প্রসঙ্গ: হযরত আমীর মু’ভিয়া (রা:), লেখক: মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান।
=========================
কারবালার প্রেক্ষাপট বিষয়ে লেখার পর কিছু বন্ধু ও ছোট ভাই আমাকে মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান হুজুরের এ বইটি পড়ে সহীহ আকিদাহ জেনে নিতে বলেছেন।বইটি আমি এর আগে ও পড়েছিলাম। আবার ও পড়লাম। তিনবার পড়েছি। এটি পড়ে আমার মনে সত্যিকার অর্থে মুহতরাম লেখকের গবেষণা, প্রিয় নবীজি (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়া আলিহি)-‘র আহলে বায়ত ও হাদীছ শরীফের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধাবোধ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। প্রিয় বন্ধু ও যারা এই লেখাটি পড়বেন, তাঁদের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ থাকবে, লেখাটি সম্পূর্ণ পড়বেন এবং এম.এ. মান্নান হুজুরের বইটির সাথে মিলিয়ে দেখবেন এবং আমার দেওয়া তথ্যগুলো সঠিক কিনা যাচাই করবেন। অতঃপর নিজের বিবেককে প্রশ্ন করবেন কোনটা সত্য আর কোনটা ভ্রান্ত। হজম করতে কষ্ট হবে তবুও একটু ধৈর্য্য ধরে সম্পূর্ণ পড়বেন। তা না করে উল্টো পাল্টা কমেন্ট করবেন না আল্লাহর ওয়াস্তে। তাঁর লেখা যা উদ্ধৃত করেছি তাতে সিরিয়াল নাম্বার দিয়েছি এবং আমার লেখায় স্টার চিহ্ন দিয়েছি।
______. তিনি বইটির ১০ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন, ‘যেসব আয়াত হুযূর-ই আক্রামের নিকটাত্মীয়দের সম্পর্কে নাযিল হয়েছে ওইগুলো হযরত আমীর মু‘আভিয়ার বেলায়ও উত্তমরূপে প্রযোজ্য।’
*** কথাটি একান্তই মনগড়া। কোন মুহাক্কিক আলেম এমনটা বলেননি। (আহলে বায়তের ফযিলত সম্পর্কিত আয়াত সমূহের তাফচীর দেখুন)
________. তিনি বইটির ১১ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন, কাতিবে অহি ছিলেন মোট ১৩ জন এবং অহি লিখার কাজ সবচেয়ে বেশি আনজাম দিতেন হযরত মুয়াবিয়া এবং যায়েদ বিন সাবেত (রা:)!
*** কথাটি সম্পূর্ণ মিথ্যা এমন বিভ্রান্তিকর। বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য গ্রন্থে কাতিবে অহির সংখ্যা ৪২ এমনকি তার ও বেশি বলে পাওয়া যায়। তাছাড়া তিনি যে লিখেছেন, হযরত মুয়াবিয়া (রা:) (হযরত যায়েদের সাথে) অহি লেখার কাজ সবচেয়ে বেশি আনজাম দিতেন!, তা এক জঘন্য পর্যায়ের মিথ্যা।
যিনি মক্কা বিজয়ের পরই ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তিনি কীভাবে অহি লেখার কাজ সবচেয়ে বেশি আনজাম দাতা হবেন? মক্কা বিজয়ের পর তো পবিত্র কুরআন নাযিল প্রায় ৯৯.৯%ই সম্পন্ন হয়ে গিয়েছিল?! মক্কা বিজয় হয়েছিল ৮ম হিজরীর ২০ রমজান তারিখে। ১০ হিজরিতে বিদায় হজ্ব এবং সেই বছর আরাফাহ দিবসেই নাযিল হয়েছিল ‘আল-ইয়াউমা আকমালতু লাকুম দ্বীনাকুম….’ আয়াতটি। (এ বিষয়ে কুরআন সংকলনের ইতিহাস বিষয়ক যেকোনো কিতাব দেখুন…)
________. তিনি ১১-১২ নং পৃষ্ঠায় সহীহ বুখারী শরীফে বর্ণিত হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) এর উক্তি
إنه فقيه
“তিনি ফক্বীহ” এর অনুবাদ করেছেন, ‘‘তিনি ফক্বীহ্ মুজতাহিদ। তাই, তা তাঁর জন্য সঠিক সিদ্ধান্ত। তাঁকে কিছু বলোনা।’’
