পবিত্র শবে-বরাত কি এবং কেন পালন করতে হবে?

“শবে-বরাত” বিভিন্ন নামে বিভিন্ন অথের্ আমাদের সমাজে প্রচলিত।

পবিত্র শবে-বরাত যার প্রচলিত অর্থ:

বরকতময় , রহমতপূর্ন এবং অতি পূণ্যময় রজনী বা প্রচলিত শব্দে শবে-বরাতের বিভিন্ন নাম রয়েছে ।

যেমন, লাইলাতুল বরাত , লাইলাতুল দোয়া ।

আরবী ভাষাতে — নিসফ্ শা’বান ।

ইরান ও আফগানিস্তানে নিম শা’বান ।

মালয় ভাষাতে — নিসফু শা’বান ।

তুর্কি ভাষাতে — বিরাত কান্দিলি ।

ভারতীয় উপমহাদেশে বলা হয় শবে-বরাত ।

শবে-বরাত কথাটি ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে ।

ফার্সি শবে অর্থ বাংলায় রাত এবং বরাত অর্থ ভাগ্য/মুক্তি । অর্থাৎ ভাগ্যের/মুক্তির রাত/রজনী ।

প্রশ্ন –

“শবে-বরাত” কথাটি কি পবিত্র কোরআন আছে ?

সহজ জবাব –

না , সরাসরি এই কথাটি নাই । যেভাবে নামাজ-রোজা সরাসরি নাই ।

প্রশ্ন –

তাহলে পবিত্র কোরআনে কি নামে পাওয়া যায় ?

সহজ জবাব –

পবিত্র কোরআনে – “লাইলাতুল মোবারাকা’ (لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ) ।

এবং সহীহ হাদিসে-‘লাইলাতুল নিসফি মিন শা’বান’ (لَيْلَةِ النِّصْفِ مِنْ شَعْبَانَ) নামে পাওয়া যায় ।

যেভাবে নামাজকে ‘সালাত’ ও রোজাকে ‘সাওম’ নামে পাওয়া যায় ।

সবথেকে মজার বিষয় হল যে , শতভাগ ভ্রান্ত আহলে হাদিস পন্থীগন পবিত্র শবে বরাতকে অস্বীকার করলেও এদের প্রধানতম ধর্মীয় গুরু আলবানি এই শবে বরাতের হাদিসকে সহীহ এবং বিশুদ্ব বলেছেন ।

যদি তারা সত্যিই সহীহ হাদিসের অনুসরণ করতেন তবে অবশ্যই শবে বরাত নিয়ে অহেতুক ধুম্রজাল তৈরী করতেন না ।

শবে-বরাত সম্পর্কিত দলীল সমূহ –

এই সম্পর্কিত হাদিস কি সহীহ সিত্তায় বর্ণিত হয়েছে ?

সহজ জবাব —

জ্বী হয়েছে । যেমন, সহীহ মুসলিম , হাদিস নং – ২৬২২ , ২৬২৩, ২৬২৪ / ইবনে মাজাহ , হাদিস নং – ১৩৮৯ , ১৩৯০ / আবু দাউদ , হাদিস নং – ১১৪৪, ১৫৬৩ / জামি সগীর , হাদীস নং – ১৮১৯ / মিশকাত শরীফ , হাদিস নং – ১৩০৬, ১৬০৭ ।

যেহেতু এ সম্পর্কিত হাদিস সহীহ সনদে বর্ণিত পাওয়া যায় । সুতরাং, ফেৎনাবাজ আহলে হাদিসরা কোনভাবেই শবে-বরাতকে অস্বীকার করতে পারবে না । কেবল নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ব্যতীত ।

প্রিয় পাঠক ,

শবে -বরাত সম্পর্কিত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আরও দলীল নজেই দেখে নিন ।

শরীয়তে শবে-বরাত বলে কিছু আছে কী ?

