হযরত আবু তালিব কি মুমিন ছিলেন ?
হযরত আবু তালিব কি মুমিন ছিলেন ?
হযরত আবু তালিব (আ.) ৪২ বছর হতে ৮৩ বছর পর্যন্ত রাসুল (স.) এর খেদমতে ছিলেন। তাঁর ঈমান আনয়ন ও তাঁর মুসলমান হওয়ার বিষয়ে ৭০টি স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচিত হয়েছে। এ বিতর্কিত (তাঁর ঈমানের বিষয়) বাদ দিয়ে আমাদের উচিত তাঁর ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব নিয়ে আলোচনা করা। সুন্নিদের কিছু কিছু আলেম বলেছেন: হযরত মুহাম্মাদ (স.) হযরত আবুতালিব (আ.) কে ভালবাসতেন। অতএব, যে ব্যক্তি হযরত আবু তালিবকে কষ্ট দেয়, প্রকৃত অর্থে সে আল্লাহর রাসূল (স.) কে কষ্ট দেয়। মোসেলী হানাফী বর্ণনা করেন যে, যে ব্যক্তির অন্তরে হযরত আবু তালিবের প্রতি ঘৃনা থাকবে সে কাফের।
আবু তালিব (আ.) এর ঈমান আনয়নের বিষয়ে আলোচনা বিভ্রান্তকর
ঐতিহাসিক দলিল ও প্রমাণের ভিত্তিতে স্পষ্ট যে, হযরত আবু তালিব (আ.), হযরত মুহাম্মাদ (স.) আল্লাহর প্রেরিত নবী এবং তাঁর সন্তান মহানবী (স.) এর স্থলাভিষিক্ত বলে বিশ্বাস করতেন। হযরত আব্দুল মুত্তালিব (আ.) (রাসূল (স.) এর পিতামহ) মৃত্যুর পূর্বে আবু তালিব (আ.) কে ওসিয়ত করেছিলেন যাতে তিনি সত্যবাদী নবীকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেন।
হযরত আবুতালিব গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান হুজ্জাতুল ইসলাম ওয়াল মুসলিমীন মুহাম্মাদ মাহদী সাব্বাহী আবনা প্রতিবেদককে দেয়া এক সাক্ষাতকারে বলেন: আমাদের গবেষণার ফলাফল অনুযায়ী শিয়া ও সুন্নি মাযহাবের ৩০০টি গ্রন্থে হযরত আবু তালিব (আ.) এর ইসলামের জন্য আত্মোৎসর্গের বিষয়টি উল্লেখিত হয়েছে। এর মাঝে শো’বে আবু তালিবে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। এছাড়া তাঁর ওফাত এবং হযরত খাদিজা (সা. আ.) এর ওফাতের বছরকে তিনি ‘আমুল হুযন’ (বা ক্রন্দনের বছর) হিসেবে নাম করণ করার বিষয়টি তাঁর মর্যাদাকে বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়।
‘و أنذر عشيرتك الاقربين’ -এ আয়াতের ভিত্তিতে যখন মহানবী (স.) তাঁর সকল আত্মীয় স্বজনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সে সভায় আবু তালিব (আ.), হযরত মহানবী (স.) এর পক্ষে কঠোর অবস্থান নিয়ে আবু লাহাবের কথার কঠিন জবাব দিয়ে তাকে চুপ করিয়ে দেন।
হুজ্জাতুল ইসলাম মুহাম্মাদ মাহদী সাব্বাহি হযরত আবু তালিব (আ.) সম্পর্কে সুন্নি আলেমদের মন্তব্যের প্রতি ইশারা করে বলেন: সুন্নিদের কিছু কিছু আলেম যেমন তালামসানী বলেছেন: ‘হযরত মুহাম্মাদ (স.) আবু তালিব’কে ভালবাসতেন। অতএব, যে ব্যক্তি আবু তালিবকে কষ্ট দেয়, প্রকৃত অর্থে সে মহানবী (স.) কে কষ্ট দিয়েছে’।
শেইখ সাহিমী আত তাওহিদ গ্রন্থের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন যে, ‘যদি আবু তালিব নিজের ইসলামকে প্রকাশ করত তবে মুশরিকরা যে ব্যবহার হযরত হামযা’র সাথে করেছে একই ব্যবহার হযরত আবু তালিবে’র সাথেও করত’।
মোসেলী হানাফি বলেন: যার অন্তরে আবু তালিবের প্রতি ঘৃনা রয়েছে সে কাফের’।
আবু তালিব (আ.) গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান, অন্যান্য বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি না দিয়ে ইসলামের এ মহান ব্যক্তিত্বের জীবনীর উপর আলোচনার প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলেন: আবু তালিব কাফের ছিলেন না মুসলমান?! -এটি সম্পূর্ণ বিভ্রান্তকর আলোচনা।
হযরত আবু তালিব (আ.) ৪২ বছর বয়স হতে ৮৩ বছর বয়স পর্যন্ত মহানবী (স.) এর খেদমতে ছিলেন এবং একনিষ্ঠ এ মুসলমানের ঈমান আনয়নের বিষয়ে ৭০টি স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচিত হয়েছে! এ সকল বিভ্রান্তকর আলোচনার ফাঁদে পা না দিয়ে তাঁর ব্যক্তিত্ব নিয়ে আলোচনা করা উচিত এবং তাঁর জীবনী’র বিভিন্ন দিক সম্পর্কে আলোচনা করা উচিত।
হুজ্জাতুল ইসলাম সাব্বাহি হযরত আবু তালিব (আ.) এর জীবনী সম্পর্কে বলেন: ‘হযরত আবু তালিব (আ.) ইসলাম আগমনের পূর্বে আরবের অন্যতম প্রসিদ্ধ কবি ছিলেন।
ইবনে শাহরে আশুব ‘মুশাবেহুল কোরআন’ গ্রন্থে ‘و لينصرن الله من ينصره’ -এ আয়াতের নিম্নে উল্লেখ করেছেন যে, ৩ হাজার লাইন কবিতা হযরত আবু তালিব (আ.) হতে বর্ণিত হয়েছে। এমনকি কার্ল ব্রুকেল ম্যানে’র ন্যায় প্রাচ্যবিদের ‘তারিখুল আদাবিল আরাবি’ গ্রন্থে তাঁর কবিতার প্রভাব লক্ষণীয়।
জনাব সাব্বাহি বলেন: আমরা এ গবেষণা কেন্দ্রে এ পর্যন্ত তাঁর হতে বর্ণিত ১ হাজার কবিতা সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছি এবং সেগুলো গ্রন্থ আকারে অচিরেই প্রকাশিত হবে। হযরত আবু তালিব (আ.) এর ‘কাসিদায়ে লামিয়া’র -যা তার উচ্চমানের সাহিত্য এবং তাঁর ঈমান আনয়নের প্রমাণ স্বরূপ- উপর স্বতন্ত্র গবেষণা চলছে।
উল্লেখ্য যে, বিস্তারিত জানার জন্য তিনি মুহাম্মাদ হাসান শাফিয়ী শাহরুদী’র প্রচেষ্টায় ‘মহানবী (স.) এর পৃষ্ঠপোষক; হযরত আবু তালিব’, খাইরুল্লাহ মারদানী রচিত হযরত আবু তালিব (আ.) এর ঈমান সংক্রান্ত গ্রন্থদ্বয় অধ্যায়নের পরামর্শ দেন।