তিনি সহীহ বুখারী শরীফের একি বাবের আওতাধীন হযরত ইবনে আব্বাসের উক্তি,
‘دعه، فإنه صحب رسول الله صلى الله عليه وسلم’
‘তাঁকে ছেড়ে দাও। কেননা তিনি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-‘র সঙ্গ লাভ করেছিলেন।’ এর অনুবাদ করেছেন,
‘‘মু‘আভিয়াকে কিছু বলোনা, তিনি অতি উচ্চ মর্যাদাশীল সাহাবী।’’
আরে ভাই, যা সর্বজন সমাদৃত অনুবাদ তা বললে কী সমস্যা? তিনি কি এ অনুবাদ দ্বারা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাসের উপর মিথ্যারোপ করেননি? বিতর নামায এক রাকাত পড়ার মধ্যে ইজতেহাদের কী আছে? ইজতেহাদ তো করা হয় এমন আবশ্যকীয় বিষয়ে, যা পবিত্র কুরআন-সুন্নাহয় খুঁজে পাওয়া যায় না। তাছাড়া আমাদের মাযহাবের ব্যারিস্টার খ্যাত ফকীহ হযরত আবু জাফর ত্বাহাবী (রাহ:) মা’য়ানিউল আছারের বাবুল বিতরে তাঁর একি প্রসঙ্গে (অর্থাৎ হযরত মুয়াবিয়া কর্তৃক এক রাকাত বিতর পড়াকে অপছন্দ করে) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) এর এই উক্তি সংবলিত বর্ণনা ও এনেছেন,
مِنْ أَيْنَ تُرَى أَخَذَهَا الْحِمَارُ
‘গাধাটি (মুয়াবিয়া) এ নিয়ম কোথা থেকে নিয়ে এসেছে?!’
_________. তিনি ১২-১৩ নং পৃষ্ঠায় হযরত মুয়াবিয়ার অত্যাধিক ফযিলত বর্ণনা করতে গিয়ে নকল করেছেন,
وَمُعَاوِيَةُ بْنُ اَبِىْ سُفْيَانَ اَعْلَمُ اُمَّتَِىْ وَاَجْوَدُهَا
‘অর্থাৎ মু‘আভিয়া আমার উম্মতের বড় জ্ঞানী, দয়ালু ও দানবীর।’
***এটি হাদীছের নামে রাসূল পাকের উপর মিথ্যাচার। (যাচাই করে দেখুন এটি হাদীছ কিনা…)
তিনি এ প্রসঙ্গে আরেক জঘন্য বানোয়াট হাদীছ বলেছেন,,,
وَصَاحِبُ سِرِىْ مُعَاوِيَةُ بْنُ اَبِىْ سُفْيَانَ ـ
فَمَنْ اَحَبَّهُمْ فَقَدْ نَجٰى وَمَنْ اَبْغَضَهُمْ فَقَد هَلَكَ
অর্থ: ‘‘আমার গোপনীয় বিষয়াদির সংরক্ষক হলো মু‘আভিয়া ইবনে আবূ সুফিয়ান। যে ব্যক্তি তাদের সবাইকে ভালবাসবে সে নাজাত পাবে, আর যে তাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করবে, সে ধ্বংস হয়ে যাবে।’’
*** হাদীছের কিতাবে লেখা থাকলেই যদি সব মানা হয়, তাহলে স্বয়ং সহীহ মুসলিমে ও তো আছে যে, হযরত মুয়াবিয়া অন্যায়ভাবে মানুষ হত্যা করার এবং অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ঘ্রাস করার নির্দেশ দিতেন। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারাহ, হাদীছ নং-৪৮৮২) মানবেন এটি? সহীহ মুসলিম নির্ভরযোগ্য কিতাব নয় কি?
*** রাসূল কারীম (ﷺ)-‘র সাহিবুস্ সির ছিলেন হযরত হুযাইফা বিন ইয়ামান (রা:)। সহীহ বুখারী শরীফে বর্ণিত আছে,
صاحب السر الذي لا يعلمه غيره يعني حذيفة
” (রাসূলুল্লাহর) সাহিবুস্ সির যা তিনি ছাড়া কেউ জানেন না অর্থাৎ হুযাইফা রা:।” (সম্পূর্ণ হাদীছ পড়ে দেখুন, সহীহ বুখারী, কিতাবু ফাদ্বায়িলুস্ সাহাবাহ, হাদীছ নং-৩৭৪৩)
যদি হযরত মুয়াবিয়া (রা:)-কে নবীজির সাহিবুস্ সির হিসেবে মানাও হয়, তাহলে ইমাম হুসাইন (রা:)-‘র শাহাদাতের জন্য তিনি নিজেই দায়ী ছিলেন। কারণ নবীজি তাঁর সাহিবুস্ সিরকে মুনাফিকদের অবস্থা এবং কিয়ামত পর্যন্ত কি ঘটবে, না ঘটবে সবকিছু বলে দিয়েছিলেন। তাহলে কি মুয়াবিয়া (রা:) জেনে বুঝে ইয়াযীদকে পরবর্তী বাদশা বানিয়েছিলেন এবং ইমাম হুসাইন (রা:)-কে শহীদ করিয়েছিলেন?!
