প্রশ্ন: দুই ঈদ ব্যাতীত কি আর কোন ঈদ আছে?

সম্মানিত আহলে সুন্নাতের শরীয়ত এর মধ্যে শুধু মাত্র দুটি নয় আরো অসংখ্য ঈদ রয়েছে যার মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ তম ঈদ হচ্ছে ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ (ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।
=================================================
সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ শরীফ তথা ঈদে মীলাদে হাবীবুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিরুধীতা করতে গিয়ে এক শ্রেণীর বাতিল ফেরকার লোকেরা বলে থাকে ঈদে মীলাদুন্নবী আবার কেমন ঈদ এবং শরীয়তে নাকি দু ঈদ ব্যতিত আর কোন ঈদ নাই !! (নাউযুবিল্লাহ)

মূলত দুই ঈদ ব্যাতীত আর কোন ঈদ নাই। এই কথার মত হাস্যকর কথা আমরা কমই শুনেছি। যারা এই কথা বলে তাদের জীবন কতটা যে নিরানন্দ তা মহান আল্লাহ পাক ‍তিনিই ভালো জানেন। মহান আল্লাহ পাক হয়তো তাদের জীবন থেকে সকল সুখ শান্তি উঠিয়ে নিয়েছেন তাদের বেয়াদবির কারনে। যারা বলে দুই ঈদ ব্যতীত আর কোন ঈদ নাই, তারা পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীস শরীফ অস্বীকারকারী। আর পবিত্র কুরআন শরীফ এবং পবিত্র হাদীস শরীফ অস্বীকারকারীরা কাফির।
পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে, “যে আমার নামে মনগড়া মিথ্যা কথা বললো, সে দুনিয়াই থাকতেই তার স্থান জাহান্নামে নির্ধারন করে নিলো। (বুখারী শরীফ ১১০)

সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে অসংখ্য ঈদ থাকার পরও যারা বলে দুই ঈদ ব্যাতীত ঈদ নাই তারা পবিত্র হাদীস শরীফ অস্বীকারকারী, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার প্রতি মিথ্যারোপকারী। কারন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনি নিজেই দুই ছাড়া আরো অনেক ঈদের কথা উল্লেখ করেছেন।

ক) যেমন পবিত্র জুমুয়ার দিন মুসলমান গণ উনারদের জন্য ঈদের দিন। পবিত্র সহীহ হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছেঃ
عن حضرت عبيد بن السباق رضي الله عنه مرسلا قال قال رسول اللهصلي الله عليه و سلم في جمعة من الجمع يا معشر المسلمين ان هذا يومجعله الله عيدا
অর্থ : হযরত ওবায়িদ বিন সাব্বাক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু মুরসাল সূত্রে বর্ননা করেন, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক জুমুআর দিন বলেন, হে মুসলমান সম্প্রদায় ! এটি এমন একটি দিন যাকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ঈদ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন !” (ইবনে মাজাহ : হাদীস নম্বর ১১৯৮, মুয়াত্তা মালিক- কিতাবুত ত্বহারাত: হাদীস নম্বর ১৪৪, বায়হাক্বী : হাদীস ১৩০৩, মা’য়ারিফুল সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী: হাদীস ১৮০২, মুসনাদে শাফেয়ী: হাদীস ২৬৮, মুজামুল আওসাত তাবরানী ৩৪৩৩, মিশকাত শরীফ)

عَنْ حَضْرَتْ عُبَيْدِ ابْنِ السَّبَّاقِ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي جُـمُعَةٍ مِنَ الْـجُمَعِ يَا مَعْشَرَ الْمُسْلِمِيْنَ اِنَّ هٰذَا يَوْمٌ جَعَلَهُ اللهُ عِيْدًا فَاغْتَسِلُوْا وَمَنْ كَانَ عِنْدَهٗ طِيْبٌ فَلَا يَضُرُّهٗ اَنْ يـَّمَسَّ مِنْهُ وَعَلَيْكُمْ بِالسّوَاكِ
অর্থ : “হযরত উবাইদ বিন সাব্বাক্ব রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি এক পবিত্র জুমুআ উনার দিনে ইরশাদ মুবারক করেন, এ পবিত্র জুমআহ উনার দিন হচ্ছেন এমন একটি দিন, যে দিনকে মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র ঈদ উনার দিন সাব্যস্ত করেছেন। তাই তোমরা গোসল কর আর যার নিকট সুগন্ধি রয়েছে, সে তা হতে স্পর্শ করলে ক্ষতি নেই। মিসওয়াক ব্যবহার করা তোমাদের কর্তব্য।” সুবহানাল্লাহ! (মুয়াত্তা মালিক শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৪৪, ইবনে মাজাহ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১১৯৮, মা’য়ারিফুস সুনান ওয়াল আছার বায়হাক্বী শরীফ : হাদীছ শরীফ ১৮০২, মুসনাদে শাফিয়ী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ২৬৮, আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৩৪৩৩)


