হিজাবের গুরুত্ব ও আবশ্যকতা

পবিত্র কুরআনে নারী ও পুরুষের মধ্যে সৎ ও বৈধ যৌন সম্পর্কের উপর অত্যধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে কেনসততা ও ইসলামী আইনের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে কিহিজাব মেনে চললে (শালীন ইসলামী পোশাক) তা কোন নিরাপত্তা দিতে পারে কি?

শহীদ আয়াতুল্লাহ মুর্তাজা মোহাহহারী তাঁর হিজাব প্রসঙ্গ’ গ্রন্থে হিজাব সম্পর্কে এ জাতীয় প্রশ্ন ও উত্তরের অবতারণা করে লিখেছেন : বর্তমান দুনিয়া নারী স্বাধীনতা ও অবাধ যৌন অধিকারের নামে যুব সমাজের চরিত্র ও চেতনাকে মারাত্মকভাবে কলুষিত করেছে। নারী স্বাধীনতা মানুষের প্রতিভা বিকাশে সহায়তার পরিবর্তে তা মানুষের যোগ্যতা ও প্রতিভার অপচয় করে চলেছে। মহিলারা ঘর থেকে বের হয়েছেকিন্তু তাঁরা কোথায় যেতে চায়সিনেমায়সমুদ্র সৈকতেরাস্তার পাশে না নৈশকালীন পার্টিতে। আজকের মহিলারা স্কুলে যোগদান বা কোন গুরুত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ বাদ দিয়ে নারী স্বাধীনতার নামে তাদের গৃহে ধ্বংস ডেকে আনছে। সন্দেহ নেই যেসীমাহীন স্বাধীনতা ও মানবীয় সীমারোখাকে পরিহার করায় যুব সমাজের শিক্ষার সুফল হারিয়ে যাচ্ছে। যুবসামজ তাদের স্কুল ও লেখাপড়া ছেড়ে পালাচ্ছে। যৌন অপরাধ ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছেঅশ্লীল সিনেমা-চলচ্চিত্র জাঁকালো হয়েছেপ্রসাধনী উৎপাদকদের পকেট ভারী হচ্ছে এবং নর্তক-নর্তকীদের মূল্য শতগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তার বিপরীতে পণ্ডিতচিন্তাবিদ ও সমাজ সংস্কারকদের মূল্য হাস পেয়েছে। একজন পণ্ডিত ও একজন নর্তকীর উপস্থিতির প্রতি যুবকদের সাড়া তুলনা করে দেখলেই বুঝা যায় যেএ দুয়ের মধ্যে কে বেশি সাদরে গৃহীত হয়ে থাকে। যেহেতু বর্তমান সমাজ সততা ও আইন-বিধান লঙ্ঘন করে পুরোপুরি ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত হচ্ছেতাহলে বিশ্ব কেন ইসলাম উপস্থাপিত অসাধারণ মানবীয় মূল্যবোধকে অবজ্ঞা করবে?

ইসলাম কেন হিজাবের উপর গুরুত্ব আরোপ করে এবং হিজাবকে মহিলাদের সতীত্বপরিবার ও সমাজের রক্ষাকবচ মনে করেমহিলাদের শালীন পোশাক কি তাদেরকে ঘরের কোনে বসে থাকতে এবং সকল কর্মকাণ্ড ও সামাজিক অনুষ্ঠানাদি থেকে অনুপস্থিত থাকতে বাধ্য  করেহিজাব কি মহিলাদেরকে ঘরে বন্দি করে রাখতে এসেছেইরানে ইসলামী বিপ্লব সংঘটিত হওয়ার পর মুসলিম মহিলাদের জন্য এই হিজাবের প্রশ্নটি সবচেয়ে বেশি সমালোচনা ও অপপ্রচারের শিকার হয়েছে। সমাজের ঐসব লোকই হিজাবের সমালোচনা করে এবং হিজাব সম্পর্কে অপপ্রচারণা চালায় যারা প্রকৃতপক্ষে ইসলাম ও তার লক্ষ্য কী তা জানে না এবং ইসলাম সম্পর্কে ভুল ধারণায় নিমজ্জিত। যদিও তারা জানে যেইসলাম এসেছে মানুষকে মনবতাবিরোধী বন্ধনদাসত্ব ও অধীনতা থেকে মুক্তি দিতে তা সত্ত্বেও তারা ইসলামের বিরোধিতা করে। তারা মানুষের মনে নেতিবাচক ভাবধারা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ইসলামী ধ্যান-ধারণা বিস্তারে বাধা সৃষ্টি করে। এ কারণেই তারা মানুষকে মানবীয় লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে মানুষকে নানাদিকে ব্যস্ত করে রাখেযাতে তারা তাদের অমানবীয়ঔপনিবেশিক ও শোষণমূলক কার্যকলাপ চালিয়ে যেতে পারে। মানুষ যাতে ভুল-নির্ভুলের পার্থক্য করতে না পারে এবং একটি বিকৃত রুচির জীবনযাপন করতে বাধ্য হয় এবং উচ্চতর মানবীয় লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যায় সে জন্য তারা সমাজে অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং মূল্যবোধ পরিবর্তন ও ধ্বংস করে। মানুষ যদি কখনও তার পাশবিক প্রত্যাশা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তাহলে খুব সহজেই তাকে দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দি করা যাবে এবং তার চিন্তাধারাকে বিভ্রান্ত করা যাবে।

