তারাবীহ নামাজ না উত্তম বিদাত? পড়লে কি গোনাহ হবে?

প্রিয় পাঠক, পবিত্র মাহে রমজান মাসের এই তারাবীহ নামাজ নাকি দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর (রা:) কতৃক আবিস্কৃত সম্পূর্ন নতুন একটি বিদআতি নামাজ ।

অনিচ্ছা সত্বেও তথ্যবহুল এই লেখাটি দীর্ঘ হয়ে যাওয়ার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত । বিনীত অনুরোধ রইল , কষ্ট করে হলেও লেখাটি পড়ুন । আশাকরি তারাবীহ নামাজ সম্বন্ধেে আপনার পূর্বেকার ধারনা পাল্টে যাবে ।

পবিত্র কোরআন বলছে —

“ – গ্রহন কর যা রাসুল তোমাদের দেয় এবং পরিত্যাগ কর যা সে তোমাদেরকে নিষেধ করে এবং আল্লাহ সম্পর্কে সতর্ক হও । নিশ্চয়ই আল্লাহ উপযুক্ত শাস্তি দানে অত্যন্ত কঠোর — ।“

সুরা – হাশর / ০৭ ।

রাসূল (সাঃ) বলেছেন –

“তোমরা আমাকে যেভাবে সালাত আদায় করতে দেখলে সেভাবে সালাত আদায় কর ।”

সূত্র – সহীহ আল বুখারী – ১ম খণ্ড , হাদিস নং -৬৩১ ,আল-মাদানী প্রকাশনী ।

বিনীতভাবে চ্যালেজ্ঞ সহকারে বলা হচ্ছে যে —

আজ পর্যন্ত কোন সহীহ হাদিস বা ইতিহাস গ্রন্থে পাওয়া যায় নাই যে , মহানবী (সাঃ) জামাতবদ্ধ হয়ে তারাবীহ নামাজ মসজিদে আদায় করেছেন বা করার কোন নির্দেশ দিয়েছেন ।

ঐতিহাসিক বাস্তবতা এটাই যে , জামায়াতবদ্ধ হয়ে “তারাবীহ নামায” আদায়ের ব্যাপারটি দ্বিতীয় খলিফা হযরত উমরের ব্যাক্তিগত মত বা ইজতিহাদ বা “independent reasoning” ।

আর তাই আহলে সুন্নাতের গ্রন্থ সমূহে একে “বিদআতে হাসানাহ” বা “সূন্দর বিদআত” বলে উল্লেখ করা হয়েছে ।

আর বিদআত হচ্ছে ওই সমস্ত মত , বস্তু বা কর্মপ্রনালী যার অনুরূপ কোন কিছু রাসূলের (সাঃ) যুগে ছিল না বা ছিল বলে সর্বসম্মত কোন প্রমান পাওয়া যায় না ।

এমনকি “তারাবীহ” বলতে কোন নামাজের নাম পবিত্র কোরআন ও বিশুদ্ব সহীহ হাদিস গ্রন্থে পাওয়া যায় না ।

“তারাবীহ” কথাটি কি ?

তারাবীহ কথাটি , “তারাবিহাতুন” কথার বহুবচন , এর মূল ধাতু “রাহাতুন” এবং এর বাংলা অর্থ – আরাম বা বিশ্রাম ।

এই বিদআতি নামাযটি অতি দীর্ঘ সময় ধরে আদায় করা হয় ।

তবে প্রতি চার রাকাত আদায়ের পর সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য বিশ্রামের উদ্দেশ্যে বসা হয় । তাই একে তারাবীহ্ বা আরামদায়ক নামায বলা হয় ।

আসলে এটা হযরত ওমরের নির্ভেজাল ও শতভাগ খাঁটি নব-আবিস্কার ।

এই বিদআতি নামাযটি মহানবীর (সাঃ) সময় তো ছিলই না ।

এমনকি হযরত আবু বকরের যুগেও ছিল না ।

এমনকি হযরত ওমরের শাসন আমলের প্রথম দিকেও ছিল না ।

আরও অবাক ব্যাপার যে , তারাবীহ নামাজের সৃষ্টিকর্তা হযরত ওমর নিজেও এই তারাবীহ নামাজ কখনই পড়েন নাই !

