثُوا بَعْدَك، فَأقُول كَما قالَ الْعَبْدُ الصَّالح: «وَ كُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهيداً ما دُمْتُ فيهِمْ فَلَمَّا تَوَفَّيْتَني كُنْتَ أَنْتَ الرَّقيبَ عَلَيْهِمْ وَ أَنْتَ عَلى كُلِّ شَيْءٍ شَهيدٌ» فَيُقال: إنَّ هؤُلاءِ لَم يَزالُوا مُرتدّين عَلى أعْقابِهِم مُنْذُ فارَقْتَهُم
؛কিয়ামত দিবসে আমার উম্মতের মধ্যে একদল লোককে আনা হবে এবং জাহান্নমের েিক নিয়ে যাওয়া হবে! আমি বলবোঃ হে আমার প্রভু! এরা আমার সাহাবী! বলা হবেঃ তুমি জান না যে তোমার পর কী বিদআত করেছে! আমিও তাদেরকে বলবো যে, আল্লাহর সৎকর্মপরায়ণ বান্দা (ঈসা ইবনে মারিয়াম (আঃ)) বলেছিলেনঃ “যখন আমি তাদের মাঝে ছিলাম, আমি ছিলাম তাদের [কার্যকলাপের] উপর সাক্ষী। কিন্তু যখন তুমি আমাকে তুলে নিলে, তখন তুমি ছিলে তাদের উপর পর্যবেক্ষক এবং তুমি সর্ববিষয়ে সাক্ষী ।, (সূরা মায়েদা -১১৭)
অতএব, বলা হবে এ দলটি যখন তুমি তাদের থেকে পৃথক হয়েছিলে অনতিবিলম্বে দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলে এবং তাদের অতীতে ফিরে গিয়েছিল। [বোখারী সূরা মায়েদার তাফসীর , অধ্যায়ঃ ইয়া আয়্যূহার রাসূল বাল্লিগ মা উনযিলা ইলাইক” ও সূরা আম্বিয়ার তাফসীর। তিরমিযী কিয়ামতের বৈশিষ্ট্য অধ্যায়সমূহ হাশর সম্পর্কে রেওয়ায়েতসমূহ, সূরা তা’হা-এর তাফসীর ।]
অপর এক রেওয়ায়েতে এসেছে
لَيَردَنّ عَلَىَّ ناسٌ مِنْ أصْحابى الْحَوضَ حَتّى عَرَفْتُهُم اخْتَلَجُوا دُونى فَأقُولُ: أصْحابى، فَيَقُولُ: لا تَدْرى ما أحْدثُوا بَعْدَكَ؛.
‘আমার সাহাবীদের মধ্যে একদল লোককে হাউজে কাওসারে আমার নিকট আনা হবে এবং আমি তাদেরকে চিনতে পারব। তাদেরকে আমার নিকট থেকে নিয়ে যাওয়া হবে। তখন আমি বলবো তারা আমার সাহাবী ! বলবেঃ আপনি জানেন না যে আপনার যাওয়ার পর এরা কী বিদআত প্রতিষ্ঠা করেছিল। [বোখারী, কিতাবে দাওয়াত, বাবু ফিল ‘হাউজ ’নবনে মাজা, কিতাবে মানাসিক, হাদীস নং ৫৮৩০, মুসনাদে আহমাদ খঃ১ পৃঃ৪৫৩,খঃ৩ পৃঃ২৮ খঃ৫ পৃঃ৪৮]
সহী মুসলিমে এরূপ বর্ণিত হয়েছেঃ
لَيَردَنَّ عَلَىَّ الْحَوْض رِجالٌ مِمَّنْ صاحَبَنى حَتّى إذا رَأيْتُهُم رَفَعوا إلَىَّ اخْتَلَجُوا دُونى، فَلَأقُولَنَّ: أىْ رَبِّ اُصَيْحابى، فَلَيُقالَنَّ لى: إنَّك لا تَدْرى ما أحْدَثُوا بَعْدَك؛.
