নবী করিম (সা.), কোরান ও সুন্নত
নবী করিম (সা.), কোরান ও সুন্নত
অমূল্য রত্ন ও নবী করিমের (সা.) রিসালাত সম্পর্কে জানতে হলে প্রকৃত পক্ষে পবিত্র কোরানকেই সব চেয়ে মূল্যবান অনুসরণ যোগ্য বই হিসেবে গণনা করা হয়ে থাকে। তাছাড়া নবী করিম (সা.) হচ্ছেন কোরানের অর্থের সর্বোত্তম প্রমাণ এবং সর্ব প্রথম মুফাস্সির ও ব্যাখ্যাকারী।
যারা নবী করিম (সা.)’ কে নবী হিসেবে গণ্য করে না তাদের বিশ্বাস হচ্ছে কোরান তাঁর মুখ নিঃসৃত কিছু শব্দ সম্ভার যা তাঁর সাহাবীদের মাধ্যমে লিখিত হয়েছে। কিন্তু মুসলমানদের জন্য তাদের ফিকাহ শাস্ত্র ও কালাম শাস্ত্র সব বিষয়েই মতাদর্শ হচ্ছে পবিত্র কোরান মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বাণী যা নবী করিমের (সা.) প্রতি এসেছে এবং প্রতিটি শব্দ (যেভাবে ওহী নাযিল হয়েছে) তাঁর সাথী – সঙ্গীদেরকে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া পবিত্র কোরান ও আল্লাহর রাসুলের (সা.) মধ্যে এক গভীর ও সুন্দর সম্পর্ক রয়েছে। প্রথমত: কোন কার্যসিদ্ধির উদ্দেশ্যে সরাসরি রাসুলের (সা.) প্রতি রুজু করা এবং তাঁর করণীয় কর্তব্য সম্পর্কে পবিত্র কোরানে বর্ণনা করা হয়েছে। বিশেষ করে পবিত্র কোরানে জোরালো সুপারিশ করা হয়েছে যে, তিনিও একজন মানুষ খোদার পক্ষ হতে কোন অস্বাভাবিক সত্ত্বা নয়। তিনি হচ্ছেন সর্বশেষ নবী এবং আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁকে সর্বোত্তম স্বভাব – চরিত্র (উত্তম আদর্শ) প্রদান করা হয়েছে এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁকে মুসলমানদের জন্য অনুসরণ যোগ্য করেছেন।
অমূল্য রত্ন ও নবী করিমের (সা.) রিসালাত সম্পর্কে জানতে হলে প্রকৃত পক্ষে পবিত্র কোরানকেই সব চেয়ে মূল্যবান অনুসরণ যোগ্য বই হিসেবে গণনা করা হয়ে থাকে। দ্বিতীয়ত: নবী করিম (সা.) হচ্ছেন কোরানের অর্থের সর্বোত্তম প্রমাণ এবং সর্ব প্রথম মুফাস্সির ও ব্যাখ্যাকারী।
কয়েক শতাব্দী হতে সমস্ত বিশ্বাসী মুসলমান কোরানকে নবী করিমের (সা.) বর্ণনার মাধ্যমে বোঝে এসেছে। আর যখনই তারা কোরানের তেলাওয়াত করে থাকে কোরানের শিক্ষাকে নিজেদের কর্মতৎপরতায় অথবা জীবনের প্রতিটি কাজের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করেছে অথবা নবী করিমের (সা.) উপস্থিতিকে উপলদ্ধি করেছে। দীর্ঘ এ বছরগুলোতে ইসলামের মহাজ্ঞানী ও মনীষী ব্যক্তিরা তাগিদ করেছেন যে, আসলে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন শুধুমাত্র নবী করিমকে (সা.) পবিত্র কোরানের সব কিছুর অর্থ বোঝার ক্ষমতা দান করেছেন যাতে সাধারণ মানুষ তা বুঝতে পারে এবং পরবর্তীতে যারা কোরানের আধ্যাত্মিক ও বাতেনি কোন অর্থ জানতে ও বুঝতে চায় আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত নবী করিমের (সা.) মারেফাতের শিক্ষার প্রকৃত উত্তরাধিকারীরা ছিলেন।
