পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) ও ইসলামী ঐক্য সপ্তাহ উপলক্ষে গত ২৫ জানুয়ারি ২০১৩ ঢাকাস্থ সরকারি আলিয়া মাদ্রাসা মিলনায়তনে ‘সমসাময়িক বিশ্বে ইসলামী ঐক্য : ভিত্তি ও প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সরকারি আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. এ. কে.এম. ইয়াকুব হোসাইন এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এম. শমসের আলী। আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশস্থ ইরান দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত জনাব হোসেইন আমিনিয়ান তূসী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রশীদ। এতে আরো বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ বেতারের কর্মকর্তা জনাব মাওলানা মোহাম্মাদ নজরুল ইসলাম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন ইরান কালচারাল সেন্টারের কাউন্সেলর জনাব ড. রেযা দিয়ানাত।
অনুষ্ঠানের সভাপতি জনাব ড. এ.কে.এম. ইয়াকুব হোসাইন বলেন, একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করার জন্য মুসলিম বিশ্বের সামগ্রিক ঐক্য সুদৃঢ় করা সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। তিনি বলেন, আল কুরআন ও আল হাদীসের আদর্শই হতে পারে বিশ্বব্যাপী ইসলামী ঐক্যের মজবুত ভিত্তি। তিনি মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের পথে অন্তরায় প্রসঙ্গে মুসলমানদেরকে মুনাফিকদের ব্যাপারে সতর্ক থাকা এবং সাম্রাজ্যবাদী ও ক্রুশেডার শক্তিগুলোর সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন না করার ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন।
প্রফেসর ড. এম. শমসের আলী বলেন, মুসলিম উম্মাহর মধ্যে ঐক্য বজায় থাকলে আজ মুসলমানদের এ দুরবস্থার সম্মুখীন হতে হতো না। কুরআন বলছে, রাসূলুল্লাহ (সা.) আমাদের জন্য আদর্শ। বিশ্বে অনেক নেতা ছিলেন যাঁরা এক সময়ের নেতা ছিলেন, কিন্তু অন্য সময়ের নন। তিনি এ প্রসঙ্গে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিলের পরাজয়বরণের দৃষ্টান্ত উত্থাপন করে বলেন, তখন বলা হয়েছিল যে, চার্চিল যুদ্ধকালীন নেতা, কিন্তু শান্তিকালীন নেতা নন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বকালীন নেতা এবং তিনি সর্বক্ষেত্রের নেতা। তিনি বলেন, শুধু আলোচনা নয়, সত্যিকারভাবে রাসূলের অনুসরণেই মহান আল্লাহ সন্তুষ্ট হবেন।
জনাব হোসেইন আমিনিয়ান তূসী বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসেন। তিনি মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর সংবিধান ছিল পবিত্র কুরআন। তিনি বলেন, হজে আমরা মুসলিম উম্মাহর ঐক্যের প্রতিফলন দেখতে পাই যেখানে সকল মুসলিম একই পোশাকে অংশগ্রহণ করে। আমাদের মধ্যে হজের আধ্যাত্মিক চেতনা থাকলে ঐক্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। তিনি বলেন, শত্রুরা মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করার চেষ্টা করছে। তাই আমাদেরকে শাখাগত দিক থেকে নয়; বরং উম্মাহ হিসেবে নিজেদের অবস্থানকে বিবেচনা করতে হবে। আর এ ক্ষেত্রে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এ বাক্যই আমাদের ঐক্যের ভিত্তি।
প্রফেসর ড. মোহাম্মদ আবদুর রশীদ বলেন, মহান আল্লাহ সমগ্র সৃষ্টিজগৎ সৃষ্টি করেছেন মহানবী (সা.)-এর ভালবাসায়। পৃথিবীতে এক লক্ষ অথবা দুই লক্ষ চবিবশ হাজার নবী-রাসূল আগমন করেছেন। কিন্তু মহান আল্লাহ অন্য কোন নবীকে নন, বরং আমাদের রাসূলকে মেরাজের রজনীতে তাঁর অনেক গোপন ভেদ দেখিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদেরকে সকল আদর্শের জন্য রাসূলের শরণাপন্ন হতে হবে। আর রাসূলের জন্মদিন ইসলামী উম্মাহর মাঝে ঐক্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি সুযোগ।
মাওলানা মো. নজরুল ইসলাম বলেন, মহানবী (সা.) ইসলাম ধর্মের দিকে সবাইকে আহবান জানান। তিনি বিশ্বে হানাহানি দূর করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি সর্বাবস্থায় মানুষের জন্য আদর্শ ছিলেন। কিন্তু আমরা আজ রাসূলের আদর্শ থেকে দূরে সরে গেছি্ আমরা যদি তাঁর আদর্শে আদর্শবান হতে পারি তাহলে আমরাও পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হব।
ড. রেযা দিয়ানাত বলেন, মাজহাব নির্বিশেষে সকলের কাছে মহানবী (সা.) সর্বশ্রেষ্ঠ আদর্শ। বর্তমানে মুসলমানরা কুরআন ও রাসূলের সুন্নাহ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। এ অবস্থায় সকলের জন্যই রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ একান্ত প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানে কুরআন তেলাওয়াত করেন জনাব কারী মোহম্মদ হাবিবুর রহমান এবং হাম্দ ও নাত পরিবেশন করেন জনাব মেহেদী হাসান।