গত ২ নভেম্বর ঢাকাস্থ ইরান কালচারাল সেনটার মিলনায়তনে পবিত্র ঈদে গাদীর ও ঈদে মুবাহালা উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের রাষ্ট্রদূত জনাব হোসেইন আমিনিয়ান তূসী। সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক ড. কাউসার মোস্তফা আবুল উলায়ী, ইরানের আল মোস্তফা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা ক্যাম্পাসের পরিচালক জনাব আলী আলীরেযারী এবং ঢাকাস্থ হোসেনী দালানের খতীব জনাব সাইয়্যেদ রাশেদ হোসেন যায়দী। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দান করেন ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সাংস্কৃতিক কেনেদ্রর ভারপ্রাপ্ত কালচারাল কাউন্সেলর মোস্তফা সোহরাব।
সভাপতির বক্তব্যে ড. কাউসার মোস্তফা আবুল উলায়ী বলেন, ইসলামের ইতিহাসে অনেক আননদ-বেদনার ঘটনা রয়েছে। ইতিবাচক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনাগুলো প্রতিটিই একেকটি ঈদ। ‘ঈদ’ মানে আননদ। ঈদে গাদীর তেমনি একটি তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। আমরা আমাদের দেশে সাধারণত ঈদুল ফিতর, ঈদুল আযহা পালিত হতে দেখি। ঈদে মিলাদুন্নবীও পালিত হয়। ঈদে গাদীর এবং ঈদে মুবাহালাও ইসলামের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষ তা জানে না। তিনি বলেন, গাদীরে খুমের ইতিহাস হচেছ মুসলমানদের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক নেতৃত্বের ক্ষেত্রে অভিভাবক নির্বাচনের ইতিহাস। হযরত আলী (আ.)-কে ধর্মীয়-আধ্যাত্মিক অভিভাবক হিসেবে মহানবী (সা.)-এর স্থলাভিষিক্ত ঘোষণা করা হয় বিদায় হজের সময় গাদীরে খুম নামক স্থানের সমাবেশে। ঘোষণা করা হয় আহলে বাইতের গুরুত্ব। তিনি বলেন, আমাদের সকলকে আহলে বাইতের শিক্ষাকে গ্রহণ করতে হবে। আহলে বাইতকে মুহববত করতে হবে।
জনাব হোসেইন আমিনিয়ান তূসী বলেন, গাদীর দিবস হচেছ সেই বিশেষ দিন যেদিন ইমাম আলী (আ.)-এর হাতটি উত্তোলিত হয়েছিল এবং মহানবী (সা.) কর্তৃক ঘোষিত হয়েছিল : ‘আমি যার মাওলা (অভিভাবক) আলী তার মাওলা।’ পবিত্র কোরআনের শেষ আয়াত এই দিবসের তাৎপর্যকে আরো গুরুত্ববহ করে দিল। যে মুহূর্তে মহানবী (সা.) কর্তৃক মুসলমানদের নেতা ঘোষণা করা হলো, সেই মুহূর্তে ইসলামকে পূর্ণ দ্বীন হিসেবে ঘোষণা করে আয়াত নাযিল হলো।
এই ইমামতের ধারাতেই ইসলাম রক্ষার্থে ইমাম হোসাইন (আ.) কারবালায় আত্মত্যাগ করেছেন এবং ইসলামকে জিনদা করেছেন। ইরানের ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে যে ন্যায়ের দরজা উন্মোচিত হয়েছে তাতে রয়েছে গাদীরের ভূমিকা। সেই গাদীরের গৌরবে গৌরবান্বিত হয়েই ইসলামকে বিজয়ী করতে ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হবেন।
জনাব আলী আলীরেযায়ী বলেন, গাদীরের ঘটনা আহলে সুন্নাতের বহু কিতাবে বর্ণিত আছে। অনেক তাফীসর গ্রন্থে উল্লেখ আছে। ‘মাওলা’ শব্দের অর্থ বন্ধুও হয়, অভিভাবকও হয়। কিন্তু শুধু বন্ধু ঘোষণার জন্য প্রখর রোদের ভেতর লক্ষ মানুষকে একত্র করার কোন কারণ থাকতে পারে না। কাজেই বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। সত্য-অনুসন্ধানী নিরপেক্ষ হৃদয় অবশ্যই এর আসল তাৎপর্য খুঁজে পাবে।
জনাব রাশেদ হোসেন যায়দী বলেন, গাদীরের ঘোষণার মাধ্যমেই দ্বীনের পূর্ণতা ঘটেছে। আর মুবাহালার মাধ্যমে দ্বীনের বিজয় হয়েছে নাজরানের খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে। গাদীরে রাসূল (সা.) যখন পয়গামে পৌঁছে দিলেন তখনই দ্বীনকে পরিপূর্ণ করার আয়াত নাযিল হলো। এ দিবস তাই একটি ঈদ। মুবাহালাও তেমনি একটি ঈদ। আমাদের জীবনের প্রতিটি দিবসই ঈদে পরিণত হবে যদি সেই দিবসগুলোতে কোন পাপ না করা হয়, সেই দিন যদি আল্লাহর হুকুমগুলো ঠিকমত পালন করা হয়।
জনাব মোস্তফা সোহরাব বলেন, গাদীরের তাৎপর্য অনুভব করলেই মুসলিম বিশ্ব আজকে যে ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে তা অতিক্রম করা সম্ভব হবে। অভিষ্ট লক্ষ্যে আরোহণ করবে মুসলমানরা। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, গাদীরে যে সত্য উচচারিত হয়েছিল, যে সত্যের উপলব্ধি ঘটেছিল তা চিরঞ্জীব। গাদীরের শিক্ষা ও আদর্শ যারা ধারণ করেছিল তারা একটি স্বতন্ত্র ধারা তৈরি করতে পেরেছিল। আজ মুসলিম বিশ্বে যে পরিবর্তনের আভাস পাওয়া যাচেছ তা গাদীরের ইতিহাসেরই বিজয়।