‘যারা আল্লাহর নিদর্শনে বিশ্বাস করে না তারা তো কেবল মিথ্যা উদ্ভাবন করে এবং তারাই মিথ্যাবাদী।’ (সূরা নাহল : ১০৫)
ইসলাম হচ্ছে সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত একটি ধর্ম। সকল মুসলমান, এমনকি সমগ্র মানবজাতিকে কথা ও কাজে সততা অনুসরণ করার এবং সকল পরিস্থিতিতে মিথ্যাচার থেকে বিরত থাকার জন্য ইসলাম আহ্বান জানায়।
ইসলামের মহান নেতৃবৃন্দ এবং আল্লাহর অলি-দরবেশগণ সবসময় তাঁদের অনুসারীদের মিথ্যাবাদিতা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন এবং এই মারাত্মক নৈতিক বিচ্যুতির পরিণাম সম্পর্কে তাদের সতর্ক করে দিয়েছেন।
মানবজাতিকে সত্যিকার অগ্রগতি সাধন করতে চাইলে সমগ্র সমাজে, জীবনের সকল ক্ষেত্রে সততা অনুসরণ করতে হবে এবং ব্যক্তি ও সমাজকে মিথ্যাচার থেকে সর্বক্ষণের জন্য বিরত থাকতে হবে।
একটি সমাজে যদি মিথ্যাচার বিদ্যমান থাকে তাহলে সেখানে স্বভাবতই মানুষের মধ্যে সাধারণ বিশ্বাস ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ব্যক্তিগত ও সামাজিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং কারো কথা ও কাজের প্রতি কেউ বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে না এই অবস্থা সমগ্র সমাজের জন্য একটি কঠিন দুঃসহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
একদিন এক ব্যক্তি মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর কাছে জানতে চাইল, কী কী কারণে মানুষ দোযখে যাবে। জবাবে মহানবী (সা.) বললেন, ‘মিথ্যা মানুষকে দোযখে নিয়ে যাবে। কারণ, একবার যদি কেউ মিথ্যা বলা শুরু করে তাহলে সে অন্যান্য খারাপ কাজে লিপ্ত হবে এবং একবার খারাপ কাজ শুরু করলে সে কুফরিতে জড়িত হয়ে পড়বে এবং একবার কাফের হয়ে গেলে সে নিজেকে দোযখের আগুনে নিক্ষেপ করবে।’
এই হাদিস থেকে বোঝা যাচ্ছে, খারাপ কাজ ও কুফরির সঙ্গে মিথ্যাচার ওতপ্রোতভাবে জড়িত এবং এগুলোর উৎস। এই মিথ্যাচারই শেষ পর্যন্ত মানুষকে দোযখের দিকে নিয়ে যায়। দোযখের আগুন থেকে রক্ষা পেতে হলে মিথ্যা কথা বলা থেকে নিজেদের অবশ্যই মুক্ত রাখতে হবে।
অন্য এক স্থানে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘অতিরিক্ত মিথ্যা কথা কোন মানুষের ঈমান ধ্বংস করে দেয়।’
ইমাম বাকের (আ.) এ সম্পর্কে চমৎকার একটি উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ তাআলা খারাপ কাজগুলোকে তালাবদ্ধ করে রেখেছেন এবং মাদকদ্রব্য সৃষ্টি করেছেন সেগুলোর চাবি হিসেবে। কিন্তু মিথ্যা কথা মাদকদ্রব্যের চেয়েও খারাপ এবং এটা বহু বড় পাপ কাজের উৎস।’
‘যে মিথ্যাবাদী ও কাফের, আল্লাহ তাকে সৎপথে পরিচালিত করেন না।’ (সূরা যুমার : ৩)
পবিত্র কুরআনে মিথ্যাবাদিতাকে মুনাফিকীর লক্ষণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে : ‘মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।’ (সূরা মুনাফিকুন : ১)
মিথ্যাচারিতা কুফরিরও লক্ষণ।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘মিথ্যাবাদিতা মানুষের মুখম-লকে কালো বর্ণের করে দেয়।’
ইমাম আলী (আ.) বলেন, ‘মিথ্যাচার পার্থিব জীবনে মানুষের জন্য নিয়ে আসে অপমান এবং পরকালের জন্য নিয়ে আসে শাস্তি। অতিরিক্ত মিথ্যা কথা বলা নিজেকে বাজে লোকে পরিণত করে।’
হযরত মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট ঐ ব্যক্তি যে মিথ্যা কথা বলে। মিথ্যাবাদী আল্লাহর নিয়ামত থেকে বঞ্চিত হয়।’
ইমাম হযরত আলী (আ.) বলেছেন, ‘মিথ্যা কথা বলা যার অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে দারিদ্র তার উপর চেপে বসবে। নৈতিক মূল্যবোধের দিক থেকে মিথ্যাবাদী ও মৃত ব্যক্তির মধ্যে কোন তফাৎ নেই। কারণ, জীবিত মানুষ মৃত মানুষের তুলনায় এই জন্য শ্রেষ্ঠ যে, অপরাপর লোকেরা কথা ও কাজের মাধ্যমে জীবিত লোকের উপর আস্থা স্থাপন করে। কিন্তু যখন তার কথার উপর বিশ্বাস করা যায় না তখন সে মৃত ব্যক্তির মতোই।’
(নিউজলেটার, জানুয়ারি ১৯৯২)