মহান আল্লাহ মানব জাতিকে হেদায়াত করার জন্য নবী-রাসূলগণকে প্রেরণ করেছিলেন। প্রসিদ্ধ মতে পৃথিবীতে প্রায় ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবী-রাসূল এসেছিলেন। মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ছিলেন তাঁদের সর্বশেষ। পবিত্র কুরআনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ আমাদের সামনে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা (সা.)-এর পরিচয় তুলে ধরেছেন। এখানে মহানবী (সা.) সম্পর্কিত কুরআন মাজীদের কয়েকটি আয়াত উল্লেখ করা হলো।
ক. সর্বশেষ নবী : মহানবী (সা.) ছিলেন সর্বশেষ নবী ও রাসূল। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে :
مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَـٰكِن رَّسُولَ اللَّـهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ
‘মুহাম্মদ তোমাদের কোন পুরুষের পিতা নন; তিনি আল্লাহ্র রাসূল ও শেষ নবী।’- সূরা আহযাব : ৪০
খ. সমগ্র মানব জাতির জন্য প্রেরিত : পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ অন্যান্য নবী সম্পর্কে বলেছেন যে, তাঁরা প্রেরিত হয়েছিলেন নিজ নিজ জাতির জন্য। কিন্তু বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা (সা.)-এর ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তা‘আলা বলছেন :
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا كَافَّةً لِّلنَّاسِ بَشِيرًا وَنَذِيرًا
‘এবং আমরা আপনাকে বিশ্বের সকল মানুষের জন্য সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী হিসাবে প্রেরণ করেছি…।’- সূরা সাবা : ২৮
আবার অন্যত্র বলেছেন :
وَأَرْسَلْنَاكَ لِلنَّاسِ رَسُولًا ۚ وَكَفَىٰ بِاللَّـهِ شَهِيدًا ﴿٧٩﴾
‘আমরা আপনাকে মানব জাতির জন্য রাসূল করে প্রেরণ করেছি, সাক্ষী হিসেবে আল্লাহই যথেষ্ট।’- সূরা নিসা : ৭৯
অন্য একটি আয়াতে এরশাদ হয়েছে :
يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَكُمُ الرَّسُولُ بِالْحَقِّ مِن رَّبِّكُمْ فَآمِنُوا خَيْرًا لَّكُمْ ۚ
‘হে মানব জাতি! রাসূল তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে সত্যসহ আগমন করেছে…।’ নিসা : ১৭০
গ. সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্য রহমত : আর সমগ্র সৃষ্টির জন্য তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন রহমতস্বরূপ। আল্লাহ্ তা‘আলা পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতে বলছেন :
وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلَّا رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ ﴿١٠٧﴾
‘আমি আপনাকে জগৎসমূহের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’ সূরা আম্বিয়া : ১০৭
ঘ. রাসূলুল্লাহ্ (সা.) সুসংবাদদাতা, সতর্ককারী ও উজ্জ্বল প্রদীপ : মহান আল্লাহ রাসূলকে উজ্জ্বল প্রদীপরূপে আখ্যায়িত করেছেন :
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ إِنَّا أَرْسَلْنَاكَ شَاهِدًا وَمُبَشِّرًا وَنَذِيرًا ﴿٤٥﴾ وَدَاعِيًا إِلَى اللَّـهِ بِإِذْنِهِ وَسِرَاجًا مُّنِيرًا ﴿٤٦﴾
‘হে নবী! নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে পাঠিয়েছি সাক্ষীরূপে এবং সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, আল্লাহর অনুমতিক্রমে তাঁর দিকে আহবানকারী এবং উজ্জ্বল প্রদীপরূপে।’- সূরা আহযাব : ৪৫-৪৬
ঙ. রাসূলুল্লাহ্ (সা.) মহান আল্লাহ্র গুণাবলিতে ভূষিত : মহান আল্লাহ মহানবী (সা.)-এর প্রশংসায় তাঁর গুণবাচক নাম ‘রাউফ’ (দয়ার্দ্র) ও ‘রাহীম’ (পরম দয়ালু) ব্যবহার করেছেন। যেমন :
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ ﴿١٢٨﴾
‘(হে লোকসকল!) তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের নিকট এক রাসূল এসেছে, (তোমাদের প্রতি তার অনুকম্পার পরিচয় এই যে,) তোমাদের দুর্ভোগ তার পক্ষে দুর্বিষহ। সে তোমাদের (পথ প্রদর্শনের) অভিলাষী, বিশ্বাসীদের প্রতি দয়ার্দ্র ও পরম দয়ালু।’- সূরা তওবা : ১২৮
চ. মানব জাতির জন্য আদর্শ : তিনি ছিলেন মানব জাতির জন্য সর্বোত্তম আদর্শ। মহান আল্লাহ্ বলছেন :
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّـهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ
‘নিশ্চয়ই রাসূলের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ…।’- সূরা আহযাব : ২১
মহান আল্লাহ্ আরও বলছেন :
وَإِنَّكَ لَعَلَىٰ خُلُقٍ عَظِيمٍ ﴿٤﴾
‘নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।’-সূরা কলম : ৪
ছ. রাসূলের প্রতি মহান আল্লাহ্র অনুগ্রহ বর্ষণ : মহানবী (সা.)-এর প্রতি সর্বদা মহান আল্লাহ্র অনুগ্রহ বর্ষিত হয় এবং ফেরেশতাগণ তাঁর জন্য দরুদ পাঠ করেন :
إِنَّ اللَّـهَ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ ۚ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا ﴿٥٦﴾
‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ নবীর প্রতি অনুগ্রহ বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে। হে মুমিনগণ! তোমরাও নবীর জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা কর এবং তাকে যথাযথভাবে সালাম জানাও।’- সূরা আহযাব : ৫৬
– মো. আশিফুর রহমান