শবে-বরাতের ফজীলত নির্ভরযোগ্য হাদিস দ্বারা প্রমানিত ।

সম্মিলিত কোন রূপ না দিয়ে এবং এ রাত উদযাপনের বিশেষ কোন পন্থা উদ্ভাবন না করে শক্তি ও সামর্থানুযায়ী বেশী বেশী ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য রেওয়ায়েত দ্বারা প্রমাণিত ।

শবে-বরাতের ফজীলত ও করণীয় বিষয়ে কিছু হাদিস সমূহ ।

প্রথম হাদিস —

হজরত মু’আজ ইবনে জাবাল (রাঃ) বলেন , রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন আল্লাহ তা’আলা ১৫ই শা’বানের রাতে সৃষ্টির দিকে রহমতের দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষপোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন ।

সূত্র – সহীহ ইবনে হিব্বান ,হাদীস নং ৫৬৫৬ / সিলসিলাতুল আহাদিসিস সহীহাহ- ৩/৩১৫ ।

দ্বিতীয় হাদিস —

হজরত আ’লা ইবনুল হারেস থেকে বর্ণিত , উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা বলেন , একরাতে রাসুল (সাঃ) নামাজে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সিজদা করেন যে , আমার ধারণা হল তিনি হয়তো মৃত্যুবরণ করেছেন । আমি তখন উঠে তাঁর বৃদ্ধাঙ্গুলী নাড়া দিলাম এবং তাঁকে স্ব-চেতন পেলাম । তাই আমার বিশ্বাস হল যে , তিনি জীবিত আছেন ।

অতঃপর আমি আমার বিছানায় ফিরে এলাম । যখন তিনি সিজদা থেকে উঠলেন এবং নামাজ শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ করে বললেন , হে আয়েশা ! তোমার কি এ আশংকা হয়েছে যে ,আল্লাহর রাসুল তোমার হক্ব নষ্ট করবেন ?

আমি উত্তরে বললাম , না ,ইয়া রাসূলুল্লাহ ! তবে আপনার দীর্ঘ সিজদা থেকে আমার আশংকা হয়েছিল আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা ? রাসুল (সাঃ) জিজ্ঞেস করলেন , তুমি কি জান এটা কোন রাত ?

আমি বললাম , আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই (সাঃ) এ সম্পর্কে অধিক জ্ঞাত । রাসুল (সাঃ) তখন ইরশাদ করেন , এ রাতটি অর্ধ শাবানের রাত । আল্লাহ এ রাতে তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ করুনার দৃষ্টি দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করেন ও অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন । আর বিদ্বেষপোষণকারীদের স্বীয় অবস্থার উপর ছেড়ে দেন । হিংসা পরিত্যাগ না করা পর্যন্ত তাকে ক্ষমা করেন না ।

সূত্র – শো’আবুল ঈমান,হাদীস নং-৩৮৩৫ / আত তারগীব ওয়াত তাওহীব ২/২৪২ / আদ দূররুল মানসুর ৬/২৭ ।

তৃতীয় হাদিস –

একদা উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা নবীজীকে (সাঃ) না পেয়ে খুঁজতে বের হলেন । হুজুরকে (সাঃ) কে জান্নাতুল বাক্বিতে পেলেন ।

তখন নবী কারীম (সাঃ) বললেন , ১৪ শাবান দিবাগত রাতে আল্লাহ প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বনু কালব গোত্রের পালিত ছাগলপালের শরীরের পশমের চেয়েও অধিক সংখ্যক বান্দাকে ক্ষমা করে দেন ।

সূত্র – তিরমিজী শরীফ-হাদীস নং-৭৩৬ / ইবনে মাজাহ হাদীস নং ১৩৮৫ ।

চতুর্থ হাদিস —

হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আঃ) থেকে বর্ণিত ,নবী (সাঃ) ইরশাদ করেন , অর্ধ শাবানের রাত যখন আসে তখন তোমরা এ রাত্রি ইবাদত বন্দেগীতে মগ্ন থাক এবং দিনের বেলা রোজা রাখ । কেননা এ রাতের সূর্যাস্তের পর আল্লাহ প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বলেন , কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি ? আমি তাকে ক্ষমা করে দেব ।