এই জুমুআর দিন কতবড় ঈদের দিন ও শ্রেষ্ঠ দিন জানেন কি ? দেখুন পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قال النبى صلى الله عليه وسلم ان يوم الـجمعة سيد الايام واعظمها عندالله وهو اعظم عند الله من يوم الاضحى ويوم الفطر

অর্থ: হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, জুমুআর দিন সকল দিনের সর্দার এবং সকল দিন অপেক্ষা আল্লাহ পাক উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। এটি ঈদুল আযহার দিন ও ঈদুল ফিতরের দিন অপেক্ষাও মহান আল্লাহ পাক-উনার নিকট অধিক শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত। (ইবনে মাজাহ : হাদীস নম্বর ১১৩৭,মুজামুল কবীর তাবরানী ৪৫১১, শুয়াইবুল ঈমান বায়হাকী : হাদীস ২৯৭৩, মিশকাত শরীফ)

এবার দেখূন কেন জুমুয়ার দিন ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চাইতে বেশি শ্রেষ্ঠ ও সম্মানিত:
ان من افضل ايامكم يوم الـجمعة فيه خلق ادم وفيه قبض
অর্থ: ‘তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে উত্তম দিন হচ্ছে জুমুআর দিন। এ দিনে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনাকে সৃষ্টি মুবারক করা হয়েছে এবং এ দিনেই তিনি বিছাল শরীফ লাভ করেছেন।’ (নাসায়ী শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ১৩৮৫, মুসলিম শরীফ- কিতাবুল জুমুয়া: হাদীস ৮৫৫, তিরমিযী :হাদীস ৪৯১, মুসনাদে আহমদ : ৮৯৫৪, হাদীস নম্বর ৮৯ ইবনে মাজাহ : হাদীস ১৭০৫, সুনানে আবু দাউদ –কিতাবুস সালাত: হাদীস ১০৪৭, ইবনে খুযায়মা: হাদীস ১৬৩২)

দেখা যাচ্ছে হযরত আদম আলাইহিস সালাম উনার সৃষ্টি, দুনিয়ায় আগমন, বিছাল শরীফ এর জন্য পবিত্র জুমুয়ার দিন এত শ্রেষ্ঠ যে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার চাইতেও বেশি শ্রেষ্ঠ, এবং ঈদের দিন।

খ) সহীহ হাদীস শরীফ উনার দ্বারা প্রমানিত সম্মানিত আরাফার দিন ও ঈদের দিনঃ

عَنْ حَضْرَتْ عَمَّارِ بْنِ اَبِـي عَمَّارٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ قَالَ قَرَاَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰـى عَنْهُ ‏‏(‏اَلْيَوْمَ اَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَاَتْـمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِيْ وَرَضِيْتُ لَكُمُ الْاِسْلاَمَ دِيْنًا‏)‏ وَعِنْدَهٗ يَهُوْدِيٌّ فَقَالَ لَوْ اُنْزِلَتْ هٰذِهٖ عَلَيْنَا لَاتَّـخَذْنَا يَوْمَهَا عِيْدًا‏.‏ قَالَ حَضْرَتْ اِبْنُ عَبَّاسٍ فَإِنَّـهَا نَزَلَتْ فِيْ يَوْمِ عِيْدٍ فِيْ يَوْمِ جُـمُعَةٍ وَيَوْمِ عَرَفَةَ‏.‏
অর্থ : “হযরত আম্মার ইবনে আবূ আম্মার রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি একদা ‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করে দিলাম। ……. (পবিত্র সূরা মায়িদা শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩)’ এ আয়াত শরীফ খানা শেষ পর্যন্ত তিলাওয়াত করলেন। তখন উনার নিকট এক ইয়াহূদী ছিল, সে বলে উঠলো, যদি এমন আয়াত শরীফ আমাদের ইয়াহূদী সম্প্রদায়ের প্রতি নাযিল হতো, আমরা আয়াত শরীফ নাযিলের দিনটিকে ঈদের দিন হিসেবে ঘোষণা করতাম। এটা শুনে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বললেন, এ আয়াত শরীফ সেই দিন নাযিল হয়েছে যেদিন ঈদ ছিলো- (১) জুমুয়ার দিন এবং (২) আরাফার দিন!” (তিরমিযী শরীফ : হাদীছ শরীফ ৩৩১৮)

