১৫ই শাবান শেষ ত্রাণকর্তা হযরত ইমাম মাহদী (আ.)’র পবিত্র জন্মদিন

১৫ই শাবান শেষ ত্রাণকর্তা হযরত ইমাম মাহদী (আ.)’র পবিত্র জন্মদিন

আহা সেই চাদঁমুখ যদি দেখতে পেতাম- কতই না নুরানি!

কি ক্ষতি তোমার সে স্বপ্ন মিটে যদি মোর, হে মৌলা আমার!
গোপন তব সৌন্দর্য, তবুও তা নিয়ে কত গুঞ্জন-কানাকানি
দেশে দেশে এশকের মাহফিলে তোমার নামের সে কি রৌশানি!
যুগে যুগে সব ভাষাতেই হয়ে আছ সংলাপের মধ্যমণি!

ফিরে এসে দূর করবেন যিনি সব বঞ্চনা, ক্ষুধা-হাহাকার!

মজলুম পাবে ন্যায়বিচার, ফিরবে মানবিকতা
জ্ঞান-বিজ্ঞান আর সমৃদ্ধিতে ভরপুর হবে সভ্যতা।
পূর্ণ হবে ইসলামের বিশ্ব-বিজয়, ধরণী হবে নেয়ামত-খনি।
পবিত্র শবে বরাত বা ১৫ ই শাবান উপলক্ষে সবাইকে জানাচ্ছি প্রাণঢালা অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা ।
১৫ ই শাবান সবচেয়ে মহিমান্বিত রাতগুলোর অন্যতম। ভারত উপমহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে এই দিনে নানা ধরনের মিষ্টি বিতরণ ও ব্যাপক ইবাদত বন্দেগী করা হয়। এই রাতের ইবাদত-বন্দেগী কবুল হয় এবং মুসলমানের সব গোনাহ মাফ করিয়ে নেয়ার এক উপযুক্ত সুযোগ দেয়া হয় এই রাতে। অনেকেই মনে করেন শবে ক্বদরের চেয়েও কোনো অংশে কম নয় এই রাতের গুরুত্ব।

 

১৫ ই শাবান হল মানবজাতির শেষ ত্রাণকর্তা হযরত ইমাম মাহদী (আ.)’র পবিত্র জন্মদিন। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের ১১ তম সদস্য ইমাম হযরত ইমাম হাসান আসকারী (আ.)’র পুত্র হিসেবে তাঁর জন্ম হয়েছিল ২৫৫ হিজরিতে ইরাকের (বর্তমান রাজধানী বাগদাদের উত্তরে) পবিত্র সামেরা শহরে। তাঁর মায়ের নাম ছিল নার্গিস। এবং তিনি আল্লাহর আদেশে এক পর্যায়ে অদৃশ্য হয়ে যান। তাঁর অদৃশ্য থাকার সময়ও দুই ভাগে বিভক্ত। স্বল্পকালীন সময়ের জন্য অদৃশ্য হওয়া এবং দীর্ঘমেয়াদে অদৃশ্য থাকা। দীর্ঘ মেয়াদে অদৃশ্য থাকার পর উপযুক্ত সময়ে তিনি আবার আবির্ভূত হবেন এবং সব ধরনের জুলুম ও বৈষম্যের অবসান ঘাটিয়ে বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার ও ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন।

 

মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনের সুরা কাসাসের পঞ্চম আয়াতে বলেছেন:
“এবং আমি ইচ্ছা করলাম যে, যাদের পৃথিবীতে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল , তাদের প্রতি অনুগ্রহ করতে, তাদের নেতৃত্ব দান করতে এবং তাদেরকে পৃথিবীর শাসন-ক্ষমতার উত্তরাধিকারী করতে।”
এই আয়াত অনুযায়ী এমন এক যুগ আসবে যখন বিশ্বব্যাপী ন্যায়পরায়ন ব্যক্তিদের শাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। আর ওই ন্যায়পরায়ন ব্যক্তিদেরই নেতা হবেন হযরত ইমাম মাহদী (আ.)। তিনি পুনপ্রতিষ্ঠিত করবেন মানুষের প্রকৃত মর্যাদা।
শিয়া ও সুন্নি সূত্রগুলোতে প্রসিদ্ধ এক বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম মাহদী (আ.)’র যুগে মানবজাতি অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও কল্যাণ অর্জন করবে।
মহানবী (সা.) বলেছেন : “মাহ্দীর যুগে আমার উম্মত এমন নেয়ামত লাভ করবে যে, তারা পূর্বে কখনই তা লাভ করে নি।”
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর যুগে মানব সমাজ প্রথমে দারিদ্র্যমুক্ত ও অভাবমুক্ত একটি সমাজে পরিণত হবে। ”পৃথিবীর সমস্ত বিধ্বস্ত ও বিরাণ এলাকা তাঁর মাধ্যমে আবাদ হয়ে যাবে।” (বিহার, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ১৯১)

 

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর যুগে জ্ঞান-বিজ্ঞানের এতো উন্নতি ঘটবে যে সে সময় মানুষ এক ছায়াপথের গ্রহ থেকে ভিন্ন ছায়াপথে ভ্রমণ করবে। ইমাম সাদিক (আ.) বলেছেন : “জ্ঞান সাতাশটি অক্ষর (শাখা-প্রশাখা) সমতুল্য। সকল নবী-রাসূল সম্মিলিতভাবে যা এনেছেন তা আসলে জ্ঞানের দু’টি অক্ষরস্বরূপ। আর যখন মাহদী আবির্ভূত হবে ও কিয়াম করবে তখন সে জ্ঞানের অবশিষ্ট পঁচিশটি অক্ষর বের করে তা মানব জাতির মধ্যে প্রচার করবে; ” (বিহার, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ৩৬৬)
ইমাম সাদিক (আ.) আরো বলেছেন :
“আল কায়েমের যুগে প্রাচ্যে বসবাসরত মুমিন ব্যক্তি পাশ্চাত্যে অবস্থানকারী নিজ ভাইকে দেখতে পাবে এবং যে ব্যক্তি পাশ্চাত্যে আছে সেও প্রাচ্যে বসবাসরত তার ভাইকে দেখতে পাবে।” (বিহার, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ৩৯১)
ইমাম সাদিক (আ.) আরো বলেছেন :
“যখন আল কায়েম আবির্ভূত হয়ে বিপ্লব করবে তখন মহান আল্লাহ্ আমাদের অনুসারীদের চোখ ও কান এতটা শক্তিশালী করে দেবেন যে, তাদের ও ইমামের মাঝে কোন মধ্যবর্তী মাধ্যম ও দূত বিদ্যমান থাকবে না। এটা এমনভাবে হবে যে, ইমাম যখনই তাদের সাথে কথা বলবে, তারা তা শুনতে পাবে এবং তাঁকে দেখতেও পাবে। অথচ ইমাম তাঁর নিজ জায়গাতেই থাকবে।” (বিহার, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ২৩৬)
বর্ণিত হয়েছে যে, আলোর একটি স্তম্ভ ভূ-পৃষ্ঠ থেকে আকাশ পর্যন্ত তাঁর জন্য স্থাপন করা হবে এবং তিনি তার মধ্যে বান্দাদের যাবতীয় কাজ প্রত্যক্ষ করবেন। ইমাম বাকির (আ.) থেকে বর্ণিত হয়েছে :
“আমি যেন আল কায়েমের সঙ্গী-সাথীদেরকে দেখতে পাচ্ছি যারা প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। সবকিছুই তাদের নিয়ন্ত্রণে এবং তাদের আজ্ঞাবহ, এমনকি ভূ-পৃষ্ঠের হিংস্র পশুকুল এবং আকাশের শিকারি পাখীরাও তাদের সন্তুষ্টি অর্জন করার চেষ্টা করবে। সবকিছুই, এমনকি ভূ-পৃষ্ঠের এক অঞ্চল আরেক অঞ্চলের ওপর গর্ব করে বলবে : আজ আল কায়েমের একজন সঙ্গী আমার ওপর পদধূলি দিয়েছেন এবং আমাকে অতিক্রম করেছেন।” (বিহার, ৫২তম খণ্ড, পৃ. ৩২৭)
ইমাম বাকির (আ.) থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে :
“যখন আমাদের কায়েম আবির্ভূত হবে ও বিপ্লব করবে তখন পৃথিবীর যে কোন অঞ্চলে যে ব্যক্তিকেই প্রতিনিধি হিসাবে প্রেরণ করবে তখন তাকে বলবে : তোমার হাতের তালুতেই তোমার কর্মসূচী ও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা আছে। যখনই তোমার ক্ষেত্রে কোন ব্যাপার ঘটবে যা তুমি বুঝ নি এবং যার হিকমতও তোমার জানা নেই তখন তুমি তোমার হাতের তালুর দিকে তাকাবে এবং সেখানে যে নির্দেশনা বিদ্যমান আছে তদনুযায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।” (নুমানী প্রণীত গাইবাত, পৃ. ৩১৯)

ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হুকুমত সমগ্র বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত হবে। যার ফলে এমন কোন জনপদ থাকবে না যেখানে মহান আল্লাহর একত্ব এবং মহানবী (সা.)-এর রিসালাতের সাক্ষ্য দেয়া হবে না।

 

ইবনে আরাবী, শারানী এবং অন্যান্য ব্যক্তির মত কতিপয় সুন্নি আলেমও বিশ্বাস করেন যে ইমাম মুহম্মদ ইবনে হাসান আল-আসকারীই হলেন হযরত মাহদী (আ.) । তারা তাঁর নাম ও নসব (বংশ পরিচিতি) স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন এবং তাঁকে তারা জীবিত ও গায়েব বলে বিশ্বাস করেন।

 

হাদীস অনুযায়ী আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার পরপরই পবিত্র মক্কা নগরী থেকে হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের বিপ্লব ও আন্দোলন শুরু হবে। এ সময় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রোমানদের তথা পাশ্চাত্যের সাথে তুর্কী- (যারা সম্ভবত চীনা বা মঙ্গোল জাতি বর্তমান তুরস্ক নয়) জাতি ও তাদের সমর্থকদের (রুশ) একটি ভয়ঙ্কর যুদ্ধ সংঘটিত হবে- যা বিশ্বযুদ্ধে রূপান্তরিত হবে। কিন্তু আঞ্চলিক পর্যায়ে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর সমর্থক দু’টি সরকার ও প্রশাসন ইরান ও ইয়েমেনে প্রতিষ্ঠিত হবে। মাহ্দী (আ.)-এর ইরানী সঙ্গী-সাথীরা তাঁর আবির্ভাবের বেশ কিছুকাল আগে নিজেদের একটি সরকার গঠন করে একটি দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বেন। অবশেষে তারা ঐ যুদ্ধে জয়ী হবেন।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের সবচেয়ে বড় নিদর্শন হচ্ছে আসমানী আহ্বান বা ধ্বনি যা তাঁর নামে ২৩ রমযানে শোনা যাবে।
এ সব বর্ণনা অনুযায়ী ওই আসমানী আহ্বান শোনা যাওয়ার পরই ইমাম মাহ্দী (আ.) গোপনে তাঁর কতিপয় সঙ্গী ও সমর্থকের সাথে যোগাযোগ করবেন। তখন তাঁর ব্যাপারে সারা বিশ্বে আলোচনা হতে থাকবে এবং তাঁর নাম সবার মুখে মুখে উচ্চারিত হবে। তাঁর প্রতি ভালোবাসা সবার হৃদয়ে আসন লাভ করবে।
কিন্তু মাহদীর দুশমনরা তাঁর আবির্ভাবের ব্যাপারে খুব ভীত হয়ে পড়বে এবং এ কারণে তারা তাঁকে গ্রেফতারের চেষ্টা করবে। জনগণের মাঝে ছড়িয়ে যাবে যে, তিনি মদীনায় অবস্থান করছেন।
বিদেশী সামরিক বাহিনী অথবা হিজায সরকার সে দেশের অভ্যন্তরীণ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং সরকারের সাথে গোত্রগুলোর দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনের জন্য সিরিয়াস্থ সুফিয়ানী সেনাবাহিনীর সাহায্য চাইবে।

 

দশই মুহররম আশুরার দিন ভোরে ইমাম মাহ্দী(আ.) সমগ্র বিশ্ববাসীর উদ্দেশে বিভিন্ন ভাষায় তাঁর বাণী প্রদান করে বিশ্বের জাতিগুলোকে আহ্বান জানাবেন যাতে করে তারা তাঁকে সাহায্য করে। তিনি বলবেন, যে অলৌকিক ঘটনার ওয়াদা তাঁর প্রপিতামহ হযরত মুহাম্মদ (সা.) দিয়েছিলেন তা ঘটা পর্যন্ত তিনি পবিত্র মক্কায় থাকবেন। আর উক্ত অলৌকিক ঘটনা হবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আন্দোলন দমনের উদ্দেশ্যে পবিত্র মক্কার দিকে অগ্রসরমান সুফিয়ানীর পাঠানো বাহিনীর ভূ-গর্ভে প্রোথিত হওয়া। এ ঘোষণার অল্প কিছুক্ষণ পরই মক্কাগামী সুফিয়ানী বাহিনী ধ্বংস হয়ে যাবে।
এরপর ইমাম মাহদী (আ.) ১০ হাজারের-ও বেশি সেনা নিয়ে মক্কা থেকে মদীনা অভিমুখে রওনা হবেন এবং শত্রু বাহিনীর সাথে যুদ্ধের পর সেখানে অবস্থান গ্রহণ এবং মদীনা শত্রুমুক্ত করবেন। এরপর তিনি মক্কা ও মদীনা মুক্ত করার মাধ্যমে হিজায বিজয় এবং সমগ্র আরব উপদ্বীপের ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করবেন।
কয়েকটি বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, ইমাম মাহ্দী (আ.) হিজায বিজয়ের পর দক্ষিণ ইরান অভিমুখে রওনা হবেন এবং সেখানে খোরাসানী ও শুআইব ইবনে সালেহ’র নেতৃত্বাধীন ইরানী সেনাবাহিনী ও সেদেশের জনগণের সঙ্গে মিলিত হবেন। তারা তাঁর আনুগত্যের শপথ নেবেন। তিনি তাদের সহায়তায় বসরায় শত্রুবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এক সুস্পষ্ট ও বিরাট বিজয় লাভ করবেন।
এরপর ইমাম মাহ্দী (আ.) ইরাকে যাবেন এবং সেখানকার পরিবেশ পরিস্থিতি উন্নত করবেন। তিনি সেদেশে সুফিয়ানী বাহিনীর বাদবাকি সেনা এবং অন্যান্য দলের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়ে তাদেরকে পরাজিত ও হত্যা করবেন।
এরপর তিনি ইরাককে তাঁর প্রশাসনের কেন্দ্র এবং কুফা নগরীকে রাজধানী হিসাবে মনোনীত করবেন। আর এভাবে ইয়েমেন, হিজায, ইরাক এবং পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলো পুরোপুরি তাঁর শাসনাধীনে চলে আসবে।
বর্ণনাগুলো থেকে জানা যায়, ইরাক বিজয়ের পর ইমাম মাহ্দী (আ.) সর্বপ্রথম যে যুদ্ধের উদ্যোগ নেবেন তা হবে তুর্কীদের সাথে তাঁর যুদ্ধ। হাদীসে এসেছে,
“প্রথম যে সেনাদল তিনি গঠন করবেন তা তিনি তুর্কদের বিরুদ্ধে পাঠাবেন। ওই সেনাদল তাদেরকে পরাজিত করবে।” বাহ্যত তুর্কী বলতে চীনা বা রুশদেরকেও বোঝানো হতে পারে যারা রোমানদের (পাশ্চাত্যের) সাথে যুদ্ধের পর দুর্বল হয়ে পড়বে।
ইমাম মাহ্দী (আ.) সেনাদল গড়ার পর তাঁর বিশাল সেনাবাহিনীকে কুদসে তথা জেরুজালেমে পাঠাবেন।
সুফিয়ানি ও তার মিত্র শক্তিগুলোর সেনাবাহিনী মোতায়েন করার পর ইমাম মাহ্দী (আ.) ও তাঁর সেনাবাহিনীর সঙ্গে তারা বড় ধরনের যুদ্ধে করবে। এ সময় সুফিয়ানী, ইহুদী ও রোমান সেনাবাহিনী মহান আল্লাহর ক্রোধে পতিত হবে এবং তারা মুসলমানদের হাতে এমনভাবে নিহত হতে থাকবে যে, তাদের মধ্য থেকে কোন ব্যক্তি যদি কোন পাথরখণ্ডের পেছনেও লুকায় তখন ঐ পাথর চিৎকার করে বলবে : “হে মুসলমান! এখানে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। তাকে হত্যা করো।”
এ সময় মহান আল্লাহর সাহায্য ইমাম মাহ্দী (আ.) ও মুসলমানদের কাছে আসবে এবং তাঁরা বিজয়ী বেশে আল কুদসে প্রবেশ করবেন।
খ্রিস্টান পাশ্চাত্য আকস্মিকভাবে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর হাতে ইহুদী ও তাদের পৃষ্ঠপোষক শক্তিগুলোর পরাজয় বরণের কথা জানতে পারবে। ফলে তাদের ক্রোধের আগুন জ্বলে উঠবে এবং তারা ইমাম মাহ্দীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করবে।
কিন্তু আকস্মিকভাবে হযরত ঈসা (আ.) আকাশ থেকে পবিত্র কুদস তথা জেরুজালেমে অবস্থিত মুসলমানদের প্রথম কিবলার মসজিদে অবতরণ করবেন এবং তিনি সমগ্র বিশ্ববাসী, বিশেষ করে খ্রিস্টানদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেবেন।
হযরত ঈসা মসীহ্ (আ.)-এর অবতরণ হবে বিশ্ববাসীর জন্য নিদর্শন এবং মুসলমান ও খ্রিস্টানদের জন্য আনন্দের কারণ।
সম্ভবত হযরত ঈসা (আ.), ইমাম মাহ্দী ও পাশ্চাত্যের মাঝে মধ্যস্থতা করবেন এবং এ কারণে দু’পক্ষের মধ্যে সাত বছর মেয়াদী একটি সন্ধিচুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।
মাস্তূর বিন গাইলান নামীয় আবদুল কাইস গোত্রের এক ব্যক্তি তখন জিজ্ঞাসা করেছিল :

“হে রাসূলাল্লাহ্! ঐ দিন জনগণের তথা মুসলমানদের নেতা কে হবেন?” তিনি বলেছিলেন : “আমার বংশধর মাহ্দী। যাকে দেখে মনে হবে তাঁর বয়স ৪০ বছর। তাঁর মুখমণ্ডল উজ্জ্বল তারকার মতো জ্বলজ্বল করতে থাকবে। তাঁর ডান গালের ওপর একটি তিল থাকবে।….”
হাদীস বা ইসলামী বর্ণনা অনুযায়ী পাশ্চাত্য দু’বছর পরে সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করবে। সম্ভবত ঈসা (আ.)’র মাধ্যমে পাশ্চাত্যের জাতিগুলোর মাঝে গণজাগরণ ও সংহতির জোয়ার সৃষ্টির ফলেই তারা ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে এ চুক্তি ভঙ্গ করবে। পশ্চিমাদের অনেকেই ইসলাম ধর্ম গ্রহণ এবং ইমাম মাহ্দী (আ.)- কে সাহায্য ও সমর্থন করবে।
এ কারণেই রোমানরা দশ লাখ সেনা নিয়ে সিরিয়া ও ফিলিস্তিনে হঠাৎ হামলা চালাবে। হাদীসে এসেছে :

 

“তখন পাশ্চাত্য তোমাদের সাথে চুক্তি ভঙ্গ করে ৮০টি সেনাদল নিয়ে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। তাদের প্রত্যেক সেনাদলে ১২ হাজার সেনা থাকবে (অর্থাৎ তাদের মোট সেনা সংখ্যা হবে নয় লাখ ৬০ হাজার)”। আর মুসলিম বাহিনী তাদের মোকাবিলা করবে এবং হযরত ঈসা (আ.) ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর নীতির আলোকেই তাঁর নীতি ঘোষণা করবেন এবং তিনি ইমাম মাহ্দীর পেছনে বায়তুল মুকাদ্দাসে নামায আদায় করবেন।