আছে কি কোন রিজিকপ্রার্থী ? আমি তাকে রিজিক দেব ।

কোন বিপদগ্রস্থ আছে কি ? আমি তাকে বিপদমুক্ত করব ।

এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাকে ডাকতে থাকেন ।

সূত্র – ইবনে মাজাহ,হাদীস নং-১৩৮৪ / বায়হাক্বী শো’আবুল ঈমান হাদিস নং.৩৮২২ / আত তারগীব ওয়াত তাওহীব ২/২৪২ ।

পঞ্চম হাদিস —

হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত ।

রাসুল (সাঃ) বলেন যে , অর্ধ শাবানের রাতে (শবে-বরাতে) মহান আল্লাহ তাঁর সমস্ত মাখলুকের বা সমগ্র সৃষ্টির প্রতি মনযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে দেন ।

সূত্র – সহীহ ইবনে হিব্বান , হাদিস নং-৫৬৬৫ / মুসনাদুল বাজ্জার, হাদিস নং-২৭৫৪ / মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদিস নং-১৭০২ / তাবারানী : আল মুজামুল আওসাত, হাদিস নং-৬৭৭৬ / আল মুজামুল কাবীর, হাদিস নং-২১৫ / সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং-১৩৯০ / মুসনাদুশ শামীন, হাদিস নং-২০৩ / মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদিস নং-৩০৪৭৯ / শুয়াবুল ঈমান, হাদিস নং-৬২০৪ ও ৩৫৫২ / সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং- ১/৪৪৫ / মুসনাদে আহমদ, হাদিস নং- ২/১৭৬ / সুনানে বায়হাকী, হাদিস নং- ৩/৩৮১; হাদিসটি সহীহ / কিতাবুস সুন্নাহ-১/২২৪, হাদিস-৫১২ / আল ইহসান-৭/৪৭ / মাওয়ারিদুয যমআন-৪৮৬, হাদিস-১৯৮০ / মাজমাউ যাওয়াইদ-৮/৬৫ / সিলসিলাতুস সহীহা-৩/১৩৫, হাদিস-১১৪৪ / আততারগীব-২/২৪২ , হাদিসটির মান – হাদিসটি সম্পূর্ণ সহীহ ।

বর্তমান লা মাযহাবী (আহলে হাদিস) ভাইদের প্রসিদ্ধ শাইখ নাসীরুদ্দীন আলবানী রাহ . সিলসিলাতুল আহাদীসিস সহীহাহ গ্রন্থের ৩/১৩৫-১৩৯ -এ শবে বরাত সম্পর্কিত হাদিসের সমর্থনে আরও আটটি হাদিস উল্লেখ করার পর লেখেন যে , শবে বরাত সম্পর্কিত হাদীস সমূহ নিঃসন্দেহে সহীহ এবং বিশুদ্ব প্রমাণিত হয় ।

সম্মানীত পাঠক , পরিশেষে নিবেদন এই যে , আমার মত গন্ড মূর্খ অর্ধশিক্ষিত কাঠমোল্লার কথায় বিভ্রান্ত হয়ে বরকতময়পূর্ন এই রজনীর বিশাল রহমত থেকে নিজেকে বঞ্চিত করবেন না । সর্বশেষ বারতম ইমাম মাহদীর (আঃ) এর এই পবিত্র শবে বরাতের ১৫ই শাবানের জন্মদিনটিতে যথাসাধ্য আনন্দ করুন এবং পবিত্র রাতটিতে ইবাদত আমল পালন করুন ।ইমাম ইমাদী (আঃ) এর শুভ জন্মদিন উপলক্ষে সকলের প্রতি রইল শুভেচ্ছা এবং প্রানঢালা অভিনন্দন

চেপে যাওয়ার মূল রহস্যটা কি !

পবিত্র শবে-বরাতকে শতভাগ সত্য এবং সঠিক দলীল প্রমান ছাড়াই বিদআত , হারাম ইত্যাদি বলতেই হবে । এছাড়া অন্য কোন পথ খোলা নাই ।

নির্মম নিষ্ঠুরভাবে সত্যের গলা টিপে ধরতে হবেই হবে ।

বিশেষ করে রাসুলের (সাঃ) ইন্তেকালের পরে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের (সাঃ) অনুমোদনহীন ক্ষমতাকে নিস্কন্টক রাখার স্বার্থে শবে-বরাতের নেপথ্যের মূল কারনটি যে কোন মূল্যে ধামাচাপা দিতে হবেই হবে ।সাধারন জনতা না জানলেও অবৈধ ক্ষমতা দখল যারা করলেন তারা কিন্ত বিলক্ষন বুঝতেন এবং জানতেন যে , শবে-বরাতের নেপথ্য সত্য ঘটনা জানা মানেই হল তাদের ক্ষমতার ভিত্তি চুরমার হয়ে যাবে ।

প্রিয় পাঠক , নিশ্চয়ই বিরক্ত হচ্ছেন এইজন্য যে , এত বড় ভুমিকা পর্ব কেন ? জবাবটা নিয়ে নিন —–

এইভাবে বলার মূল কারনটি হচ্ছে , ১৫ই শাবান ২৫৫ হিজরী দিবসটি হচ্ছে পবিত্র শবে বরাতের রাত । স্বভাবতই প্রশ্ন আসে যে , এই দিবসটি কেন এত বরকতময় ? দিবসটি কেন এত রহমতপূর্ন ?

সহজ জবাব — এই দিনে সমগ্র সর্বশক্তিমান আল্লাহর পক্ষ থেকে হুজ্জাত সর্বশেষ বারতম ইমাম হযরত ইমাম মাহদীর (আঃ) পবিত্র শুভ আগমন দিবস । শবে-বরাত কেন এত বরকতময় , রহমতপূর্ন ইত্যাকার বিষয়ের প্রকৃত কারন সাধারন জনতা যখন জেনে যাবে তখন জনতা জানতে চাইবে যে , তাহলে এই ইমাম মাহদী (আঃ) কে?

কোন পরিবারের সন্তান ? হযরত ইমাম মাহদীর (আঃ) পিতামাতার নাম কি ?

হযরত ইমাম মাহদীকে (আঃ) সর্বশেষ বারতম ইমাম বলে ঘোষনা করলেন কে ?হযরত ইমাম মাহদী (আঃ) যদি বারতম ইমাম হন তাহলে এগারতম ইমাম কে ?

তাহলে সর্বপ্রথম ইমাম কে ?

তাহলে দ্বিতীয় ইমাম কে ?প্রথম থেকে শুরু করে বারজনের ধারবাহিক নামগুলো কি কি ?

এই বারজনের পারস্পরিক সম্পর্ক কি ?এরা কোন বংশের লোক ?এই বারজন পুরুষ কি সত্যই আল্লাহ কতৃক মনোনীত এবং নির্বাচিত ?

বিদায় হজ্ব থেকে ফেরার পথে গাদীর এ খুমে রাসুল (সাঃ) এই বারজনের নাম বলে গেছেন কি ?