عَنْ حَضْرَتْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ رَحْـمَةُ اللهِ عَلَيْهِ اَنَّ الْيَهُوْدَ قَالُوْا لِعُمَرَ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِنَّكُمْ تَقْرَءُوْنَ اٰيَةً لَوْ اُنْزِلَتْ فِيْنَا لَاتَّـخَذْنَا ذٰلِكَ الْيَوْمَ عِيْدًا‏.‏ فَقَالَ حَضْرَتْ عُمَرُ عَلَيْهِ السَّلَامُ اِنّـيْ لَاَعْلَمُ حَيْثُ اُنْزِلَتْ وَاَىُّ يَوْمٍ اُنْزِلَتْ وَاَيْنَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَيْثُ اُنْزِلَتْ اُنْزِلَتْ بِعَرَفَةَ وَرَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاقِفٌ بِعَرَفَةَ.

অর্থ : “হযরত তারিক ইবনে শিহাব রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইয়াহূদী লোকেরা সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম উনাকে বললো, আপনারা এমন একটি আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে থাকেন তা যদি আমাদের সম্পর্কে নাযিল হতো, তবে এ দিনটিকে আমরা খুশির দিন হিসাবে গ্রহণ করতাম। সাইয়্যিদুনা হযরত ফারূক্বে আ’যম আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আমি জানি, ওই আয়াত শরীফ খানা কখন (কোথায়) ও কোন দিন নাযিল হয়েছিল। আর যখন তা নাযিল হয়েছিল তখন নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোথায় অবস্থান মুবারক করছিলেন (তাও জানি)। পবিত্র আয়াত শরীফ খানা আরাফা উনার দিন নাযিল হয়েছে; নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি তখন আরাফা উনার ময়দানেই অবস্থান মুবারক করছিলেন।” (মুসলিম শরীফ : কিতাবুত তাফসীর : হাদীছ শরীফ নং ৭২৪৪, নাসাঈ শরীফ শরীফ : কিতাবুল হজ্জ : হাদীছ শরীফ নং ৩০০২, মুসনাদে আহমদ শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ১৯০)

উক্ত হাদীস শরীফসমূহ উনাদের মধ্যে জুমুয়ার দিনের সাথে সাথে আরাফার দিনকেও ঈদের দিন হিসাবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।

গ) সহীহ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত আইয়ামে তাশরীকের দিন ঈদের দিনঃ
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ إِنَّ يَوْمَ عَرَفَةَوَيَوْمَ النَّحْرِ وَأَيَّامَ التَّشْرِيقِعِيدُنَا أَهْلَ الإِسْلاَمِ
অর্থ: হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, আরাফার দিন, নহর বা কুরবানীর দিন এবং আইয়্যামে তাশরীক (অর্থ্যাৎ ১১, ১২ ও ১৩ ই জিলহজ্জ) আমাদের মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন। (দলীল: নাসাঈ শরীফ কিতাবুল হজ্জ : হাদীস নম্বার ৩০০৪, আবু দাউদ – কিতাবুছ সিয়াম : হাদীস ২৪১৯, তিরমিযী শরীফ- কিতাবুছ ছিয়াম: হাদীস ৭৭৩)

ঘ) পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ রয়েছে মুসলমান গণ উনাদের জন্য প্রতি মাসে চারদিন বা পাঁচদিন ঈদের দিনঃ
لكل مؤمن في كل شهر اربعة اعياد اوخمسة اعياد
অর্থ : হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ মুবারক করেন, মু’মিন মুসলমানদের, প্রতি মাসে চারটি অথবা পাঁচটি ঈদ রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিমাসে চারটি অথবা পাঁচটি সোমবার শরীফ হয়ে থাকে।’ ( কিফায়া শরহে হিদায়া ২য় খন্ড – বাবু ছালাতিল ঈদাইন, হাশিয়ায়ে লখনবী আলাল হিদায়া )
ঙ) রোজদারদের জন্য ইফতারের সময় ঈদের সময়ঃ