আমার সাহাবীদের মধ্য থেকে একদল লোককে হাউজে কাওসারে আমার নিকট আনা হবে। আমি তাদেরকে আমার নিকট আনা হবে। আমি তাদেরকে আমার নিকট আসতে দেখব। তখন তাদেরকে আমার প্রভু! এরা আমার সাহাবী! তখন আমাকে বলা হবে! তুমি জাননা যে, তোমার যাওয়ার পর এরা কী বিদআত করেছিলো । [সহী মুসলিম , কিতাবে ফাযায়েল, বাবে এসবাতে হাউজে নাবিয়্যিনা, হাদীস৪০।]
৩। মুমিন ও মুনাফিকদেরকে শনাক্তকরণের মানদন্ডঃ
আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) সাহাবীদের মধ্যে যেহেতু মুনাফিকরা ও ছিলো এবং আল্লাহ ব্যতীত কেউই তাদেরকে চিনতো না; সেহেতু মহানবী (সাঃ) বলেছেনঃ আলীকে মুমিন ব্যতীত কেউ ভালবাসে না এবং মুনাফিক ব্যতীত কেউ তার সাথে শক্রতা করে না।
এহাদীসটিকে ইমাম আলী (আঃ) [ইমাম আলী (আঃ), মহানবী (সাঃ) -এর চাচা আবু তালিবের পূত্র । তিনি কা’বা গৃহের অভ্যন্তরেপৃথিবীতে এসেছিলেন । যেমনটি হাকেম তার মুস্তাদরাকে (খঃ৩০,পৃঃ৪৮৩) তা বর্ণনা করেছেন। অনুরূপ, মালেকী ‘আল ফুচুলুল মুহিম্মাহ’ তে, মোগাযেলী শাাযোয়ী’ ‘মাণেকিবে’ এবং শাবলানযী ‘নূরুল আবসারে'(পৃঃ৬৯) উল্লেখ করেছেন হযরত আলী (াাঃ) এর জন্ম হয়েছিল া¤মূল ফিলের (হস্তী সালের ) ত্রিশ বছর পর ১৩রজব। ৩৫ হিরী সনে মুহজিররা ও আনসাররা তার হাতে বাইয়াত করেছিলো। হিজরী ৪০ সনে রমজান মাসের উনিশের রাতে ইবনে মূলজাম মুরাদী তাঁকে ‘ুরবারী দিয়ে’ আঘাত করে। আর ২১ রমজান তিনি শাহাদাত বরণ করেন। সহীসমূহের লেখকগণ তাঁর থেকে ৫৩৬টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। হযরত আলী (আঃ) সম্পর্কে আলইস্তিয়াব, উসদুল গাবা, আলআসাবা এবং জাওয়ামেয়ূল সিরাত (পৃঃ২৭৬)-এ বর্ণিত হয়েছে। এবং মুনাফিকদের সম্পর্কে তাঁর রেওয়ায়েত সহী মুসলিম (খঃ১, পৃঃ৬১) সহী তিবমিযি (খঃ১৩ পৃঃ১৭৭), সুনানে ইবনে মাজা,ভূমিকার একাদশ অধ্যায়, সূনানে নাসাঈ (খঃ২,পৃঃ২৭১) আলামতে মুমিন অধ্যায় ও আলামতে মুনাফিক অধ্যায়, খাসায়েসে নাসাঈ (পৃঃ৩৮), মুসনাদে আহমাদ (খঃ১, পৃঃ৮৪,৯৫,১২৮), তারিখে বাগদাদ (খঃ২, পৃঃ২৫৫, খঃ৮,পৃঃ৪১৭,খঃ১৬, পৃঃ৪২৬), হিল্লিয়াতুল আউলিয়া আংনাঈম (খঃ৪, পৃঃ১৮৫)। তিনি বলেনঃ এ হাদীসটি সহী হাদীস এবং সকলেই এ ব্যাপারে একমত। তারিখুল ইসলামে যাহাবী (খঃ২,পৃঃ১৯৮), তারিখে ইবনে কাসির (খঃ৭, পৃঃ৩৫৪) এবং অনুরূপ, হযরত আলী (আঃ) সম্পর্কে আলইস্তিয়াব (খঃ২, পৃঃ৪৬১) উসদুল গাবা (খঃ৪, পৃঃ২৯২) কানযুল উম্মাল (কঃ১৫, পৃঃ১০৫), রিয়াজুল নুদরাহ (খঃ২,পৃঃ২৮৪) তে