আশুরার দিন ব্রিটেনেও রক্ত-বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিল: ঐতিহাসিক সাক্ষ্য

আশুরার দিন ব্রিটেনেও রক্ত-বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিল: ঐতিহাসিক সাক্ষ্য

'দ্যা অ্যাংলো-সেক্সন ক্রনিকল' বা ঐতিহাসিক 'অ্যাংলো-সেক্সন ক্রমপঞ্জী' শীর্ষক বইয়েও এসেছে:  "685. In this year in Britain it rained blood, and milk and butter were turned into blood."  ‘দ্যা অ্যাংলো-সেক্সন ক্রনিকল’ বা ঐতিহাসিক ‘অ্যাংলো-সেক্সন ক্রমপঞ্জী’ শীর্ষক বইয়েও এসেছে: “685. In this year in Britain it rained blood, and milk and butter were turned into blood.”

১৯ নভেম্বর (রেডিও তেহরান): মুসলিম সমাজকে প্রকৃত ইসলাম কায়েমের পথে জাগিয়ে তোলার প্রচেষ্টায় কারবালায় বেহেশতি যুবকদের অন্যতম সর্দার ও বিশ্বনবী (সা.)’র প্রিয় নাতি হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) এবং নবী পরিবারের সদস্যসহ ৭২ জনের মর্মান্তিক শাহাদতের ঘটনার পর বেশ কিছু অলৌকিক ঘটনা ঘটেছিল।
মুসলিম সমাজের শাসন-ক্ষমতায় চরম পথভ্রষ্ট ও দুরাচারী ব্যক্তি ইয়াজিদ ইবনে মুয়াবিয়াকে স্বীকৃতি না দেয়ায় তাঁদের ওপর বিশ্ব-ইতিহাসের নৃশংসতম ওই যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল হিজরি ৬১ বা ৬২ সনে।
কালজয়ী ওই বিপ্লবের পর নানা অলৌকিক ঘটনার কথা বর্ণিত হয়েছে সুন্নি ও শিয়া সূত্রে বর্ণিত নানা হাদিসে। এইসব ঘটনার মধ্যে, সূর্যের লাল হয়ে যাওয়া, আকাশের কিছু তারকার মধ্যে সংঘর্ষ, আকাশ থেকে রক্ত বৃষ্টি বর্ষণ, আকাশের কান্না ও আসমান লাল হয়ে যাওয়া, সূর্যগ্রহণ, পাথরের নীচ থেকে রক্ত বের হওয়া ইত্যাদি অন্যতম।
ঈসা বিন আল হারেস আলকিন্দি থেকে বর্ণিত হয়েছে, ইমাম হুসাইন (আ.) যখন শহীদ হলেন তার পর থেকে সাত দিন পর্যন্ত আসরের নামাজ আদায়ের সময় দেখতাম সূর্য এতটা লাল হয়ে গেছে যেন একটি লাল চাদর সূর্যের ওপর টেনে দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও কোনো কোনো তারকার মধ্যে সংঘর্ষ বা পরস্পরের প্রতি ধাক্কার ঘটনা ঘটতো। [তাহজিবুল কামালা, আলমিজি, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা:৪৩২-৪৩৩, আজ জাহাবির লিখিত ‘ইসলামের ইতিহাস’ (তারিখে ইসলাম), খণ্ড-৫, পৃ-১৫, জাহাবির লিখিত ‘সিইর আলাম আন নাবলা’, খণ্ড-৩, পৃ-৩১২ ও ইবনে আসাকারের লিখিত দামেস্ক শহরের ইতিহাস, খণ্ড-১৪, পৃষ্ঠা-২২৭]

 

রক্ত বৃষ্টি:

 