عَنْ حَضْرَتْ اَبِـيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ‏ كُلُّ عَمَلِ ابْنِ اٰدَمَ يُضَاعَفُ الْـحَسَنَةُ بِعَشْرِ اَمْثَالِـهَا اِلٰى سَبْعِ مِائَةِ ضِعْفٍ اِلٰى مَا شَاءَ اللهُ يَقُوْلُ اللهُ اِلَّا الصَّوْمَ فَاِنَّهٗ لِيْ وَاَنَا اَجْزِيْ بِهٖ يَدَعُ شَهْوَتَهٗ وَطَعَامَهٗ مِنْ اَجْلِيْ لِلصَّائِمِ فَرْحَتَانِ فَرْحَةٌ عِنْدَ فِطْرِهٖ وَفَرْحَةٌ عِنْدَ لِقَاءِ رَبّهٖ وَلَـخُلُوْفُ فَمِ الصَّائِمِ اَطْيَبُ عِنْدَ اللهِ مِنْ رِيْحِ الْمِسْكِ
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আদম সন্তানের প্রতিটি আমল মহান আল্লাহ পাক উনার মুবারক ইচ্ছা অনুযায়ী দশগুণ হতে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। তবে রোযা ব্যতীত। মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, রোযা আমার জন্য। আমি স্বয়ং রোযার প্রতিদান দিবো। বান্দারা আমার জন্য তাদের নফসানিয়ত ও পানাহার তরক করেছে। রোযাদারের জন্য দুটি ঈদ বা খুশি। একটি হলো তার প্রতিদিন ইফতারের সময়। আর অন্যটি হলো মহান আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাতের সময়।” (বুখারী শরীফ : কিতাবুস

সাওম; মুসলিম শরীফ : কিতাবুস সাওম : হাদীছ শরীফ নং ১১৫৩; ইবনে মাজাহ শরীফ : কিতাবুস সাওম : হাদীছ শরীফ নং ১৬৩৮; মিশকাত শরীফ, সুনানে নাসাঈ শরীফ : কিতাবুস সাওম : হাদীছ শরীফ নং ২২১৫)

দেখুন, উক্ত হাদীস শরীফে রোজাদার দের জন্য দুটি ঈদ বা খুশির কথা বলা হইছে। একটা তার ইন্তেকালের পর আল্লাহ পাক উনার সাক্ষাত। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে , ইফতার করার সময়।
ইফতার দুই প্রকার –
(১) ইফতারে কুবরা, (২) ইফতারে ছোগরা।
কুবরা হচ্ছে, ঈদুল ফিতর যা পবিত্র হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমানিত। আর ছুগরা হচ্ছে, রোজাদার প্রতিদিন মাগরিবের সময় করে থাকেন।
এটি প্রতিবছর ২৯ বা ৩০ দিন হয়ে থাকে। এছাড়া সুন্নত রোজা হিসাবে আরো রোজা রয়েছে, যেমন- মুহররম শরীফ মাসে ৯,১০ বা ১০,১১ তারিখ দুইটি রোজা এবং এর সাথে আরো ১ টি রাখা হয়, মোট ৩ টি। শাওয়াল শরীফ মাসে ৬ টি রোজা। যিলহজ্জ শরীফ মাসে ১ হতে ৯ তারিখ পর্যন্ত ৯ টি রোজা। এবং বাকি ১১ মাসে ৩টি করে সুন্নত রোজা , মোট ৩৩ টি রোজা।
এই রোজাদার দের প্রতিটি ইফতার হলো ঈদ। সুবহানাল্লাহ্!

আসুন আমারা মোট ঈদ সংখ্যা হিসাব করি —
বছরে ৫২ টি জুমাবার + ৫২ টি সোমবার শরীফ + আরফার দিন+গাদীরের দিন+ আইয়ামে তাশরীক ৩ দিন+ রমাদ্বান শরীফে ৩০ টি + বাকি ১২ মাসে ৩ করে ৩৪ টি + যিলহজ্জ শরীফ মাসে ৯ টি + পহেলা রজব ১ টি + ২৭ শে রজব ১টি + ১৫ শাবান ১ টি = (৫২+৫২+৩০+১+১+৩+৩৩+৯+১+১)
= ১৮৩ টি ঈদ ! সুবহানাল্লাহ্ !