মাহে রমজান মাসের এই নামাযের স্বপক্ষে কোরআন , হাদিস ও ইতিহাসে কোন দলীল নেই । রাসুলের (সাঃ) সুন্নাত বা আমলের বিরুদ্ধে অন্য কারও কোন কথা দলীল হতে পারে না । আল্লাহর কিতাব , রাসুলের (সাঃ) সুন্নাত , সাহাবীদের কথা এবং মুসলমানদের ইজমা দ্বারা প্রমানিত যে , কারও কথা বা আমল রাসুলের (সাঃ) সুন্নাতের সমান কখনই হতে পারে না ।

সে যত বড়ই হোক না কেন ?

কারও কথা টেনে এনে রাসুলের (সাঃ) সুন্নাতের বিরুদ্ধে দাড় করা যাবে না ।

ইমাম শাফেই (রহঃ) বলেন –

মুসলমানদের সর্বসম্মতিক্রমে কারও কাছে রাসুলের (সাঃ) সুন্নাত সুস্পষ্ট হয়ে যাওযার পর তা ছেড়ে দিয়ে অন্যের কথা গ্রহণ করা জায়েয নয় । ‘সুন্নাত’ হল রাসুলের (সাঃ) বাস্তব কর্মনীতি , আর ‘হাদিস’ বলতে রাসুলের (সাঃ) কাজ ছাড়াও কথা ও সমর্থন বুঝায় ।

যারা নবীর (সাঃ) উম্মত তারা নবীর (সাঃ) সুন্নাত অনুসরণ করবে এটাই তো প্রত্যেকটা ধর্মপ্রাণ মুসলমানের আবশ্যক কর্তব্য ।

নিম্নে প্রসিদ্ধ সুন্নি সহীহ হাদীস গ্রন্থ থেকে কয়েকটি হাদীস উল্লেখ করছি –

(১)

‘’একদিন রমজানে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) গভীর রাতে গৃহ থেকে বের হয়ে মসজিদে নামাজ আদায় করেন । কিছুসংখক পুরুষ নবীর (সাঃ) পিছনে নামাজ আদায় করেন ।

সকাল বেলা লোকেরা এ সম্পর্কে আলোচনা করেন । ফলে দ্বিতীয় রাতে লোকেরা আরও অধিক সংখ্যায় সমবেত হন ।

মহানবী (সাঃ) সালাত আদায় করেন এবং লোকেরা নবীর (সাঃ) সঙ্গে সালাত আদায় করেন ।

যথারীতি সকাল বেলা তারা এ বিষয়ে আলাপ আলোচনা করেন ।

তৃতীয় রাতে মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা আরও বেড়ে যায় ।

এরপর রাসুল (সাঃ) বের হয়ে সালাত আদায় করেন এবং লোকেরাও তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেন ।

চতুর্থ রাতে মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা এত বেশী হল যে , স্থান সংকুলান হল না । কিন্ত রাসুল (সাঃ) ঐ সময় আর বের না হয়ে ফযরের নামাজের জন্য বেড়িয়ে আসলেন এবং নামাজ শেষে লোকদের দিকে ফিরে প্রথমে তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য দেওয়ার পর বললেন –

“শোন হে লোকসকল ! তোমাদের গতরাতের অবস্থান আমার অজানা ছিল না । কিন্ত আমি এ নামাজ তোমাদের উপর ফরয হয়ে যাবার আশংকা করেছি বিধায় বের হই নাই । কেননা তোমরা তা আদায় করতে অপারগ হয়ে পড়তে । রাসুলের (সাঃ) ইন্তেকাল হল আর এই ব্যাপারটি এভাবেই থেকে যায় ।‘’

সুত্র – সহীহ আল বুখারী , ইসলামী ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ , তৃতীয় খন্ড , পঞ্চম সংস্করন , হাদীস নম্বর- ১৮৮৫ , পৃষ্ঠা – ২৯২ ।

(২) –

‘‘ইবনে শিহাব যুহরি (রাঃ) বলেন , ‘’রাসুলুল্লাহর (সাঃ) ইন্তেকালের পরও তারাবীহর অবস্থা এরুপই ছিল ।