এ মহাযুদ্ধে রোমানরা শোচনীয়ভাবে হেরে যাবে এবং ইমাম মাহ্দীর সামনে খ্রিস্টান ইউরোপ ও পাশ্চাত্য বিজয়ের পথ খুলে যাবে। আর অনেক জাতি বিপ্লবের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশে ইমাম মাহ্দী ও হযরত ঈসা (আ.)-এর বিরোধী সরকারগুলোর পতন ঘটাবে এবং ইমাম মাহ্দীর সমর্থক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করবে।
ইমাম মাহ্দী (আ.)’র হাতে সমগ্র পাশ্চাত্য বিজয় এবং তা তাঁর শাসনাধীনে চলে আসার পর বেশিরভাগ পশ্চিমারা ইসলাম গ্রহণ করবে। এ সময় হযরত ঈসা (আ.) ইন্তেকাল করবেন। মাহ্দী (আ.) ও মুসলমানগণ তাঁর জানাযার নামায পড়বেন।
আরো বর্ণিত হয়েছে যে, ইরান থেকে ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাবের সূত্রপাত হবে। হাদিসে এসেছে:

 

“কোম থেকে এক ব্যক্তি উত্থিত হবে এবং জনগণকে (ইরানী জাতি) সত্যের দিকে আহ্বান করবে। যে দলটি তার চারপাশে জড়ো হবে তাদের হৃদয় ইস্পাত-কঠিন দৃঢ় হবে। তারা এতটা অক্লান্ত ও অকুতোভয় হবে যে, যুদ্ধের প্রচণ্ড চাপও তাদের ভীত-সন্ত্রস্ত করবে না; তারা যুদ্ধে ক্লান্ত হবে না। তারা সব সময় মহান আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে।”

তারা (ইরানী জাতি) তাদের অভ্যুত্থান এবং বিপ্লব সফল করার পর তাদের শত্রুদের (পরাশক্তিসমূহের) কাছে অনুরোধ করবে যে, তারা যেন তাদের সার্বিক কর্মকাণ্ডে হস্তক্ষেপ না করে। কিন্তু তারা এ ব্যাপারে জবরদস্তি করবে।
“তারা তাদের অধিকার দাবি করবে কিন্তু তাদেরকে তা দেয়া হবে না। তারা পুনরায় তা চাইবে। আবারও তাদের অধিকার দেয়া হবে না। তারা এ অবস্থা দেখে কাঁধে অস্ত্র তুলে নেবে এবং তাদের দাবি বাস্তবায়িত না হওয়া পর্যন্ত তাদের সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। (অবশেষে তাদের অধিকার দেয়া হবে) কিন্তু এবার তারা তা গ্রহণ করবে না। অবশেষে তারা রুখে দাঁড়াবে এবং তোমাদের অধিপতির (অর্থাৎ ইমাম মাহ্দীর) হাতে বিপ্লবের পতাকা অর্পণ করা পর্যন্ত সংগ্রাম অব্যাহত রাখবে। তাদের নিহত ব্যক্তিরা হবে সত্যের পথে শহীদ।”
বিভিন্ন বর্ণনা অনুসারে অবশেষে তারা তাদের দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধে বিজয়ী হবে এবং যে দু’ব্যক্তির ওয়াদা দেয়া হয়েছে তারা তাদের মাঝে আবির্ভূত হবেন। এ দু’জনের একজন ‘খোরাসানী’ যিনি ফকীহ্ ও মারজা অথবা রাজনৈতিক নেতা হিসাবে এবং অপরজন শুআইব ইবনে সালিহ্ যিনি হবেন শ্যামলা বর্ণের চেহারা ও স্বল্প দাঁড়িবিশিষ্ট ও রাই অঞ্চলের অধিবাসী তিনি প্রধান সেনাপতি হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন।
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর কাছে এ দু’ব্যক্তি ইসলামের পতাকা অর্পণ করে তাঁদের সর্বশক্তি নিয়ে তাঁর আন্দোলনে অংশগ্রহণ করবেন। আর শুআইব ইবনে সালিহ্ ইমামের সেনাবাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত হবেন।
মহান আল্লাহ হযরত ইমাম মাহদী (আ.)’র আবির্ভাব ত্বরান্বিত করুন এবং আমাদেরকে তাঁর অনুসারী হওয়ার মত যোগ্যতা দান করুন। সবাইকে আরো একবার শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে শেষ করছি আজকের এই বিশেষ আলোচনা। #

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.