ড. মীর মাহমুদ দাওয়াতী
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) ৫৭০ খ্রিস্টাব্দে পবিত্র মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৬১১ খ্রিস্টাব্দে নবুওয়াত লাভ করেন এবং ৬৩২ খ্রিস্টাব্দে ইন্তেকাল করেন।
ব্যাবিলনীয়, অ্যাসিরীয়, ফিনিসীয়, ইহুদি, আর্মেনীয়, কালদীয় প্রভৃতি সেমিটিক বংশোদ্ভূত জাতিসমূহ ৩ থেকে ৪ হাজার বছর পশ্চিম এশিয়া শাসন করে। কিন্তু পরে ইন্দো-ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত দু’টি জাতি ইরানী (পারসিক) ও গ্রীকরা অঞ্চলটির ওপর তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। এর মধ্যে ইরানীরা পূর্ব দিক থেকে ও গ্রীকরা পশ্চিম দিক থেকে আসে। মহাবীর আলেকজান্ডারের একশ’ বছর পর কার্থেজের শাসনকারী সেমিটিক বংশোদ্ভূত ফিনিসীয়রা ভূমধ্যসাগরীয় এলাকায় আধিপত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রোমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। কিন্তু রোমানদের কাছে এমন চরমভাবে তারা পরাজিত হয় যে, চিরদিনের জন্য তারা বিস্মৃতির আড়ালে হারিয়ে যায়। ফলে রোমানরা প্রায় ৮শ’ বছর শাসন করার সুযোগ পায়।
সপ্তম শতাব্দীতে বিশ্ব ইতিহাসের মঞ্চে আবির্ভূত হয় সেমিটিক বংশোদ্ভূত আরেকটি জাতি এবং তারা পশ্চিমা শাসনের বিরুদ্ধে কঠোর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়। তারাই আরব জাতি নামে পরিচিত।
সপ্তম শতাব্দীতে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নেয়ার পর এই আরবরা পবিত্র কুরআনের বিস্ময়কর আয়াতসমূহের দ্বারা এমনভাবে অনুপ্রাণিত হয় যে, তারা ঈমানের জ্বলন্ত অগ্নিশিখায় পরিণত হয় এবং এক শতাব্দীরও কম সময়ের মধ্যে ইউরোপের কেন্দ্রস্থলে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়, যেখানে ফরাসি কৃষকদের কণ্ঠেও উচ্চারিত হতে শোনা যায় ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’- আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই এবং হযরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহর রাসূল।
মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর ইতিহাস মানবজাতির ইতিহাসের সবচেয়ে বিস্ময়কর অধ্যায়। হযরত মুহাম্মাদ (সা.) একদিন হিরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকা অবস্থায় জিবরাঈল (আ.) আল্লাহর ওহী নিয়ে সেখানে হাজির হন এবং সেগুলো তাঁর নিকট প্রকাশ করেন। আল্লাহর কাছ থেকে জিবরাঈল (আ.) মারফত মহানবী (সা.)-এর নিকট বিভিন্ন সময়ে প্রেরিত এসব ওহী বা বাণী পরে সংকলিত করলে তার নাম হয় ‘কুরআন শরীফ’ বা পবিত্র কুরআন। মহানবী (সা.)-এর আহ্বানে মক্কার তুলনায় মদীনার লোকেরা বেশি সাড়া দেয়। কিছুকালের মধ্যেই অনেক লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে মহানবী (সা.)-এর পাশে এসে জমায়েত হয়। কোন ব্যক্তি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলে তাকে বলা হয় মুসলমান। ইসলামের শাব্দিক অর্থ হচ্ছে, ‘আল্লাহর ইচ্ছার কাছে নিজেকে সমর্পণ করা।’ সকল আদর্শ ও নৈতিক নীতি হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর প্রতি আরবি ভাষায় নাযিল হয় এবং এগুলো পবিত্র কুরআনে সংকলিত হয়েছে। মূলত কুফী রীতির লিপিতে এগুলো পবিত্র কুরআনে উৎকীর্ণ করা হয়। কুরআন শরীফে মোট সূরার সংখ্যা ১১৪। এর মধ্যে মদীনায় নাযিল হয় ৮৬টি এবং বাকি ২৮টি নাযিল হয় মক্কায়।
আল্লাহ তাআলার কাছ থেকে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর কাছে নাযিলকৃত বাণী বা আয়াতের সমষ্টি হচ্ছে পবিত্র কুরআন। এসব বাণী বা আয়াত সাধারণ গদ্যের কাঠামোতে হলেও এগুলোর রয়েছে একটি অনন্য ও অতুলনীয় ভঙ্গি, যার ফলে এগুলো হয়ে উঠেছে সাধারণ পাঠক্রম থেকে সম্পূর্ণ ভিন্নতর ও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ।
অতীতের মানুষের ইতিহাস বর্ণনার সময় পবিত্র কুরআনে দুর্নীতি ও দাম্ভিকতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। বাচনভঙ্গির দিক থেকে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সকল গ্রন্থের চেয়ে শ্রেষ্ঠ পবিত্র কুরআন হক ও বাতিলের মধ্যে সুস্পষ্টভাবে সীমারেখা টেনে দিয়েছে।
পবিত্র কুরআন সম্পর্কে তথ্য :
সূরা ১১৪টি
আয়াত ৬৬৬৬টি (অন্যমতে ৬২৩৬/সুরা ফাতিহার-বিসমিল্লাহ আয়াত সহ ৬২৩৭)
শব্দ ৭৭৪৩৭টি
হরফ ৩২২৬৭০টি
(নিউজলেটার, সেপ্টেম্বর ১৯৯১)