হযরত আবু বকরের খেলাফত কালে এবং হযরত ওমর ইবনে খাত্তাবের খেলাফতের প্রথম দিকেও তারাবীহর অবস্থা অনুরুপই ছিল ।’

সুত্র – মুয়াত্তা , ইমাম মালিক (রাঃ) , ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ , প্রথম খন্ড , পঞ্চম সংস্করন , রমযানের নামাজ অধ্যায় , হাদিস নম্বর – ২ , পৃষ্ঠা-১৭০ ।

(৩) –

‘আব্দুর রহমান ইবনে আব্দিল কারিয়্যু বলেছেন –

“আমি মাহে রমজানে হযরত ওমর ইবনে খাত্তাবের সহিত মসজিদে গমন করিয়াছি । সেখানে গিয়ে দেখি লোকজন বিভিন্ন দলে বিভক্ত । কেউ একা নামায পড়িতেছেন । আবার কেউবা নামায পড়াচ্ছেন এবং তাঁর ইমামতিতে একদল লোক নামায আদায় করিতেছেন ।

এই দৃশ্য দেখিয়া হযরত ওমর বলিলেন , ‘আমি মনে করি যে , কতইনা ভাল হইত যদি এই মুসল্লিগনকে একজন ক্বারীর সহিত একত্র করিয়া দেওয়া হইত ।‘

অতঃপর তিনি সকল মুসল্লীগনকে উবাই ইবনে কা’ব এর ইমামতিতে একত্র করিয়া দিলেন ।‘

আব্দুর রহমান বলেন , ‘দ্বিতীয় রাতেও আমি তাহার সহিত মসজিদে গমন করিলাম । তখন লোকজন তাহাদের ক্বারীর ইক্তিদায় নামায পড়িতেছিলেন ।

হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব ইহা অবলোকন করিয়া বলিলেন – “ইহা অতি চমৎকার বিদআত বা নতূন পদ্বতি।‘’

সুত্র – সহীহ আল বুখারী , ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ , তৃতীয় খন্ড , পঞ্চম সংস্করন , ১৮৮৩ নম্বর হাদীস , পৃষ্ঠা নম্বর – ২৯২ / মুয়াত্তা , ইমাম মালিক , ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ , প্রথম খন্ড , পঞ্চম সংস্করন , রমজানের নামায অধ্যায় / সহীহ্ আল বুখারী – খন্ড – ২ হাদিস নং – ১৮৬৮ (আধুনিক প্রকাশনী)।

১৮৭০ –

ইসমা‘ঈল আবূ সালামা ইবনু ‘আব্দুর রাহমান থেকে বর্ণিত ,

তিনি উম্মুল মুমেনিন হযরত আয়েশাকে জিজ্ঞাসা করেন যে , মাহে রমযানে রাসুলের (সাঃ) সালাত কিরূপ ছিল ?

তিনি বললেন , রমযান মাসে ও রমযান ছাড়া অন্য সময়ে (রাতে) তিনি এগার রাকাত হতে বৃদ্ধি করতেন না । তিনি চার রাকাত সালাত আদায় করতেন , সে চার রাকাতের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য ছিল প্রশ্নাতীত । এরপর চার রাকাত সালাত আদায় করতেন , সে চার রাকাতের সৌন্দর্য ও দৈর্ঘ্য ছিল প্রশ্নাতীত ।

এরপর তিন রাকাত সালাত আদায় করতেন ।

আমি [‘আয়েশা ] বললাম , ইয়া রাসূল (সাঃ) ! আপনি বিতর আদায়ের আগে ঘুমিয়ে যাবেন ?

