রাসুলের(সাঃ) জীবদ্দশায় হযরত আয়েশা বিনতে আবুবকর ও হাফসা বিনতে উমর(রাঃ)
লিখেছেনঃ আদর (তারিখঃ বৃহঃ, ১৯/০৮/২০১০ – ০৬:১৫)
রাসুলের(সাঃ) জীবদ্দশায় হযরত আয়েশা বিনতে আবুবকর ও হাফসা বিনতে উমর(রাঃ)
ডঃ তিজানী সামাভী,প্রফেসর,সুরাবান বিশ্ববিদ্যালয়,প্যারিস
রাসুল(সাঃ)এর জীবদ্দশায় আমরা যখন বিবি আয়েশার(রাঃ) প্রতি দৃষ্টিপাত করি,তখন তার মধ্যে অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতি ও পাপ-পংকিলতা দেখতে পাওয়া যায়।তিনি বিভিন্ন সময়ে হাফসা বিনতে উমর(রাঃ)এর সাথে যোগ সাজসে এমন সব ন্যাক্কার জনক কাজ করেছেন,যার কারনে রাসুল(সাঃ) ‘হালাল’কে নিজের জন্য ‘হারাম’ করে নিয়েছিলেন।ঘটনাগুলো বুখারী ও মুসলিম শরিফে বনিত হয়েছে।আয়েশা ও হাফসা(রাঃ) উভয়ে রাসুল(সাঃ)এর বিরুধ্বে ষড়যন্ত্র করেছিলেন।এঘটনাটি সিহাহ সিত্তাহ ও তাফসীরে উল্লেখ আছে।অনেক ঘটনার মধ্য হতে দু’টি ঘটনা কুরান শরিফেও বননা আছে।
আয়েশার ‘কলব’ ও ‘আকল’এর উপর অহমিকার পরদা পড়ে গিয়েছিল,সে কারনেই তিনি নবী(সাঃ)এর সম্মুখে বেয়াদবী করতেন।নবী সা। একদা বিবি খাদীজার(রাঃ)প্রশংসামুলক আলোচনা করছিলেন,তখন আয়শা বলেছিলেন যে,”আমার ও খাদীজার মধ্যে আকাশ-পাতাল তফাত রয়েছে,সে এমনই বৃ্দ্বা ছিল যে তার গালে ভাজ পড়ে গিয়েছিল,আপনাকে আল্লাহ তার চেয়ে উত্তম দান করেছেন”।আয়েশার মুখে এমন কথা শুনে রাসুল(সাঃ) এত বেশী পরিমান রাগান্বিত হলেন যে,রাগের চোটে তাঁর সমস্ত পশম শক্ত হয়ে গিয়েছিল(বুখারী,খঃ৪,পৃঃ২৩১ এবং মুশলিম শরিফেও বনিত আছে)।
একদা রাসুল(সাঃ)আয়েশার ঘরে অবস্থান করছিলেন।সেই মুহরতে তাঁর অপর একজন স্ত্রী খাবারের একটি পেয়ালা পাঠীয়েছিলেন।রাসুল(সাঃ) তখন ক্ষুধাতও ছিলেন।কিন্তু আয়েশা রাসুল(সাঃ)কে খেতে না দিয়ে উক্ত পেয়ালাটি ফেলে দিয়েছিলেন (বুখারী, খঃ৬,পৃঃ১৫৭)।
আয়েশা একবার নবী সাঃকে বলেন, “আপনি কি আল্লাহর নবী হওয়ার ধারনা পোষন করেন”?(এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন,ইমাম গাযযালী,খঃ২,পৃঃ২৯ কিতাবে আদাবুন্নিকাহে)।
আয়েশা একবার নবী(সাঃ)এর প্রতি রাগান্বিত হয়ে বলেছিলেন,”ইনসাফ অবলম্বন করুন”।ঐ মুহুরতে তার পিতা আবুবকর আয়েশাকে আয়াশাকে এত মারলেন যে তার রক্ত প্রবাহিত হতে থাকল(কানযুল উম্মাল,খঃ৭,পৃঃ১১৬ এবং এহইয়াউল উলুম)।
