আয়াত এ তাতহির
আল্লাহুম্মা সাল্লে ‘আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলে মুহাম্মাদ।
সালামুন আলাইকুম।
এই আয়াতটির বিষয়ে তিনটি মত আছেঃ
১) এই আয়াত শুধু নবী সাঃ এর স্ত্রীদের জন্য নাজিল হয়েছে। – এটি খারেজী ও নাসিবিদের মত।
২) এই আয়াত নবী সাঃ এর স্ত্রীদের জন্য নাজিল হয়েছে আর এর সঙ্গে আলী, ফাতিমা, হাসান, হুসাইনদের যুক্ত করা হয়েছে। – এটি নাসিবিদের থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত সুন্নিরা বলে।
৩) এই আয়াত নবী সাঃ ও তার পবিত্র আহলে বাইত তথা পাক পাঞ্জাতানের শানে নাজিল হয়েছে।– এই মত হল শীয়া ও অর্থোডক্স সুন্নিরা।
আমি এই আর্টিকেলে একথা প্রমাণ করব যে, এই কেবল মাত্র আয়াত পাক পাঞ্জাতন তথা আহলে বাইত আঃ এর ইমামদের শানে নাজিল হয়েছে।
এই আর্টিকেলে এ প্রধান কয়েকটি বিষয় আলচনা করা হবে তার মধ্যে ছোট খাটো অপপ্রচার গুলোর জবাব এসে যাবে।
অপপ্রচার ১)- আয়াতটা অংশটার শুরুটা যেহেতু স্ত্রীদের দিয়ে শুরু হচ্ছে সুতরাং আলোচ্য অংশটাও (হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। নিশ্চয় নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।) স্ত্রীদের জন্য।
অপপ্রচার ২)- আয়াতটা স্ত্রীদের জন্য কারণ আহলে বাইত এর ডিকশনারির অর্থ স্ত্রীদেরকেও বোঝায়।
অপপ্রচার ৩)আয়াতটাতে কোন ফজিলাত নেই, অজুর আয়াতেও আল্লাহ পবিত্র করতে চান বলেছেন, তাই এই আয়াতে কোন ফজিলাত নেই। (এটা নাসিবিরা খুব বলে কারণ যখন দেখে যে এই আয়াতটা পাক পাঞ্জাতনের জন্য নাজিল হয়েছে, তখন এই আয়াতের মেরিট অস্বীকার করে)
অপপ্রচার ৪)- আয়াতটা স্ত্রীদের জন্যই(গোঁয়ার্তুমি- কারণ নাসিবিরা নাপা্ক)। আর দুটো হাদিসের দলিল, যে দুটি সুন্নিরা টেনে বার করে অসংখ্য সহিহ হাদিসের বিপরীতে।
আলোচ্য আয়াতের সম্পূর্ণটি হচ্ছে-
وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلَاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ
>> إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا<<
“তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে-মূর্খতা যুগের অনুরূপ নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না। নামায কায়েম করবে,যাকাত প্রদান করবে এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের আনুগত্য করবে।>> হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। নিশ্চয় নিশ্চয় আল্লাহ চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে”।<<
“And stay in your houses. Bedizen not yourselves with the bedizenment of the
Time of ignorance. Be regular in prayer, and pay the poor due, and obey Allah and His messenger. Verily Allah’s wish is but to remove uncleanness far from you, O Folk of the Household, and cleanse you with a thorough cleansing.”
(Surah Ahzab :33)
১) “আয়াত-এ তাতহিরের” (যেটা >>……<< এই অংশের মধ্যে আছে) অবস্থান নিয়ে নাসিবিদের এক্সকিউজঃ
আহলে বাইতদের বিরুদ্ধিরা বলে যে আয়াতটা যেহেতু আগের আয়াতের সাথে যুক্ত হয়ে আছে সুতারং আগে থেকে নবী সাঃ এর স্ত্রীগনকে বোঝাচ্ছে।
উত্তরঃ প্রথমঃ
-আমরা সাবাই জানি যে কুরআনের আয়াত সমূহ নাজিল হওয়ার ক্রম আনুসারে সাজান হয়ে নি। শেষের দিকে নাজিল হওয়া সূরা প্রথমে দেওয়া হয়েছে। তেমনি আনেক আয়াত পরে নাজিল হলেও সুরার প্রথম দিকে দেওয়া হয়েছে। উদাহরন স্বরূপ নিচের আয়াত লক্ষ্য করুনঃ
“তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে মৃত জীব, রক্ত, শুকরের মাংস, যেসব জন্তু আল্লাহ ছাড়া অন্যের নামে উৎসর্গকৃত হয়, যা কন্ঠরোধে মারা যায়, যা আঘাত লেগে মারা যায়, যা উচ্চ স্থান থেকে পতনের ফলে মারা যা, যা শিং এর আঘাতে মারা যায় এবং যাকে হিংস্র জন্তু ভক্ষণ করেছে, কিন্তু যাকে তোমরা যবেহ করেছ। যে জন্তু যজ্ঞবেদীতে যবেহ করা হয় এবং যা ভাগ্য নির্ধারক শর দ্বারা বন্টন করা হয়। এসব গোনাহর কাজ। আজ কাফেররা তোমাদের দ্বীন থেকে নিরাশ হয়ে গেছে। অতএব তাদেরকে ভয় করো না বরং আমাকে ভয় কর। >>আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।<< অতএব যে ব্যাক্তি তীব্র ক্ষুধায় কাতর হয়ে পড়ে; কিন্তু কোন গোনাহর প্রতি প্রবণতা না থাকে, তবে নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ক্ষমাশীল”।( মায়েদাঃ৩)
এখন দেখুন >>…আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।……<< এই পার্টটা ১০ম হিজরিতে নাজিল হয়েছে, বাকি আগের আর পরের পার্ট ৬য় হিজরিতে নাজিল হয়েছে।
মৌউলানা মউদুদী লিখেছেনঃ
“বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়াত থেকে জানা যায়, এ আয়াতটি বিদায় হজ্জের সময় ১০ হিজরীতে নাযিল হয়েছিল। কিন্তু যে বক্তব্যের ধারাবাহিকতার সাথে এর সম্পর্ক তা ৬ হিজরীতে হোদাইবিয়া চুক্তির সমসাময়িক কালের। বর্ণনা রীতির কারণে বাক্য দু’টি পরস্পর এমনভাবে মিশে গেছে যার ফলে কোন ক্রমেই ধারণা করা যাবে না যে, শুরুতে এ বাক্যগুলো ছাড়াই এ ধারবাহিক বক্তব্যটি নাযিল হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে এ বাক্যগুলো নাযিল হবার পর তা এখানে এনে বসিয়ে দেয়া হয়েছে। অবশ্য প্রকৃত ব্যাপার একমাত্র আল্লাহই জানেন”।
