শিশুদের আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার উপায়

শিশুদেরকে আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তোলা আমাদের সকলেরই দায়িত্ব। শিশুর স্বাস্থ্য, মেধা, শক্তিমত্তা, দক্ষতা, মানসিক সন্তুষ্টি এবং অপরের সাথে মধুর সম্পর্ক গড়ে তোলার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাস একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। শিশুকে আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভরশীল রূপে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে আসা যায়। নিম্নে বর্ণিত ৬টি উপায়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে সহায়তা হতে পারে।

১. মানসিক প্রশান্তি

আপনার শিশু তখনই নিরাপদ এবং সন্তুষ্টবোধ করবে যখন তারা কোন রকম চাপ বা সমালোচনার মুখোমুখি হবে না। সকল প্রকার ঝামেলা থেকে তারা নিজেদেরকে স্বাধীন ভাবতে পারবে।

পিতা-মাতা অনেক সময় চিন্তা-ভাবনা না করেই শিশুদেরকে এমন সব কড়া কথা বলেন যা শুনতে শিশুরা অভ্যস্ত নয়। এই ধরনের মারাত্মক কটু কথা বা ধমক শিশুদের মনে মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। মা-বাবার কাছে যা শুনে তা নিজেরাই বন্ধু-বান্ধব ও পরিচিত মহলে ব্যবহারের প্রয়াস পায়।

অনেক পিতা-মাতাই প্রশ্ন করেন, শিশুদের মাঝে হ্যাঁ সূচক বা সম্মতিসূচক অনুভূমি কিভাবে বিকশিত করা যায়? অনেক শিশুর মাঝে প্রায়শঃই না বোধক অভিব্যক্তি পরিলক্ষিত হয়। যেমন ওরা বলে : ‘আমি এটা করতে পারি না’, ‘আমি মোটা’, ‘আমি কুৎসিত’ বা ‘আমি দুষ্ট’ প্রভৃতি। শিশুদের এই নেতিবাচক বা পরিহার করার মনোবৃত্তিকে কি করে গ্রহণ মনোবৃত্তিতে রূপ দেবেন? অনেক পিতা-মাতাই এই সমস্যার সম্মুখীন।

প্রথমেই আপনার শিশুকে ঘৃণ্য বা খারাপ বিষয় আর প্রশংসনীয় ও উত্তম বিষয়ের মধ্যে কি পার্থক্য তা বুঝিয়ে দিন।

শিশুকে সহজ এবং অর্থবোধক ভাষায় আদেশ বা নিষেধ করুন। প্রতিদিন ভালো এবং প্রয়োজনীয় বিষয়ের প্রতি শিশুর দৃষ্টি আকর্ষণ করুন। তাদের ভালো কাজের বা আচরণের প্রশংসা করুন। আপনার শিশুর সামনে কোন লোককে মন্দ কিছু বলবেন না। আপনার আচরণ দেখে আপনার শিশু শিখবে। প্রতিবেশী, সেবিকা, দাইমা এবং আত্মীয়-স্বজনকেও বলে দিন শিশুর সাথে অনুরূপ আচরণ করতে।

আপনার রেফ্রিজারেটরের দরজায় অন্তত এ কথা আপনি লিখে রাখতে পারেন : ‘কটু কথা মনে কষ্ট দেয়। অনুগ্রহ করে এ বাড়িতে কাউকে কষ্ট দিও না।’

ঘৃণা বা অবজ্ঞাপূর্ণ কথাকে প্রশংসনীয় কথা দিয়ে সংশোধন করুন। যেমন আপনার ছেলে যদি বলে : ‘আমার ফুটবল কোচ একজন বোকা।’ তাহলে তাকে আপনি কথাটা এভাবে বলতে বলুন : ‘আমি কোচকে পছন্দ করি, কিন্তু এখনো ভালো বল মারতে শিখিনি বলে কোচের প্রতি মনটা খারাপ হয়ে আছে।’

শিশুর সাথে সৎ এবং গ্রহণযোগ্য আলাপ করুন। শিশুর কোন আচরণে এমন কথা বলবেন না : ‘তুমি কখনো চুপ থাকতে পার না, সবকিছু নিয়ে সব সময় তুমি তোমার মতই দিয়ে যাচ্ছ।’ বরং আপনি বলুন : ‘তুমি আলাপ-আলোচনায় আগ্রহী দেখে আমি খুব খুশি। তোমার মতামত থেকে লোকে অনেক কিছু শিখতে পারবে। তবে এটা কি সম্ভব নয় যে, তুমিও মাঝে মাঝে অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দাও এবং তাদের কাছ থেকে শেখে?’

২. আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজ করার অনুভূতি জাগ্রত করা

কোন কিছু করতে সক্ষম এই ধরনের অনুভূতি শিশুর মনোবল বৃদ্ধি করে। শিশু যখন জানতে পারে যে, সে মেধাবী এবং বিভিন্ন প্রকার কাজ করতে সক্ষম তখন সে বেশ আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠে। নিজের সক্ষমতা সম্পর্কে সচেতনতা শিশুকে কাজের প্রতি উৎসাহী করে তোলে।

শিশুকে সংশোধনের আগে, কিছু বলার আগে নিজেকে প্রশ্ন করুন : ‘কিভাবে আমি কথাটা বলব যাতে শিশু তা খারাপভাবে না নেয়?’

শিশুকে সমালোচনা করুন। শিশুর প্রতি ঘৃণা বা অবজ্ঞার ভাব দেখাবেন না। শিশুকে কোন নিয়ম-কানুন শেখানোর আগে কেন সেই নিয়ম-কানুন গুরুত্বপূর্ণ তা শিশুকে বুঝিয়ে দিন। যেমন, একথা বলবেন না : ‘তুমি একটা বোকা, তাই এটা পারছ না। কেন তুমি ভালো পার না।’ এভাবে বলে শিশুর প্রতি আপনার হতাশা প্রকাশ করবেন না। এতে শিশু আরো ভড়কে যাবে। বরং ভুলটা তাকে বুঝিয়ে দিন যাতে ভবিষ্যতে তার পুনাবৃত্তি না হয়।

আপনার শিশুর ভালো কাজকে অন্যের কাছেও প্রচার করুন। এতে শিশুর উৎসাহ বাড়বে এবং ভবিষ্যতে আরো ভালো ভালো কাজ করার ইচ্ছা তার মাঝে জাগ্রত হবে।

পারিবারিক পবিবেশে আপনার শিশুর মাঝে দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলুন। এ ব্যাপারে শিশু ছোট না বড় তা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না। শিশু পরিবারে অন্যের কাজে সাহায্য করলে নিজের আত্মবিশ্বাসের ওপর আস্থাশীল হয়ে ওঠে। পরিবারের ছোটখাট অনেক কাজে শিশুরা সাহায্য করতে পারে। যেমন খেলনা গুছিয়ে রাখা, মুরগির খাবারের পাত্রে পানি দেয়া প্রভৃতি। একটু বয়সে বড় শিশুরা আরো বেশি কাজ করতে পারে। এ সকল কাজ ইচ্ছে করলে পিতা-মাতা নিজে বা চাকর-বাকর দিয়েও করানো যায়। কিন্তু শিশুদেরকে দিয়ে এ ধরনের কাজ করার অভ্যাস গড়ে উঠলে শ্রমের মর্যাদা সম্পর্কে তারা জ্ঞান লাভ করতে পারে, শিশুদের মাঝে দায়িত্বশীলতা গড়ে ওঠে এবং তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়তে থাকে। শিশু যদি বুঝতে পারে যে, পরিবারে তার কাজেরও গুরুত্ব রয়েছে, সেও অন্যকে কাজে সাহায্য করতে পারে, তাহলে তার মনোবল বৃদ্ধি পাবে এবং সে আত্মপ্রত্যায়ী ও সাহসী হয়ে উঠবে।

৩. ব্যক্তিগত যোগ্যতা এবং দক্ষতা

শিশুরা কোন কাজে বেশ চটপট এবং আশাবাদী থাকে। তবে স্বাধীনভাবে কোন কাজ করার মতো যোগ্যতা ও দক্ষতা অর্জনের জন্য মা-বাবার সাহায্য প্রয়োজন।

আপনার শিশুর জীবনের লক্ষ্য কী তা আপনি তাকে বুঝিয়ে দিন। শিশুর মাঝে আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করার জন্য এটি খুবই দরকার। ছোটবেলা থেকেই শিশু যে বিষয়ে আকর্ষণ বোধ করে বা আগ্রহ দেখায় সেই বিষয়কে কেন্দ্র করেই তার ভবিষ্যৎ জীবনের লক্ষ্য গড়ে ওঠে।

এ লক্ষ্য নির্ধারণে কয়েকটি প্রশ্ন বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।

(ক) আপনার শিশুর কোন দিকটি বেশি শক্তিশালী এবং তার বিশেষ কী দক্ষতা রয়েছে?