_______. তিনি ৩১ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন, মুহাম্মদ ইবনে আবূ বকরসহ তেরজন বিদ্রোহী তাঁকে নির্দয়ভাবে শহীদ করলো।
*** নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, হযরত মুহাম্মদ বিন আবি বকর সহ ৪ জন লোক হযরত উসমান (রা:)-‘র ঘরে প্রবেশ করেছিল। মুহাম্মদ বিন আবি বকর হযরত উসমান (রা:)-‘র দাঁড়ি ধরে টান দেওয়ার পর তিনি যখন বলেছিলেন, ‘ভাতিজা! আজ তোমার পিতা থাকলে কি এ দৃশ্য পছন্দ করতেন?’ খলিফার এ কথা শুনে তিনি ঘর থেকে বের হয়ে গিয়েছিলেন। অতঃপর বাকি তিনজন লোক তাঁকে নির্মমভাবে শহীদ করেছিলেন। তারা ছিল অপরিচিত লোক। স্বয়ং হযরত উসমান (রা:)-‘র স্ত্রী নায়লা (রা:) ও তাদেরকে চিনতে পারেননি। তারা যদি চেনা জানা লোক হত, তাহলে কি হযরত আলী (রা:) খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণের পর পরই তাদেরকে মৃত্যু দণ্ড দিতেন না? মুহতরাম লেখকের কথা থেকে তো এটাই বুঝা যায় যে, হযরত উসমান (রা:)-‘র হত্যাকারীকে মাওলা আলী (রা:) চেনার পরই শাস্তি দেননি!(নাঊযুবিল্লাহ) যাকে নবীজি (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ উম্মতের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিচারক বলেছেন, তিনি এ রকম নির্বিচার করেছেন?!
_______. তিনি ৩৪-৩৫ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন, হযরত মুয়াবিয়া (রা:) খোলাফায়ে রাশেদীনের খলিফা নির্বাচনের নীতি সমূহের মধ্য থেকে এক পদ্ধতিতে পরবর্তী শাসক নিয়োগ করেছিলেন। সুতরাং তাঁর পরবর্তী শাসক নিয়োগ করা আপত্তিকর হতে পারে না। পবিত্র ক্বোরআন ও হাদীসে এর নিষেধ আসেনি। আল্লাহর বিশেষ বান্দাগণও এমনটি করেছেন। আমীর মু‘আভিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর আগে ইমাম হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর স্থলাভিষিক্ত হয়েছিলেন। পুত্রের খলীফা হওয়া হযরত হাসান থেকে আরম্ভ হয়েছে।
*** এটি এক জঘন্য ভ্রান্ত কথা। খোলাফায়ে রাশেদীনের কেউ নিজ পুত্রকে খলিফা বানাননি এবং অন্য কাউকে ও মুসলমানদের পরামর্শ ছাড়া পরবর্তী খলিফা নিযুক্ত করেননি। তাদের কেউ খেলাফত তলব ও করেননি। নবীজির ইন্তেকালের পর হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা:) খলিফা হয়েছিলেন বদর-উহদ যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিশিষ্ট সাহাবীগণের পরামর্শক্রমে।
হযরত ওমর (রা:)-কে হযরত আবু বকর (রা:) খেলাফতের জন্য অধিক যোগ্য মনে করতেন, কিন্তু মুসলমানদের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজেই খলিফা হিসেবে নিযুক্ত করেননি।
হযরত ওমর (রা:) ইন্তেকালের আগ মুহূর্তে ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করেছিলেন এবং বলেছিলেন, এদের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইন্তেকালের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত রাজী ছিলেন এবং বলেছিলেন, আমি খেলাফতের জন্য এদের চেয়ে বেশি যোগ্য কাউকে পাচ্ছি না। তোমরা এদের মধ্য থেকেই আমার পরবর্তী খলিফা নিযুক্ত করবে। (ঐ ৬জন ছিলেন: ১-হযরত আলী, ২- হযরত উসমান, ৩- হযরত যুবায়ের, ৪- হযরত তালহা, ৫- হযরত সা’দ, ৬- হযরত আব্দুর রহমান) অতঃপর মুসলমানদের পরামর্শের ভিত্তিতে হযরত উসমান (রা:)-কে পরবর্তী খলিফা নিযুক্ত করা হয়েছিল। (বিস্তারিত জানতে দেখুন, সহীহ বুখারী শরীফের ৩৭০০ এবং ৭২০৭ এবং মুসলিম শরীফের ১২৫৮ নং হাদীছ)