নাজরা আজিদেহ বলেছেন, ইমাম হুসাইন (আ.) যখন শহীদ হলেন তখন আকাশ থেকে রক্ত বৃষ্টি হয়েছিল এবং আমরা এটাও দেখেছি যে আমাদের সব জিনিষপত্র রক্তে ভরে গিয়েছিল।
জাফর বিন সালমান থেকেও বর্ণিত হয়েছে যে, আমার খালা উম্মে সালেম বলেছেন, ইমাম হুসাইন (আ.) শহীদ হওয়ার পর রক্তের মত লাল বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিল দেয়ালগুলো ও ঘরগুলোর ওপর। এ ধরনের ঘটনা (প্রাচীন ইরানের) খোরাসানে (বর্তমানে যার কিছু অংশ রয়েছে ইরানে ও আফগানিস্তানে), (প্রাচীন) সিরিয়ায় ও কুফায়ও ঘটেছে বলে আমাকে খবর দেয়া হয়েছে। (সূত্র: তাহজিবুল কামাল, খণ্ড-৬, পৃ-৪৩৩; জাহাবির ‘সিইর আলাম আন নাবলা’, খণ্ড-৩, পৃ-৩১২-১৩; আসসাক্কাত, ইবনে হাব্বান, খণ্ড-৫, পৃ-৪৮৭; ইবনে আসাকারের লিখিত দামেস্ক শহরের ইতিহাস, খণ্ড-১৪, পৃষ্ঠা-২২৭-২২৮)
এ ছাড়াও কারবালার মহানায়ক ইমাম হুসাইন (আ.) শহীদ হওয়ার পর তাঁর বোন হযরত জয়নাব (সালামুল্লাহি আলাইহা) কুফায় হৃদয়-নিংড়ানো এক ভাষণে বলেছিলেন: হে কুফাবাসী! হে প্রতারকেরা, হে বিশ্বাসঘাতকরা, হে পাপীরা! তোমরা এখন কাঁদছ? আল্লাহ যেন কখনও তোমাদের অশ্রু না কমান ও তোমাদের মন যেন সব সময়ই দুঃখ-ভারাক্রান্ত হয়ে থাকে। তোমাদের ওয়াদা বা প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে সত্যতার বিন্দুমাত্র লেশ নেই। তোমরা তোমাদের নেতাকে [ইমাম হুসাইন (আ.)-] শহীদ করে কলঙ্কজনক ও ভয়াবহ আচরণের প্রমাণ দিয়েছ। আকাশ থেকে রক্ত-বৃষ্টি বর্ষিত হওয়ার পরও কি তোমরা সন্দেহের মধ্যে আছ? তোমরা মনে রেখ, পরকালের আজাব হবে আরো যন্ত্রণাদায়ক ও তিক্ত।
‘দ্যা অ্যাংলো-সেক্সন ক্রনিকল’ বা ঐতিহাসিক ‘অ্যাংলো-সেক্সন ক্রমপঞ্জী’ শীর্ষক বইয়েও এসেছে:
“685. In this year in Britain it rained blood, and milk and butter were
turned into blood.”
অর্থাত, “খ্রিস্টিয় ৬৮৫ সন: এই বছর ব্রিটেনে রক্ত-বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিল এবং দুধ ও মাখন রক্তে পরিণত হয়েছিল।”
উল্লেখ্য, কুফায় ইমাম হুসাইন (আ.)’র বোন হযরত জয়নাব (সা.) যখন ওই ভাষণ দিয়েছিলেন তা ছিল একই বছর।
ব্রিটেনেও এ ধরনের ঘটনা ঘটা থেকে বোঝা যায় কারবালার ঘটনা কত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল এবং তার প্রভাব কতদূর (বিশ্বব্যাপী)পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।
শিয়া ও সুন্নি সূত্রের নানা বর্ণনায় এসেছে, “কারবালার মহানায়ক ইমাম হুসাইন (আ.) শহীদ হওয়ার পর আকাশ থেকে এমন রক্ত বৃষ্টি বর্ষিত হয়েছিল যে, কুয়া ও কুয়ার বালতিগুলো রক্তে ভরে গিয়েছিল”।

 

রেডিও তেহরান/এএইচ/১৯

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *