“হে বিশ্বাসীগণ! যাদের গ্রন্থ দেয়া হয়েছে, তুমি যদি তাদের কোন এক দলের অনুসরণ কর,তবে তারা তোমাদেরকে ঈমান আনার পর আবার অবিশ্বাসী করে ফেলবে।” (৩:১০০)
“আল্লাহর নিদর্শনাবলী বা আয়াত তোমাদের কাছে পড়ে শোনানোর পরও এবং তোমাদের মধ্যে রাসূল থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তোমরা অবিশ্বাস করতে পার? যারা আল্লাহর পথ অবলম্বন করবে, তারাই সরল পথে পরিচালিত হবে।” (৩:১০১)
মহানবী (সা.) মদীনায় আসার পর তাঁর নেতৃত্বে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয় এবং এর ফলে এই শহরের বিভিন্ন গোত্র ও সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি ফিরে আসে। মদীনায় ‘আওস’ও ‘খাজরাজ’নামের দুই গোত্রের মধ্যে দীর্ঘকাল ধরে দ্বন্দ্ব-সংঘাত থাকলেও মহানবীর নেতৃত্বের ছায়াতলে তাদের মধ্যে শান্তি ও ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। কোন কোন ইহুদী নেতা মুসলমানদের মধ্যে ঐক্যকে নিজেদের জন্য বিপজ্জনক মনে করে মুসলিম ঐক্যে ভাঙ্গন সৃষ্টির ষড়যন্ত্র চালাতে থাকে। তারা ঐ দুই গোত্রের কোন একজন মুসলমানকে পূর্ব শত্রুতা ও বিভিন্ন যুদ্ধের স্মৃতি প্রচারের দায়িত্ব দেয়। যাতে গোত্র প্রধানরা পুনরায় উত্তেজিত হন। ইহুদীদের এ ষড়যন্ত্রের ফলে আওস ও খাজরাজ গোত্রের মধ্যে পুনরায় যুদ্ধ লেগে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয় এবং এ অবস্থায় কোরআনের আয়াত নাজেল হয়। এই আয়াতে শত্রুদের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে মুসলমানদেরকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হচ্ছে, শত্রুরা মুসলমানদের মধ্যে অনৈক্য ও বিভক্তির ষড়যন্ত্র করছে এবং তারা এজন্যে খোদায়ী পথ-নির্দেশনা থেকে মুসলমানদেরকে দূরে সরিয়ে নিতে চায়। কারণ, নবী ও আল্লাহর কিতাবের অস্তিত্ব হলো ঐক্যের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম এবং রাসূলের নির্দেশ মেনে চলাই হচ্ছে আল্লাহর নির্দেশিত সরল সঠিক পথ। তাই মুসলমানদেরকে সবসময়ই ঐক্যের এই রজ্জু আঁকড়ে ধরতে হবে। শত্রুরা ঈমানদারদের মধ্যে কোন্দল ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টির জন্য বন্ধু সেজে উপদেশ এবং উসকানি দিলেও তাতে প্রভাবিত হওয়া যাবে না।
এই দুই আয়াতের শিক্ষণীয় দিক হলো:
প্রথমত : শত্রুরা চায় মানুষ যেন আল্লাহর নবী ও তার কিতাবের অনুসরণ না করে। তাই এমন কিছু করা উচিত নয়,যাতে শত্রুদের এই ইচ্ছে পূরণ হয়।
দ্বিতীয়ত : বর্তমানে আমরা ঈমানদার বা বিশ্বাসী এরকম অহংকার যেন আমাদের পেয়ে না বসে।কারণ, অনেক মুমিন বা বিশ্বাসী ঈমানের ওপর অটল থাকতে পারেন নি।
তৃতীয়ত : বিভ্রান্তি থেকে রক্ষার জন্য শুধু আল্লাহর কিতাব ও আল্লাহর আইনই যথেষ্ট নয়। খোদায়ী পথ প্রদর্শক ও তার অনুসরণও জরুরী।
চতুর্থত : সরল সঠিক পথে চেষ্টা চালানো হলে সে চেষ্টা সফল হয়। ভুল পথে বা পদ্ধতিতে যত চেষ্টাই করা হোক না কেন ঐসব চেষ্টা সফল হয় না।
–
আমি হাশিম বিন আল-হাকামকে বললাম,’ আপনার বক্তব্যের অর্থ কি যে মাসুম না হলে সে ইমাম হতে পারবে না? ‘