হযরত উসমান (রা:)-‘র শাহাদাতের পর যখন মুসলিম বিশ্ব কার্যত নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়েছিল, তখন মুসলমানদের পরামর্শের ভিত্তিতে হযরত আলী (রা:) খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন। তাছাড়া তিনি ছিলেন সাইয়্যেদুনা ওমর (রা:) কর্তৃক বাছাইকৃত ছয় জনের একজন।
অতঃপর হযরত আলী (রা:)-‘র শাহাদাতের পর মুসলমানরাই হযরত ইমাম হাসান (রা:) খলিফা বানিয়েছিলেন। হযরত আলী (রা:) তাঁকে নিযুক্ত করেননি এবং খেলাফতের দায়িত্ব গ্রহণে তাঁকে নিষেধ ও করেননি। মুসলমানরাই তাঁকে খলিফা বানিয়েছিলেন। (এ বিষয়ে লিখিত নির্ভরযোগ্য যেকোনো কিতাব দেখুন, পাবেন)
কাজেই ইয়াযীদের নিযুক্তির সাথে খোলাফায়ে রাশেদীনের সামঞ্জস্য খোঁজা মূর্খতা, ভণ্ডামি এবং খোলাফায়ে রাশেদীন ও পবিত্র আহলে বায়তের অতুলনীয় শান মানের সাথে বিয়াদবি ছাড়া কিছুই বলা যায় না।
_______. তিনি ৩৫ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, কোন কোন ঐতিহাসিক বর্ণনায় পাওয়া যায় যে, হযরত আমীর মু‘আভিয়া জনগণ থেকে ইয়াযীদের প্রতি সমর্থন আদায় করার চেষ্টা করেছিলেন। ইতিহাসের এ বর্ণনাও কতটুকু সত্য ও সঠিক তা নিশ্চিত নয়।
*** এটিকে মুহতরাম লেখক হয় উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে লিখেছেন, না হয় এ বিষয়ে তাঁর মূর্খতা রয়েছে। কারণ ইয়াযীদের পক্ষে হযরত মুয়াবিয়ার সমর্থন আদায়ের বিষয়টি ইতিহাস না; বরং পবিত্র কুরআনের পর সবচেয়ে বিশুদ্ধ গ্রন্থ সহীহ বুখারী শরীফেও বিদ্যমান। নির্ভরযোগ্য তাফচীর গ্রন্থ সমূহে ও বিদ্যমান। (দেখুন, সহীহ বুখারী, কিতাবুত্ তাফচীর, হাদীছ নং-৪৮২৭, সূরা আহকাবের তাফচীর। আল্লামা ইমাদুদ্দীন ইবনে কাছির (রাহ:) তাঁর তাফচীর গ্রন্থ ‘তাফচীরুল কুরআনিল আজীম’এ উক্ত বর্ণনা বিভিন্ন সনদে বর্ণনা করেছেন। সূরা- আহক্বাব, আয়াত-১৭)
_______. তিনি ৩৬-৩৭ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন, যখন আমীর মু‘আভিয়ার ইনতিক্বালের সময় ঘনিয়ে এলো, তখন ইয়াযীদ বললো, ‘‘আব্বাজান, আপনার পর খলীফা কে হবে?’’ তদুত্তরে তিনি বললেন, ‘‘খলীফা তো তুমিই হবে। তবে আমি যা বলছি তা মনযোগ সহকারে শোন! কোন কাজ ইমাম হোসাঈনের পরামর্শ ব্যতীত করো না। তাঁকে না খাইয়ে, তুমি খেয়োনা, তাঁকে পান না করিয়ে তুমি পান করোনা। সবার আগে তাঁর জন্য খরচ করবে। তারপর অন্যান্য ব্যাপারে খরচ করবে। তাঁকে পরিধান করিয়ে নিজে পরিধান করবে। আমি তোমাকে ইমাম হোসাঈন, তাঁর পরিবার-পরিজন, আত্মীয়-স্বজন, বরং সমস্ত হাশেমী বংশের সাথে সদ্ব্যবহার করার জন্য ওসীয়ৎ করছি।
হে আমার বৎস! খিলাফতের ক্ষেত্রে আমাদের অধিকার নেই। সেটা ইমাম হোসাঈন, তাঁর পিতা ও তাঁর বংশের অধিকার। তুমি কিছুদিনের জন্য খলীফা থাকবে। তারপর ইমাম হোসাঈন যখন পূর্ণ উপযোগী হয়ে যাবে, তখন তিনিই খলীফা হবেন অথবা তিনি যাঁকে খলীফা করবেন তাঁর কাছে যেন তখন খিলাফত পৌঁছে যায়। আমরা সবাই ইমাম হোসাঈন ও তাঁর নানাজানের গোলাম। তাঁকে অসন্তুষ্ট করোনা। তাঁকে অসন্তুষ্ট করলে তোমার উপর আল্লাহর রসূল অসন্তুষ্ট হবেন। তখন তোমার শাফা‘আত কে করবে?’’