আরও দেখুনঃ ৫:৩ ঐ অংশটার ব্যাপারেঃ “>>আজ আমি তোমাদের জন্যে তোমাদের দ্বীনকে পূর্নাঙ্গ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার অবদান সম্পূর্ণ করে দিলাম এবং ইসলামকে তোমাদের জন্যে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।……”
“কিছু ইহুদি উমারকে জিগ্যেস করলো যদি এই আয়াতটা আমাদের উপর নাজিল হতো তাবে আমরা এই দিন কে খুশির দিন হিসাবে পালন করতাম।উমার উত্তর দিল তোমরা কি জাননা যে যখন এই আয়াতটা নাজিল হয় মুসলিমদের দুটি ঈদ ছিল। এই আয়াতটা ১০ম হিজরিতে বিদায় হজের সময় আরাফাত এ আসরের সময় নাজিল হয়……”
–বিভিন্ন তাফসিরকারক লিখেছেন, ইবনে কাসির, ঈবনে জারির তাবারি, দুররুল মান্সুর-সুয়ুতি, তাকি উসমান।
উত্তরঃ দ্বিতীয়ঃ
প্রচুর সহিহ হাদিসএর বর্ণনা মতে আয়াতের ঐ অংশটা পৃথক ভাবে নাজিল হয়েছে এবং ৫ জনের জন্য নাজিল হয়েছে।
(এখন যেকেউ এই সব হাদিস অস্বীকার করে মুনকারে হাদিস হয়ে নিজেদের উসুল মোতাবেক লানতের অধিকারী হতে পারে সেটা তার ব্যাপার।)
হাদিস ১) সুনান আত তিরমিযিঃ
حدثنا محمود بن غيلان حدثنا أبو أحمد الزبيري حدثنا سفيان عن زبيد عن شهر بن حوشب عن أم سلمة أن النبي صلى الله عليه وسلم جلل على الحسن والحسين وعلي وفاطمة كساء ثم قال اللهم هؤلاء أهل بيتي وخاصتي أذهب عنهم الرجس وطهرهم تطهيرا فقالت أم سلمة وأنا معهم يا رسول الله قال إنك إلى خير.
قال أبو عيسى هذا حديث حسن صحيح وهو أحسن شيء روي في هذا الباب وفي الباب عن عمر بن أبي سلمة وأنس بن مالك وأبي الحمراء ومعقل بن يسار وعائشة .
تحقيق الألباني :صحيح
“উম্মে সালামা বলেছেন যে নবী সাঃ আলি, হাসান হুসাইন ও ফাতিমাহ কে একটি চাদরের নিচে আবৃত করে ‘এরাই আমার আহলে বাইত আমার খাস, হে আল্লাহ এঁদের থেকে আপনি অপবিত্রতা দূরে সরিয়ে রাখুন আর পরিপূর্ণ পাক করুন’। আমি (উম্মে সালামা রাঃ) বললাম, ‘আমি কি এদের মধ্যে আছি হে রসুল আল্লাহ’? রসুল বললেন তুমি কল্যাণের উপর আছ”।
-সালাফিদের বড় মুহাদ্দেস আলবানী এটাকে সাহিহ বলেছেন।
হাদিস ২) সুনান আত তিরমিযিঃ
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سُلَيْمَانَ الْأَصْبَهَانِيُّ عَنْ يَحْيَى بْنِ عُبَيْدٍ عَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِي رَبَاحٍ عَنْ عُمَرَ بْنِ أَبِي سَلَمَةَ رَبِيبِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ { إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمْ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا } فِي بَيْتِ أُمِّ سَلَمَةَ فَدَعَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاطِمَةَ وَحَسَنًا وَحُسَيْنًا فَجَلَّلَهُمْ بِكِسَاءٍ وَعَلِيٌّ خَلْفَ ظَهْرِهِ فَجَلَّلَهُ بِكِسَاءٍ ثُمَّ قَالَ اللَّهُمَّ هَؤُلَاءِ أَهْلُ بَيْتِي فَأَذْهِبْ عَنْهُمْ الرِّجْسَوَطَهِّرْهُمْ تَطْهِيرًا قَالَتْ أُمُّ سَلَمَةَ وَأَنَا مَعَهُمْ يَا نَبِيَّ اللَّهِ قَالَ أَنْتِ عَلَى مَكَانِكِ وَأَنْتِ إِلَى خَيْرٍ
“উমার ইবনে আবু সালামা থেকে বর্ণিত হয়েছে যে এই আয়াতটা (হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। নিশ্চয় নিশ্চয় আল্লাহ চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।) নবী সাঃ উম্মে সালামার ঘরে থাকার সময় নাজিল হয়, নবী সাঃ ফাতিমা, হাসান হুসান কে ডাকলেন এবং তাঁদের চাদরের মধ্যে ঢেকে নিলেন, আলি পিছনে ছিল তাকেও ঢেকে নিল, তার পর বললেন হে আল্লাহ এরাই আমার আহলে বাইত, সুতরাং এঁদের থেকে তুমি অপবিত্রতা দূর করে দাও, আর পরিপূর্ণ ভাবে পবিত্র করো।উম্মে সালামা বললেন আমি কি ওদের সাথে আছি হে রসুল আল্লাহ? রসুল বললেন তুমি তোমার স্থানে আছো, তুমি উত্তমের উপরে আছ”
— আলবানী হাদিসটাকে সহিহ বলেছেন।
এই ব্যাপারে আরও হাদিস দেখুন মুসনাদে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বাল, মুসলিম,তাফসির এ তাবারি, ইবনে কাসির,তাফসীরে আলুসি-রুহুল মা’নী,দুররুল মান্সুর-সুয়ুতি, সুনানে কবির -ইমাম নাসাই, মুসান্নাফে ইবনে আবি সাইবা,মুস্তাদ্রক হাকিম, ম’জাম আল কাবির-তাব্রানি,মুস্নাদে আবি ইয়ালা মাসুলি, আরও ১০০ খানেক বইয়ে।
সুতরাং উপরের মুতাওয়াতির হাদিস সমূহ থেকে একথা দিবালকের মত পরিষ্কার উক্ত আয়াতের এই অংশটা “হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ, নিশ্চয় নিশ্চয় আল্লাহ চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে”। আলাদা ভাবে নাজিল হয়েছে।এখানে আল্লাহ কেন এই অংশটা এই জায়গাতে রাখলেন নবিকে দিয়ে?মউদুদী সাহেবের মতো আমিও বলবো যে প্রকৃত ব্যাপার একমাত্র আল্লাহই জানেন।
আসলে আল্লাহ তা’লা এই কুরআন দিয়েই অনেককে পথ দেখান ও অনেককে পথভ্রষ্ট করে দেন। যারা বলে যে নাবি সাঃ এর তাফসীরের দরকার নেই, আমরাই কুরআনের মানে করবো! তাদের করুন অবস্থা আল্লাহই করেন। আল্লাহ, তাঁর হাবিব কে ডিঙিয়ে যেকেউ যেতে চায় তাকে গুমরাহ করে দেন।
