বেলায়েত মিডিয়া
ক্লাস নং:২
উসুলে দ্বীন= ইসলামের ৫টি মৌলিক বিশ্বাসের সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ
তাওহীদঃ বিশ্ব বিধাতা পরিপূর্ণ ও পরম সত্তা। তাঁর জাত বা সারসত্তা সকল প্রকার গুণাবলীতে ভরপূর। যা কিছু আমরা পরিপূর্ণতা বলে আখ্যায়িত করে থাকি তার সবকিছুই তাঁর সারসত্তায় বিরাজমান। আর যা কিছু আমাদের ধারণারও অতীত তাও তাঁর জন্যে ধারণা করা যায়। তিনি পরম পরিপূর্ণ। তিনি সার্বজনীন প্রভু, তিনি চিরন্তন, চিরঞ্জীব, শাশ্বত ও অমর। তিনি চূড়ান্ত সার্বভৌম ও সর্বশক্তিমান। তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন। তিনি কোন স্থান, কাল বা পাত্রে সীমাবদ্ধ নন। স্থান, কাল, পাত্র তাঁর জন্যে কল্পনা করারও অশোভনীয়। তিনি কোন বস্তুগত সত্তা নন। তিনি কোন মিশ্র বা যৌগিক সত্তা নন। তিনি একজন অপরিহার্য সত্তা।
আদালতঃ আল্লাহ্ ন্যায় বিচারক, সুবিচারক ও সুবিচক্ষণ। তিনি হাকিম, সর্বশ্রেষ্ঠ দার্শনিক ও প্রজ্ঞাবান। তাঁর প্রতিটি কার্যে সুনির্দিষ্ট কারণ নিহিত থাকে। তিনি অযথা কোন কাজ সম্পাদন করেন না। ন্যায়বিচারের আরাবী প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘আদ্ল’। আদ্ল -এর বিপরীত শব্দ হচ্ছে যুলুম বা অত্যাচার। আদ্ল এর বিভিন্ন অর্থ হতে পারে। তন্মধ্যে চারটি অর্থ উল্লেখযোগ্য।
একঃ ভারসাম্য রক্ষা।
দুইঃ সাম্য বা সমান বিচার।
তিনঃ সকলকে প্রাপ্য অধিকার দান।
চারঃ পাত্র হিসেবে করুণা বর্ষণ।
উপরোক্ত চারটি অর্থের চতুর্থ প্রকার আদালত বা ন্যায়বিচারের অর্থ অধিকাংশ মুসলিম দার্শনিক ও প্রজ্ঞাবিদগণ গ্রহণ করেছেন।
রিসালতঃ রিসালত হলো একটি ঐশী দায়িত্ব এবং আল্লাহর মিশন। আল্লাহ একাজে সর্বোচ্চ যোগ্য ও পরিপূর্ণ মানবসত্তাদের নিয়োগ দিয়েছেন। তাদেরকে মানুষদের নিকট প্রেরণ করা হয়েছে, ইহকাল ও পরকালীন লাভ ও কল্যাণ সম্পর্কে বর্ণনা করার জন্যে, যাতে চারিত্রিক কলুষতা, শয়তানী কর্মকান্ড ও ক্ষতিকর আচরণ থেকে মানুষকে পরিশুদ্ধ করতে পারেন।
ইমামতঃ ইমামত হলো দ্বীনের মৌলিক বিষয়সমূহের একটি যার উপর বিশ্বাস ব্যতীত ঈমান পরিপূর্ণ হয় না। নবুওয়াত ও রিসালতের মত ইমামতও হলো মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে দয়া ও করুণা। সুতরাং প্রত্যেক যুগেই পথ প্রদর্শক ইমাম থাকা আবশ্যক যিনি মানুষের হেদায়াতকারী এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণের সংবাদদাতা হিসেবে মহানবীর(সা.) প্রতিনিধিত্ব করবেন। মহানবী(সা.) সর্বসাধারণের উপর যেরূপ সার্বজনীন বেলায়াত বা কর্তৃত্ব রাখতেন ইমামরাও জনগণকে যাবতীয় কল্যাণের পথে পরিচালনা করার জন্য, ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার জন্য, অন্যায়-অবিচার নির্মূল করার জন্য সেরূপ কর্তৃত্ব রাখেন।
