সালাতে হাত ছেড়ে অথবা হাত বেঁধে আদায় সম্পর্কে —
আল কোরানের নির্দেশ মতে দ্বীনের কার্যক্রম মহান আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠতা সহকারে সম্পাদন করতে হবে ।
এরশাদ হচ্ছে –
” — তাদেরকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে আল্লাহর উপাসনা করতে এবং দ্বীনকে তাঁর জন্য একনিষ্ঠ করতে — “।
সূরা – বাইয়্যেনাহ – ৫ ।
” — সালাত সেইভাবেই কায়েম কর যেভাবে তিনি তোমাদের সৃষ্টি করেছেন আর যেভাবে ফিরিয়া আসিবে — ” ।
সূরা – আরাফ – ২৯ ।
পবিত্র কোরআনের এই আয়াতের দ্বারা আমরা স্পষ্ট ধারণা নিতে পারি যে ,
“যেভাবে তোমাদের সৃষ্টি করেছেন” অর্থাৎ যেভাবে আমরা মাতৃগর্ভ থেকে পৃথিবীতে আসি তখন আমাদের উভয় হাত সোজা থাকে , বাঁধা নয় এবং “যেভাবে তোমরা ফিরিয়া আসিবে” (অর্থাৎ সোজা থাকে) ।
তাই নামাযকেও ঠিক একই রূপে আদায় করতে হবে ।
” — সালাতে যেন সতর্ক ও সশস্ত্র থাকে –” ।
সূরা – নেসা – ১০২ ।
এখন বুঝার বিষয় সশস্ত্র থাকলে কিভাবে দাঁড়াতে হয় ।
” — প্রত্যেকেই জানে তাহার ইবাদতের ও পবিত্রতা ঘোষণার পদ্ধতি , যেভাবে এক পাখি আল্লাহর পবিত্রতা মহিমা ঘোষণা করে উড়ন্ত অবস্থায় ডানা ছড়িয়ে —” ।
সূরা – নূর – ৪১ ।
পবিত্র কোরআনের উক্ত আয়াতের কারীমা থেকে আমরা আরও প্রমাণ পাই যে , পৃথিবীতে প্রত্যেকেই আল্লাহর ইবাদতের মহিমা জানে , একটি পাখি যখন আকাশে উড়ন্ত অবস্থায় থাকে তখনই সে আল্লাহর ইবাদত করতে থাকে । তাহলে পাখি যখন আকাশে উড়ে তখন তার ডানা মেলে উড়ে এবং তার দুটো ডানা সোজা রেখে উড়তে থাকে । যদি সে তার হাতকে (ডানা) বন্ধ বা বেঁধে রাখে তাহলে সে উড়ন্ত অবস্থাতেই পড়ে যাবে তখন সে তার ইবাদত থেকে সরে যাবে , থেমে যাবে তার ইবাদত ।
তাই নামযকেও ঠিক একই রূপে আদায় করতে হবে ।
” — ইহুদীরা বলে , আল্লাহর হাত বাধা , উহারই হাত বাধা এবং যারা বলে তার জন্য উহারাই অভিশপ্ত , বরং আল্লাহর উভয় হস্তই প্রসারিত — ” ।
সূরা – মায়িদা – ৬৪ ।
” — যাহারা মোনাফেক নর ও নারী উহারা হাত বদ্ধ করিয়া রাখে — ” ।
সূরা – তাওবা – ৬৭ ।
প্রখ্যাত সাহাবী আবু হামিদ সায়েদী একদল সাহাবী যাদের মধ্যে আবু হুরায়রা দুসী , সাহাল সায়েদী , আবু ওসাইদ সায়েদী , আবু কাতাদাহ , হারেস ইবনে রাবয়ী এবং মোহাম্মাদ ইবনে মোসলামাহ ও ছিলেন ।
তাদের জন্য মহানবী (সঃ) থেকে নামায পড়ার পদ্ধতি এবং ছোট-বড় মোস্তাহাবগুলোও বর্ণনা করেছেন , কিন্ত এরূপ কোন আমলের কথা (হাতের উপড় হাত বাঁধা) বর্ণনা করেন নি ।
স্পষ্টতই যদি মহানবী (সঃ) কদাচিৎ একাজটি করতেন তবে তা তিনি বর্ণনা করতেন এবং উপস্থিত ব্যাক্তিবর্গকে স্বরণ করিয়ে দিতেন ।