এই আয়াত নাজিল হয়েছে আর রসুল পাক সাঃ বাস্তব উদাহরণের এবং উপস্থাপনের মাধ্যমে বার বার এই আয়াতের তফসীর করে দিয়েছেন। এখন দুনিয়ার কোন লুগাত( ডিকশনারী),বা আলেম এই তাফসীরকে বদলাতে পারে না, হা পথভ্রষ্ট লোক ছাড়া।
২) নাসিবিদের ২য় এক্সকিউজঃ এই আয়াত নবী সাঃ এর স্ত্রীদের জন্য নাজিল হয়েছে, আহলে বাইতের আভিধানিক অর্থের মধ্যে স্ত্রীরাও।
আহলে বায়ত (أهل بيت)এর আভিধানিক মানে ঘরের লোক জন, এর মধ্যে, ছেলে, মেয়ে, স্ত্রী,পরিবার পরিজন সহ ঘরে থাকা পোষ্য পাখি, পশুও বোঝায়।
এখন যেমন কুরআনের শব্দের আভিধানিক মানে আছে, ঠিক অনুরুপ পারিভাষিক ও specific মানে আছে।যেমন সালাহ (নামাজ) এর অর্থ প্রার্থনা, সিয়াম (রোজা) এর অর্থ রুখে রাখা,যাকাতের অর্থ পবিত্র করা ইত্যাদি, কিন্তু এইসবের শরিয়াতের পরিভাষা সবাই জানে, এখন কেউ dictionary –এর অর্থ নিয়ে যাকাত পালন করেন? মানে নিজের সম্পত্তিকে যমযম পানি দিয়ে দুয়ে পবিত্র করেন? নাকি রোজা নিঃশ্বাস প্রশ্বাস রুখে রেখে পালন করেন? অথবা সালাহ পালন করেন জাস্ট আল্লহের কাছে কিছু চেয়ে নিয়ে?( হা কুরানিস্ট ফিলজাফিক্যাল লোকেরা সালাহ এই ভাবেই পড়ে)
–না আমরা কেউ এইসব করিনা, বরং নবী সাঃ যে ভাবে দেখিয়েছেন ঠিক সেই ভাবে পালন করি।
অনুরূপ ভাবে ‘আহলে বাইত’ এরও শরিয়াতের পারিভাষিক অর্থ আছে, এই পরিভাষা কে ঠিক করবেন? বড় চাচা? নাকি নবী সাঃ?
নবী সাঃ পরিষ্কার ভাবে শুধু বলে যাননি দেখিয়েও গিয়েছেন যে কারা আহলে বাইত। ঠিক যেমন ভাবে নামাজ রোজাকে করে দেখিয়ে গিয়েছেন, তেমনি ভাবে এখানে আহলে বাইত বলতে কাদের বোঝান হয়েছে তা বলে ও দেখিয়ে গিয়েছেন।
তবে এখানে একটা কথা মনে রাখা দরকার যে আয়াত এ তাতহিরের মুল প্রশ্ন এই আয়াত কাদের শানে নাজিল হয়েছে। মুল প্রশ্ন এটা নয়ে কারা আহলে বাইত, যদিও এই আয়াতের ব্যাখ্যায় নবী পাক সাঃ পরিষ্কার করে দিয়ে গিয়েছেন যে কারা আহলে বাইত।
এখানে প্রথমে আমি আরও কিছু হাদিস উল্লেখ করবো যে হাদিস গুলি উপরের দেওয়া হাদিসের সাথে মিলিয়ে পড়লে আরও ক্লিয়ার হয়ে যাবে যে উপরোক্ত আয়াতে আহলুল বাইত কাদেরকে বলা হয়েছে।
হাদিস ৩)তাফসির ইবনে আবি হাতিম যেটার থেকে ইবনে কাসির উল্লেখ করেছেন।
طريق أخرى: قال ابن أبي حاتم: حدثنا أبي، حدثنا سُرَيج بن يونس أبو الحارث، حدثنا محمد بن يزيد، عن العوام -يعني: ابن حَوْشَب -عن عمٍّ له قال: دخلت مع أبي على عائشة، فسألتها عن علي، رضي الله عنه، فقالت، رضي الله عنها: تسألني عن رجل كان من أحب الناس إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم، وكانت تحته ابنته وأحب الناس إليه؟ لقد رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم دعا عليا وفاطمة وحسنا وحسينا، فألقى عليهم ثوبا فقال: “اللهم، هؤلاء أهل بيتي، فأذهب عنهم الرجس وطهرهم تطهيرا”. قالت: فدنوت منه فقلت: يا رسول الله، وأنا من أهل بيتك؟ فقال: “تَنَحّي، فإنك على خير
“আয়শাকে আলী এর সম্বন্ধে জিগ্যেস করা হল, তিনি বললেন যে ‘সে ছিল রসুলের সবথেকে প্রিয় আর তার কাছে রসুলের মেয়ে ছিল সেও প্রিয় ছিল-আমি দেখেছি যে নবী সাঃ আলী , ফাতেমা, হাসন ও হুসাইনকে ডাকল ও তাঁদের উপর চাদর ঢেকে দিয়ে বললেন, ‘ হে আল্লাহ, এরাই আমার আহলে বাইত,সুতারং এঁদের থেকে রিজস (অপবিত্রতা)কে দূরে রাখও ও এঁদেরকে পরিপূর্ণ পবিত্র করো’।আমি ( আয়শা) বললাম আমি কি (এই) আহলে বাইতের মধ্যে? (রসুল) বললেন দূরে থাকো……
হাদিস ৪)সহিহ মুস্লিমঃ
قَالَتْ عَائِشَةُ خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ غَدَاةً وَعَلَيْهِ مِرْطٌ مُرَحَّلٌ مِنْ شَعْرٍ أَسْوَدَ فَجَاءَ الْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ فَأَدْخَلَهُ ثُمَّ جَاءَ الْحُسَيْنُ فَدَخَلَ مَعَهُ ثُمَّ جَاءَتْ فَاطِمَةُ فَأَدْخَلَهَا ثُمَّ جَاءَ عَلِيٌّ فَأَدْخَلَهُ ثُمَّ قَالَ { إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمْ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا } [الأحزاب: 33]
আয়িশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকালে বের হলেন। তাঁর গায়ে ছিলো কাল চুন দ্বারা খটিত একটি পশমী চাঁদর। হাসান ইবনু আলী (রাঃ) এলেন, তিনি তাঁকে চাঁদরের ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন। হুসাইন ইবনু আলী (রাঃ) এলেন, তাঁকে চাঁদরের ভেতর ঢুকিয়ে নিলেন। ফাতিমা (রাঃ) এলেন, তাকেও ভেতরে ঢুকিয়ে ফেললেন। অতঃপর আলী (রাঃ) এলেন, তাঁকেও ভেতরে ঢুকিয়ে নিলেন। পরে বললেনঃ হে আহলে বাইত! আল্লাহ তাআলা তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে বিদুরিত করে তোমাদের পবিত্রময় করতে চান।
হাদিস ৫) আজেরি তার কিতাবে এই সহিহ হাদিসটা উল্লখে করেছে।