আখেরাতঃ মহান আল্লাহ মানুষকে মৃত্যুর পর পুনরুত্থান দিবসে নতুন করে জীবিত করবেন এবং সৎকর্মকারীকে পুরস্কৃত করবেন। আর পাপীকে শাস্তি দিবেন। এ বিশ্বাসের ক্ষেত্রে সামগ্রিকভাবে সমস্ত ঐশী দ্বীনসমূহ ও দার্শনিকরা একমত। পবিত্র কোরআনে প্রায় এক হাজারের মত আয়াতে সুষ্পষ্টরূপে পুনরুত্থান ও মানুষকে দ্বিতীয়বারের মত জীবিত করার ব্যাপারে ইংগিত দেয়া হয়েছে। অতএব যখন কেউ এ ব্যাপারে দ্বিধাদ্বন্দ্ব প্রকাশ করে তখন এটা সুষ্পষ্টরূপে প্রতীয়মান হয় যে, প্রকৃতপক্ষে সে রাসূলের (সা.) রেসালাতের প্রতি, কিংবা মহান আল্লাহর অস্তিত্ব ও তার ক্ষমতার প্রতি সন্দেহ পোষণ করে।
প্রশ্ন : জান্নাত এবং জাহান্নাম কয়টি তাদের নাম উল্লেখ কর?
জান্নাতের স্তর মোট আটটি:-
(১) জান্নাতুল ফিরদাউস।
(২) দারুল মাকাম।
(৩) দারুল কারাব।
(৪) দারুস সালাম।
(৫) জান্নাতুল মাওয়া।
(৬) দারুন নাঈম।
(৭) দারুল খুলদ।
(৮) জান্নাতল আদন
জাহান্নামের স্তর মোট সাতটি :-
(১) জাহান্নাম।
(২) লাযা।
(৩) হুতামাহ।
(৪) সায়ীর্।
(৫) সাকার্।
(৬) জামহীম।
(৭) হাবিয়াহ।
প্রশ্ন : কবরে প্রথম কয়টি প্রশ্ন করা হবে?
=৫টি প্রশ্ন করা হবে।
১) তোমার রব্ব কে? # আল্লাহ
২) তোমার দ্বীন কি? # ইসলাম
৩) তোমার রাসুল কে? # হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)
৪) তোমার ইমাম কে? # ইমাম ১২ জন। তন্মধ্যে বর্তমান ইমাম, ইমাম মেহেদী (আঃ)
৫) তোমার ইবাদত বা আমল কি?
প্রশ্ন : পাক পান্জাতন কয়জন ও তাঁদের নাম লিখুন?
১) হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)
২) ইমাম আলী (আঃ)
৩) মা ফাতেমাতুজ্জোহরা (সাঃ আঃ)
৪) ইমাম হাসান (আঃ)
৫) ইমাম হুসাইন (আঃ)
প্রশ্ন : ১২ ইমাম ১৪ মাসুমদের নাম লিখুন?
১. হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সাঃ)
২. হযরত মা ফাতেমা (আঃ)
৩. ইমাম আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ){রাসুলের(সাঃ) চাচাতো ভাই ও তাঁর কন্যা ফাতিমা যাহরার(আঃ) স্বামী}
৪. ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আঃ){রাসুলের নাতি এবং আলী ও ফাতিমার সন্তানদ্বয়}
৫. ইমাম যাইনুল আবেদীন আলী ইবনুল হুসাইন (আস সাজ্জাদ) (আঃ)
৬. ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আল বাকির) (আঃ)
৭. ইমাম জাফর ইবনে মুহাম্মাদ (আস সাদিক) (আঃ)
৮. ইমাম মুসা ইবনে জাফর (আল কাজিম) (আঃ)
৯. ইমাম আলী ইবনে মুসা (আর রিজা) (আঃ)
১০. ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আল জাওয়াদ আত-তাকী) (আঃ)
১১. ইমাম আলী ইবনে মুহাম্মাদ (আল হাদী আন-নাকী) (আঃ)
১২. ইমাম হাসান ইবনে আলী (আল আসকারী) (আঃ)
১৩.ইমাম মেহেদী (আঃ)
প্রশ্ন : ইতিহাসে তিনটা প্রসিদ্ধ কিস্তি বা নৌকা কি কি?