পাঠক , এই সকল প্রশ্নের সঠিক জবাব সাধারন জনতা যখন জেনে যাবে তখন তারা বনু সকীফার অবৈধ খলীফা , ইমাম , আমীরগনকে মুহূর্তেই নর্দমাতে ছুড়ে ফেলে দেবে । সত্য উদ্ভাসিত হওয়া মানেই মিথ্যা অপসারিত হওয়া । নীচের লেখাটিতে বাড়তি মনযোগ দিন , প্লীজ । সাধারন জনগন তখন আরও জানতে চাইবে যে , এরাই কি সেই বংশধর যে বংশধরের কথা আল্লাহ স্বয়ং নিজে কোরআনে ঘোষনা দিয়েছেন –“ — নিশ্চয়ই আল্লাহ মনোনীত করেছেন আদম ও নূহকে এবং ইবরাহীমের বংশকে এবং ইমরানের বংশকে সমস্ত জাতির উপর —” ।সুরা – আলে ইমরান / ৩৩ ।

সাধারন জনগন তখন আরও জানতে চাইবে যে , এরাই কি সেই বংশধর যে বংশধরকে আল্লাহ স্বয়ং নিজে কোরআনে পুতঃপবিত্র আহলে বাইত বলে ঘোষনা দিয়েছেন –“ – নিশ্চয়ই আল্লাহ চান তোমাদের কাছ থেকে সমস্ত অপবিত্রতা দূরে রাখতে , হে আহলে বাইত , এবং তোমাদেরকে পবিত্র করতে পূর্ন পবিত্রকরনের মাধ্যমে – “ ।সুরা – আহযাব / ৩৩ “।

সাধারন জনগন তখন আরও জানতে চাইবে যে , এরাই কি সেই বংশধর যে বংশধরকে আল্লাহ স্বয়ং নিজে কোরআনে সত্যবাদী বলে ঘোষনা দিয়েছেন –“—– হে ঈমানদারগন আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হয়ে যাও —-” ।সুরা – তওবা / ১১৯ ।

সাধারন জনগন তখন আরও জানতে চাইবে যে , এরাই কি সেই বংশধর যে বংশধরকে আল্লাহ স্বয়ং নিজে কোরআনে আহলুল জিকির বলে ঘোষনা দিয়েছেন –” — যদি তোমরা না জেনে থাক তবে যারা জানে তাদের জিজ্ঞেস কর —” ।সুরা – নাহল / ৪৩ ।

সাধারন জনগন তখন আরও জানতে চাইবে যে , এরাই কি সেই বংশধর যে বংশধরের প্রতি আল্লাহ স্বয়ং নিজে কোরআনে সম্মান এবং ভালবাসা প্রদর্শনের জন্য আদেশ দিয়েছেন –“ – বল , আমি এর জন্য তোমাদের কাছে কোন পুরস্কার চাই না , শুধু আমার রক্তজ বংশধরদের প্রতি গভীর ভালবাসা ছাড়া – “ ।সুরা – শুরা / ২৩ ।

সাধারন জনগন তখন আরও জানতে চাইবে যে , এরাই কি সেই বংশধর যে বংশধর থেকে আল্লাহ স্বয়ং নিজে ইমাম , পথপ্রদর্শক , সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারী নিয়োগ দিয়েছেন –“ – এবং প্রত্যেক জাতির জন্য আছে একজন পথপ্রদর্শক (হাদী) — “ ।সুরা – রাদ / ০৭ । “

– আমিই আপনাকে সত্যসহ প্রেরন করেছি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরুপে । আর এমন কোন উম্মত ছিল না যাদের মধ্যে কোন সতর্ককারী আসেনি —- “ ।সুরা – ফাতির / ২৪ । “ – আমরা তাদেরকে ইমাম নির্বাচিত করেছিলাম আমাদের আদেশ অনুসারে হেদায়েত করতেন — “ ।সুরা – আম্বিয়া / ৭৩ । “

– এবং তাদের মধ্যে আমরা নিয়োগ দিয়েছিলাম ইমামদের যারা আমাদের আদেশে পথ দেখায় — “ ।সুরা – সাজদাহ / ২৪ ।

সাধারন জনগন তখন আরও জানতে চাইবে যে , এরাই কি সেই বংশধর যে বংশধর থেকে আল্লাহ স্বয়ং নিজে মাওলা বা অভিভাবক নিয়োগ দিয়েছেন –“ — তোমাদের অভিভাবক শুধু আল্লাহ , তাঁর রাসুল এবং সেই বিশ্বাসী যে নামাজ বজায় রাখে এবং যাকাত আদায় করে রুকুরত অবস্থায় — “ ।সুরা – মাইদা / ৫৫ ।

সাধারন জনগন তখন আরও জানতে চাইবে যে , এরাই কি সেই বংশধর যে বংশধর থেকে আল্লাহ স্বয়ং নিজে উলিল আমর নিয়োগ দিয়েছেন –“ – আনুগত্য কর আল্লাহ এবং আনুগত্য কর রাসুলকে এবং তাদেরকে যারা তোমাদের মধ্যে কতৃত্ব করার দয়িত্বপ্রাপ্ত (উলিল আমর) —– “ ।সুরা – নিসা / ৫৯ ।

সাধারন জনগন তখন আরও জানতে চাইবে যে , এরাই কি সেই বংশধর যে বংশধর থেকে আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) রেসালতের সাক্ষী নেওয়া হয়েছিল —“—- যারা কুফরী করেছে তারা বলে , আপনি রাসুল নন । বলুন , আল্লাহ একজন সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট আমার ও তোমাদের মাঝে এবং ঐ ব্যক্তি যে কিতাবের জ্ঞান রাখে (ইলমুল কিতাব) ——– ” ।সুুরা – রাদ / ৪৩ ।

সাধারন জনগন তখন আরও জানতে চাইবে যে , এরাই কি সেই বংশধর যে বংশধর থেকে আল্লাহর নফস কোন ব্যক্তি হয়েছেন সেটা পরিস্কার হয়ে গেছে —“—- মানুষের মধ্যে এমনও মানুষ আছে যে নিজের নাফসকে আল্লাহর রাস্তায় আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জন করার জন্য বিক্রয় করে দেয় । আল্লাহ এই ধরনের বান্দাকে ভালবেসে থাকেন — ” ।সুরা – বাকারা /২০৭ ।

সাধারন জনগন তখন আরও জানতে চাইবে যে , এরাই কি সেই বংশধর যে বংশধর থেকে আল্লাহ স্বয়ং নিজে প্রথম ইমাম নিয়োগের ঘোষনাটি দেওয়ার জন্য এই আয়াতটি অবতীর্ন করেছিলেন — “

– হে রাসুল , পৌঁছে দাও যা তোমার কাছে অবতীর্ন হয়েছে তোমার প্রভুর কাছ থেকে এবং যদি তুমি তা না কর , তুমি তাঁর রেসালতই পৌঁছে দাও নি এবং আল্লাহ তোমাকে জনতার হাত থেকে রক্ষা করবেন । নিশ্চয়ই আল্লাহ কাফের দলকে পথ দেখান না —- “ ।সুরা – মাইদাহ / ৬৭ ।

সাধারন জনগন তখন আরও জানতে চাইবে যে , এরাই কি সেই বংশধর যে বংশধর থেকে পাঁচজন পুতঃপবিত্র ব্যক্তিবর্গ মোবাহেলার ময়দানে সমগ্র খ্রীষ্টান সম্প্রদায়ের চ্যালেজ্ঞ মোকাবিলায় সীসাঢালা প্রাচীরের মত দাঁড়িয়েছিলেন ।”

—- আপনার নিকট যথাযথ জ্ঞান আসার পরও যে কেউ এ বিষয় তর্ক করবে , সন্দেহ করবে তাদের বলুন , আমরা আহবান করি আমাদের পুত্রদের , এবং তোমরা তোমাদের পুত্রদের , আমরা আমাদের নারীদের এবং তোমরা তোমাদের নারীদের এবং আমরা আমাদের নফসদের (সত্তাদের ) ডাকি , তোমরা তোমাদের নফসদের ডাক । অতঃপর আমরা বিনীত আবেদন করি মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত (লানত) বর্ষিত হোক —– ” । সুরা – আলে ইমরান / ৬১ ।