এখানে মুসলিম জনসাধারণঅন্যান্য পণ্ডিত ও হিজাব সম্পর্কে ইসলামের বিধানাবলি জানতে আগ্রহী ব্যক্তিবর্গের আরো ভালো অবগতির জন্য একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। এতে সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি উল্লেখ করার সাথে সাথে ইসলাম ও ইসলামী ফেকাহর বিশেষজ্ঞদের মতামত তুলে ধরা হয়েছে। মহিলাদের জন্য ইসলামী শালীন পোশাক সম্পর্কে জানার উদ্দেশ্যে আমরা যে প্রশ্নমালা তৈরি ও বিতরণ করেছিলাম এবং পরবর্তীকালে আমরা যেসব জবাব পেয়েছি এই প্রতিবেদনে তা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এর মধ্যে শহীদ আয়াতুল্লাহ মোহাহহারীর দৃষ্টিভঙ্গিও তুলে ধরা হয়েছে। প্রশ্নমালার যে আটটি প্রশ্ন ছিল হা হলো :

১.         হিজাব শব্দের অর্থ কী?

২.         ফ্যাশন প্রবণতা সম্পর্কে আপনার মতামত কীআপনি কি ফ্যাশন চর্চা করেন?

৩.         আপনার কাছে হিজাবের আকর্ষণ কী?

৪.         হিজাব কি আপনার কর্মতৎপরতা ও কাজে বাধা সৃষ্টি করে?

৫.         একটি সমাজে নৈতিকতার উপর হিজাব কি প্রভাব ফেলে?

৬.         আপনি কি মনে করেন মহিলাদের হিজাব দেশের অর্থনীতির উপরও প্রভাব বিস্তার করে?

৭.         যাজকদের দেহাবৃত করার জন্য খ্রিস্টান চার্চের একটি বিশেষ ধরনের পোশাক রয়েছে। পশ্চিমা সমাজ তার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে। কিন্তু মুসলিম মেয়েরা যখন তাদের স্কুলে হিজাব পরে যায় তখন সব সময় তাদের প্রতি ঠাট্টা-বিদ্রূপ ও হয়রানি করা হয়। আপনি পশ্চিমা সমাজের এই পরস্পর বিরোধী মনোভাবকে বিশ্লেষণ করবেন কি?

৮.         হিজাব সম্পর্কে আপনার আর কোন মন্তব্য আছে কি?

এই জনমত সমীক্ষায় হিজাবের প্রসঙ্গটিকে প্রত্যেকে তাঁর নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষণের চেষ্টা করেছেন।

তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব রসায়ন বিভাগের ছাত্রী পারিভাশ ফারজানেহ ব্যাখ্যা করেছেন, ‘হিজাব’ শব্দের উৎপত্তি আরবি হাজব’ শব্দ থেকে। যার অর্থ আবৃত করা। মুখমণ্ডল আবৃত করাও এর অন্তর্ভুক্ত। শহীদ আয়াতুল্লাহ মোতাহহারী তাঁর গ্রন্থে হিজাব সম্পর্কে লিখেছেন : হিজাবের (আরবিতে) মূল হাজব’-এর অর্থ আবৃত করা। এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআন নারী ও পুরুষকে এক অভিন্ন কর্তব্য নির্ধারণ করে দিয়েছে।

এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা নূরের ৩০ ও ৩১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে : মুমিনদিগকে বলতারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করেএটাই তাদের জন্য উত্তম। তারা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে অবহিত। মুমিন নারীদিগকে বলতারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত করে ও তাদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করেতারা যেন যা সাধারণত প্রকাশ থাকে তা ব্যতীত তাদের আভরণ প্রদর্শন না করেতাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ যেন মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করেতারা যেন তাদের স্বামীপিতাশ্বশুরপুত্রস্বামীর পুত্রভাত্রাভাতুষ্পুত্রভগ্নিপুত্রআপন নারিগণতাদের মালিকানাধীন দাসীপুরুষদের মধ্যে যৌন কামনারহিত পুরুষ এবং নারীদের গোপন অঙ্গ সম্বন্ধে অজ্ঞ বালক ব্যতীত কারও নিকট তাদের আভরণ প্রকাশ না করেতারা যেন তাদের গোপন আভরণ প্রকাশের উদ্দেশ্যে সজোরে পদক্ষেপ না করে। হে মুমিনগণ! তোমরা সকলে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবতন করযাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।