পবিত্র কোরানে রাসুলের (সা.) প্রাণ ও আত্মা সম্পর্কে এমন সব আয়াত রয়েছে যা মৌলিক আকিদা বিশ্বাস মোতাবেক প্রথম থেকেই এক বিশেষ ওহী রাসুলের (সা.) মনের মধ্যে নকশা এঁকেছে এবং পরবর্তীতে সেই ঐশী নকশা শুধুমাত্র লিখিত আকারে প্রকাশ পেয়েছে। যদি পবিত্র কোরানের মূল পাঠ (Text) শ্রবনকৃত শব্দ ও ভাষার সাথে পরিমাপ বা তুলনা করার মত হয়, নবী করিমের (সা.) মন ও আত্মা যেহেতু কোমল হাওয়ার মত এবং আওয়াজ ও স্বরধ্বনিকে নিজের সাথে বহন করে থাকেন আর তাকে অনুমতি প্রদান করেন যাতে সাধারণ মানুষ তা শ্রবণ করতে পারে। নবী করিমের (সা.) মশহুর হাদীস মোতাবেক যা খুবই পরিচিত, তিনি বলেন: আমি যখন এ দুনিয়া হতে চলে যাবো দুটি মূল্যবান উপহার রেখে যাবো তা হচ্ছে কোরান ও ইতরাত।
তাছাড়া একদিন রাসুলের (সা.) স্ত্রী আয়েশা তাঁর কাছে জিজ্ঞেস করলেন: কি করে আল্লাহর রাসুলের (সা.) মৃত্যুর পর তার স্মৃতিকে জীবন্ত ও প্রাণবন্ত রাখা যায় ? নবী করিম (সা.) তার জবাবে বললেন: “পবিত্র কোরান পাঠ করার মাধ্যমে”।
পবিত্র কোরান ও আল্লাহর রাসুলের (সা.) মধ্যে এক গভীর সম্পর্ক রয়েছে আর তাই মুসলমানরা সব সময় যখন পবিত্র কোরানের তেলাওয়াত করে নবী করিমের (সা.) বরকতকে উপলদ্ধি করে। যাইহোক, মুসলমানরা পবিত্র কোরানকে আল্লাহর কালাম মনে করে, রাসুল (সা.) বা অন্য কারোর কালাম নয়।
সুন্নত ও হাদীস
নবী করিমের (সা.) কাজ কর্মকে সুন্নত বলা হয় যা বিশেষ করে তাঁর কথা বার্তা (হাদীস)’ কেও শামিল করে। (ইসলামী চিন্তা ও পরিভাষাতে) পবিত্র কোরানের পর প্রত্যেকটি জিনিসের ব্যাখ্যা ও বর্ণনার অনুসরণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে গণনা করা হয়, তা ফিকাহ শাস্ত্র বা ইসলামী সংস্কৃতি হোক কিন্বা অর্থনীতি ও মেটাফিযিক্স।
সুন্নত হচ্ছে আচরণ – ব্যবহারের একটি পদ্ধতি যা সমস্ত ঈমানদার মুসলমান তার অনুকরণ ও অনুসরণ করতে চায়। সুন্নতের অভ্যন্তরে এমন এক জিনিস আছে হয়তো আত্মিক জীবনের সাথে তার সম্পর্ক রয়েছে। সুন্নত আচার – ব্যবহার ও আকিদা বিশ্বাসের এক অসীম সংকলনকে সংরক্ষণ করে এবং মসজিদে যাওয়া, ব্যক্তিগত সুস্থতা ও নিরাপত্তার সংরক্ষণের জন্য চেষ্টা ও পরিবারের সাথে পারস্পরিক সম্পর্ক এবং আধ্যাত্মিকতার উচ্চ স্তরের প্রশ্নগুলো যা মানুষ ও খোদার মধ্যে প্রেমকেও শামিল করে ইত্যাদি সব কিছুই অন্তর্ভুক্ত।
