যুলকারনাইনের কাহিনী

আর হে মুহাম্মাদ! লোকেরা তোমার নিকট যুলকারনাইন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে। তাদেরকে বল : আমি তার কিছু অবস্থা তোমাদের শুনাচ্ছি” (সূরা আল-আহকাফ : ৮৩)

ছোট বন্ধুরা! আমরা তোমাদেরকে আল্লাহ তাআলার একজন সৎ বান্দা সস্পর্কে একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব। তোমরা কি জান তিনি কে ছিলেনতিনি ছিলেন যুলকারনাইন। যাঁর কথা পবিত্র কুরআন ও ইতিহাসে লিপিবদ্ধ আছে।

যুলকারনাইন’ শব্দটির অর্থ হচ্ছে দুই শিংধারী। কথিত আছে যেতিনি এমন একটি পাগড়ি পরিধান করতেন যার দুটি প্রান্ত ছিল। তাই তাঁকে যুলকারনাইন’ বলা হতো।

তিনি ছিলেন আল্লাহর অনুগত বান্দাসৎ ও দিগ্বিজয়ী বীর পুরুষ। পূর্ব-পশ্চিমের অনেক ভূখণ্ড তিনি জয় করেছিলেন। উত্তর-দক্ষিণ দিকেও তাঁর সাম্রাজ্য বিস্তৃত ছিল। কেউ কেউ মনে করেনপারস্য সম্রাট খসরুই হলেন এই যুলকারনাইন। হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্মের ৫৪৯ বছর পূর্বে তাঁর আবির্ভাব ঘটে।

যুলকারনাইনকে আল্লাহ তাআলা শুধু তাঁর জাতির নেতাই বানাননিবরং তাঁকে জ্ঞান-বিজ্ঞানশক্তি-সামর্থ্যও দান করেছিলেন।

তিনি পুনর্গঠন কাজে আত্মনিয়োগ করেনশহর-বন্দর গড়ে তোলেনদেশ আবাদ করেন। শিক্ষা-দীক্ষা বিস্তার করেন। তিনি যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন। যুদ্ধের জন্য বিপুল সাজ-সরঞ্জাম ও সৈন্যবাহিনী গড়ে তোলেন।

তিনি অন্যায় এবং দুষ্কৃতকারীদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযান পরিচালনা করেন। এসব অভিযানের কথা পবিত্র কুরআনেও আছে। যেমন বলা হয়েছে : সে (সর্বপ্রথম পশ্চিমের দিকে এক অভিযান চালাবার) আয়োজন করে। যখন সে সূর্যাস্তের সীমা পর্যন্ত পৌঁছে গেলতখন সে সূর্যকে এক কালো পানিতে ডুবে যেতে দেখল। আর সেখানে সে এক জাতির লোকদের সাক্ষাৎ পেল।’ (সূরা আল-কাহাফ : ৮৪-৮৫)

তোমরা নিশ্চয়ই ইয়াজুজ-মাজুজের কথা শুনে থাকবে। এরা ছিল এশিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের হিংস্র অসভ্য জাতির অন্তর্গত। প্রাচীনকাল হতেই তারা সভ্য জাতিগুলোর ওপর হামলা চালিয়ে লুটতরাজ করে আসছিল। ককেশীয় পর্বতমালার অপরদিকে ছিল তাদের আবাসস্থল। এছাড়া ইয়াজুজ-মাজুজ বলতে রাশিয়ার তাতারহুনসেথিন প্রভৃতি গোত্রগুলোকেও বুঝিয়ে থাকে।

একবার যুলকারনাইন সেই অঞ্চলে এক অভিযানে গিয়েছিলেন। তখন সেখানকার অধিবাসীরা ইয়াজুজ-মাজুজের অত্যাচার থেকে আত্মরক্ষার জন্য তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করল। তারা তাঁকে একটি বাধ বা প্রাচীর বানিয়ে দিতে অনুরোধ করল। তারা তাঁকে এজন্য কর (খাজনা) দেওয়ার আশ্বাস দিল। কিন্তু তিনি বললেন : আমার প্রভু আমাকে যা কিছু দিয়েছেন তা-ই প্রচুর।’ অতঃপর যুলকারনাইন এক বিশাল বাধ বা প্রাচীর তৈরি করেছিলেন। ইয়াজুজ-মাজুজের দল এই বাধ পার হয়ে আর আসতে সক্ষম হলো না। তারা বাধের মধ্যে কোন সুড়ংগ করতে পারল না। এতবড় কাজ সম্পন্ন করা সত্ত্বেও যুলকারনাইন কোন গর্ব করলেন নাবরং বিনয়ের সঙ্গে বললেন : এটা আমার প্রভুর রহমত।’ পবিত্র কুরআনে এই বাধ নির্মাণের কথা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত আছে। তোমরা বড় হয়ে এ ব্যাপারে আরো অনেক কিছু জানতে পারবে। যাঁরা সৎ এবং সংস্কার কাজে আত্মনিয়োগ করেন ইতিহাসে তাঁদের নাম চিরস্মরণীয় হয়ে থাকে।

(নিউজলেটারসেপ্টেম্বর ১৯৯১)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.