শহীদ অধ্যাপক মোতাহহারী উপরিউক্ত আয়াতগুলো ব্যাখ্যা করতে গিয়ে লিখেছেন : এই আদেশ-নির্দেশের সারাংশ হচ্ছেযৌন কামনা বা উপভোগের লক্ষ্য নিয়ে পুরুষ ও নারীদের পরস্পরের প্রতি চক্ষু উন্মীলিত করা ও স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখা উচিত নয়। আয়াতগুলোতে মহিলাদের জন্য বাধ্যতামূলক করে দেয়া হয়েছে যেঘনিষ্ঠ আত্মীয় নয় (গায়ের মাহরাম) এমনসব লোকের দৃষ্টি থেকে তারা যেন আড়ালে থাকে এবং জাঁকালোভাবে ও দর্শনীয়ভাবে সমাজে চলাফেরা না করে। গায়ের মাহরাম পুরুষদের মধ্যে যৌনোদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারে এমন কোন কাজ কোন অবস্থাতেই মহিলারা করতে পারবে না। কেননামানুষের নাফ্স অত্যন্ত অনুভূতিপ্রবণ। এটা মনে করা ঠিক হবে না যেমানুষের নাফস একটি সীমিত মাত্রায় অনুভূতিপ্রবণ এবং তাই সে শান্ত থাকবে।

স্কুল ছাত্রী নাইয়্যেরাহ ফাইয়্যাজ হিজাবকে একজন মুসলিম মহিলার মাটির শরীরের উপর এক খোদায়ী আবরণ বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর মতে এই হিজাব নারীকে গায়ের মাহরামের পাপপূর্ণ দৃষ্টি থেকে রক্ষা করে।

অনুবাদক ময়েনা নাইফ সুলতানের মতে হিজাব হচ্ছে আল্লাহর হুকুম মান্য করার মাধ্যমে ইসলামের অনুশাসন মেনে চলার ব্যাপারে অঙ্গীকার গ্রহণ করা এবং এটি একটি পরিচয়পত্রও বটে।

একটি ফরাসী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা জাহরা গুইয়ামে সাদামাটাভাবে বলেছেন, ‘হিজাব হচ্ছে নারীর মানবীয় রূপ।’ খানুম ইফফাত রহমানী নামে জনৈকা মহিলা বলেছেন, ‘হিজাব হচ্ছে আল্লাহর হুকুমযার মাধ্যমে সমাজকে নিরাপত্তা দেয়া হয়েছে।’ খানুম তোবা মনসুরী বলেছেন, ‘আবরণের একটি সীমা আছে এবং সমাজের যথেচ্ছ ব্যবহার থেকে মহিলাদেরকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য ইসলাম সেই সীমা রেখা নির্দিষ্ট করে দিয়েছে।

মরহুম আয়াতুল্লা তালেকানীর কন্যা আজম তালেকানী পবিত্র কুরআনের সূরা নূরের ৩০ নম্বর আয়াত তেলাওয়াত করে বলেন, ‘পবিত্র কুরআনে যা উল্লেখ করা হয়েছে তা হলো পোশাক পদ্ধতির একটি সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। হিজাবের অর্থ হচ্ছে পর্দা। আমরা যদি পর্দার ব্যাখ্যা করতে চাইতা হলে আমাদেরকে অতীতের রীতি প্রথার দিকে ফিরে যেতে হবে। তখন পর্দার আড়ালে বসার একটা রেওয়াজ চালু ছিল। অর্থাৎ মহিলারা পর্দার পিছনে বসে কথা বলত এবং কোন পুরুষের সামনে দেখা দিত না। কিন্তু আমরা যা চাই তা সেই পর্দা বা হিজাবের অর্থে নয়। ইসলাম মহিলাদের সামাজিক কর্মকাণ্ডের বিরোধিতা করে না। পবিত্র কুরআনের সূরা আল-আহযাবে আল্লাহ তাআলা মহানবী (সা.)-এর স্ত্রী ও পরিবারের সদস্যগণকে এই বলে নসীহত করেছেন যেতাঁরা যদি কোন পাপকর্ম করেন তাহলে তাঁদেরকে অন্য মানুষের তুলনায় বেশি শাস্তি দেয়া হবে। আবার তাঁরা যদি কোন ভাল কর্ম করেন তাহলে অন্য মানুষের তুলনায় বহুগুণে বেশি পুরস্কার পাবেন। পবিত্র কুরআনে তাঁদেরকে সমাজে যথাযথভাবে কথাবার্তা বলতে বলা হয়েছে এবং ছলাকলাপূর্ণ বা কোমলভঙ্গিতে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে। কুরআনের আয়াতটিতে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, ‘তোমরা জাহেলিয়াতের যুগের মেয়েদের মতো অন্যদেরকে আকৃষ্ট করার উপযোগী করে নিজেদেরকে সজ্জিত কর না।’ এখানে আমরা উপসংহার টানতে চাই যেহিজাব পর্দা নয়বরং এর অর্থ হচ্ছে সতীত্ব ও শালীনতা। পবিত্র কুরআনে মহানবী (সা.)-কে লোকদের উদ্দেশে বলতে বলা হয়েছে যেতারা যেন নিজেদেরকে অপবিত্রতা বা অশ্লীলতা থেকে রক্ষা করে এবং মহিলাদের দিকে স্থির দৃষ্টিতে না তাকায়।