শিশুর সামনে যতই সুযোগ এবং কাজের পরিবেশ সৃষ্টি হবে ততই সে বুঝতে পারবে কোন কাজে সে ভালো করতে পারবে।

(খ) কি জিনিস আপনার শিশুর মনোযোগ কেড়ে নেয়?

লক্ষ্য করুন, কোন কাজের প্রতি শিশু আত্মনিমগ্ন হয়ে আছে- যা থেকে অন্য কোন জিনিস বা বিষয় তার মনোযোগ ফেরাতে পারে না। খেয়াল করুন লাইব্রেরিতে কোন বই সে পছন্দ করে, কিংবা কোন ধরনের কর্মকাণ্ডে সে বেশি খুশি হয়ে থাকে।

(গ) কোন জিনিসের প্রতি শিশু আন্তরিকভাবে আগ্রহান্বিত?

যে জিনিসের প্রতি শিশুর আন্তরিক ভালোবাসা দেখা যায় সেটা অর্জন করার জন্যে সে বেশি সচেষ্ট হয়। সে যদি খেলাধুলা ভালোবাসে তাহলে অতীতের নামকরা খেলোয়াড়দের গল্প পড়তে সে ভালোবাসবে, বর্তমানে এতে যারা কৃতিত্ব অর্জন করছে তাদের সাথে দেখা করবে এবং খেলাধুলা বিষয়ক পত্র-পত্রিকা পাঠ করবে।

(ঘ) আপনার শিশুকে আপনি কী কী সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন?

আপনার যে শিশু প্রাইমারি স্কুলে যায় তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়াতে নিয়ে যান। এতে তার মধ্যে উচ্চশিক্ষা লাভের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার আগ্রহ জন্মাবে। এ ক্ষেত্রে আপনার উৎসাহ তাকে সাহায্য করবে।

শিশুরা মনে করে তাদের জীবন যাপনে নিজেদের স্বাধীনতা খুব কম। যা তাদের জন্য তৈরি হয় তাই তাদের খেতে হয়। মাতা-পিতা যেখানে নিয়ে যায় সেখানেই তাদের যেতে হয়। শিক্ষক বা সেবিকারা যা যা করতে বলে তাই তাদের করতে হয়। এই ধরনের চিন্তা শিশুর মনকে সংকুচিত করে ফেলে। এক্ষেত্রে শিশুদেরকে নিজেদের পছন্দের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত যাতে তারা বুঝতে পারে তারা স্বাধীনভাবেই জীবন যাপন করছে। তবে এই স্বাধীনতার মধ্যেও মাতা-পিতা সুকৌশলে শিশুদের পথনির্দেশনা দিতে পারেন। তাদেরকে বুঝাতে পারেন কোনটা ভালো কোনটা খারাপ।

৪. বন্ধুত্ব গড়ে তোলার দক্ষতা

আপনার শিশুর মানসিক বিকাশে আপনিই শুধু নন, অন্যরাও এ ব্যাপারে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে। অন্যেরা কি বলছে বা করছে তার প্রতি শিশু বেশি আকৃষ্ট হয়। কারা তাকে গ্রহণ করছে কিংবা কারা তাকে বর্জন করছে এ ব্যাপারটা শিশুর মনে রেখাপাত করে। যে শিশুর নিজের সম্পর্কে ভালো ধারণা রয়েছে সে অপরকেও পছন্দ করতে চায়। অপরের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে চায়। যে শিশু নিজের সম্পর্কে হতাশাগ্রস্ত সে মনে করে অন্য শিশুরা তাকে পছন্দ করে না। সেক্ষেত্রে অন্যদের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা সে পরিত্যাগ করবে। তাই যেটা বেশি প্রয়োজন সেটা হলো শিশুদের মাঝে আত্মবিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে। তাদের মনে আশার সঞ্চার করতে হবে।

বন্ধুত্ব কী এবং তার প্রয়োজনীয়তা কতখানি তা শিশুকে শিখিয়ে দিন। সামাজিক সম্পর্ক খুবই প্রয়োজনীয় জিনিস। কারণ, সমাজে বাস করতে হলে পারস্পরিক সম্পর্ক ও মত বিনিময়ের প্রয়োজন রয়েছে। দলবদ্ধ কোন কাজে অংশগ্রহণ করে শিশুরা নিজেদের ব্যক্তিগত আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের ইচ্ছা পোষণ করে। এক্ষেত্রে নিজের স্বকীয়তা ফুটিয়ে তোলার জন্য আপনার শিশুকে ব্যক্তিত্বশীল হতে হবে। এ ব্যাপারে আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।

আপনার শিশুকে অপরকে সহ্য করার এবং সহমর্মিতার শিক্ষা দান করুন। অপরের সাথে বন্ধুত্বের ব্যাপারে শিশুর কী অনুভূতি তা শিশুর সাথে কথা বলে জেনে নিন এবং সেভাবেই তাকে পরিচালিত করুন।

৫. শিশুর মনের প্রসারতা বাড়াতে সাহায্য করুন

কোন শিশুই সাধারণত নিজেকে অযোগ্য ভাবতে চায় না। তাই যে শিশু নিজের সম্পর্কে ভালো ধারণা পোষণ করে সে ভালো আচরণ দেখাবার প্রয়াস পায়। যে শিশু নিজেকে সমস্যা সৃষ্টির মূল মনে করে সে হতাশাগ্রস্ত হয় এবং সচরাচর নানা সমস্যায় আপতিত হয়। তাই একজন ছাত্র নিজের সম্পর্কে যদি সুষ্ঠু ধারণা পোষণ করে, তার নিজের চিন্তা-চেতনার প্রতি আস্থাশীল হয় তাহলে বিদ্যালয়ের কাজ-কর্মেও সে কৃতকার্যতা ও দক্ষতার পরিচয় দিতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার শিশুকে আপনি সাহায্য করতে পারেন তার ব্যক্তিত্ব বিকাশে। তাকে ব্যক্তিত্ব বিকাশের প্রশিক্ষণ দেওয়ার আগে তার আচার-আচরণ খুব গভীরভাবে লক্ষ্য করুন। তার সাথে খোলাখুলি সবকিছু নিয়ে আলাপ করুন। তার নিজের কাজ ও অন্যদের প্রতি তার অনুভূতি সম্পর্কে আপনি জেনে নিন। আপনার সাথে কথোপকথনের ফলে শিশুমনে এ ধারণা সৃষ্টি হবে যে, আপনি তাকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। এতে আপনার শিশুর মনোবল বৃদ্ধি পাবে, আত্মাবশ্বাস বেড়ে যাবে, নিজের ওপর আস্থাশীল হয়ে উঠবে সে।

শিশুদের জন্য মাতা-পিতা উত্তম আদর্শ হতে পারেন। মাতা-পিতার আচার-আচরণ থেকে শিশু শিক্ষা লাভ করে।

আত্মবিশ্বাসের সাথে আপনার নিজের দক্ষতার কথা শিশুকে বলুন। আপনি যখন বলেন : ‘আমি আজ অফিসে খুব ভালো কাজ করেছি’, তখন শিশু আপনার এই কথাটা বেশ গুরুত্বের সাথেই গ্রহণ করবে। সম্ভবত সে পরদিনই এসে আপনাকে জানাবে যে, সে বিদ্যালয়ে খুব ভালো লেখাপড়া করেছে।

শিশুকে আত্মনিয়ন্ত্রণ শিক্ষা দিন। তাকে বুঝতে দিন তার নিজের জীবন যাপনের দৃষ্টিভঙ্গি তাকেই নির্ধারণ করতে হবে। যদি কখনো কোন কঠিন সমস্যায় পড়েন তাহলে আপনার শিশুকে শুনিয়ে বলুন : ‘একটু অপেক্ষা কর। এ সমস্যা তেমন কোন ব্যাপার না। আমি এ সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে বের করবই।’ এতে আপনার শিশু বুঝতে পারবে যে, সমস্যা থাকলেও তার সমাধানের পথও থাকে। সত্যিসত্যিই যদি শিশুরা সেই সমস্যার সমাধান হতে দেখে, তাহলে তার আত্মবিশ্বাস আরো বেড়ে যাবে। বিপদ আপদে সে ধৈর্যশীল হওয়ার শিক্ষা পাবে।