বর্ণিত হয়েছে। ], উ¤মূল মুমিনীন উম্মে সালমা [উ¤মূল মূমিনীন ‘উম্মে সালমা’ হেন্দ, আবু উম্মিয়াত ইবনেমুগহিরাহ কোবেশী, আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) পূর্বে‘ ‘ধাবু সালমাহর’ স্ত্রী ছিলেন। তিনি তাঁর স্বামীর সাথেই ইসলাম গ্রহণ করোছিলেন এবং একসাথে হাবশায় হিজরত করোছিলেন অতঃপর মদিনায়, যখন আবু সালমাহ ওহুদে আহত হয়েছিলেন ও হিজরী তৃতীয় সনে শাহাদাৎ বরণ করেছিলেন, তখন তিনি রাসূল (সাঃ) এর সাথে বিবাহ বন্ধান আবদ্ধ হয়েছিলেন। উম্মে সালমাহ ইমাম হুসাইন (াাঃ)- এর শাহাদাতের পর ৬০ হিজরীতে মৃত্যু বরণ করেন। সহী সমূহের লেখব গণ তাঁর থেকে ৩৭৮ বর্ণনা করেছেন। তাঁর ও তাঁর প্রথম স্বামী সম্পর্কে বিস্তারিত জানার জন্য উসদুল গাবাহ’ জাওয়ামেয়ূস সিরাহ (পৃঃ২৭৬) এবং তাকরীরুল তাহযীব (খঃ২,পৃঃ৬১৭) দ্রষ্টব্য। মুনাফিকদের সম্পর্কে তাঁর নিকট থেকে বর্ণিত হাদীসমূহ সহী তিরমিযি (কঃ১৩, পৃঃ১৬৮) মুসনাদে আহমাদ (খঃ৬,পৃঃ২৯২), আলইস্তিয়ার (খঃ২, পৃঃ৪৬০) বিভিন্ন পন্থায়, তারিখে ইবনে কাসির (খঃ৭ পৃঃ৩৫৪, কানযুল উম্মাল (খঃ৬, পৃঃ১৫৮) প্রথম প্রকাশে এসেছে।]আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস [আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ইবনে, আব্দুল মুত্তালিব, মহানবী (সাঃ)-এর চাচাত ভাই হিজরতের তিন বছর পূর্বে পৃথিবীতে এসেছিলেন এবং ৬৮বছর বয়সে তায়েফে মৃত্যুবরণ করেন। সহীসমূহের লেখকগণ তাঁর থেকে ১৬৬০টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার সম্পর্কে উসদুল গাবাত, আলইসাবাত ও জাওয়ামেয়ূল সিবাতে (পৃঃ২৭৬) বর্ণনা করা হয়েছে।] আবু যার গিফারী [আবু যার জুনদাব বা ুরাইদ ইবনে জুনাদা, তার ইসলাম গ্রহণ ছিল প্রথম যুগে কিন্তু হিজরত ছিল বিলম্বে। বদর যুদ্ধের পর রাসূলের (সাঃ) সাথে অন্য সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ৩২ হিজরীতে নির্বাসিত অবস্থায় রাবাযাহ তে মৃত্যুবরণ করেন। সহীর লেখকগণ তাঁর নিকট থেকে ২৮১টি হাদীস বর্ণনা করেছেল। তার সম্পর্কে তাকরীব (খঃ২পৃঃ৪২০), জাওয়ামেউস সিরাত (পৃঃ২৭৭) এবং আব্দুল্লাহ ইবনে সাবা’র দ্বিতীয় খন্ডে বর্ণিত হয়েছে।], আনাস ইবনে মালেক[আনাস ইবনে মালেক আনসারী সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি দশ বছর আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) খাদেম ছিলেন। তিনি তার দু’হাত শ্বেত রোগের কারণে কজি পর্যন্ত বিশ্বেষ পদ্ধতিতে ডেকে রাখতেন। আর এটা ছিল গাদীরের হাদীস লুকানোর কারণে তার উপর ইমাম আলী (আঃ)-এর বিশেষ অভিশাপের ফল। তিনি হাদীসে গাদীর লুকালে ইমাম আলী (আঃ) মহান আল্লাহর নিকট কামনা করেন যে তাকে এমন শ্বেতযোগ দিন যেন পাগড়ী দিয়ে ডাকা না যায়। এ ঘঁনার সার সংক্ষেপ ‘আল আ’লাকুল নাফসিয়া’(পৃঃ১২২) এবং এর বিস্তারিত শারহে নাহজুল বালাগার (খঃ৪, পৃঃ৩৮৮) বর্ণিত হয়েছে। তিনি ৯০ হিজরীর পর বসরায় মৃত্যুবরণ করেন। সহীসমূহের লেখকগণ ২২৮৬টি হাদীস তার থেকে বর্ণনা করেছেন। তার সম্পর্কে উসদুল গাবা, তাকরীবুত তাহযীব ও জাওয়ামূল সিরাতে (পৃঃ২৭৬) এসেছে। মুনাফিকদের সম্পর্কে তার থেকে রেওয়ায়েত কানযুল উম্মালে (খঃ৭, পৃঃ১৪০) প্রথম প্রকাশনায় বিদ্যমান।
], এমরান ইবনে হাসিন [আবু নাজিদ, এমরান ইবনে হাসীন খাযায়ী কা’বী,খাইবার বিজয়ের বছর ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন এবং মহানবী (সাঃ)-এর সাঙ্গী হণ। কুফায় বিচারকার্য চালান এবং বসরায় ৫২ হিজরীতে মৃত্যুবরণ করেন। সহীসমূহের লেখকগন তার নিকট থেকে ১৮০টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। মুনাফিকদের সম্পর্কে তার থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েত কানযুল ইম্মালে (খঃ৭ পৃঃ১৪০) প্রথম প্রকাশে বর্র্ণিত হয়েছে । তার সম্পর্কে বর্ণনা তাক্বরীবুত তাহযীব (খঃ২ পৃঃ৭২) জাওয়ামেয়ূল সিরাতে (পৃঃ২৭৭) এসেছে।
] সকলেই বর্ণনা করেছেন এবং রাসূলের (সাঃ) জীবদ্দশায় এটি প্রচলিত ও প্রখ্যাত ছিল। আবু যার বলেনঃ আমরা মুনাফিকদেরকে চিনতাম না যদি তারা আল্লাহ ও তার রাসূলকে মিথ্যা প্রতিপন্ন না করতো, ওয়াজীব নামাযসমূহ থেকে দূরে না থাকতো এবং আলী ইবনে আলী (আঃ) এর সাথে শক্রতা না করতো। [মুস্তাদরাকে সহীহাইন (খঃ৩, পৃঃ১২৯) কানযুল উম্মাল (খঃ১৫, পৃঃ৯১)]
আবু সাঈদ খুদরী বলেন ঃ আমরা (আনসার দল) আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) জীবদ্দশায় আলী ইবনে অবি তালিবের প্রতি শক্রতা ও হিংসা বিদ্বেষ দেখে মুনাফিকদেরকে চিনতাম। [আবু সাঈদ ইবনে মালেক ইবনে সুনান খাযরাজী খুদরী খন্দক ওপরবর্তী যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ৬৩বা৬৪ বা৬৫ সালে মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন ৭৪ সালে মৃত্যুবরণ করেছেন। সহীসমূহের লেখকগণ তার থেকে ১১৭০টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। তার সম্পর্কে উসদুল গাবায় (খঃ২ পৃঃ২৮৯)-তে তাকরীবুল তাহযীব (খঃ১পৃঃ২৮৯) এবং জাওয়ামেয়ূল সিরাতে (পৃঃ২৭৬) বর্ণিত হয়েছে। মুনাফিকদের সম্পর্কে তার হাদীস সহী তিরমিযি (খঃ১৩পৃঃ১৬৭) এবং হিল্লিয়াতুল আঊলিয়ায়ে আবু নাঈম (খঃ৬,পৃঃ২৮৪)-এ বর্ণিত হয়েছে।]