সূরা নূরের ৩০ ও ৩১ নং আয়াতে ঈমানদার মহিলাদের উদ্দেশে যা বলা হয়েছে তার সারকথা এই যেগায়ের মাহরাম ব্যক্তিবর্গের প্রতি কুদৃষ্টিতে তাকানো যাবে না। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হতে হবে পবিত্র। আর আল্লাহ তাআলা যা প্রকাশযোগ্য করেছেন অর্থাৎ মুখমণ্ডলহাত ও দৈহিক উচ্চতা ব্যতীত কোন অলংকার প্রদর্শন করা যাবে না।

ইসলামী হিজাব পরিধানকারী নাইয়্যেরাহ বলেনহিজাবে মহিলাদের জন্য নিরাপত্তা ও রক্ষাকবচ রয়েছে বিধায় তিনি তাঁর পোশাক হিসাবে তা বাছাই করেছেন। খানুম তুবা বলেনতিনি একজন মুসলমান তাই ইসলামী হিজাব মেনে চলা তাঁর জন্য বাধ্যতামূলক বলে তিনি মনে করেন। তিনি আরো মনে করেনএকটি  সুস্থ সমাজ গঠনের উপায়পদ্ধতি ও নীতি হিজাবের মাধ্যমেই পাওয়া যায়। পারিভাস হিজাবকে তাঁর একটি যুক্তিসঙ্গত আকর্ষণীয় বিষয় হিসাবে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘আমি মনে করি সমাজের সমস্যা ও ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে একজন মানুষ হিসাবে আমার প্রকৃত মর্যাদা নির্ধারণ এবং আমার বিকাশ ও পরিশুদ্ধির ক্ষেত্রটাই হচ্ছে হিজাব। আমি বৃহত্তর জগতের সাথে সম্পর্ক রাখতে চাই এবং সেই সাথে আমি চাই যেআমার শরীর তার পথে বাধা না হোক।

আজম তালেকানী হিজাবের প্রতি তাঁর আকর্ষণের কারণ ব্যাখ্যা করে বলেনইসলামী বিপ্লব হওয়ার পূর্বে ক্ষমতাচ্যুত শাহের শাসনামলে আমি ও আমার কতিপয় বান্ধবী তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু আমরা ইসলামের হিজাব মেনে চলতাম বিধায় আমাদেরকে ভর্তি হতে দেয়া হয়নি। আমরা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি এবং বহুভাবে তাদেরকে বুঝানোর চেষ্টা করিকিন্তু সবকিছু বিফল হয়। হ্যাঁতারা তাদের পূর্বপরিকল্পিত কর্মসূচির দরুনই আমাদেরকে ভর্তি হতে দিতে রাজি হয়নি। শাহের শাসকচক্র তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক ও সামাজিক বিচার-বিবেচনা থেকে ইসলামের পোশাককে সমাজ থেকে পরিহার করার উদ্দেশ্যেই এহেন আচরণ করে। সেদিন আমরা যে প্রতিবাদী ভূমিকা নিয়েছিলাম এবং তাদের প্রত্যাশা বানচাল করে দিয়েছিলাম তা কোন চাদরের জন্য নয়সাধারণভাবে ইসলামের পর্দা ব্যবস্থাকে রক্ষার জন্য। আমরা জানতাম যেকোন কোন শক্তিধর মহল চেয়েছিল যেমহিলারা ইসলামী পর্দাকে পরিত্যাগ করুক। আমি মহিলা সংস্থায় এ ধরনের কিছু দলিলপত্র প্রত্যক্ষ করেছি। ক্ষমতাচ্যুত শাহের ভগ্নি আশরাফ পাহলভী সরকারী অফিসগুলোতে এক সার্কুলার জারি করে কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেয় যেইসলামী হিজাব পরিহিত কোন মহিলাকে যেন অফিস-আদালতে ঢুকতে দেয়া না হয়। মহিলা সংস্থায় এই সার্কুলার দেখে আমি জানতে পারলাম যেএই মর্মে তাদের দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক কর্মসূচি রয়েছে।

তবে এখন এটা প্রমাণিত হয়েছে যেপর্দা মহিলাদের জন্য কোন সমস্যা সৃষ্টি করে না। কিন্তু এতে যেহেতু কিছুটা রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ রয়েছেতাই অনেকেই এ দেখে ভয় পায়।

আয়াতুল্লাহ বুজনুর্দী কেবল পোশাককেই হিজাব বলে বিবেচনা করেন না। তিনি বলেনহিজাব হচ্ছে দেহের আবরণ এবং সৌন্দর্যের সাবলীলতা। অনাড়ম্বর পোশাক পরিধান অনাড়ম্বর জীবনযাপনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সরলতা ও অনাড়ম্বর জীবনযাপন মানুষের জন্য শান্ত বয়ে আনে।