তাছাড়া সুন্নত প্রতি দিনের কাজ কর্মের প্রতিও দৃষ্টি দেয় যেমন: কারো হাল অবস্থা জিজ্ঞেস করা। নবী করিম (সা.) মুসলমানদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন যাতে একে অপরের প্রতি দরূদ প্রেরণ করে। আর এখনও এ রকম হাল অবস্থার খবর নেয়ার পদ্ধতি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন ভাষাতে প্রচলিত রয়েছে।
ব্যক্তিগত জীবনের গভীর বিষয়গুলো আর এ রকম মুসলমানদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে দীর্ঘ সময় ধরে নবী করিমের (সা.) সুন্নতের নির্দেশের প্রভাব পড়েছে এমন কি সমস্ত ইবাদত ও ধর্মীয় আচার ব্যবহার যেমন: প্রতি দিনের নামায, রোজা ইত্যাদি সব কিছুই নবী করিমের সুন্নত মোতাবেক হয়ে থাকে।
পবিত্র কোরান মুসলমানদেরকে নামায, রোজা ও হজ্ব ইত্যাদি আঞ্জাম দেয়ার হুকুম করে কিন্তু ধর্মীয় এই কাজগুলোর আঞ্জাম দেয়ার পদ্ধতি যে, কিভাবে করতে হবে তাছাড়া অন্যান্য ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান যেমন: বিয়ে শাদি ও মৃত ব্যক্তিকে দাফন করা ইত্যাদির শিক্ষা নবী করিম (সা.) দিয়েছেন। নবী করিমের (সা.) পুরো জীবন এবং তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন পরও সে সময়কার বিভিন্ন জিনিসে যেমন: চামড়া, কাগজ ও উটের হাড্ডিতে তাঁর কথা বার্তা নিবন্ধন ও সংরক্ষণ করা হয়েছিল। এই হাদীসগুলো বংশ পরম্পরায় যারা ইসলামের পূর্বে বিভিন্ন কবিতা মৌখিকভাবে সংরক্ষণ করেছিল তাদের মাধ্যমেও সংরক্ষণ করা হয়েছিল। ৮ ও ৯ শতাব্দীতে ইসলামী চিন্তাবিদগণ হাদীসের রাউয়িদের বংশধারার মান নির্দিষ্ট করার উদ্দেশ্যে নবী করিমের (সা.) সুদৃঢ় ও মজবুত হাদীসগুলোকে একত্র করেন।
এই কষ্টকর কাজের ফল হচ্ছে আহলে সুন্নতের ৬ টি হাদীসের বইয়ের সংকলন (সিহাহ সিত্তা) যা খুবই বিখ্যাত এবং অন্যান্য বইগুলোর মধ্যে মশহুর।
ইংরেজি ১০ শতাব্দীতে শিয়ারা তাদের হাদীসের বইকে ৪ টি সংকলনে একত্র করে যা অন্যান্য হাদীসের বইয়ের মধ্যে খুবই মশহুর। শিয়া অনেকের মতে এই ৪ টি সংকলন ছাড়া শিয়াদের মধ্যে আরও ৬ টি হাদীসের বইয়ের সংকলন রয়েছে। আহলে সুন্নত ও শিয়াদের বেশীর ভাগ হাদীস তাদের হাদীস গ্রন্থে একই রকম কিন্তু বর্ণনাকারী রাউয়িদের সিলসিলা এ দুই ফেরকার মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে। আহলে সুন্নতরা বিশ্বাস করে যে, বেশিভাগ হাদীস ইবনে আব্বাস ও আয়েশা হতে বর্ণনা করা হয়েছে কিন্তু শিয়ারা শুধুমাত্র নবীর আহলে বাইত (আ.) কে হাদীসের বর্ণনাকারী হিসেবে গ্রহণ করে থাকে। আবার অনেক হাদীসকে হাদীসে কুদসি বলা হয়ে থাকে যেখানে নবী করিমের (সা.) বাণীতে খোদাই হচ্ছে তার প্রথম ব্যক্তি।
সূত্রঃ ইন্টারনেট