ভাষান্তরে: মো: মনিরুজ্জামান জনি, এডিটিং: শাহবাজ আহমেদ, প্রচারে: বেলায়েত মিডিয়া
প্রশ্ন: ধরুন! আমরা ফিরে এসেছি তেরোশো বছর আগে;
এবং সেটা আশুরার রাতে, ইমাম হুসাইন (আ:) এর সাথে আপনিও দাঁড়িয়ে আছেন।
আর আপনি তাঁকে কখনও ছেড়ে যাবেন না;
ভোর হলো এবং আপনি ইমামের সৈন্যদের সাথে দাঁড়িয়ে রয়েছেন;
আপনি জানেন যে- কী হতে যাচ্ছে এই দিনে,
ধরুন, আপনি ৭৩ নম্বর সাথী;
ওই দিনের কোন কাজটি সম্পাদনের মাধ্যমে আপনি ইমামকে সাহায্য করতেন?
ইমামকে আপনি কীভাবে সাহায্য করতেন?
উত্তর:
প্রথমত, ইমাম হুসাইন (আ:)-এর কারবালা অদ্যবধি চলমান
ইমাম হুসাইন (আঃ) এর জন্য এসব জমায়েতগুলো কারবালা থেকে পৃথক নয়;
আমরা সকলেই একই কাফেলায় অবস্থান করে এর কেন্দ্রের দিকে ধাবিত হচ্ছি, যা ইমাম হুসাইন (আ:);
আর আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে; যদি আমি সেখানে থাকতাম?
আমি ইমামের সাথীদের মাঝে থাকতাম; আমি কি করতাম?
সেটার সিদ্ধান্ত নিতান্তই আমার উপরে থাকত না;
এটা ইমাম হুসাইন (আ:)-ই নির্ধারণ করতেন।
আর ইমাম হুসাইন (আ:)-এর নিকটও এর কোন পার্থক্য থাকতো না, সেটা আলী আকবার হোক, কিংবা কৃষ্ণদাস জন হোক ।
জিহাদের পথে ইমামের নিকট আলী আকবর ও জনের মাঝে কোনরূপ পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় নি।
শাহাদাতের সময় তিনি দুইজনকেই একই ভাবে তাঁদের মুখের উপরে চুমু দিয়েছিলেন ।
আমাদেরকে দেখতে হবে যে, ইমাম হুসাইন (আ:) আমাদেরকে দিয়ে কি করাতে চান!
প্রশ্ন: এখন ধরুন ইমাম হুসাইন (আ:) সেটা আপনার ওপরই ছেড়ে দিয়েছেন যে- যুদ্ধক্ষেত্রের যেকোনো জায়গায় যেখানে ইচ্ছা আপনি ভূমিকা রাখতে পারেন।
আপনি কোন ভূমিকা পালন করতেন?
উত্তর:
যদি এটা সেভাবে হয়, আমি তাহলে দুইটি স্থানে নিজেকে গণ্য করবো!
১. এক হচ্ছে ইমামকে সুরক্ষা দেয়ার জন্য দাঁড়াবো- যখন তিনি তাঁর নামায পড়ছেন,
তাঁকে রক্ষা করবো যে কোনো রকম জখম থেকে, –এটাই প্রথম।
২. দ্বিতীয়তঃ আমি যদি পারি যেভাবে হোক নারী ও শিশুদের তাবুকে রক্ষা করব,
যাতে ইমাম হৃদয়ে একটু হলেও স্বস্তি বোধ করে।
প্রশ্ন: ধরুন! এটা আপনার অতিথি কক্ষ,
মনে করুন! একইভাবে তাঁরা আপনাকে এখনই ডাকলেন যে- “আপনার সাথে আমরা কিছু কথা বলতে চাই”
তাঁরা আপনাকে ডেকে বললেন- “সাইয়েদ নিচে আসুন, ইমাম হুসাইন (আ:) আপনার সাথে কথা বলতে চান!”
আপনি ভিতরে আসলেন, কেহই ইমাম হুসাইন (আ:) এর পাশে নেই, শুধু ইমাম হুসাইন (আ:) ও আপনি ঘরের মধ্যে রয়েছেন।
আপনার অনুভূতি কেমন হবে?
আপনি তখন কি বলবেন?
উত্তর:
আমি ইমাম হুসাইন (আ:)-এর এই সমস্ত সমাবেশ-মজলিস থেকে শুরু করে এখান পর্যন্ত সবকিছুকেই একই রকমভবে দেখি!
আমি সবসময় এই মনোভাব রাখি এবং শোক পালনকারীরা, লোকজন, মেহমানদের নিয়েই আমার উঠাবসা;
এমনভাবে, যেন আমি নিজে ইমামের সেবা করছি!
আমি প্রায়ই লোকদেরকে বলে থাকি- “যারাই ইমামের অনুষ্ঠানে সেবা করছেন এভাবে চিন্তা করুন যে, আপনারা ইমামকেই সেবা করছেন!”
এই কারণে আমি মনে করি না যে, আপনি যা জিজ্ঞাসা করেছেন তা যদি ঘটে, এটি আমাকে কোন চাপ দেবে!
অবশ্যই এটা হবে আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ইচ্ছা এবং ইমাম হুসাইন (আ:)-এর পায়ে চুম্বন এঁকে দেয়া,
আমি নিশ্চিত যে, এসব সমাবেশগুলি ইমামের দৃষ্টির সন্মুখে অনুষ্ঠিত হয় এবং তিনি এগুলি সম্পর্কে অবগত।
আপনি প্রায়ই: সেই বৃদ্ধার গল্প শুনেছেন, যিনি কারবালায় গিয়েছিলেন!
যখন তারা কারবালায় পৌঁছে তখন শুক্রবারের রাত ছিল!