আল্লাহপাক যিনি বরকতময় ও মহিমান্বিত বলেছেন: ‘এবং যে আল্লাহকে দৃঢ়ভাবে ধরে রেখেছে, সে হেদায়েত প্রাপ্ত হয়েছে, এটাই সোজা পথ। (৩:১০১)
আবদুল্লাহ্ বলেন, নবী (সা:) সে সম্পর্কে তাই বলেছেন: ‘মাসুম আল্লহ কর্তক নির্ধারিত হয় যিনি আল্লাহর সকল আদেশ নিষেধ মেনে চলেন।
{https://hubeali.com/books/English-Books/TafseerHub-e-Ali/CH3_SuraAaleImraan_Verses92-138.pdf
পৃষ্ঠা ২২। তাফসিরে হুব্বে আলী}
–
নিশ্চয়ই আল্লাহ চান তোমাদের কাছ থেকে সমস্ত অপবিত্রতা দূরে রাখতে , হে আহলে বাইত , এবং তোমাদেরকে পবিত্র করতে পূর্ন পবিত্রকরনের মাধ্যমে – “ ।
সুরা – আহযাব / ৩৩ “।
————— হাদিসে কিসা ———–
হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী বর্ননা করেন যে ,
হযরত ফাতেমা (সাঃআঃ) যিনি রাসুল (সাঃ) এর কন্যা তাঁকে বলতে শুনেছি যে ,
” একদিন আমার পিতা আল্লাহর রাসুল (সাঃ) আমার গৃহে আগমন করলেন ।
রাসুল (সাঃ) আমাকে বললেন , হে ফাতেমা , তোমার উপর সালাম । আমিও তাঁকে বললাম যে , আপনার উপর দরুদ ও সালাম ।
আমার পিতা বললেন যে , আমি বেশ অসুস্থতা বোধ করছি ।
আমি বললাম , আল্লাহ আপনাকে সুস্থতা দান করুন ।
রাসুল (সাঃ) বললেন , ওহে মা ফাতেমা , আমার ইয়েমেনী চাদরটা দিয়ে আমাকে আবৃত করে দাও ।
আমি পিতার কথামত ইয়েমেনী চাদরটা দিয়ে পিতাকে আবৃত করে দিলাম । তখনই খেয়াল করে দেখলাম যে , রাসুল (সাঃ) এর পবিত্র চেহারা মোবারক থেকে এমনই নূরের জ্যোতি বের হচ্ছে ঠিক যেন পূর্নিমার চাঁদের মত লাগছে ।
এর কিছুক্ষন পরে আমার প্রথম পুত্র হাসান ইবনে আলী (আঃ) গৃহে প্রবেশ করল । আমাকে সালাম দিল ।
আমিও তাকে বললাম , হে আমার নয়নের মনি , তোমার উপর দরুদ ও সালাম রইল । হাসান ইবনে আলী (আঃ) তখন বলল , হে আম্মাাজন , আমি এখানে আমার নানাজান রাসুলে খোদার (সাঃ) অতি উত্তম সুঘ্রান পাচ্ছি ।
আমি বললাম , তোমার অনুমান সঠিক । ঐ চাদরের ভিতরে তোমার নানাজান উপস্থিত আছেন ।
অতঃপর হাসান ইবনে আলী চাদরের নিকট এগিয়ে যেয়ে বলল , হে নানাজান , আপনার উপর দরুদ ও সালাম । আমি কি আপনার চাদরের নীচে আসতে পারি ?
রাসুল (সাঃ) বললেন , হে আমার সন্তান , তোমার উপরেও দরুদ ও সালাম রইল । হে কাওসারের সন্তান , হে জান্নাতের যুবকদের সর্দার , অবশ্যই চাদরের নীচে তোমার আসার অনুমতি রয়েছে ।
অনুমতি পাওয়া মাত্র হাসান ইবনে আলী রাসুলের (সাঃ) চাদরের ভিতরে প্রবেশ করল ।
উহার কিছুক্ষন পরে আমার দ্বিতীয় পুত্র হোসেন ইবনে আলী (আঃ) গৃহে প্রবেশ করল ।
হে আম্মাাজান , আপনাকে সালাম । আমাকে সালাম দিল ।
আমিও তাকে বললাম , হে আমার কলিজার টুকরা , তোমার উপর দরুদ ও সালাম রইল ।
হোসেন ইবনে আলী তখন বলল , আম্মাাজন , আমি এখানে আমার নানাজান রাসুলে আল্লাহর (সাঃ) খুবই সুঘ্রান পাচ্ছি ।
আমি বললাম , তুমি ঠিকই বলেছ । ঐ চাদরের ভিতরেই তোমার নানাজান আছেন ।
তখন হোসেন ইবনে আলী চাদরের নিকট এগিয়ে যেয়ে বলল , হে আমার নানাজান , আপনার উপর দরুদ ও সালাম । আমি কি আপনার চাদরের নীচে আসতে পারি ?