হিজাবের বাহ্যিক দিকের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেনসমাজ কখনই চায় না যেমহিলারা খোলামেলা বা অরক্ষিত থাক। এমনকি ইসলামের আবির্ভাবের পূর্বেও মহিলারা একটি বিশেষ বস্ত্র ব্যবহার করতযাকে বলা যেতে পারে উড়না বা মস্তক আবরণী। ইসলাম এর ব্যবহারের পদ্ধতির পূর্ণতা দান করেছে। হিজাব পূর্ব থেকেই সমাজের একটি সাধারণ আইন হিসাবেই প্রতিষ্ঠিত রয়েছে এবং ইসলাম এতে যে পরিবর্তন এনেছে তা সমাজের সাধারণ অভ্যাসের আলোকেই এনেছে।

আয়াতুল্লাহ বুজনুর্দী বাহ্যিক হিজাবের রক্ষক অভ্যন্তরীণ হিজাবের উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেছেন, ‘বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ হিজাবের সম্পর্ক নির্ধারিত হয় ব্যক্তির নিজের দ্বারা। মানুষের মধ্যে বিরাজমান যৌন কামনার নিয়ন্ত্রণই হচ্ছে হিজাব। যদি মানুষ তার যৌনবাসনাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেতাহলে তার অভ্যন্তরীণ হিজাব শক্তিশালী হবে। অন্যথায় হিজাব যদি জোরপূর্বক বা উদ্দেশ্যহীন বা চিন্তা-গবেষণা ছাড়াই প্রবর্তন করা হয় এবং যদি মানুষের অভ্যন্তরীণ হিজাব না থাকে তাহলে বাহ্যিক হিজাব হবে খুব ক্ষণস্থায়ী। যে মানুষের অভ্যন্তরীণ হিজাব আছে তার নিয়ন্ত্রণক্ষমতাও আছেসেই সাথে সে হতে পারে একজন দৃঢ়সংকল্প ও চিন্তাশীল মানুষ।

আয়াতুল্লাহ মোতাহহারী মনে করেনইসলামী হিজাবের মূল নিহিত রয়েছে মহিলাদের অভ্যন্তরীণ বা আত্মিক বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার মধ্যে। মোট কথাএটা হচ্ছে মহিলাদের নৈতিক শিকড় সংক্রান্ত বিষয়। যার মধ্যে রয়েছে নারীর সতীত্ব ও শালীনতা। যা তার মধ্যে পুরুষের থেকে নিজেকে আবৃত রাখার আগ্রহ সৃষ্টি করে।

অধ্যাপক মোতাহহারী এ প্রসঙ্গে ইউরোপ ও আমেরিকা ইদানীং যে প্রেম-ভালোবাসার অভাবে ভুগছে তার উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘ইউরোপীয় পণ্ডিতরা প্রায়শঃই উল্লেখ করেন যেবর্তমানকালের অবাধ স্বাধীনতা এবং নারী-পুরুষের অসংযমের প্রথম শিকার হচ্ছে মানুষের ভালোবাসা ও চূড়ান্ত আবেগ। আজকের বিশ্বে প্রকৃত প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক কখনই গড়ে উঠছে না। পুরুষের নাগালের বাইরে থাকলে একজন নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পায় এবং পুরুষের মাথা তার কাছে হেঁট হয়ে থাকে। কিন্তু ইদানীংকালে মহিলারা অবাধ স্বাধীনতার ব্যবস্থা মেনে নেয়ায় তা তাদেরকে অনাকর্ষণীয় করতে সহায়ক হয়েছে।

আয়াতুল্লাহ মোতাহহারী আরো বলেছেন, ‘ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি মোতাবেক মহিলাদের পর্দার দর্শন যৌক্তিকভাবেই গ্রহণযোগ্য এবং বলা যেতে পারে এটাই হলো ইসলামী হিজাবের ভিত্তি। তিনি বলেনইসলামী পর্দার পশ্চাতে বিদ্যমান প্রকৃত দর্শনে রয়েছে একটি মানাসিকগৃহ ও পারিবারিক এবং অন্যবিধ সামাজিক দিক। এর কিছুদিকের লক্ষ্য হচ্ছে নারীকে মর্যাদা দান করা এবং কিছুদিকের লক্ষ্য হচ্ছে দুর্নীতি রোধ করা।

শহীদ মোতাহহারী মাদ্রাসার প্রশিক্ষক আয়াতুল্লাহ বুজনুর্দী এক সাক্ষাৎকারে ইসলামের ফকীহদের দৃষ্টিতে হিজাবের নীতি ও সীমারেখা উল্লেখ করে বলেছেনপবিত্র কুরআনে মহিলাদেরকে তাদের অনাত্মীয়দের সামনে নিজেদের আভরণ প্রকাশ না করতে বলা হয়েছে।

মুফাসসিরদের মধ্যে এ ব্যাপারে কিছু কিছু মতপার্থক্য থাকলেও তাঁরা সকলে এ বিষয়ে একমত যেমহিলারা তাদের মুখমণ্ডল ও কব্জি পর্যন্ত হাত খোলা রাখতে পারবেন। সূরা নূরের ৩১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘মুমিন নারীদিগকে বলতারা যেন তাদের গ্রীবা ও বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে রাখে…।