সায়েদির হাদিসের অনুরূপ হাদিস হাম্মাদ ইবনে ঈসার মাধ্যমে ইমাম জাফর সাদেক (আঃ) এর ভাষায় হাদিস গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে ।
সূত্র – বায়হাকী সুনান-২/৭২ , ৭৩ , ১০১ , ১০২ / সুনানে আবু দাউদ-১/১৯৪ বাবে এফতেতাহে সালাত , হাদিস-৭৩০, ৭৩৬ / তিরমিযি সুনান ২/৯৮ বাবে সেফাতুস সালাত ; (আফয়ালে সালাত) হাদিস-৮১) ।
আল্লামা শাহ্ ইসমাইল (ভারত) তিনি বলেন , হাতকে সোজা রেখে রাসূল (সঃ)-এর যুগে নামায আদায় হত ।
সূত্র – হেদায়াতুল মাহদী , আল্লামা ওয়াহেদ খান , ৪র্থ খন্ড , পৃঃ ১২৬ / তানভিরুল য়া’নাঈম (লাহর মুদ্রিত) আল্লামা ইসমাইল (ভারত দেওয়াবন্দ) পৃঃ ২১ ।
হাফেয ইবনুল কাইয়্যেম (রাহঃ) লিখেন, ইমাম মালেক (রহঃ) হাত ছেড়ে দিয়ে নামায পড়তে বলেছেন । ইমাম মালেক (রাহঃ)-এর অনুসারীরা এভাবে নামায পড়তে শুরু করে দিয়েছে ।
সূত্র – মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ ইদরীছ কাছেমী, পত্রিকা-ইনকিলাব, ঢাকা বৃহঃ বার, ২১ মে ২০০৯, ধর্ম দর্শন) ।
নামাযে হাত বাঁধা রাসূল (সঃ)-এর পছন্দ নয়
———————————–
আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত –
রাসূল (সঃ) কোমরে হাত রাখা পছন্দ করতেন না এবং বলতেন, ইহুদিরাই এরূপ করে ।
সূত্র – বুখারী – ৩য় খন্ড , পৃ – ৪০১ , হাঃ ৩২০০, আধুনিক প্রকাশনী ।
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্নিত –
তিনি বলেন , নবী (সঃ) কোমরে হাত রেখে নামায পড়তে নিষেধ করেছেন ।
সূত্র – বুখারী – ১ম খন্ড , পৃ – ৪৯৭ , হাঃ ১১৪০, আধুনিক প্রকাশনী ।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন , রাসূল (সঃ) নিষেধ করেছেন , নামাযের মধ্যে কোমরে হাত রাখিয়া দাঁড়াইতে ।
সূত্র – মেশকাত শরীফ , ৩য় খন্ড , হাঃ ৯১৮-(৪) , পৃঃ ১২, সন-২০০৬ ।
প্রচলিত নামাযে দাঁড়িয়ে নাভীর নীচে হাত বাঁধা হয় । এটাও সহিহ হাদিসের বিপরীত ।
সূত্র – বুখারী-১ম খন্ড , পৃঃ ১০২ / মুসলিম-১ম খন্ড , পৃঃ ১৭৩ / আবু দাউদ-১ম খন্ড , পৃঃ ১১০ / তিরমিযি-পৃঃ ৩৪/৩৫ / নাসাঈ-পৃঃ ১৪১ / ইবনে মাযাহ-পৃঃ ৫৯ / মিশকাত-পৃঃ ৭৫ / ইবনে খুজাইমাহ-১ম খন্ড, পৃঃ ২২৩ / মুআত্তা মুহাম্মাদ-পৃঃ ১৬০ ।
সাহল ইবনে সাদ থেকে বর্ণিত হাদীসে আমরা পাই যে ,
হাত বেঁধে নামায পড়া মহানবী (সঃ)-এর পরে চালু হয়েছে । কারণ তিনি বলেন ,
” মানুষকে যদি এ কাজের জন্য আদেশ করা হত ” যদি মহানবী (সঃ)-এর আদেশ হত তবে তাঁর সাথে সম্পৃক্ত করা হত ।
সূত্র – ফাতহুল বারী ২/২২৪ এবং সুনানে বায়হাকী ২/২৮ ।
আল্লাহ বলেন ,
” — অতঃপর তাদের পরে এল অপদার্থ পরবর্তীরা । তারা নামায নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃদ্ধির অনুবর্তী হল । সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতা প্রত্যক্ষ করবে —- ।”