*** মুহতরাম লেখকের এ বিষয়টি সত্য বলে মেনে নেওয়া হলে অবশ্যই এটি ও মানতে হবে যে,
১). খেলাফতের জন্য ইমাম হুসাইন কিংবা অন্যান্য বড় বড় সাহাবায়ে কেরামের চেয়ে ইয়াযীদই বেশি যোগ্য ছিল!
২). হযরত মুয়াবিয়া যদি হকদার না হন, তাহলে তিনি ক্ষমতার জন্য যুদ্ধ করা চরম পর্যায়ের জুলুম ছিল এবং আহলে বায়তের প্রতি ইচ্ছাকৃত শত্রুতা ছিল!
৩). যদি খেলাফতের জন্য শুধু আহলে বায়তকেই হকদার মানা হয়, তাহলে শিয়াদেরকে ভ্রান্ত বলার দরকার কী? তারা তো এটাই দাবি করে যে খেলাফতের হকদার শুধু আহলে বায়তই। যার জন্য তারা সিদ্দিকে আকবর, ফারুকে আজম, উসমান যিন্নুরাইনকে গালিগালাজ করে।
কাজেই হযরত মুয়াবিয়ার উদ্ধৃতিতে উক্ত কথাটিকে একটি ফালতু কথা ছাড়া কিছুই বলা যায় না।
________. তিনি ৪৮ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন,
হযরত আম্মারের, হযরত আলীর হাক্বক্বানিয়াৎ (সত্যতা) সম্পর্কে পূর্ণ আস্থা ছিলো। তিনি যদি ওই আস্থা থাকা সত্ত্বেও আমীর মু‘আভিয়ার সাথে যোগ দিতেন, তাহলে বিদ্রোহী নন; বরং খারেজী হিসেবেই গণ্য হতেন। আর খারেজী হচ্ছে জাহান্নামী।
*** মুহতরাম লেখকের কথা থেকে প্রশ্ন উত্থাপিত হয় যে, হযরত আলী (রা:)-‘র হক্কানিয়তের উপর কি তাহলে হযরত মুয়াবিয়ার আস্থা ছিল না? গদীরে খোমে নবীজির বাণী হাজার হাজার সাহাবী শুনেছিলেন, কিন্তু হযরত মুয়াবিয়া শুনেননি?! যদি বলা হয়, তিনি জেনে বুঝেই হযরত আলী (রা:)-‘র বিরুদ্ধে অস্ত্র ধারণ করেছিলেন, তাহলে কি তাকে আহলে বায়তের শত্রু জাহান্নামী বলা যাবে? মুসনাদে আহমদ সহ অনেক গ্রন্থে সহীহ সনদে বর্ণিত আছে, হযরত আম্মার শহীদ হওয়ার পর আমর বিন আস যখন তাকে আম্মারের হত্যাকারীরা বাগি হওয়ার হাদীছটি শুনিয়েছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আম্মারকে আমরা হত্যা করিনি। তাঁকে তো আলী এবং তাঁর দলই হত্যা করেছে। তাঁরা তাঁকে যুদ্ধে এনে আমাদের তলোয়ার কিংবা বর্শার নিচে ঠেলে দিয়েছে!”
________. তিনি ৫৩ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন,
ইসলামে তো রাজতন্ত্র হারাম বা নিষিদ্ধ নয়!
*** ইসলামে বিদ’আতের সূচনাই হয়েছিল রাজতন্ত্র দিয়ে। নবীজি সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
أُوصِيكمْ بِتقوَى اللهِ، والسَّمعِ والطَّاعةِ وإنْ تأمَّرَ عليكم عبدٌ حَبَشِيٌّ، وإنَّه مَنْ يَعِشْ منكم فَسَيرَى اختلافًا كثيرًا، فعليكم بِسُنَّتِي وسُنَّةِ الخلفاءِ الراشدينَ المهديينَ، عَضُّوا عليها بالنَّواجذِ، وإيَّاكم ومُحدثاتِ الأمورِ، فإنَّ كُلَّ بِدعةٍ ضَلالةٌ
“আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির, (নেতার) শ্রবণ ও আনুগত্যের উপদেশ দিচ্ছি, যদি সে একজন হাবশী গোলাম ও হয়। কারণ তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখতে পাবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নাত এবং আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাহগণের সুন্নাত অনুসরণ করবে, তা দাঁত দিয়ে কামড়ে আঁকড়ে থাকবে।
সাবধান! দ্বীনের মধ্যে প্রতিটি নব আবিষ্কার সম্পর্কে। কারণ প্রতিটি নব আবিষ্কার হলো বিদ‘আত এবং প্রতিটি বিদ‘আত হলো ভ্রষ্টতা। (সুনানু আবী দাউদ, কিতাবুস্ সুন্নাহ, বাবুন ফি লুযুমিস্ সুন্নাহ, হাদীছ নং-৪৬০৭) নবীজির সুন্নাহ এবং খেলাফতে রাশেদার বিরুদ্ধে সর্বপ্রথম নব আবিষ্কার হল রাজতন্ত্র। এ রাজতন্ত্র থেকেই অন্যান্য সকল বিদ’আত বের হয়েছিল। এ রাজতন্ত্রই মাওলা আলী (রাদিআল্লাহু আনহু, কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুল কারীম, ওয়া আলাইহিস্ সালাম)-কে গালিগালাজ করত নির্বিচারে। এ রাজতন্ত্রই রহতে জিগারে মুস্তাফা, সাইয়্যিদুশ্ শাবাবে আহলিল্ জান্নাহ, সাইয়্যেদুনা ওয়া ইমামুনা হাসান আলাইহিস্ সালামকে বিষ পানে শহীদ করেছিল। এ রাজতন্ত্রই ইমাম হুসাইন আলাইহিস্ সালামকে সপরিবারে শহীদ করেছিল। এ রাজতন্ত্রই হারামাইন শরীফাইনে রক্তপাত করেছিল, নবীজির মসজিদে ঘোড়া গাধা বেঁধেছিল, আল্লাহর ঘরের গিলাফ জালিয়ে দিয়েছিল। এ রাজতন্ত্রই মদিনা হিজরতের পর কোনো মুসলমানের ঘরে প্রথম জন্মগ্রহণকারী সাহাবী, যাতুন নিকাতাইনের কলিজার টুকরা, যার নাম নিয়ে উম্মুল মু’মিনীনিন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা:)-কে উম্মে আব্দুল্লাহ বলা হয়, সেই সাইয়্যেদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (রা:)-কে শহীদ করে লাশ ঝুলিয়ে রেখেছিল। এ রাজতন্ত্রই পরবর্তী অনেক আলে রাসূলকে শহীদ করেছিল। এ রাজতন্ত্রই আমাদের ইমাম আজমকে জেলে বন্দি রেখে বিষ প্রয়োগে শহীদ করেছিল। এ রাজতন্ত্রই ইমাম মালেককে গায়ের কাপড় খুলে বেত্রাঘাত করে করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরিয়েছিল। এ রাজতন্ত্রই ইমাম শাফেয়ীকে শিয়া ফাতুয়া দিয়ে বিভিন্নভাবে কষ্ট দিয়েছিল। এ রাজতন্ত্রই ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলকে চরম অন্যায়ভাবে জেলে বন্দি রেখে দিনের পর দিন নির্যাতন করেছিল। প্রখ্যাত মুফাচ্ছির ইমাম ফখরুদ্দিন রাজি তাঁর তাফচীরে মাফাতীহুল গাইবে (তাফচীরে কাবীর) সূরা কাওসারের তাফসীরে বলেছেন,
فانْظُرْ كَمْ قُتِلَ مِن أهْلِ البَيْتِ، ثُمَّ العالَمُ مُمْتَلِئٌ مِنهم، ولَمْ يَبْقَ مِن بَنِي أُمَيَّةَ في الدُّنْيا أحَدٌ يُعْبَأُ بِهِ، ثُمَّ انْظُرْ كَمْ كانَ فِيهِمْ مِنَ الأكابِرِ مِنَ العُلَماءِ كالباقِرِ والصّادِقِ والكاظِمِ والرِّضا عَلَيْهِمُ السَّلامُ والنَّفْسُ الزَّكِيَّةُ وأمْثالُهم.