1) নূহ (আঃ)এর কিস্তি- 2) আহলে বাইত এর কিস্তি: নবী (সা:) বলেন, যে এই কিস্তিতে উঠলো সে মুক্তি পাইলো আর যে উঠলো না সে ডুবে মরলো । 3) ইমাম হোসাইন (আঃ) নাজাতের তরী । ইন্নাল হোসাইনা ওয়া মেজবাহুল হুদা ওয়া সাফিনাতুন নাজাত । হোসাইন হলো হেদায়েতের আলো, এবং নাজাতের নৌকা ।
প্রশ্ন: ‘দ্বীন’ শব্দের অর্থ কি ? দ্বীন বা ধর্মের প্রয়োজনীয়তা কি ?
উত্তর: প্রথমত দ্বীন শব্দের অনেকগুলো অর্থ রয়েছে । যেমন:
(১) যেকোনো ধরণের আর্দশ, চিন্তা, প্রথা বা কালচার সেটি সত্য বা কিংবা মিথ্যা হোক না কেন তাকে দ্বীন বলা হয়ে থাকে । পবিত্র কুরআনে মহান প্রতিপালক কাফেরদের সম্পর্কে বলেন: « لَكُمْ دِينُكُمْ » কাফেরদের পথ ও পন্থাকেও দ্বীন শব্দ দ্বারা পরিচয় দেয়া হয়েছে । [সুরা আল কাফেরুন আয়াত নম্বর ৬ নম্বর ]
(২) আমল ও আনুগত্য অর্থে দ্বীন শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে । যেমন: لِلَّهِ الدِّينُ الْخَالِصُ [সুরা আল যুমার ৩ নম্বর আয়াত]
(৩) ধর্ম ও ঐশী শরীয়ত অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে । যেমন : إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ আল্লাহর কাছে একমাত্র সঠিক ও সত্য ধর্ম হল ইসলাম এবং আনুগত্যতা । [সুরা আলে ইমরান ১৯ নম্বর আয়াত]
(৪) হিসাব ও প্রতিদান অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে । যেমন: مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ প্রতিদান দিবসের মালিক । সেদিনটি এমন একটি দিন কেউই তা সহ্য বা উপলব্ধি করতে পারবে না; যেদিন মানুষের কোন কিছুই কোনো কাজে আসবে না। [ ثُمَّ مَآ أَدْرَىٰكَ مَا يَوْمَ لَا تَمْلِكُ نَفْسٌ لِّنَفْسٍ شَيْئًا ۖ وَالْأَمْرُ يَوْمَئِذٍ لِّلَّهِ ] [সুরা ইনফিতর ১৮-১৯ নম্বর আয়াত]
দ্বিতীয়ত: অতএব পৃথিবীর কোনো মানুষই বে-দ্বীন বা জীবনযাপনের পথ ও পন্থা বিহীন অবস্থায় থাকতে পারে না । কিন্তু প্রশ্ন হলো এই পথ ও পন্থা বা জীবনযাপনের পদ্ধতি কার থেকে নেবো ?
(১) নিজের ইচ্ছামত (২) সমাজের অধিপতিদের থেকে (৩) পূর্ব পূরুষদের থেকে (৪) স্রষ্টা ।
উল্লেখিত চারটি উৎসের মধ্যে চার নম্বরটি মানুষের বুদ্ধিবৃত্তি ও সহজাতসত্তা সম্মত উৎস । [إِنَّ الدِّينَ عِندَ اللَّهِ الْإِسْلَامُ] আল্লাহর কাছে একমাত্র মনোনীত ধর্ম হল ইসলাম বা তাঁর সম্মুখে আনুগত্যতা প্রকাশ । [সুরা আলে ইমরান ১৯ নম্বর আয়াত]