জাহেলিয়াতের যুগে মহিলারা এক ধরনের ওড়না ব্যবহার করতো। তারা এটা চুলসহ পিঠের উপর ফেলে রাখতকিন্তু তাতে বক্ষদেশ অনাবৃত থাকত। পবিত্র কুরআনে এই আয়াতটিতে এই ওড়নাটি এমনভাবে ব্যবহার করতে বলা হয়েছে যেযাতে তাদের  বক্ষদেশের পোশাকের উপর আরেকটি বস্ত্রাবরণ পড়ে।

পবিত্র কুরআন মহিলাদের পোশাক সম্পর্কে এর চেয়ে বেশি কিছু বলেনি। কিন্তু কোথাও কোথাও হিজাবের ব্যাপারে বাড়াবাড়ি করা হয় এবং এমন ধরনের হিজাব প্রবর্তন করা হয় যেতাদের এহেন কার্যকলাপ প্রকৃতপক্ষে ইসলামের বিপক্ষে চলে যায়। কেননাএই জাতীয় বাড়াবাড়ি খোদ হিজাবের ব্যবস্থাকেই সমালোচনার সম্মুখীন করে তোলে। হিজাবের ব্যাপারে এরূপ চরম দৃষ্টিভঙ্গি আসলে আদর্শ হিজাব নয় এবং এই ধরনের কঠোরতা ইসলামকেই ক্ষতিগ্রস্ত করে।

এখন আমরা ওড়না বা চাদরের দিকে দৃষ্টি দেব। আমরা দেখব পবিত্র কুরআন কেন মহিলাদেরকে তা একান্তভাবে গ্রহণ করতে এবং তাদের অন্য পোশাকের উপর একটি স্তর বা পর্দা হিসাবে ব্যবহার করতে বলেছে। নিজেদেরকে আবৃত করা সংক্রান্ত কুরআনের এই আদেশ পালনের মধ্যে মহিলাদের জন্য কী কী সুবিধা রয়েছেশহীদ আয়াতুল্লাহ মোতাহহারী এ সম্পর্কে লিখেছেন :

ওড়না বা চাদরের সঠিক অর্থ হচ্ছে যে কোন একটি প্রশস্ত বস্ত্র যা টেবিল ক্লথের চেয়ে ছোট। খিমার ছিল মাথা আবৃত করার এক ধরনের কাপড় যা বাড়ির অভ্যন্তরে ব্যবহার করা হতো আর চাদর ব্যবহার করা হতো বাড়ির বাইরে। অতএবকোন মহিলা যদি বিধিসম্মতভাবে নিজেকে পোশাকাবৃত করে এবং সংযমশীলতা ও শালীনতার সাথে বাইরে যায়তাহলে দুর্নীতিবাজ ও স্থুলবুদ্ধিসম্পন্ন লোকেরা শালীনতাবোধকে ক্ষুণ্ন করতে সাহসী হবে না।

আয়াতুল্লাহ বুজনুর্দী মহিলাদের পোশাক সম্পর্কে কুরআনের বিধানকে ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে : প্রথমত আমি বলবে যেপবিত্র কুরআন এ বিষয়ে যে গুরুত্ব আরোপ করেছে তার লক্ষ্য একজন মহিলাকে অবমাননা করা নয় এবং তা কোন মহিলাকে বন্দি জীবনযাপন করতেও বাধ্য করে না। কুরআনের লক্ষ্য হলো মহিলাদের মর্যাদা ও গুরুত্বকে সমুন্নত করাযাতে একজন মহিলা তার সমস্যাসমূহ এড়িয়ে চলতে পারে। পবিত্র কুরআন মহিলাদের চুল ও শরীরের অন্যান্য অংশ আবৃত করার যে আদেশ দিয়েছে তার কারণ এই নয় যেমহিলারা একটি সংরক্ষণের বস্তুবরং এর কারণ এই যেযদি তারা কোন পুরুষের জন্য কোন অনৈতিক কাজের কারণ হন তাহলে তা হবে অপরাধমূলক। বিচার-বিবেচনার দৃষ্টিতেও আমরা একটি অপরাধ সংঘটিত হওয়ার আগেই তা নিরোধ করাকে যুক্তিযুক্ত মনে করি। পবিত্র কুরআনও তাই পরিবার ও সমাজকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পূর্বেই তা রোধ করতে চায়। এ কারণেই নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই এ নির্দেশ জারি করা হয়েছে। আর এ নির্দেশের উদ্দেশ্য হচ্ছে মানুষের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করাকাউকে কারাবন্দি করা নয়।

শহীদ অধ্যাপক মোতাহহারী মনে করেনইসলামে হিজাবের মূলে রয়েছে একটি অত্যন্ত সাধারণ ও মৌলিক বিষয়। সেটি হলো ইসলাম চায় সব ধরনের যৌন আনন্দকে-হোক দেখাছোঁয়া বা স্পর্শ এবং অন্য যে কোন ধরনের-পরিবারের মধ্যে সীমিত করতে এবং একটি আইনসঙ্গত বৈবাহিক সম্পর্কের আওতায়। তাই কাজের ও বাইরের পরিবেশের সাথে যৌন আনন্দ উপভোগকে একীভূতকারী আধুনিক পশ্চিমা ব্যবস্থার বিপরীতে ইসলামের প্রত্যাশা হলো এই দুটিকে অবশ্যই হতে হবে সম্পূর্ণ আলাদা।

অধ্যাপক মোতাহহারী লিখেছেন : মহিলাদেরকে পর্দাবৃত থাকার যে বিধান করা হয়েছে তার ভিত্তি গড়ে উঠছে বিশেষত মহিলাদের জন্য। কেননামহিলারা হচ্ছে সৌন্দর্যের প্রতীক। তাই স্বভাবতঃই মহিলাদেরকেই বলতে হবে নিজেকে প্রদর্শনীর বস্তু করে না তুলতে- পুরুষকে নয়। পুরুষদের প্রতি নিজেদেরকে আবৃত রাখার বা পর্দা করার কোন আদেশ দেয়া হয়নি এবং কার্যত পুরুষদের আবৃত থাকার প্রয়োজনও নেই। যে সমাজে মহিলারা হিজাব মেনে চলে সে সমাজে পুরুষরা যখন বাইরে যাবে তখন তারা মহিলাদের দিকে দৃষ্টিদান করতে বা তাকাতে পারলেও তাতে অতিশয় আকৃষ্ট হতে পারে না। একজন মহিলা পুরুষের দিকে তাকানোর চাইতে আকর্ষণার্থ ভাবভঙ্গিতেই বেশি আগ্রহী থাকে। আবার একজন মহিলার দিকে পুরুষের দৃষ্টিপাত মহিলার আকর্ষণার্থ ভাবভঙ্গিকে আরো জোরালো করে তোলে। মোটকথা পুরুষের দিকে তাকানোর আগ্রহ মহিলাদের কমসে জন্য পুরুষদের আকর্ষণার্থ ভাবভঙ্গিও কম থাকে। আকর্ষণের জন্য ভাবভঙ্গি করা ও প্রদর্শনেচ্ছা হলো মহিলাদের এক অদ্ভুত স্বভাব।

মজলিস সদস্য আয়াতুল্লাহ খালখালী হিজাব মেনে চলার ব্যাপারে বিভিন্ন ধর্মের ধারণা ও এর বিভিন্ন শাখা-প্রশাখার কথা উল্লেখ করে বলেছেন : হিজাব সমগ্র বিশ্বব্যাপী সুপ্রতিষ্ঠিত একটি প্রথা। এমনকি প্রোটেস্ট্যান্টগোঁড়া ও ক্যাথলিক নির্বিশেষে সকল খ্রিস্টধর্মমতেও হিজাবকে সমর্থন করা হয়েছে। কিছু কিছু চার্চে মহিলারা তাদের মাথার অংশবিশেষ আবৃত করে রাখে। হিজাবের কথা ওল্ড টেস্টামেন্টে উল্লিখিত আছে। সারাবিশ্বের ইহুদিরাও তাদের বিশ্বাস মোতাবেক হিজাবে বিশ্বাস করে। অবশ্য বর্তমান বিশ্বেবিশেষত ইংল্যান্ডে কিছুসংখ্যক লোক আছে যারা নগ্নতাকে পছন্দ করে। কিন্তু এরা হলো ব্যতিক্রমখ্রিস্টান বা ইহুদিদের সাধারণ ধর্মমতে এটা সমর্থিত নয়। হিজাবের যথাযথ ধরন-প্রকৃতির বিষয়ে অবশ্য বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে বিভিন্নতা রয়েছে। ইসলামের বিশ্বাসীদের ক্ষেত্রেও অনুরূপ একটি স্বাতন্ত্র্য রয়েছে। যেমন পবিত্র কুরআনে মহিলাদেরকে তাদের দৃষ্টি আনত রাখতেপুরুষের দিকে না তাকাতে এবং অলংকারাদি প্রদর্শন রা করতে এবং লজ্জাস্থানে আবরণ রাখতে বলা হয়েছে।

ইসলামী হিজাব কি পরিবারের নৈতিকতা ও অর্থনীতিকে প্রভাবিত করতে পারেআয়াতুল্লাহ বুজনুর্দী এ সম্পর্কে লিখেছেন :

আমি যখন বলি যেহিজাব একজন মানুষকে তার নাফসানিয়াত বা কু-প্রবৃত্তি থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় এবং নিজের আত্মার প্রতি মনোযোগই ধর্মপরায়ণতা আনয়ন করেতাহলে এই মনোযোগ কি সমাজের ব্যবহারিক ও যুক্তিভিত্তিক বুদ্ধিবৃত্তিকে প্রভাবিত করে নামানুষ প্রকৃতিগতভাবে গণ্ডিবদ্ধতা ও নিয়ন্ত্রণ থেকে পরিত্রাণ পেতে চায় এবং সৃষ্টিশীলতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছতে চায়। মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট সেই সৃষ্টিশীলতা অর্থনীতিনৈতিকতা ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে গঠিত।