সূরা – মারিয়াম – ৫৯-৬০ ।
” — সুতরাং দূর্ভোগ সেই সালাত আদায়কারীদিগের , যাহারা তাহাদিগের সালাত সম্বন্ধে উদাসীন , যাহারা লোক দেখানোর জন্য উহা করে — “।
সূরা – মাউন – ৪-৬ ।
রাসূল (সঃ) এর পরে নামায নষ্ট হতে চলেছে ।
সূত্র – বুখারী -১ম খন্ড , পৃঃ ২৪৯ , হাঃ ৪৯৯, আধুনিক প্রকাশনী ।
আমর ইবনে যুরারা (রঃ) যুহরী (রঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন আমি দামেশকে আনাস ইবনে মালিক (রাঃ)-এর নিকট উপস্থত হলাম , তিনি তখন কাঁদছিলেন ।
আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম আপনি কাঁদছেন কেন ?
তিনি বললেন রাসূল (সাঃ) এর যুগে যা কিছু পেয়েছি তার মধ্যে কেবল মাত্র সালাত ছাড়া আর কিছুই বহাল নেই । কিন্ত সালাতকেও নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ।
বাকর (রঃ) বলেন , আমার কাছে মুহাম্মদ ইবনে বাকর বুরসানী (রঃ) উসমান ইবনে আবু রওয়াদ (রঃ) সূত্রে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন ।
সূত্র – বুখারী -২য় খন্ড , পৃঃ ৮, হাঃ ৫০৫, (ইফাবা) ৫০৪ ।
রাসূল (সঃ) বলেছেন , ” তোমরা সেইভাবে নামায আদায় কর যেভাবে আমাকে নামায আদায় করতে দেখ । ”
সূত্র – বুখারী-মিশকাত আরবী ৬৬ পৃঃ / মিশকাত বাংলা আরাফাত পাবলেকেশন্স , ২য় খন্ড, পৃঃ ৫৮ কিতাবুস সালাত, হাঃ ৬৬২ ।
হযরত আলী (আঃ)-এর নামায রাসূল (সঃ)-এর নামাযের সদৃশ্য পূর্ণ । অর্থাৎ রাসূল (সঃ) যেভাবে নামায পড়তেন হযরত আলী (আঃ) ঠিক সেইভাবে নামায পড়তেন ও পড়াতেন ।
সূত্র – বুখারী-১ম খন্ড, পৃঃ ৩৫৪, হাঃ ৭৪০, ৭৪২, আধুনিক প্রকাশনী ।
মুতাররাফ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , আমি এবং ইমরান ইবনে হোসাইন , আলী ইবনে আবু তালিবের পিছনে কোন এক সময় নামায পড়লাম । তিনি নামাযে সালাম শেষ করার পর ইমরান আমার হাত ধরে বললেন, এ ব্যাক্তি (আলী) আমাদেরকে মুহাম্মহ (সাঃ)-এর নামাযের সাথে সদৃশ্যপূর্ণ নামায পড়ালেন এবং বললেন এ ব্যাক্তি আমাদেরকে রাসূলের (সাঃ) নামাযের কথা স্বরণ করিয়ে দিলেন অর্থাৎ মুহাম্মদ (সাঃ) যেভাবে নামায পড়তেন আলী (আঃ) ও ঠিক সেই ভাবে নামায পড়ালেন ।
সূত্র – বুখারী-১ম খন্ড, পৃঃ ৩৫৪, হাঃ ৭৮০, আধুনিক প্রকাশনী ।
রেওয়াতে পাওয়া যায় সাহাবারা কুফার মসজিদে আলাপ করিয়াছেন এতদিন পর আলীর ইমামতে সেইরূপ নামায পড়িলাম , যেভাবে আমরা রাসূলের (সাঃ) পিছনে পড়িয়াছি ।
সূত্র – মেশকাতুল মাসাবিহ , তাজরীদুল বুখারী ।
তাহলে এখানে প্রশ্ন হচ্ছে যে , রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর পরে যেভাবে নামায আদায় করা হত সেটা কি বেঠিক ছিল ?