আয়েশার হিংসা-বিদ্বেশের চরম নমুনা হলো এই যে,তিনি আসমা বনতে নোমানের(রাঃ)উপর ঐ সময় দোষারোপ করলেন যখন আসমা রাসুল(সাঃ)এর স্ত্রী হয়ে তাঁর ঘরে আসেন।তিনি আসমাকে বলেন যে, “নাবী(সাঃ) ঐ মহিলাকে বেশী পছন্দ করেন,যে মহিলা সহবাসের চরম মুহুরতের সময় বলে ‘আউজুবিল্লাহে মিনকা’ শব্দটি উচ্চারন করে”।এই কথার দ্বারা উদ্দেশ্য ছিল,এই সাদা-মাটা মহিলা যখন এই কথা বলবে তখন রাসুল(সাঃ) তাকে তালাক দিয়ে দিবেন(তাবাকাতে ইবনে সা’দ,খঃ৮,পৃঃ১৪৫,তারিখে ইয়াকুবী,খঃ২,পৃঃ২৯)।
রাসুল(সাঃ)এর সম্মুহে আয়েশার বেয়াদবীর কোন সীমা ছিল না।একদা নবী(সাঃ) নামাজ পড়ছিলেন আর আয়েশা পা লম্বা করে বসে ছিলেন,নবী(সাঃ)যখন সেজদায় যেতেন তখন পা সরিয়ে নিতেন এবং তিনি যখন সেজদা হতে উঠে দাঁড়াতেন তখন আবার পা লম্বা করে দিতেন(সহী বুখারী,খঃ৩,পৃঃ১০১,সালাতুল ফারাশ অধ্যায়ে)।
একবার আয়েশা বিনতে আবুবকর ও হাফসা বিনতে উমর (রাঃ) রাসুল(সাঃ)কে এত বেশী বিরক্ত করলেন যে তিনি এক মাসের জন্য স্ত্রীদের জন্য ত্যাগ করলেন এবং পাটি বিছিয়ে ঘুমাতেন(সহী বুখারী,খঃ৩,পৃঃ১০৫)।
আর আল্লাহপাক যখন এই আয়াত নাজিল করলেন, “ তুমি উহাদের মধ্যে যাহাকে ইচ্ছা তোমার নিকট হতে দূরে রাখিতে পার এবং যাহাকে ইচ্ছা তোমার নিকট ঞ্ছান দিতে পার”(সুরা আহজাবঃ৫১)।তখন বেহায়ার মত আয়েশা নবী সাঃকে বলেন, “আপনার পালনকরতাকে তো সবসময় আপনার নাফসের চাহিদারই পক্ষপাত করতে দেখতে পাই”(সহি বুখারী,খঃ৬,পৃঃ২৪ ও ১২৮)।
আবার আয়েশা যখন রাগান্বিত হতেন(এবং বেশীর ভাগ সময় রাগান্বিতই থাকতেন)তখন নবীকে(সাঃ) ‘নবী’ বলা হতে বিরত থাকতেন।‘মুহাম্মাদ’ও বলতেন না,বরং ‘ইব্রাহীমের বাপ’ বলে ডাকতেন (সহি বুখারী,খঃ৬,পৃঃ১৫৮)।
আয়েশা প্রায়শই নবী(সাঃ)এর প্রতি মান-অভিমান প্রদরশন করতেন এবং অসন্তষ্ট থাওক্তেন।কিন্তু নবী(সাঃ) ক্ষমা ও দয়ার সাগর,তাঁর চরিত্র এতই উন্নত,এতই ধৈয্যশীল,সরবদাই তিনি আয়েশাকে বলতেন, “হে আয়েশা নিজের শয়তানকে দমিয়ে রাখ”।তিনি প্রায়ই আয়েশা ও হাফসার উদ্দেশ্যে আল্লাহর সাবধান বানীর জন্য আফসোস করতেন।একাধিকবার তাদের অপকরমের জন্য কুরানের আয়াত নাজিল হয়েছেঃ “তোমরা দুজনই তওবা কর,কারন তোমাদের অন্তর বেকে গেছে”(সুরা তাহরিমঃ৪)।অরথাত এরা হক(সত্য) হতে সরে পড়েছেন(সহি বুখারী,খঃ৩,পৃঃ১০৬)।আল্লাহপাক আরো কুরানে বলেন, “আর তোমরা যদি তাঁর বিরুধ্বে ষড়যন্ত্র কর তাহলে মনে রেখ,আল্লাহ তাঁর(রাসুলের) অভিভাবক,জিব্রাইল ও নেক মুমিনগন উপরন্তু ফেরেশ্তাগনও হচ্ছে তাঁর সাহায্যকারী”(সুরা তাহরিমঃ৪)।