حَدَّثَنَا عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ أَبِي سُلَيْمَانَ ، عَنْ عَطَاءٍ ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ ، وَعَنْ دَاوُدَ بْنِ أَبِي عَوْفٍ ، عَنْ شَهْرِ بْنِ حَوْشَبٍ ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ ، وَعَنْ أَبِي لَيْلَى الْكِنْدِيِّ ، عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ رَحِمَهَا اللَّهُ : بَيْنَمَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِي عَلَى مَنَامَةٍ لَهُ عَلَيْهَا كِسَاءٌ خَيْبَرِيٌّ ، إِذْ جَاءَتْهُ فَاطِمَةُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا بِبُرْمَةٍ فِيهَا خَزِيرَةٌ ، فَقَالَ لَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ” ادْعِي زَوْجَكِ وَابْنَيْكِ ” قَالَتْ : فَدَعَتْهُمْ فَاجْتَمَعُوا عَلَى تِلْكَ الْبُرْمَةِ يَأْكُلُونَ مِنْهَا ، فَنَزَلَتِ الآيَةُ : إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا سورة الأحزاب آية 33 ، فَأَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَضْلَ الْكِسَاءِ فَغَشَّاهُمْ مَهْيَمَهُ إِيَّاهُ ، ثُمَّ أَخْرَجَ يَدَهُ فَقَالَ بِهَا نَحْوَ السَّمَاءِ ، فَقَالَ : ” اللَّهُمَّ هَؤُلاءِ بَيْتِي وَحَامَّتِي فَأَذْهِبْ عَنْهُمُ الرِّجْسَ وَطَهِّرْهُمْ تَطْهِيرًا ” قَالَتْ : فَأَدْخَلْتُ رَأْسِي فِي الثَّوْبِ ، فَقُلْتُ : رَسُولَ اللَّهِ أَنَا مَعَكُمْ ؟ قَالَ : ” إِنَّكِ إِلَى خَيْرٍ ، إِنَّكَ إِلَى خَيْرٍ ” قَالَتْ : وَهُمْ خَمْسَةٌ : رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، وَعَلِيٌّ ، وَفَاطِمَةُ ، وَالْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ ” .
হাদিসটা লম্বা আর উম্মে সালাম রাঃ থেকে বর্ণিত অন্যান্য হাদিসের মতো অর্থাৎ চাদেরের মধ্যে নিয়ে আয়াতটা পড়ে আল্লাহের কাছে দোয়া করা। আমি এখানে শেষের অংশটা উল্লেখ করছি।
“ উম্মে সালামা বলেন…………উম্মে সালামা বলেছেন এঁরা পাঁচ জন, রসুল আল্লাহ, আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন”।
আহলে সুন্নাতের সবথেকে বড় প্রপাগান্ডা লাইব্রেরী সাইটের লিংকঃ
হাদিস ৬) সহিহ মুসলিমঃ
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ وَمُحَمَّدُ بْنُ عَبَّادٍ وَتَقَارَبَا فِي اللَّفْظِ قَالَا حَدَّثَنَا حَاتِمٌ وَهُوَ ابْنُ إِسْمَعِيلَ عَنْ بُكَيْرِ بْنِ مِسْمَارٍ عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ عَنْ أَبِيهِ قَالَ أَمَرَ مُعَاوِيَةُ بْنُ أَبِي سُفْيَانَ سَعْدًا فَقَالَ مَا مَنَعَكَ أَنْ تَسُبَّ أَبَا التُّرَابِ فَقَالَ أَمَّا مَا ذَكَرْتُ ثَلَاثًا قَالَهُنَّ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَنْ أَسُبَّهُ لَأَنْ تَكُونَ لِي وَاحِدَةٌ مِنْهُنَّ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ لَهُ خَلَّفَهُ فِي بَعْضِ مَغَازِيهِ فَقَالَ لَهُ عَلِيٌّ يَا رَسُولَ اللَّهِ خَلَّفْتَنِي مَعَ النِّسَاءِ وَالصِّبْيَانِ فَقَالَ لَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَمَا تَرْضَى أَنْ تَكُونَ مِنِّي بِمَنْزِلَةِ هَارُونَ مِنْ مُوسَى إِلَّا أَنَّهُ لَا نُبُوَّةَ بَعْدِي وَسَمِعْتُهُ يَقُولُ يَوْمَ خَيْبَرَ لَأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ رَجُلًا يُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ قَالَ فَتَطَاوَلْنَا لَهَا فَقَالَ ادْعُوا لِي عَلِيًّا فَأُتِيَ بِهِ أَرْمَدَ فَبَصَقَ فِي عَيْنِهِ وَدَفَعَ الرَّايَةَ إِلَيْهِ فَفَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَلَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ
{ فَقُلْ تَعَالَوْا نَدْعُ أَبْنَاءَنَا وَأَبْنَاءَكُمْ }
دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلِيًّا وَفَاطِمَةَ وَحَسَنًا وَحُسَيْنًا فَقَالَ اللَّهُمَّ هَؤُلَاءِ أَهْلِي
এটাও লম্বা হাদিস তাই প্রয়োজনীয় অংশ অনুবাদটা দিচ্ছি। (যখন মুয়াবিয়া সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাসকে বলে যে আলিকে গালি দিতে তখন সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস এই কথা বলেছিল)ঃ-
“ সাদ ইবনে আবি ওক্কাস থেকে বর্ণিত……তখন তিনি বললেন, আলীকে ডাকো। আলী আসলেন, তাঁর চোখ উঠেছিলো। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর চোখে লালা দিলেন এবং তাঁর হাতে পতাকা অর্পণ করলেন। পরিশেষে তাঁর হাতেই বিজয় তুলে দিলেন আল্লাহ। আর যখন আয়াতঃ “আমরা আমাদের এবং তোমাদের সন্তান-সন্ততিকে ডাকি” (৩ –৬১) অবতীর্ণ হলো, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী,ফাতিমা, হাসান ও হুসায়ন (রাঃ)-কে ডাকলেন। অতঃপর বললেন হে আল্লাহ! এরাই আমার পরিবার”।
উপরে যে যে কটি হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে প্রত্যক জায়গাতে দেখা যাচ্ছে যে আল্লাহের নবী সাঃ এই কথা বলছেন <<<“اللهم، هؤلاء أهل بيتي>>> আল্লাহুম্মা হাউলাই আহলে বাইতি-হে আল্লাহ এরাই আমার আহলে বাইত। এখন রসুলের পরিবারে কাকে নেবেন সেটা রসুল ঠিক করবেন নাকি আমি ঠিক করে দেব?
আসলে রসুলে আকরাম সাঃ এই আয়াতে আহলে বাইতের তাফসির করে দেখিয়েছেন বার বার। এখন সাহেবে কুরআন ( কুরআনের আধিকারি) যদি কোন ব্যাখ্যা করে যান তবে দুনিয়ার কারও( মুসলিমের) ক্ষমতা নেই যে সেটার রদ বাদল ঘটায়।
এখানে প্রতিটি হাদিস সহিহ মুতাওাতির (অনেক, পরম্পরায়, অবিচ্ছিন্ন ভাবে বর্ণিত)। যে পাঁচ জনকে চাদরের নিলে ঐ আয়াত নাজিল হয়েছে।আর তিনি ঐ আয়াত বার বার পড়েছেন নিজে ও অন্য চার জনাকে নিয়ে।
হাদিস ৭) তফসীরে দুররুল মান্সুর- মুজাদ্দেদে আহলে সুন্না আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতিঃ
وأخرج ابن جرير وابن أبي حاتم والطبراني عن أبي سعيد الخدري رضي الله عنه قال : قال رسول الله صلى الله عليه وسلم « نزلت هذه الآية في خمسة : فيّ ، وفي علي ، وفاطمة ، وحسن ، وحسين ، { إنما يريد الله ليذهب عنكم الرجس أهل البيت ويطهركم تطهيراً } » .
“ইবনে জরির, ইবনে আবি হাতিম, এবং তাবরানি আবু সাইদ আল খুদরি থেকে বর্ণনা করেছেন যে রসুল আল্লাহ সাঃ বলেছেন এই আয়াতটা পাঁচজনের জন্য নাজিল হয়েছে, আমি, আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইন।>>হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। নিশ্চয় নিশ্চয় আল্লাহ চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।<<”
হাদিস ৮)ইমামে আহলে সুন্না বুখারি, তার তারিখ আল কবিরে লিখেছেনঃ
أبو الحمراء له صحبة، قال أبو عاصم عن عياد ابى يحيى قال نا أبو داود عن ابى الحمراء قال صحبت
النبي صلى الله عليه وسلم تسعة اشهر فكان إذا اصبح كل يوم. يأتي باب على وفاطمة فيقول السلام عليكم اهل البيت (انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهر كم تطهيرا)
“ছয় মাস ধরে রসুল সাঃ প্রতিদিন আলী ও ফাতি্মার(ঘরের) দরজার কাছে গিয়ে বলতেন-‘ আস সালামু আলাইকুম আহলে বাইত (انما يريد الله ليذهب عنكم الرجس اهل البيت ويطهر كم تطهيرا) হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। নিশ্চয় নিশ্চয় আল্লাহ চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে”।
(আসলে প্রতিদিন সকালে রসুল সাঃ ফজরের নামাযে মসজিদে যাওয়ার আগে আহলে বাইতকে এই কথা বলত। দেখুন আমরা আলী ফাতিমা, আলী ফাতিমা করি বলে অনেকে নানা কথা বলে, আর আল্লহের রসুলের দিন শুরু হত আলী ফাতিমাকে তথা আহলে বাইতকে সালামের মাধ্যমে।)
এখন যারা বলে যে এই আয়াত স্ত্রীদের জন্য নাজিল হয়েছে তাঁদেরকে একটা চ্যলেঞ্জ (challenge) দিচ্ছি স্ত্রীগনের থেকে একটা হাদিস আনুক যেখানে স্ত্রীগন বলছে যে এই আয়াত তাদের সানে নাযিল হয়েছে।
কিন্তু এই আয়াত যে তাঁদের জন্য নাজিল হয়েছে ইমাম হাসান আঃ সেটা দাবি করছেনঃ-
قال: إِن الحسن بن علي رضي الله عنهما استخلف حين قتل علي رضي الله عنهما، قال: فبينما هو يصلي، إِذ وثب عليه رجل، فطعنه بخنجره، وزعم حصين أنه بلغه أن الذي طعنه رجل من بني أسد، وحسن رضي الله عنه ساجد. قال: فيزعمون أن الطعنة وقعت في وركه، فمرض منها أشهراً، ثم برأ، فقعد على المنبر فقال: يا أهل العراق اتقوا الله فينا، فإِنا أمراؤكم وضيفانكم، ونحن أهل البيت الذي قال الله تعالى: { إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُـمُ ٱلرِّجْسَ أَهْلَ ٱلْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيـراً } قال: فما زال يقولها حتى ما بقي أحد من أهل المسجد إِلا وهو يحن بكاءً.
“আলী রাঃ এর কতলের পরে যখন হাসান রাঃ কে খলিফা করা হল, তিনি একদিন নামাজের ইমামতি করছিলেন তখন বনু আসাদের একজন তাঁকে সেজদা রত অবস্থায় ছুরি মারল যেটা তার মাংশে আঘাত করল ফলে তিনি মাস কয়েক অসুস্ত ছিলেন, যখন সুস্ত হলেন মসজিদের মিম্বের উঠে বললেন হে ইরাক বাসী আমাদের ব্যপারে আল্লাহকে ভয় কর, আমরা তোমাদের শাসক আর অতিথিও। আমারা আহলে বাইতে নবুয়া, যাদের সমন্ধে আল্লাহ বলেছেন
{ إِنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنكُـمُ ٱلرِّجْسَ أَهْلَ ٱلْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيـراً }
(হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। নিশ্চয় নিশ্চয় আল্লাহ চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে।)
এই কথা তিনি অনেক বার পুনরাবৃত করলেন, লোকেরা কাঁদতে শুরু করলো”। ( তাফসীরে ইবনে কাসির)।
এখন যারা বলে যে এই আয়াত নবী সাঃ এর স্ত্রীদের জন্য নাজিল হয়েছিল তারা একটা হাদিস নিয়ে আসুক যে নবী সাঃ এর কোন স্ত্রী এটা দাবি করেছেন যে এই আয়াত তাদের জন্য নাজিল হয়েছে!