সাধারন জনগন তখন আরও জানতে চাইবে যে , এরাই কি সেই বংশধর যে বংশধরের প্রতি দরুদ সালাম প্রেরন সমস্ত নামাজ বাতিল বলে গন্য হয় ?“ — নিশ্চয়ই আল্লাহ এবং তাঁর ফেরেশতাগন নবীর উপর দরুদ পড়েন । হে তোমরা যাদের বিশ্বাস আছে , তাঁর উপর দরুদ পড় এবং তাঁর উপর শান্তি কামনা কর যথাযোগ্যভাবে — “ ।সুরা – আহযাব / ৫৬ ।

পাঠক , লেখার শেষ অংশে চলে এসেছি । রাসুলের (সাঃ) ইন্তেকালের পর থেকে কেয়ামত পর্যন্ত নবুয়তি কার্যক্রম কাদের উপর বা কোন বংশের উপর রাখতে হবে এটা আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে নির্ধারন করে দিয়েছেন । এবং এই বিষয় দুনিয়ার কারও মতামত নেওয়ার কোন সুযোগ মহান আল্লাহ রাখেন নাই । ” — আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন কোথায় তাঁর রেসালত রাখবেন — !”সুরা – আনআম / ১২৪ ।”

— তোমার প্রতিপালক যা ইচ্ছা সৃষ্টি করেন এবং যাকে ইচ্ছা মনোনীত করেন । এই ব্যাপারে তাদের কোন অধিকার নাই । এবং আল্লাহ পবিত্র , মহিমাম্বিত এবং যাকে তারা অংশী করে (তাঁর সাথে) তা হতে তিনি অনেক উর্ধ্বে — ” ।সুরা – কাসাস / ৬৮ ।

পৃথিবী সৃষ্টি থেকেই আল্লাহর আদেশের বিরোধীতা হয়ে আসছে । এই বিরোধীপক্ষ সবসময়ই আল্লাহর আদেশ বাস্তবায়নের বিরোধীতা এবং ষড়যন্ত্র করে এসেছে । তারা সবসময়ই চায় যে , আল্লাহ কতৃক প্রদত্ত সত্যের শিখাকে ফু দিয়ে নিভিয়ে ফেলতে !

ওদের এই অভিসন্ধি আল্লাহ অবগত আছেন । এবং মহান আল্লাহ চ্যালেজ্ঞ দিয়েছেন যে , ওরা যতই চেষ্টা করুক না কেন সত্যের বিজয় হবেই হবে । ” — তারা আল্লাহর জ্যোতিকে ফু দিয়ে নিভিয়ে ফেলতে চায় । কিন্ত আল্লাহ তাঁর জ্যোতি পূর্ন করবেনই , যদিও অবিশ্বাসীরা তা অপছন্দ করে — ” ।সুরা – সাফফ / ৮ ।

এবারে নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন যে , পবিত্র কোরআনে বর্নিত সুরা আলে ইমরানে উল্লেখিত হযরত ইমরানের (আঃ) বংশধরের জন্যই ———” —- ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হার কারবালাকা বাদ —” ।

আশাকরি বুঝতে পেরেছেন যে , কেন এবং কি কারনে শবে-বরাতের নেপথ্য মূল ঘটনা লুকিয়ে ফেলা হয় । এবং জন্মদিনের পবিত্র দিনটিকে কেনইবা বিদআত হারাম বলে ফটাফট ফতোয়া দেওয়া হয় । আজ আর নয় ।সর্বশেষ বারতম ইমাম হযরত মাহদীর (আঃ) পবিত্র জন্মতীথি উপলক্ষে সকলকে আন্তরিক অভিনন্দন ও সালাম দিয়ে আজকের মত বিদায় ।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.