আপনার শিশু শারীরিকভাবে দুর্বল, এ কথা তাকে বুঝতে দেবেন না। তাকে বুঝতে দিন যে, কাজ করার সামর্থ্য তার রয়েছে। সাথে সাথে স্বাস্থ্য সম্পর্কেও তাকে সচেতন করে তুলুন। কিভাবে সুস্থ শরীর গড়ে তুলতে হয় তা শিখিয়ে দিন।

৬. নিরাপত্তাবোধ জাগ্রত করা

অনেক সময় মাতা-পিতার কারণে শিশুরা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। পিতা মনে করতে পারেন মা সন্তানকে প্রশ্রয় দিয়ে মাথায় তুলেছে, কোন শাসন করে না। মাতা-পিতা শিশুকে শাসন করার উদ্দেশ্যে শারীরিকভাবে প্রহার করার নীতি অবলম্বন করেন। এটা কখনো উচিত নয়। কারণ, শিশুরা কখনো বুঝতে পারে না যে, তাদের ভালো করার জন্যই মারধর করা হচ্ছে। মারধরের ফলে কোন সুফল পাওয়া যায় না। বরং শিশু ব্যথা পায় এবং রাগান্বিত হয়ে ওঠে। সে নিজেকে বিপদগ্রস্ত বলে মনে করে। কাজেই খেয়াল রাখতে হবে যে, পরিবারে যেন শিশুদের জন্য একটি সুস্থ ও নিরাপত্তা বিরাজ করে।

শিশুর স্থলে নিজেকে রেখে আপনি ব্যাপারটার মূল্যায়ন করুন। শিশুর শারীরিক নিরাপত্তাহীনতার কথা চিন্তা করুন। নিম্নলিখিতভাবে নিজেকে নিজে প্রশ্ন করুন এবং নিজেই উত্তর দিতে চেষ্টা করুন।

-আমার শিশু কি বাড়িতে নিজেকে নিরাপদ মনে করছে অথবা করছে না? যদি নিরাপদ মনে না করে তাহলে কেন?

-আমাদের বাড়িতে কতটুকু নিরাপত্তার পরিবেশ বিরাজমান?

-আমাদের শিশু কতক্ষণ একাকী সময় কাটায়?

-আমার অবর্তমানে বাড়িতে যদি কোন জরুরি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাহলে আমার শিশু কি সে সময় কী করতে হবে তা জানে? যেমন তাৎক্ষণিকভাবে কী করবে, কোথায় টেলিফোন করবে বা কোথায় যেতে হবে ইত্যাদি সম্পর্কে শিশু কি অবহিত?

-আমার শিশু কি বুঝতে পারে যে, বাড়িতে যাঁরা বড় আছেন তাঁরা ভীতিকর নয়, বরং তার প্রতি দয়ার্দ্র ও স্নেহশীল?

-নিজের বন্ধুরা বাড়িতে বেড়াতে এলে আমার শিশু কি খুশি হয়? গর্ব অনুভব করে?

-ঘরে একা থাকলে (এমনকি মা সাথে থাকলেও) কি শিশু ভয় পায়?

-আমার শিশু কি আমাকে ভয় পায়?

-আমি বিরক্ত বা রাগান্বিত হলে শিশু কি তাতে কষ্ট অনুভব করে? না আমার প্রতিক্রিয়াকে ঠিক মনে করে?

উপরিউক্ত প্রশ্নগুলোর ভিত্তিতে আপনি আপনার শিশুকে সম্যকভাবে বুঝতে পারেন এবং আপনার আর শিশুর মধ্যকার সম্পর্ক মূল্যায়ন করতে পারেন। যতই আপনি আপনার শিশুর অনুভূতি বুঝতে পারবেন ততই তার সাহায্যে আপনি এগিয়ে আসতে পারবেন। শিশু যাতে পারিবারিক পরিবেশকে একটি নিরাপত্তা ও শান্তির নীড় হিসাবে মনে করে, সেজন্য যা করণীয় তা মাতা-পিতা হিসাবে আপনাদেরই করতে হবে। সঠিক এবং বাস্তবসম্মত পদক্ষেপে এগিয়ে যেতে পারলেই আপনার শিশু আত্মবিশ্বাসী ও আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে বেড়ে উঠবে, জীবনে সাফল্য লাভ করতে পারবে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.