তারা হযরত আলী আকবর (আ:)-এর জন্য নোহা পাঠ করেছিলেন
মজলিস ও জিয়ারত পাঠের পর যখন তিনি বিশ্রাম নিতে গেলেন, তিনি হঠাৎ দেখলেন ইমাম হুসাইন (আ:) আসছেন,
তিনি তাড়াতাড়ি উঠে পড়লেন এবং ইমামের আগমনের জন্য নিজেকে দ্রুত প্রস্তুত করলেন।
ইমাম পৌঁছালেন এবং তিনি তাঁকে সালাম জানালেন এবং ইমাম তার সালামের উত্তর দিলেন,
ইমাম বললেন- “ আমি এখানে তিনটি কারণে এসেছি-
১. যে আমার সাথে দেখা করতে এসেছে বিনিময়ে আমি অবশ্যই তার সাথে দেখা করবো।
২. দ্বিতীয় কারণ: যে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিল, সেই গ্রামবাসীর কাছে আমার ‘সালাম’ ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য, যিনি অসুস্থতার কারণে কারবালায় আসতে পারেননি,
দূর থেকে সে আমাকে তার ‘সালাম’ বলেছিল,
যখন তুমি ফিরে যাও তাকে আমার ‘সালাম’ পৌঁছে দাও, তাকে বলো- “হুসাইন ‘সালাম’ পাঠিয়েছে।”
ইমামের সজাগ দৃষ্টি রয়েছে এবং মনোযোগ আমাদের সবার প্রতিই রয়েছে!
আলহামদুলিল্লাহ!
আমরা সবাই অপেক্ষায় আছি, কখন আমরা ইমাম হুসাইন (আ:)-এর পায়ে আমাদের চুম্বন আঁকতে পারবো!
ইনশাআল্লাহ!
প্রশ্ন: আপনি ইমামকে কিছুই বলবেন না?
তিনি এখানেই আছেন এবং আপনি আপনার ঠোঁট তাঁর পায়ে স্পর্শ করেছেন!
আপনি কি তাঁকে কোন কিছুই বলতে চান না?
উত্তর:
সত্যি বলতে আমি কিছু বলার জন্য নিজেকে ধরে রেখেছি,
যদি আমি সত্যিই কিছু বলতে যাই -তবে তাঁকে বলার জন্য আমার কোন শব্দই থাকবে না!
কারণ দেখুন! আপনি যতই তাঁর কাছে আসছেন এবং ইমাম হুসাইন (আ:)-কে সেবা দিচ্ছেন,
ততই আপনি বুঝতে পারছেন যে, আপনি আরও তাঁর হয়ে যাচ্ছেন!
যেহেতু আপনি ইমামের সেবায় নিজের ১০, ২০, ৪০ বছর অতিবাহিত করতে পারেন, এটিই হবে আপনাকে দেওয়া তাঁর একটি সম্মানের মেডেল!
এই স্বস্তি এবং নিস্তব্ধতা তিনি আপনাকে দিয়েছেন, এই পরিসেবার জন্য- যা আপনি তার জন্য করেছেন;
আপনি তাদেরকে দেখবেন যারা ইমামের সেবা করেন না, তাদের অন্তরে স্বস্তি এবং অনুগ্রহের অনুভূতি নেই,
তাদের এত ভালো বন্ধু বান্ধবও থাকবে না!
একজন প্রকৃত বন্ধু খুঁজে পেতে কত প্রচেষ্টা লাগে!
কিন্তু এই অনুষ্ঠান গুলোর মাধ্যমে আপনি অনেক ভাল বন্ধু খুঁজে পাবেন!
[ইমাম হুসাইন (আ:)-এর প্রতি ভালোবাসার ভিত্তিতে বন্ধুত্ব বস্তুগত নয়]
এই সেবার কারণে আপনার আত্মা পবিত্র এবং প্রশান্ত হয়, আপনার মন পরিষ্কার হয়ে যায় শুধুমাত্র এই সেবা দেওয়ার জন্য ।
সুতরাং আপনি কি মনে করেন না যে, ইমামকে সেবা করার জন্য এই সম্মান দেওয়া হচ্ছে, আমরা আরো তাঁর হয়ে যাচ্ছি!
আমি যদি ইমামকে কিছু বলতে যাই, তবে সেটা হবে “আমি আপনার প্রতি কৃতজ্ঞ-আপনাকে সম্মান করার সুযোগ প্রদানের জন্য- প্রভু,
আপনার প্রতি কৃত অপমানের জন্য আমি তেমন কিছুই করতে পারিনি!”
“ধন্যবাদ মাওলা! আমাকে আপনার সেবা করার সম্মান দেওয়ার জন্য,
আমি লজ্জিত যে, আমি আপনার অনুগ্রহের বিনিময়ে কিছুই করতে পারিনি!”
প্রশ্ন: আপনি কি ইমাম হুসাইন (আ:) এর নিকট কিছু বলতে চান?
ব্যক্তিগত কিছু?
উত্তর:
শুধু বলুন, “আমি আপনার সাথে থাকতে পেরে সন্তুষ্ট”
এটাই, শুধু আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাকা।
ইমাম হুসাইন (আ:) যদি আপনার উপর সন্তুষ্ট হন, তার মানে আল্লাহও আপনার উপর সন্তুষ্ট।
ইমাম হুসাইন (আ:)-কে নিয়ে চিন্তা করার সময়, প্রত্যাশা না করে আমাদের দেখা উচিত যে, আমাদের কী দেওয়া হয়েছে?
আমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যে, তিনি আমাদের এই সমস্ত মহান জিনিস যা আমদের দেওয়া হয়েছে, তা তার প্রশংসা করার জন্য।