৩) উপরের আয়াত যে আহলে নবী কারিম সাঃ ও আহলে বাইতের সদস্যদের তথা আলী, ফাতিমা, হাসান হুসাইন আঃ দের শানে নাজিল হয়েছে তার প্রচুর সহিহ হাদিস (যার কিছু আমি উল্লেখ করেছি) দেখে আহলুল খারেজি ওয়াল নাসিবইন এটা অস্বীকার করতে পারে না যে ঐ পাঁচ জনের জন্য নাজিল হয়েছে, ফলে তার এই আয়াতটার ফজিলাতকে অস্বীকার করে আর নিম্নরূপ excuse দেয়ঃ
অজুর আয়াতে আল্লাহ পবিত্র করতে চায় বলে বলেছেন, সুতরাং এটা একটা সাধারণ ব্যপার।
আমি এখানে অজুর আতায়টা উল্লেখ করছিঃ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قُمْتُمْ إِلَى الصَّلَاةِ فَاغْسِلُوا وُجُوهَكُمْ وَأَيْدِيَكُمْ إِلَى الْمَرَافِقِ وَامْسَحُوا بِرُءُوسِكُمْ وَأَرْجُلَكُمْ إِلَى الْكَعْبَيْنِ ۚ وَإِنْ كُنْتُمْ جُنُبًا فَاطَّهَّرُوا ۚ وَإِنْ كُنْتُمْ مَرْضَىٰ أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ أَوْ جَاءَ أَحَدٌ مِنْكُمْ مِنَ الْغَائِطِ أَوْ لَامَسْتُمُ النِّسَاءَ فَلَمْ تَجِدُوا مَاءً فَتَيَمَّمُوا صَعِيدًا طَيِّبًا فَامْسَحُوا بِوُجُوهِكُمْ وَأَيْدِيكُمْ مِنْهُ ۚ مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَٰكِنْ يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
“হে মুমিনগণ, যখন তোমরা নামাযের জন্যে উঠ, তখন স্বীয় মুখমন্ডল ও হস্তসমূহ কনুই পর্যন্ত ধৌত কর এবং মাথা ও পদযুগল গিটসহ মাসেহ করো। যদি তোমরা অপবিত্র হও তবে সারা দেহ পবিত্র করে নাও এবং যদি তোমরা রুগ্ন হও, অথবা প্রবাসে থাক অথবা তোমাদের কেউ প্রসাব-পায়খানা সেরে আসে অথবা তোমরা স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর, অতঃপর পানি না পাও, তবে তোমরা পবিত্র মাটি দ্বারা তায়াম্মুম করে নাও-অর্থাৎ, স্বীয় মুখ-মন্ডল ও হস্তদ্বয় মাটি দ্বারা মুছে ফেল। আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর”।
এখানে আহলে বাইতের বিরোধি এই অংশের উদাহরণ দেয়ঃ-
وَلَٰكِنْ يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
“…কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর”।
এখানে অজু করা যে উদ্দেশ্যে করা হয়- অর্থাৎ নামাযে দাঁড়াবার আগে প্রয়োজনীয় দৈহিক পবিত্রতা অর্জন। অজুর শর্তমেনে সেই গুলো পালন করলে যে উদ্দেশ্যে অজু সেটা অর্জন হবে। এখানে আল্লাহ রিজস( সমস্ত রকম অপবিত্রতা) এই শব্দ ব্যাবহার করেন নি। বরং তিনি কোন রকমের অপবিত্রতা শব্দই এই আয়াতে ব্যাবহার করেন নি। শুধু বলেছেন যে পবিত্র করতে চান।
সুতরাং এই আয়াতটা কে টেনে এনে নাসিবিগন লোকদের লোকদের চোখে পর্দা ফেলতে চায়।
আমি প্রিয় পাঠগনকে আবার আয়াতটা পড়তে অনুরোধ জানাছিঃ লক্ষ্য করুন আল্লাহ অজুয়ের নিয়ামাবলি বর্ণনা করেছেন তার পর পানি না পেলে কি করতে হবে বলছেন—অথচ বিভিন্ন কারনে অজু করা ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে! তখন আল্লাহ পানির পরিবর্তে মাটিকে ব্যবহার করতে বলেছেন, আর হাত মুখ ধোয়ার পরিবর্তে মাটি দিয়ে মুছতে বললেন।
আর এই ছাড়ের( বা পরিবর্তনের) উদ্দেশ্য বর্ণনা করেছে তার পরের অংশে—যে তিনি তোমাদের কষ্টে (حَرَجٍ-হারাজ)বা অসুবিধায় ফেলতে চান না কিন্তু পবিত্র করতে চান…।
আশা করি পাঠকগন এই আয়তের সাথে আয়াতে তাতহির কে যে মেলাবার অপ্প্রচেস্টা করা হয় সেটা বুঝতে পেরেছে।
এখন আসুন আবার দেখি আয়াতে তাতহিরঃ
إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا
এখানে আমি পাঠক গনের একটু বেশী মনযোগ দেওয়ার আহ্বান করছিঃ
এই আয়তের শুরু হয়েছে إِنَّمَا — ইন্নামা (ইন্না + মা)– ইন্না মানে নিশ্চয়ই বা অবশ্যই, মা যখন ইন্না এর সাথে যুক্ত হয়ে ব্যবহার হয় সেক্ষেত্রে নিশ্চয়ই/অবশ্যই এর উপর জোর (emphasis) হয়। সেক্ষেত্রে মানে দাঁড়ায় অবশ্য অবশ্যই……।।
সুতরাং পূর্ণ মানে দাড়াছে “অবশ্য অবশ্যই আল্লাহের ইচ্ছা, হে আহলুল বাইত! তোমাদেরকে অপবিত্রতা থেকে দূরে রাখতে এবং পরিপূর্ণ ভাবে পবিত্র করতে”।
এখন যারা এই আয়াতে তাতহিরের ফজিলতকে অস্বীকার করার জন্য অজুর আয়াত নিয়ে আসে তারা যে আহলে বাইত আঃ সাঃ দের ফাজাইল কে কিভাবে কমানো বা অস্বীকার করা যায় তাই নিয়ে এত চিন্তিত যে জ্ঞান বুদ্ধিকে বিসর্জন দিয়েছে এটি তার প্রকিস্ঠ উদাহরণ।