ঘোমটাহীন ও অনাচ্ছাদিত ব্যক্তিবর্গের কি বর্তমান সমাজ ও পৃথিবীর প্রতি কোন দায়-দায়িত্ব আছে?- এই প্রশ্ন উত্থাপন করে আয়াতুল্লাহ খালখালী বলেছেনযদি যুবকেরা কোন অনাচ্ছাদিত মহিলাকে দেখে তখন তারা উদ্দীপিত হয়। এতে কোন সন্দেহ নেই যেমাত্রাতিরিক্ত উদ্দীপ্ততা অসৎকর্মের জন্ম দেয়। অসৎ বা কুকর্মের নানা পর্যায় রয়েছে এবং সেসব পর্যায়ের ক্রমধারায় যুবকরা নিজেদেরকে তৃপ্ত করার জন্য হয় মহিলাদের কাছে যায় অথবা সমকামিতায় লিপ্ত হয়। ফলে তাদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক ও দৈহিক কুফল দেখা দেয় এবং আক্রান্ত হয় মারাত্মক ব্যাধি এইডস-এ।

আমরা মনে করি নাযে পশ্চিমা দেশগুলোতে হিজাব পালন করা হয় না সেখানেও এইডস-এর একজনকেও সমর্থক পাওয়া যাবেবরং সত্যি বলতে কি অনেকেই এ ব্যাপারে একমত যেঅনিয়ন্ত্রিত চালচলনজনিত অসামাজিক কার্যকলাপের অনিবার্য পরিণতি হিসাবেই এইডস-এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। মহিলাদের অনাচ্ছাদিত থাকা বা নগ্নতাই যেখানে ফ্যাশন বা সৌখিনতা বলে স্বীকৃত সেখানে সেই পরিবেশে মহিলাদের সৌন্দর্যই হলো আকর্ষণ ও আনন্দের প্রধান বস্তু। আর এ অবস্থায় প্রেম নিবেদনের ভাব নিয়ে কোন মহিলা যদি সমাজে বিচরণ করে তাহলে সমাজে তার কি প্রতিক্রিয়া হবেআর যুবকদের অবস্থাই বা কি হবেযদি জাঁকালো মহিলারা তাদের সামনে ঘুরে বেড়ায় এবং তাদের ব্যাপারে কোন গঠনমূলক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা না থাকে?

বিশ্বের নারী সমাজের কাছে তাই আমাদের আহ্বান আপনারা শালীন পোশাক পরিধান করুন এবং পর্দা মেনে চলুন। এই আহ্বান তাদের বিরুদ্ধে কোন আক্রোশবশত নয়বরং এই আহ্বান হলো পারিবার ও সমাজকে রক্ষা করার আবেদন। সমাজকে মনস্তাত্ত্বিক দিক থেকে চিন্তাক্ষমতা ও যৌনতা বিষয়ে সুস্থ ও সুশৃঙ্খল রাখতে  হলে নগ্নতা পরিহার এবং হিজাব মেনে চলা অপরিহার্য।

আজকের ইউরোপীয় সমাজ হলো রাজনীতি ও ধর্মহীনতার সমাজ। তারা ধর্ম নিয়ে কোন চিন্তা করে না এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ সাধারণত রাজনৈতিক দৃশ্যপটের বাইরে থাকে।

একদা ভ্যাটিকান সিটি সফরকালে হিজাব পরিহিত একজন মহিলা অনুবাদককে দেখে পোপ পল অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করে বলেছিলেনমহিলাদের মর্যাদা রক্ষা করা অবশ্যই উচিত। ভিয়েনাস্থ ইরানী দূতাবাসের সামনে একটি চার্চ আছে। দেখা যায়সেই চার্চের দরজায় দাঁড়িয়ে থেকে কিছুসংখ্যক লোক চার্চে প্রবেশেচ্ছু মহিলাদেরকে ওড়না বা চাদর প্রদান করেযাতে মহিলারা নিজেদেরকে আবৃত করে চার্চে প্রবেশ করতে পারে। বাস্তবিকপক্ষে প্রতিটি ধর্মই কোন না কোন ধরনের হিজাবকে সমর্থন করে। এমনকি বৌদ্ধহিন্দু ও ব্রাহ্ম ধর্মেও তাদের কৃষ্টি ও সংস্কৃতি মোতাবেক শরীর আবৃত রাখার বিধান রয়েছে।

মোটকথা হিজাব নিরাপত্তা দান করে। যদি হিজাব প্রভাবিত সংস্কৃতি ও হিজাব স্বয়ং একটি সমাজে প্রাধান্য বিস্তার করে তাহলে সে সমাজ হয় শান্তসুশৃঙ্খল ও সৌহার্দমূলক। সেই সমাজ কখনও উত্তেজনা ও উদ্বিগ্নতায় ভোগে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.