“অতঃপর তুমি দেখো, কত আহলুল বায়ত শহীদ করা হয়েছিল? তারপরেও পৃথিবী আহলে বায়তে ভরপুর। আর পৃথিবীতে বনী উমাইয়্যার দেখানোর মত কেউ অবশিষ্ট নেই। অতঃপর তুমি দেখো, তাঁদের মধ্যে (আহলে বায়তের মধ্যে) কত বড় বড় আলেম ছিলেন? যেমন- ইমাম বাকের, ইমাম জাফর সাদেক, ইমাম কাজেম, রেদ্বা, নাফসুয্ যাকিয়্যাহ এবং অন্যান্য (আলাইহিমুস্ সালাম)।
কাজেই ইসলামে রাজতন্ত্র শুধু হারাম না; বরং জঘন্য পর্যায়ের হারাম। রাজতন্ত্র হারাম না হলে অবশ্যই রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম পরবর্তী খলিফা নির্ধারণ করে দিতেন। অতঃপর খোলাফায়ে রাশেদীন নিজ নিজ পুত্রদেরকে খলিফা ঘোষণা করে যেতেন। লেখা বেশি লম্বা হয়ে যাচ্ছে তাই এ বিষয়ে আর বিস্তারিত লিখছি না। ইসলামে রাজতন্ত্র কেমন নিষিদ্ধ, তা হযরত ফারুকে আজম (রা:)-‘র এই বাণী দ্বারা বিবেচনা করুন___
عن معدان بن أبي طلحة أن عمر بن الخطاب خطب يوم الجمعة فذكر نبي الله صلى الله عليه وسلم وذكر أبا بكر قال إني رأيت كأن ديكا نقرني ثلاث نقرات وإني لا أراه إلا حضور أجلي وإن أقواما يأمرونني أن أستخلف وإن الله لم يكن ليضيع دينه ولا خلافته ولا الذي بعث به نبيه صلى الله عليه وسلم فإن عجل بي أمر فالخلافة شورى بين هؤلاء الستة الذين توفي رسول الله صلى الله عليه وسلم وهو عنهم راض وإني قد علمت أن أقواما يطعنون في هذا الأمر أنا ضربتهم بيدي هذه على الإسلام فإن فعلوا ذلك فأولئك أعداء الله الكفرة الضلال
“মা’দান ইবনু আবূ তালহা (রা:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমর (রাঃ) একদিন জুম’আর খুতবা দিলেন। এতে তিনি আল্লাহর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ও আবূ বকর (রাঃ) এর আলোচনা করে বললেন, আমি স্বপ্নে দেখলাম, একটি মোরগ এসে আমাকে তিনটি ঠোকর মারল। আমার মতে এর তা’বীর হচ্ছে, আমার মৃত্যু অতি নিকটবর্তী। লোকেরা আমাকে বলেছে আমার একজন স্থলবর্তী নিযুক্ত করতে। নিশ্চয় আল্লাহ তার দ্বীন ও খিলাফাতকে নষ্ট করবেন না। আর তার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে যা দিয়ে প্রেরণ করেছেন, তাও নষ্ট করবেন না। যদি শীঘ্রই আমার মৃত্যু এসে পড়ে, তবে খিলাফত ঐ ছয় ব্যাক্তির পরামর্শের উপর রইল, যাদের প্রতি রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইন্তেকাল পর্যন্ত সন্তুষ্ট ছিলেন। আমি জানি, কতিপয় লোক, যাদেরকে আমি নিজ হাতে শাস্তি দিয়েছি, এ ব্যাপারে তারা ইসলামের প্রতি দোষারোপ করবে। তারা যদি তা করে, তবে তারা আল্লাহর দুশমন ও পথভ্রষ্ট কাফির।”
(সহীহ মুসলিম, কিতাবুল মাসাজিদ, হাদীছ নং-১২৮৬)
এখন কেউ কেউ হয়তো প্রশ্ন তুলবেন যে, আমির মুয়াবিয়া (রা:) শাসনামল বড় বড় সাহাবায়ে কেরাম মেনে নিয়েছিলেন কেন? তাদের উদ্দেশ্যে বলবো, হযরত মুয়াবিয়া (রা:)-‘র শাসনামল কেউ সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেননি। এমনকি ইমাম হাসান (রা:) ও তাঁকে সন্তুষ্ট চিত্তে মেনে নেননি। তাঁরা সকলেই রক্তপাত এড়ানোর জন্যই তাঁকে মেনে নিয়েছিলেন। লেখা বেশি লম্বা হয়ে যাচ্ছে তাই ঐ বিষয়ে লিখছি না। এ বিষয়ে ধারণা নেওয়ার জন্য আমাদের হানাফী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ, হেদায়াহ গ্রন্থকার আল্লামা বুরহান উদ্দীন মুরগিনানী (রাহ:)-‘র উক্তির প্রতি করুন। তিনি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ হেদায়ায় (বিদায়াতুল মুবতাদি) আদাবুল ক্বাযী অধ্যায়ে ক্বাযীর পদ গ্রহণ বিষয়ক মাস’আলা বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন,
ثم يجوز التقلد من السلطان الجائر كما يجوز من العادل لأن الصحابة رضي الله عنهم تقلدوا من معاوية رض. والحق كان بيد علي رضي الله عنه في نوبته والتابعين تقلدوا من الحجاج وهو كان جائرا.