এটা নতুন কোন ব্যাপার নয় মুয়াবিয়ার যুগ আর উমাইয়াদের আব্বাসিদের যুগ গিয়েছে যখন আলী আঃ এর ফজিলাত বর্ণানা তো দুরের কথা আলী নাম রাখলে কতল করে দেওয়া হতো। রসুলে পাক সাঃ যে ফজিলাত আলী আঃ এর নামে বলেছেন খারেজি আর নাসিবিরা সেই সব একই ধরণের হাদিসকে বর্ণনা আবু বকর উমারের নামে বানিয়েছে। আর যেটাকে পারে নি সেটা কে বিকৃত করার চেস্টা করেছে.. যেমন আব্বাসিদের রাজ প্রসাদের হিজড়া মন্ত্রীরা বেতন বাড়াবার জন্য আলির নামে বহুল প্রচলিত হাদিসে মাঞ্জিলা যেখানে আল্লহের নবী সাঃ বলেছেন যে “ হে আলী তোমার স্থান( মঞ্জিল) আমার কাছে ওইরূপ যেরূপ মুসার কাছে হারুনের স্থান ছিল…”
আর আব্বাসি হিজড়া দপ্তরে খুলে আম বলল যে হাদিসটা ঠিক কিন্তু বর্ণনা কারী একটু ভুল শুনেছে ওটা আসলে হবে “হে আলী তোমার স্থান( মঞ্জিল) আমার কাছে ওইরূপ যেরূপ মুসার কাছে কারুনের স্থান ছিল…”
দেখুন কান্ড! কারুন একজন নিকৃস্ট লোক ছিল- আর তাকে আলী আঃ এর সাথে তুলনা করা হচ্ছে!!!! আল্লাহের আভিশাপ আলী আঃ এর শত্রুদের প্রতি।
নাসিবিগন এই আয়াতের কোন ফজিলাত আছে বলে মনে করে না!! অথচ দেখুন সমস্ত মুহাদ্দিসগন যারা নিজ নিজ হাদিসের বইয়ে এই আয়াতের শানে নাজিল হাদিসে লিখেছেন যেমন পাঁচজনকে চাদরে ঢেকে নিয়ে এই আয়াত পাঠ করার হাদিস, সবাই এই সব হাদিসকে “আহলে বাইতের ফজিলাত অধ্যায়ে” বা আলী বা হাসান হুসাইন বা ফাতিমা আঃ দের ফজিলাত বা মানাকিব (মর্যাদা) অধায়্যে স্থান দিয়েছেন। যেমন ইমাম মুসলিম, তিরমিযি ইত্যাদি।
এদের মুহাদ্দিসগন ( হাদিস বেত্তা) এই আয়াতের মধ্যে ওনাদের ফজিলাত দেখতেন আর এই নব্য নাসিবিরা ফজিলাতের অস্বীকার করার বাহানা খোঁজে!!
৪) আয়াতের শব্দগত আলোচনাঃ
আমরা যদি ৩৩:৩৩ পুরো আয়াতটা দেখি তবে দেখব সেটার শুরু হচ্ছে
– ওয়া কারনা ফী বুয়ুতিকুন্না- “তোমাদের (স্ত্রী লিঙ্গ)ঘর সমূহে অবস্থা করো” وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ
এইখানে দুটি জিনিস লক্ষ্যনিয়, এক) কুন্না- এই স্ত্রী লিঙ্গ ব্যাবহার করে স্ত্রীদের কে বোঝান হচ্ছে- দুই) বুয়ুত- ঘরসমূহ এটা বাইতের বহু বচন। অর্থাৎ এখানে স্ত্রীদেরকে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করার কথা বলা হচ্ছে। কারন একের অধিক স্ত্রী ছিলেন।
কিন্তু যখন إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا এই অংশটা নাযিল হচ্ছে তখন যে লিঙ্গ ব্যাবহার হচ্ছে সেটা কুম- পুংলিঙ্গ। এই কুম উপরের আয়াতে দুইবার ব্যাবহার হয়েছে… তোমাদের ( عَنْكُمُ) থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান… আর তোমাদেরকে প্রবিত্র (وَيُطَهِّرَكُمْ) করতে চান, দুইবারই পুংলিঙ্গ ব্যাবহার হয়েছে। দ্বিতীয়ত এখানে ঘরের বহু বচন ব্যাবহার করা হয়নি বরঞ্চ আল-বাইত ব্যাবহার করা হয়েছে- আরবিতে আল (the) definite article. আর বাইত ব্যাবহার করা হয়েছে যেটা এক বচন। অর্থাৎ এখানে নির্দিষ্ট করে একটি ঘরের কথা বলা হচ্ছে- যেটা রসুলের ঘর- যে ঘরের দ্বারা রসুলের পবিত্র বংশধরের আগমন ঘটেছে।
এখন ফাতিমা আঃ মেয়ে হিসাবে আহলুল বাইত এর পুংলিঙ্গ শব্দের মধ্যে কিভাবে আসে?
এই কারণে বলা হয়েছে যে আরবিতে মেয়ে আর ছেলেদের মিলিত গ্রুপ কে ডাকতে হলে পুংলিঙ্গ ব্যাবহার করা হয়। ( দেখুনঃ আল্লামা ইউসুফ আলী এর ইংলিশ translation এর এই আয়াতের টীকা)। এমনও হয় যে মেয়ে বা ছেলেদের জামাতের মধ্যে যাদের সংখ্যা বেশী থাকবে তাদের লিঙ্গ ব্যাবহার হবে।
কিছু নাসিবি কুরআন আল করিমের দুটি আয়াত তুলে ধরে এটা প্রমাণ করতে চান যে কুরআনে স্ত্রীদের কেও আহলে বাইত বালা হয়েছে। আসলে আহলে বাইত আঃ দের বিরোধিতা করতে গিয়ে এঁরা মা আর স্ত্রী এর মধ্যে পার্থক্য ভুলে গিয়েছে!
যে আয়াত দুটো excuse হিসাবে তুলে ধরা হয়। তা নিচে দেওয়া হল।
১) সূরা হুদ আয়াত ৭৩
قَالُوا أَتَعْجَبِينَ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ ۖ رَحْمَتُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ ۚ إِنَّهُ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
[Pickthal 11:73] They said: Wonderest thou at the commandment of Allah? The mercy of Allah and His blessings be upon you, O people of the house! Lo! He is Owner of Praise, Owner of Glory!
“তারা বলল-তুমি আল্লাহর হুকুম সম্পর্কে বিস্ময়বোধ করছ? হে আহলুল বাইত, তোমাদের উপর আল্লাহর রহমত ও প্রভুত বরকত রয়েছে। নিশ্চয় আল্লাহ প্রশংসিত মহিমাময়”।
এই আয়তে ফেরেশতাগণ যখন হজরত সারাহ আঃ কে ইশাহাক আঃ এর জন্মের সংবাদ দেন তখন সারাহ আঃ বিশ্বয় প্রকাশ করলে প্রথমে ফেরেস্তাগণ জিজ্ঞেস করলেন তুমি (লক্ষ্য করুন এক বচন)আল্লহের আমর (নির্দেশ) সম্পর্কে বিশ্বয়বোধ করছো?হে আহলুল বাইত তোমাদের (লক্ষ্য করুন বহু বচন- পুং লিঙ্গ) উপর আল্লাহের রহমত ও বরকত আছে।
সুতরাং এখানে বোঝা যাচ্ছে যে আহলুল বাইত বলে এখানে ইব্রাহিমের আঃ সহ সারাহ আঃ কেও অন্তরভুক্ত করা হয়েছ। আরও একটু লক্ষ্য করলে বুঝতে পারবেন যে যার জন্মের সুসংবাদ নিয়ে ফেরেশতাগন এসেছিলেন সেই ঈশহাক আঃ কেও এর অন্তরভুক্ত করা হয়েছে কারণ আল্লাহের রহমত ও বরকতের প্রকাশ হিসাবে ইশহাক আঃ এর জন্ম। সুতারং এখানে ইশহাক আঃ এর মা হিসাবে সারাহ আঃ কে আহলে বাইত এর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সর্বপরি সারাহ আঃ ছিলেন ইব্রাহিম আঃ এর বোন (খালাত বা চাচাত)। এই হিসাবে সারাহ আঃ কে পুরো ইব্রাহিমি খান্দানের মধ্যে নেওয়া হয়েছে।
২)অনুরুপ ভাবে শূরা কাসাস:১২
وَحَرَّمْنَا عَلَيْهِ الْمَرَاضِعَ مِنْ قَبْلُ فَقَالَتْ هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ أَهْلِ بَيْتٍ يَكْفُلُونَهُ لَكُمْ وَهُمْ لَهُ نَاصِحُونَ
“পূর্ব থেকেই আমি ধাত্রীদেরকে মূসা থেকে বিরত রেখেছিলাম। মূসার ভগিনী বলল, আমি তোমাদেরকে এমন এক পরিবারের কথা বলব কি, যারা তোমাদের জন্যে একে লালন-পালন করবে এবং তারা হবে তার হিতাকাঙ্ক্ষী”।
ঠিক তেমনি ভাবে এই খানে মুসা আঃ এর বোন মুসা আঃ এর মা কে মুসা আঃ এর আহলে বাইত বলেছেন।
এখন নাসিবিরা যদি মা আর স্ত্রী এর পার্থক্য না বোঝে –সেটা তাদের নিজেদের দোষ।
এই প্রবন্ধ শেষ করছি খারেজিদের আনা একটা বর্ণনা যেটাতে বলা হচ্ছে যে এই আয়াতটা শুধুমাত্র স্ত্রীগনদের জন্য।
عن عِكْرِمة أنه كان ينادي في السوق: { إِنَّمَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيرًا } ، نزلت في نساء النبي صلى الله عليه وسلم خاصة
–ইবনে কাসির আল বুসেরী শুম্মা দামেস্কী তার তাফসিরে বলেন।
“ইকরিমা বাজারে গিয়ে চেঁচিয়ে বলত যে ‘হে নবী পরিবারের সদস্যবর্গ। নিশ্চয় নিশ্চয় আল্লাহ চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে পূর্ণরূপে পূত-পবিত্র রাখতে’। এই আয়াতটা শুধুমাত্র নবী (সাঃ) এর স্ত্রীগনের জন্য নাযিল হয়েছে”
উত্তরঃ
১) প্রথমত এই বর্ণনা অগণিত সহিহ হাদিসের বিপরীতে যেখানে বলা হচ্ছে যে এই আয়াতটা প্রবিত্র ৫ জনের জন্য নাযিল হয়েছে।এমন কি ইবনে আব্বাস রাঃ থেকেও সাহিহ হাদিস বেশ কয়েকটা সনদ সহ বর্ণিত হয়েছে। অসংখ্য সহিহ হাদিসের বিপরীতে একটা খাপ ছাড়া হাদীস মুল্যহীন।
২) এই বর্ণনাতে ইকরিমা নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন। আর এই হাদিস রসুল পাক পর্যন্ত পৌঁছায়না। ইক্রিমা স্বচক্ষে দেখেনি যে রসূলে পাক সাঃ এর উপর যখন এই আয়াত নাযিল হচ্ছে বা রসূলে সাঃ যখন এই আয়াতটা পড়ছেন। অন্যান্য সব হাদিস গুলির বর্ণনা কারীগন স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ কারী যেমন উম্মুল মমিনিন উম্মে সালামা রাঃ।
৩) ইক্রিমা খারেজি ছিল আর সবাই জানে যে খারেজিদের Movement শুরু হয়েছিল ইমাম আলী আঃ এর বিরোধিতার মাধ্যমে, শেষ পর্যন্ত এরা ইমাম আলী আঃ কে কতল করে। এটা আহলে সুন্নাদেরও উসুল যে খারেজিদের কথা গ্রাহ্য হবে না যদি সেটা ইমাম আলী আঃ দের নিয়ে হয়।
সুতারং ইমাম আলী আঃ এর শত্রু দের থেকে ইমাম আলী আঃ এর ফজিলাতের against এ কোন বর্ণনা দলিল হিসাবে গ্রহণ যোগ্য নয়।
৪) ইকরিমা মিথ্যাবাদী ছিল।
قال عطاء كذب عكرمة أنا رأيت ابن عباس يمسح عليهما
‘আতা বলেছেন যে ইকরিমা মিথ্যাবাদি
—শারাহ মুয়াত্তা, ইবনে আব্দুল বার্
دخلت على علي بن عبد الله بن عباس ، وعكرمة مقيد على باب الحش ، قال : قلت : ما لهذا كذا ، قال : إنه يكذب على أبي
“আলী ইবনে আবদুল্লা ইবনে আব্বাস এর কাছে ( বাড়িতে) গিয়ে দেখি ইকরিমাকে দরজার সাথে বেঁধে রেখেছে, জিগ্যেস করলে বলল আমার আব্বার নামে মিথ্যা বলে”।
অর্থাৎ ইকরিমা যে অফ্রিকান ছিল আর ইবনে আব্বাসের গোলাম ছিল, ইবনে আব্বাস মারা যাওয়ার পরে ইকরিমা হাদীস বানিয়ে ইবনে আব্বাসের নামে চালিয়ে দিত, সেই জন্য ইবনে আব্বাসের ছেলে আলী ( ইতিহাসে প্রথম জেনারেশনের মাত্র দু জনের নাম আলী ছিল এর মধ্যে ইবনে আব্বাস রাঃ এর এই ছেলে যার নাম আলী ছিল)। ইকরিমা কে বেঁধে রাখত।
এছাড়া আরও আনেক সমসাময়িক তা’বেই ইকরিমাকে মিথ্যাবাদী বলেছেন।
শেষ করছি আগে দেওয়া challenge টাকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে। যে যদি পারে ত আহলে খারেজি ওয়ান নাসিবি একটা হাদিস নিয়ে আসুক যেখানে স্ত্রীগণ বলছেন বা দাবি করছেন যে এই আয়াতটা তাঁদের উদ্দেশ্যে নাযিল হয়েছে।
ওয়া আলাইকুমাস সালাম।