হুসাইনের প্রতি মু’মিনের ভালবাসার উত্তাপ কখনও কমবে না: মহানবী (সা)

হুসাইনের প্রতি মু’মিনের ভালবাসার উত্তাপ কখনও কমবে না: মহানবী (সা)

হুসাইনের প্রতি মু'মিনের ভালবাসার উত্তাপ কখনও কমবে না: মহানবী (সা)

কুল মাখলুক কাঁদিয়ে ওই এলো মহররম

হায় হোসেন! হায় হোসেন! উঠলো রে মাতম

হায় হোসেন! হায় হোসেন! উঠলো রে মাতম

সারা জাহান কেঁদে বিভোর আসমান-জমিন

দজলা কাঁদে ফোরাত কাঁদে কাঁদে মুসলিমিন….

কাতরা পানি পায়নি  হায়রে পিয়াসে কাতর

তির খেয়ে যে মরলো কচি শিশু সে আসগর

(কাজী নজরুল ইসলামের ইসলামী গান)

 

হযরত ইমাম হুসাইন (আ)’র কালজয়ী মহাবিপ্লব নানা কারণে ইতিহাসে অমর হয়ে আছে এবং এইসব কারণে এই মহাপুরুষ ও তাঁর সঙ্গীরা মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থলে ভালবাসা আর শ্রদ্ধার অক্ষয় আসন করে নিয়েছেন।  এই কারণগুলোর মধ্যে সর্বাগ্রে উল্লেখ করতে হয় মহান আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী আন্তরিক চিত্তে যথাসময়ে জরুরিতম দায়িত্বটি পালন করা ও এ জন্য নিজের সন্তান ও জীবনসহ সব কিছু বিলিয়ে দেয়ার মত সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার। তাই মহান আল্লাহ তাঁর একনিষ্ঠ এই খোদাপ্রেমিক ও তাঁর সঙ্গীদের জন্য বিশ্বের সব যুগের মু’মিন মানুষের হৃদয়ে দান করেছেন অনন্য মমত্ববোধ আর শ্রদ্ধা। ইমামের অতুলনীয় বীরত্ব, সাহসিকতা ও আপোসহীনতাও এক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে।

 

ইয়াজিদের মত বর্বর ও নিষ্ঠুর প্রকৃতির শাসকের আনুগত্য অস্বীকার করার পরিণতি কি হতে পারে তা ভেবে যখন অনেক খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব আতঙ্কিত ও কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়েছিলেন এবং তারা যখন আপোষ বা নীরবতার পথ বেছে নিয়েছিলেন তখন ইমাম হুসাইন (আ) প্রকাশ্যেই এই চরম জালিম ও তাগুতি শাসকের বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। একইসঙ্গে তিনি জনগণকে এই উমাইয়া শাসকের বিরুদ্ধে জাগিয়ে তুলতে সচেষ্ট হন। এ সময় ইমামের প্রতি সহানুভূতিশীল অনেক সাহাবি ও এমনকি তাঁর এক সৎ ভাইও বিপ্লবী তৎপরতা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন মুসলিম উম্মাহর এই অমর ত্রাণকর্তাকে। হযরত আলী (আ)’র অন্যতম পুত্র মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়া কোনো নির্দিষ্ট শহরে বেশি দিন না থেকে দূরে কোথাও চলে যেতে ইমামকে পরামর্শ দেন যাতে সংঘাত ও রক্তপাত এড়ানো যায় এবং জাতির সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তির প্রাণহানি না ঘটে।

 

জবাবে ইমাম হুসাইন (আ) বলেছিলেন, ‘ভাই আমার! তুমি ইয়াজিদের প্রতি আনুগত্যের শপথ এড়ানোর জন্য আমাকে এক শহর থেকে আরেক শহরে সফরের পরামর্শ দিচ্ছ। কিন্তু তুমি এটা জেনে রাখ যে, সারা বিশ্বেও যদি কোনো আশ্রয়-স্থল না থাকে তাহলেও আমি মুয়াবিয়ার পুত্র ইয়াজিদের হাতে বাইয়াত করব না।’

 

ভাইয়ের এ কথা শুনে মুহাম্মাদ ইবনে হানাফিয়ার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ল অশ্রু। আর ইমাম বলতে থাকলেন: ‘হে আমার ভাই! আল্লাহ তোমাকে উত্তম প্রতিদান দেবেন। কারণ, তুমি ভাই হিসেবে ভাইয়ের মঙ্গল কামনার দায়িত্ব পালন করেছ। কিন্তু আমি আমার দায়িত্ব সম্পর্কে তোমার চেয়ে বেশি অবহিত এবং আমি আমার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি।’

 