সূতরাং হাদীস শরীফ থেকেই ১৮৩ টা ঈদ প্রমাণিত হলো।

চ) এছাড়াও বিশেষ কোন নিয়ামত নাযিলের দিন ঈদের দিন:
قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِّنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِّأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِّنكَ ۖ وَارْزُقْنَا وَأَنتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ
অর্থঃ ঈসা ইবন মারিয়ম আলাইহিস সালাম বললেন- “আয় আমাদের রব আল্লাহ পাক ! আমাদের জন্য আপনি আসমান হতে খাদ্যসহ একটি খাঞ্ঝা নাযিল করুন। খাঞ্ঝা নাযিলের উপলক্ষটি অর্থাৎ খাদ্যসহ খাঞ্ঝাটি যেদিন নাযিল হবে সেদিনটি আমাদের জন্য, আমাদের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সকলের জন্য ঈদ স্বরূপ হবে এবং আপনার পক্ষ থেকে একটি নিদর্শন হবে। আমাদের কে রিযিক দান করুন। নিশ্চয় আপনিই উত্তম রিযিকদাতা। (সূরা মায়িদা শরীফ: পবিত্র আয়াত শরীফ ১১৪)

ছ) শবে বরাত শরীফ হচ্ছে ফেরশতা আলাইহিমুস সালাম গণ উনাদের ঈদের দিন:
“লাইলাতুর বরাত ও লাইলাতুল কদর হচ্ছে ফিরিশতা আলাইহিমুস সালাম গণ উনাদের জন্য ঈদের দিন” (গুনিয়াতুত ত্বলেবীণ ৩৬৫ পৃষ্ঠা)

জ) দুইয়ের অধিক ঈদের কথা একসাথে পবিত্র হাদীস শরীফ উনার মধ্যে উল্লেখ আছে:

عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَيّنُوا اَعْيَادَكُمْ بِالتَّكْبِيْرِ.
অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, তোমরা তোমাদের ঈদগুলোকে তাকবীর ধ্বনী দ্বারা সৌন্দর্য্যমন্ডিত করো।” (আল্ মু’জামুল আওসাত লিত্ ত্ববারানী শরীফ : হাদীছ শরীফ নং ৪৫০৯)

হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আলোচ্য হাদীস শরীফ উনার মধ্যে اعياد (আইয়াদ) শব্দ ব্যবহার করেছেন। আর اعياد (আইয়াদ) শব্দ ঈদ عيد শব্দের বহুবচন। অর্থাৎ একটি ঈদকে আরবীতে বলা হয়عيد (ঈদ) দু’টি হলেعيدان (ঈদাইনে) আর দু’য়ের অধিক ঈদকে বলেاعياد (আইয়াদ) । সূতরাং হাদীস শরীফ উনার মধ্যে উল্লিখিত আইয়াদ শব্দ দ্বারা প্রমানিত হলো দুই ঈদের বেশি ঈদ রয়েছে। অতএব হযরত নবী করীম ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ শব্দ চয়নই প্রমাণ করে ঈদ দু’য়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। বরং অসংখ্য হতে পারে।

এই পবিত্র সহীহ হাদীস শরীফ থেকেই দেখা গেলো, এক হাদীস শরীফেই তিনটা ঈদের কথা বলা হয়েছে। এখন বলুন কিভাবে বলা যায় দুই ঈদের বেশি ঈদ নাই? একমাত্র চরম স্তরের মূর্খ ছাড়া কেউ বলতে পারে না যে দুই ঈদের ব্যতীত আর ঈদ নাই।
অতএব প্রমানিত হলো যে, শরীয়তে দুই ঈদ ব্যতীত আরো অনেক ঈদ আছে! যা পবিত্র হাদীস শরীফ দ্বারাই প্রমানিত সুতরাং যারা বলে, দুই ঈদ ব্যতীত আর ঈদ নাই তাদের কথা সম্পূর্ণ মিথ্যা এবং কুরআন শরীফ সুন্নাহ শরীফের খেলাফ ও কুফরীমূলক প্রমানিত হলো।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.