” অতঃপর ক্বাযীর পদ গ্রহণ করা ন্যায়পরায়ণ শাসকের অধীনে যেমন বৈধ, তেমনিভাবে সুলতানুল জায়ের তথা অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখলকারী শাসকের অধীনেও বৈধ। কেননা সাহাবীগণ (রা:) মুয়াবিয়া (রা:)-‘র অধীনে ক্বাযীর পদ গ্রহণ করেছিলেন। অথচ সত্য আলী (রা:)’র পক্ষেই ছিল। আর তাবেয়ীগণ (রা:) পরবর্তীতে হাজ্জাজের অধীনে ক্বাযীর পদ গ্রহণ করেছিলেন। অথচ তিনি ছিলেন অন্যায়কারী তথা জালিম।”
হাজ্জাজ এত বড় জালিম ছিলেন যে, তার মৃত্যুর সংবাদ শুনে বিশিষ্ট তাবেয়ী সাইয়্যেদুনা ইমাম হাসান আল-বসরী (রা:) খুশি হয়ে সিজদাতুশ্ শুকর আদায় করেছিলেন এবং তার অত্যাধিক অত্যাচার বিষয়ে নিজের অভিমত ব্যক্ত করে বলেছিলেন,
لو جاءت كل أمة بخبيثها وجئنا به لغلبناهم وظلمه مشهور
“যদি প্রত্যেক জাতি (কিয়ামতের ময়দানে) তাদের পাপিষ্টদের নিয়ে উঠে আর আমরা তাকে (হাজ্জাজকে) নিয়ে উঠি, তাহলে আমরা অবশ্যই তাদের উপরে থাকবো। তার অত্যাচার সুপ্রসিদ্ধ।” এ কথাটি সাইয়্যেদুনা ওমর বিন আব্দুল আজিজ (রা:) বলেছিলেন। (ইবনে কাছীর, আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়াহ)
হযরত মুয়াবিয়া (রা:)’র সম্পর্কে সহীহ বুখারী শরীফ হেদায়াহ শরীফের ব্যাখ্যাকার প্রখ্যাত হানাফী ফকীহ আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (রাহ:) তাঁর প্রণীত “আল-বিনায়াহ ফি শারহিল হিদায়াহ” নামক কিতাবে বলেন,
وعند أهل السنة معاوية رض. كان باغيا في نوبة علي رضي الله عنه
“আর আহলুস্ সুন্নাহ এর নিকট হযরত আলী (রা:)’র সাথে ঘটনায় মুয়াবিয়া (রা:) বাগী (বিদ্রোহী) ছিলেন।”(আইনী, আল-বিনায়াহ, আদাবুল ক্বাযী, খ.৮, পৃ.১৪, ১৫)
পরিশেষে খোলাফায়ে রাশেদীনের প্রথম খলিফা, খলিফাতুর্ রাসূল সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাইয়্যেদুনা সিদ্দীকে আকবর (রা:) নসিহত হৃদয়ে ধারণ করার অনুরোধ করে আর কিছু লিখছি না। সিদ্দীকে আকবর (রা:) নসিহত করেছেন,
ارقبوا محمدا صلى الله عليه وسلم في أهل بيته
“তোমরা মুহাম্মদ মোস্তফা (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে তাঁর আহলে বায়তের মধ্যে হেফাজত করো।” (সহীহ বুখারী, হাদীছ নং-৩৭১৩) অর্থাৎ তোমরা আহলে বায়তের মধ্যে মুহাম্মাদুর্ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে খোঁজো। তোমরা আহলে বায়তের শান মান বর্ণনা ও হেফাজতের মাধ্যমে মুহাম্মদুর্ রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু তায়ালা আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-‘র শান মান হেফাজত করো এবং তা মানুষকে সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করো।
وما علينا إلا البلاغ المبين.
মুহাম্মদ আবদুল আজিজ
Email: [email protected]
2/8/2021