ইমাম হুসাইন (আ) সম্পর্কে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) বলেছেন, হুসাইন আমার থেকে এবং আমি হুসাইন থেকে। তিনি আরও বলেছেন, হুসাইন আমার সন্তান, আমার বংশ ও মানবজাতির মধ্যে তাঁর ভাই হাসানের পর শ্রেষ্ঠ। সে মুসলমানদের ইমাম, মুমিনদের অভিভাবক, জগতগুলোর রবের প্রতিনিধি বা খলিফা, … সে আল্লাহর হুজ্জাত বা প্রমাণ পুরো সৃষ্টির ওপর, সে বেহেশতের যুবকদের সর্দার, উম্মতের মুক্তির দরজা। তার আদেশ হল আমার আদেশ। তার আনুগত্য করা হল আমারই আনুগত্য করা। যে-ই তাকে অনুসরণ করে সে আমার সাথে যুক্ত হয় এবং যে তার তার অবাধ্য হয় সে আমার সঙ্গে যুক্ত হতে পারে না। …. নিশ্চয়ই হুসাইন বিন আলীর মূল্য আকাশগুলো ও জমিনগুলোর চেয়ে বেশি এবং নিশ্চয়ই তাঁর বিষয়ে মহান আল্লাহর আরশের ডান দিকে লেখা আছে : হেতদায়াতের আলো, নাজাতের নৌকা, একজন ইমাম, দুর্বল নন, মর্যাদা ও গৌরবের উৎস, এক সুউচ্চ বাতিঘর এবং মহামূল্যবান সম্পদ। (মিজান আল হিকমাহ নামক হাদিস গ্রন্থ)

 

ইমাম হুসাইন (আ)’র জন্মের পর এই নবজাতক শিশু সম্পর্কে বিশ্বনবী বলেছিলেন, ‘হে ফাতিমা! তাকে নাও। নিশ্চয়ই সে একজন ইমাম ও ইমামের সন্তান। সে নয়জন ইমামের পিতা। তারই বংশে জন্ম নেবে নৈতিক গুণ-সম্পন্ন ইমামবৃন্দ। তাঁদের  নবম জন হবেন আল-কায়েম তথা মাহদি।’

 

উল্লেখ, অনেকের মনেই এ প্রশ্ন জাগতে পারে যে ইমাম হুসাইন (আ) সম্পর্কে মহানবীর (সা) এ কথার অর্থ কী  যে, সে আমার থেকে ও আমি তার থেকে? কারণ, ইমাম হুসাইন রাসুলের বংশধর হিসেবে তাঁর থেকে হলেও রাসূল আবার হুসাইন থেকে হবেন কেন?

এর উত্তরে বলা হয়, ইমাম হুসাইনের মহাবিপ্লবের কারণে ইসলাম বিকৃতি ও বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে। সেই অর্থেই মহানবী (সা) নিজেকে তাঁর নাতির থেকে বলে মন্তব্য করেছেন বলে মনে করা হয়।

 

ইমাম হুসাইনের জন্য শোক প্রকাশ প্রসঙ্গে বিশ্বনবী (সা) বলেছেন, নিশ্চয়ই প্রত্যেক মু’মিনের হৃদয়ে হুসাইনের শাহাদতের ব্যাপারে এমন ভালবাসা আছে যে তার উত্তাপ কখনো প্রশমিত হবে না। তিনি আরও বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সমস্ত চোখ কিয়ামতের দিন কাঁদতে থাকবে, কেবল সেই চোখ ছাড়া যা হুসাইনের বিয়োগান্ত ঘটনায় কাঁদবে, ঐ চোখ সেদিন হাসতে থাকবে এবং তাকে জান্নাতের সুসংবাদ ও বিপুল নেয়ামত দান করা হবে।’

 

ইসলামের শত্রুরা মহানবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইতকে ও তাঁদের পবিত্র নামকে ইতিহাস থেকে মুছে দিতে চেয়েছিল চিরতরে। কিন্তু বাস্তবে হয়েছে এর উল্টো।  কারণ, মহান আল্লাহ নিজেই তাঁর ধর্মের নুরকে রক্ষার অঙ্গীকার  করেছেন এবং এই আলোকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা কাফির-মুশরিকদের কাছে তা যতই অপছন্দনীয় হোক না কেন।

 

ইমাম জাফর আস সাদিক (আ) বলেছেন, ‘আমাদের ওপর তথা মহানবীর আহলে বাইতের ওপর যে জুলুম করা হয়েছে তার কারণে যে শোকার্ত তার দীর্ঘশ্বাস হল তাসবিহ এবং আমাদের বিষয়ে তার দুশ্চিন্তা হল ইবাদত।… হাদিসটি বর্ণনা শেষে তিনি বলেছেন, নিশ্চয়ই এ হাদিসটি স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখা উচিত।’ #

 

রেডিও তেহরান/এএইচ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.