যদি ঠিক থাকত কিংবা রাসূলের (সাঃ) মতই নামায থাকত তাহলে কেন সাহাবারা বললেন , এ ব্যাক্তি (আলী) আমাদেরকে মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নামাযের সাথে সদৃশ্যপূর্ণ নামায পড়ালেন ও রাসূলের (সাঃ) নামাযের কথা স্বরণ করিয়ে দিলেন এবং কুফার মসজিদে আলাপ করছিলেন এতদিন পরে তারা রাসূলের (সাঃ) নামাযকে আলীর (আঃ) দ্বারা ফিরে পেলেন হযরত আলীর (আঃ) নামাযই ঠিক ।
তাহলে হযরত আলীর (আঃ) খেলাফতের পূর্বে যেভাবে নামায পড়া হত সে নামায কি শুদ্ধ ছিল না ?
যদি সঠিক থাকতো তাহলে এমন প্রশ্ন আসবে কেন ?
মুয়াবীয়ার হুকুমতে এক সাহাবা বলিতেছিলেন, ইসলামের এক নামায ছাড়া আর সব কিছুইত চলিয়া গিয়াছিল, এই লোকটির আমলে সে নামাযও গেল ।
সূত্র – তাজরিদুল বুখারী , মিশকাতুল মাসাবিহ্- নামায প্রসঙ্গে ।
রাসূল (সাঃ)-এর পর যারা হুকুমতে এসেছিলেন তারা পবিত্র নামাযকেও গড়মিল করে ফেলেছিলেন আর হযরত আলী (আঃ) এর দ্বারা নামাযটি সঠিক ভাবে রাসূলের (সাঃ) নামাযের রূপ ফিরে পায় মুয়াবীয়ার আমলে সেটিও গেল ।
তাহলে এখানে বুঝা যাচ্ছে , হযরত আলী (আঃ)-এর খেলাফতের পূর্বেও নামাযে গড়মিল এবং পরেও গড়মিল করে ফেলেছে ।
একমাত্র হযরত আলী (আঃ) ও তাঁর খেলাফতের সময়টিই সঠিক পথ এবং সঠিক নামাযের রূপ প্রকাশ পায় ।
তাই এখানে বিবেচনা করে দেখা যায় যে , হযরত আলী (আঃ) এর অনুসারীদের দ্বারাই সত্য পথের এবং সঠিক নামাযের সন্ধান পাওয়া যায় ।
তাই হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আগেই বলে দিয়েছেন ,
” আলী (আঃ) হকের সাথে এবং হক আলীর (আঃ) সাথে ।
সূত্র – তিরমিযি , ২য় খন্ড, পৃঃ ২৯৮ / তারিখে বাগদাদ লীল খাতিবুল বাগদাদ, ১৪ তম খন্ড, পৃঃ ৩২১ ।
তাই রাসূল (সাঃ) বলেছেন , “ওহে আমার আনসারগণ আমি তোমাদের এমন এক ব্যাক্তির খবর দিতেছি , যে তোমাদেরকে সত্য পথে চলিবার হেদায়েত করিবে । এবং তোমরা যদি তাহার অনুসরণ কর তবে কখনই পথভ্রষ্ট হবে না এবং সেই ব্যাক্তি একমাত্র হযরত আলী (আঃ) , যিনি তোমাদের সত্য পথে হেদায়েত করিবেন ।
সূত্র – কানজুল আমাল,২য় খন্ড, পৃঃ ১৫৬ ।
সূরা আরাফ এর 29 নং আয়াতের অপব্যাখ্যা করেছো!