আশারায়-এ-মুবাশশারা

” আশারায়-এ-মুবাশশারা ” ———–

আহমাদ , খন্ড – ১ , পৃ – ১৯৩ ,
তিরমিজি , খন্ড – ৩ , পৃ – ১৮৩ ,
এবং আবু দাউদ – খন্ড – ২ , পৃ – ২৬৪) —
বর্ননা করেছেন যে ,

নিঃসন্দেহে নবী (সাঃ) বলেছেন যে ,
আবু বকর , ওমর , উসমান , আলী , তালহা , যুবায়ের , আব্দুর রহমান ইবনে আউফ , সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস , সাঈদ ইবনে যায়েদ এবং আবু ওবায়দাহ ইবনে জেরাহগন হলেন বেহেশতী ।

আর নবীজী (সঃ) এর এ কথাও সত্য যে , ইয়াসসারের বংশধরদের সংবাদ দিয়ে দাও যে , তোমাদের সাথে জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে ।

রাসুল (সাঃ) একথাও বলেছেন যে , বেহেশত চারজনের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে , তারা হলেন , আলী , আম্মার, সালমান এবং মেকদাদ ।

মুসলিম তার সহীহতে আরও রেওয়ায়েত করেছেন যে , রাসুল (সাঃ) বলেছেন , আবদুল্লাহ ইবনে সালামকে জান্নাতের সুসংবাদ দাও এবং হাসান ও হোসেন জান্নাতে যুবকদের সরদার , জাফর ইবনে আবি তালিব জান্নাতে ফেরেশতাদের সাথে উড়ে বেড়ানোর কথাও সত্য ।

মা ফাতেমা ( সাঃআঃ) জান্নাতে নারীদের সম্রাজ্ঞী এবং এও সত্যি যে , ওনার শ্রদ্ধেয় মাতা হযরত খাদিজাকে জীব্রাইল (আঃ ) জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন ।

অনুরুপভাবে সোহেব রুমি, বেলাল হাবশী, সালমান ফারসীকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন ।

যখন এতগুলো লোককে জান্নাতের সুসংবাদ দেয়া হল তখন কেন —
শুধুমাএ ঐ দশজন ব্যক্তির (আশারা মোবাশশারা ) কথা ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয় ?

আপনারা লক্ষ করবেন ,
কোন মাহফীল বা জলসায় বেহেশতের আলোচনা উঠলেই এই “আশার মোবাশশারা” প্রসংগ উঠবেই ।

আমারা উক্ত কথার সাথে কোনভাবেই দ্বিমত পোষন না করেই বলছি , আল্লাহর অসীম দয়া সকল বস্তুর ক্ষেএে প্রযোজ্য ।

সুপ্রিয় পাঠক ,
দয়া করে মনোযোগ দিন —

কিন্ত এটুকু বলতে চাই যে , এ হাদিস উক্ত হাদিসের বিপরীতে অবস্থান নেয় ,
যেখানে রাসুল (সাঃ ) বলেছেন যে ,
” দুজন মুসলমান যদি পরস্পরের বিরুদ্বে তলোয়ার দিয়ে যুদ্ধ করে তাহলে হত্যাকারী এবং নিহত উভয়কেই জাহান্নামি হতে হবে ।”

আমরা যদি এই হাদিসকে সত্য বলে ধরে নেই তাহলে এই ” আশার মোবশশারা ” এই হাদিস ধুয়া হয়ে বাতাসে পুরোপুরি মিলিয়ে যাবে ।

কেননা ওনাদের মধ্যে কেউ কেউ একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ , হত্যা এবং নিহতও হয়েছেন !

যেমন ,
জংগ-এ- জামাল যুদ্ধে হযরত আয়েশা (রাঃ) এর নেতৃত্বে হযরত আলী (আঃ) এর বিরুদ্ধে তালহা ও জোবায়ের নিহত হয়েছে ।
মুয়াবিয়া কতৃক সৃষ্ট জংগে – এ – সিফফিন যুদ্ধে আলী (আঃ ) এর বিজয়ের পক্ষে যুদ্ধরত অবস্থায় আম্মার ইয়াসসার (রাঃ) শহীদ হয়েছেন ।

এ বিষয় রাসুল (সাঃ) এর হাদিসও আছে ।

আর কারবালাতে ইয়াজীদ ইবনে মুয়াবিয়া কতৃক জান্নাতের সরদার ইমাম হোসেন (আঃ) ৭২ জন সংগী সাথিসহ নিদারুনভাবে শহীদ হয়েছেন ।
পুরুষদের মধ্যে শুধু ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন জয়নুল আবেদিন (আঃ) বেচে ছিলেন ।

অতএব ঐ মিথ্যাবাদিদের দৃষ্টিকোন থেকে হত্যাকারী এবং নিহত সবাই জাহান্নামি হলেন (মায়াজাল্লাহ) , কেননা তারা একে অপরের বিরুদ্ধে তরবারি দিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন !!

মনে রাখা উচিত , ওহী ব্যতিত রাসুল (সাঃ) নিজে থেকে কিছুই বলতেন না ।

যেমন আমরা আগেও বলেছি , উক্ত হাদিস বিবেক বুদ্ধির বিরুদ্ধে অবস্থান রাখে এবং আল্লাহর কিতাব ও রাসুল (সঃ) এর সুন্নাতের বিপরীত ।

এই ধরনের অযৌক্তিক , মিথ্যা , মনগড়া বনু উমাইয়াদের সৃষ্ট হাদিসগুলি বুখারী , মুসলিম কেন যাচাই বাছাই করেন নি ?
যেখানে বুখারিতেই আছে , জান্নাতের নারীদের সম্রাজ্ঞী মা জননী ফাতেমা ( সাঃআঃ) মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রাগে হযরত আবু বকরের সাথে কথাই বলেন নি ।

এই বুখারিতেই আছে ,
জান্নাতের সরদার ইমাম হোসেন (আঃ) এবং হাসান (আঃ) এর পবিত্র গৃহে হযরত ওমর আগুন দিয়ে ঐ ঘরের দরজায় লাথি দিয়ে মা ফাতেমা (সাঃআঃ) কে মারাত্মকভাবে আহত করেছিলেন ।
তাহলে এনারা কিভাবে জান্নাতের সুসংবাদ প্রাপ্ত হন ?

আবার এমনও হতে পারে যে , এধরনের উদ্ভট হাদিসই হচ্ছে তাদের মাযহাব বা আকিদাগত বিশ্বাস ।

 

মূল – ডঃ মুহাম্মাদ তিজানী সামাভী ,
বাংলা অনুবাদে – ইরশাদ আহমেদ ,
পৃষ্ঠা – ২৯৪ , ২৯৫ থেকে ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.