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন ঃ আমরা আল্লাহর রাসূলের (সাঃ) সময় মুনাফিকদেরকে চিনতাম হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ)-এর সাথে তাদের শক্রতা দেখে। [তারিখে বাগদাদ (খঃ৩, পৃঃ১৫৩)]
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী বলেনঃ আমরা মুনাফিকদেরকে আলী ইবনে আবি তালিবের (আঃ) সাথে শক্রতা দেখা ব্যতীত চিনতাম না। [জারের ইবনে আব্দুল্লাহ আমর আনসারী, সাহাবীর পুত্র সাহাবী, আকাবার বাইয়াতে পিতার সাথে উপস্থিত ছিলেন এবং ১৭টি যুদ্ধে মহানবীর (সাঃ) সাথে অংশগ্রহণ করেছিলেন। সিফ্ফীন যুদ্ধে ইমাম আলী (আঃ) এর সাথে ছিলেন। ৭০ হিজরীর পর মদিনায় মৃত্যুবরণ করেন। সহী সমূহে লেখকগণ তাঁর থেকে ১৫৪০টি হাদীসে বর্ণনা করেছেন। উসদুল গাবা (খঃ১,পৃঃ২৫৬ও ২৫৭)-তে , তাকরীবুল তাহযীবে (খঃ১, পৃঃ১২২) এবং জাওয়ামেডল সিরাতে (পৃঃ২৭৬) তার সম্পর্কে বর্ণনা এসেছে। মুনাফিকদের সম্পর্কে তার বর্ণনা আলইস্তিয়াব (খঃ২,পৃঃ৪৬২), রিয়াজুল নুদরাত (খঃ২পৃঃ২৮৪) তারিখে বাহাবী (খঃ২ পৃঃ১৯৮) এবং মাজমাউল যাওমায়েদ (খঃ৯,পৃঃ ১৩৩)-এ বিদ্যমান।]
আর তা এ রেওয়ায়েতের ফলে এবং আলী (আঃ) সম্পর্কে রাসূল (সাঃ) এর এ বক্তব্যের ফলে যে তিনি বলেন ঃ
أللَّهُمَّ والِ مَنْ والاه وَ عادِ مَنْ عاداه؛
‘হে আল্লাহ! যে আলীকে ভালবাসে তুমি তাকে ভালবাস এবং যে আলীর সাথে শক্রতা করে তুমি তার সাথে শক্রতা কর।’ [সহী তিরমিযি (খঃ১৩, পৃঃ১৬৫) মানাক্বিবে আলী (আঃ) অধ্যায়, সুনানে ইবে মাজা, ফাযলে আলী অধ্যায়, হাদীস ১১৬। খাসায়েসে নাসাঈ (পৃঃ৪ও ৩০) মুসনাদে আহমাদ (খঃ১পৃঃ৮৪,৮৮,১১৮,১১৯,১৫২,৩৩০এবং খঃ৪, পৃঃ২৮১,৩৬৮, ৩৭০,৩৭২,খঃ৫,পৃঃ৩০৭,৩৪৭ ৩৫০,৩৫৮,৩৬১,৩৬৬,৪১৯,৫৬৮), মুস্তাদরাক সহী হাইন (খঃ২,পৃঃ২২২-২২৫), তারিখে বাগদাদ (খঃ৭,পৃঃ৩৭৭, খঃ৮ পৃঃ২৯০, খঃ১২ পৃঃ৩৪৩) এবং অন্যান্য অনেক উৎস]
এগুলোর ফলে, আহলে বাইতের (আঃ) অনুসারীগণ ঐ সকল সাহাবা থেকে শিক্ষ ও জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করে যারা আলীর সাথে শক্রতা করেছিলো এবং আলীকে ভালবাসত না। কারণ,এ আশংকা থাকে যে ঐ সাহাবী সে সকল মুনাফিকদের একজন হতে পারে যাকে আল্লাহ ব্যতীত কেউ চিনতোনা।