রাসুল (সাঃ) বললেন , হে আমার সন্তান , আমার উম্মতের শাফায়েতকারী , তোমার উপরেও দরুদ ও সালাম রইল । হে কাওসারের সন্তান , হে জান্নাতের যুবকদের সর্দার , অবশ্যই চাদরের নীচে তোমার আসার অনুমতি রয়েছে ।
অনুমতি পাওয়া মাত্র হোসেন ইবনে আলী (আঃ) রাসুলের (সাঃ) চাদরের ভিতরে প্রবেশ করল ।
এই ঘটনার কিছু পরেই আমার স্বামী আবুল হাসান ইবনে আবু তালেব (আঃ) গৃহে প্রবেশ করলেন । তিনি আমাকে বললেন , হে আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) কন্যা , আপনার প্রতি আমার সালাম ।
আমি উত্তরে তাকে বললাম , আপনার উপর আমার দরুদ ও সালাম রইল হে আমিরুল মুমিনিন ।
তখন আবুল হাসান ইবনে আবু তালীব (আঃ) বললেন , হে হাসান হোসেনের জননী , আমি এখানে এমন একজনের সুঘ্রান পাচ্ছি যিনি অবশ্যই আমার চাচাত ভাই রাসুলে খোদা (সাঃ) হবেন ।
আমি বললাম , জ্বী , আপনি সঠিক বলেছেন । আপনার দুই পুত্রকে নিয়ে পিতাজান (সাঃ) ঐ ইয়েমেনী চাদরের ভিতরে অবস্থান করছেন ।
এই কথা শোনামাত্র হযরত আলী (আঃ) চাদরের নিকট এগিয়ে যেয়ে বললেন , হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ) , আপনার উপর দরুদ ও সালাম । এখন আপনি আমায় অনুমতি দিন যাতে আমিও আপনাদের সাথে চাদরের নীচে আসতে পারি ?
রাসুল (সাঃ) বললেন , তোমার উপরেও দরুদ ও সালাম রইল । হে আমার ভাই , আমার উত্তরাধীকারী , আমার ওয়াসী , আমার ইন্তেকাল পরবর্তী ইমাম ও খলীফা , অতি অবশ্যই চাদরের নীচে তোমার আসার অনুমতি রয়েছে ।
অনুমতি পাওয়া মাত্র হযরত আলী (আঃ) রাসুলের (সাঃ) চাদরের ভিতরে প্রবেশ করলেন ।
সর্বশেষে আমি (ফাতেমা (সাঃআঃ) চাদরের নিকট যাই এবং বললাম , হে আমার পিতাজান , আল্লাহর রাসুল (সাঃ) , আপনার উপর দরুদ ও সালাম । চাদরের নীচে আসার জন্য কি আমার অনুমতি রয়েছে ?
রাসুল (সাঃ) বললেন , হে আমার কাওসার , জান্নাতের নেত্রী , আমার নয়নের মনি , তোমারও অনুমতি আছে চাদরের নীচে চলে আসার জন্য ।
অনুমতি পাওয়া মাত্র আমিও রাসুলের (সাঃ) চাদরের ভিতরে প্রবেশ করলাম ।
যখন আমরা পাঁচজন সকলে মিলে চাদরের নীচে একত্রিত হলাম তখন রাসুল (সাঃ) তাঁর ডান হাত দিয়ে চাদরের দুকিনারা ধরে আকাশের দকে উঠিয়ে বললেন ,
হে আমার আল্লাহ , এরাই আমার আহলে বাইত , আমার রক্তজ বংশধর , এরাই আমার অস্বিত্ব , আমার রক্ত ।
যে এদেরকে দুঃখ কষ্ট দেবে সে যেন আমাকেও দুঃখ কষ্ট দেবে । আমি তাদের সাথে যুদ্ব করব যে এদের সাথে যুদ্ব করবে এবং যে এদের সাথে সন্ধি করবে আমিও তাদের সাথে সন্ধি করব । যে এদের শত্রু আমিও তাদের শত্রু । যে এদেরকে ভালবাসবে আমিও তাদেরকে ভালবাসব । কেননা এরা আমার থেকে আমিও এদের থেকে ।
হে সর্বশক্তিমান আল্লাহ , তোমার রহমত , তোমার পুরস্কার , তোমার দয়া , তোমার বরকত – তুমি আমার এবং আমার এই আহলে বাইতের জন্য ধার্য্য করে দাও । এদের কাছ থেকে সকল প্রকার অপমান এবং অপবিত্রতা দূরে রেখ এবং এদেরকে পুতঃপবিত্র রেখ যতটা পুতঃপবিত্র রাখার হক আছে ।