তিনি বললেন : হে ‘আয়েশা ! আমার দুচোখ ঘুমায় বটে কিন্তু আমার কালব নিদ্রাভিভূত হয় না ।

১৮৬৯ –

ইয়াহইয়া ইবনু বুকায়র ‘আয়িশা থেকে বর্ণিত ,

তিনি বলেন , রাসুল (সাঃ) রাতে বের হয়ে মসজিদে সালাত আদায় করেন । কিছু সংখ্যক পুরুষ তাঁর পিছনে সালাত আদায় করেন । সকালে লোকেরা এ সম্পর্কে আলোচনা করেন । ফলে লোকেরা অধিক সংখ্যায় সমবেত হন । তিনি সালাত আদায় করেন এবং লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেন । সকালে তাঁরা এ বিষয়ে আলাপ -আলোচনা করেন । তৃতীয় রাতে মসজিদে মুসল্লীর সংখ্যা আরও বেড়ে যায় ।

এরপর রাসুল (সাঃ) বের হয়ে সালাত আদায় করেন ও লোকেরা তাঁর সঙ্গে সালাত আদায় করেন । চতুর্থ রাতে মসজিদে মুসল্লীর সংকুলান হল না ।

কিন্ত তিনি রাতে আর বের না হয়ে ফজরের সালাতে বেরিয়ে আসলেন এবং সালাত শেষে লোকদের দিকে ফিরে প্রথমে তাওহীদ ও রিনসালতের সাক্ষ্য দেওয়ার পর বললেন ,

“শোন ! তোমাদের (গতরাতের) অবস্থান আমার অজানা ছিল না । কিন্ত আমি এই সালাত তোমাদের উপর ফরয হয়ে যাবার আশংকা করছি (বিধায় বের হই নাই) । কেননা তোমরা তা আদায় করায় অপারগ হয়ে পড়তে । রাসুল (সাঃ) – এর ওফাত হল আর ব্যাপারটি এভাবেই থেকে যায় ।

এমনকি হযরত আবু বকর -এর খেলাফত কালে ও হযরত ওমরের খেলাফতের প্রথম ভাগে এরূপই ছিল ।

ইবনু শিহাব উরওয়া ইবনু যুবায়র সূত্রে ‘আব্দুর রাহমান ইবনু ‘আবদ আল -ক্বারীথেকে বর্ণনা করেন , তিনি বলেন , আমি মাহে রমযানের এক রাতে ‘হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাবের সঙ্গে মসজিদে নববীতে গিয়ে দেখতে পাই যে , লোকেরা বিক্ষিপ্ত জামায়াতে বিভক্ত । কেউ একাকী সালাত আদায় করছে আবার কোন ব্যক্তি সালাত আদায় করছে এবং তার ইকতেদা করে একদল লোক সালাত আদায় করছে ।

হযরত ওমর বললেন , আমি মনে করি যে , এই লোকদের যদি আমি একজন ক্বারীর (ইমামের )পিছনে একত্রিত করে দেই , তবে তা উত্তম হবে ।

এরপর তিনি উবাই ইবনু কা‘ব -এর পিছনে সকলকে একত্রিত করে দিলেন । পরে আর এক রাতে আমি তাঁর [‘ওমর ] সঙ্গে বের হই । তখন লোকেরা তাদের ইমামের সাথে সালাত আদায় করছিল । হযরত ওমর বললেন , কতই না সুন্দর এই নতুন ব্যবস্থা ! তোমরা রাতের যে অংশে ঘুমিয়ে থাক তা রাতের ঐ অংশ অপেক্ষা উত্তম যে অংশে তোমরা সালাত আদায় কর, এর দ্বারা তিনি শেষ রাত বুঝিয়েছেন , কেননা তখন রাতের প্রথমভাগে লোকেরা সালাত আদায় করত ।

সূত্র – আধুনিক প্রকাশনী অধ্যায় কিতাবুস সাওম ।

প্রিয় পাঠক ,

পবিত্র মাহে রমজান মাসের এই তারাবীহ নামাজ হচ্ছে দ্বিতীয় খলীফা হযরত ওমর কতৃক আবিস্কৃত সম্পূর্ন নতুন একটি বিদআতি নামাজ ।

এবারে আসুন সংক্ষেপে জেনে নেই –

বিদআত সম্পর্কিত কয়েকটি হাদিস —

নবী (সাঃ) বলেন –

“যে ব্যক্তি এমন আমল করবে যার ব্যাপারে আমার শরীয়তের নির্দেশনা নেই , উহা প্রত্যাখ্যাত ।”

সূত্র – সহীহ আল বুখারী – খন্ড – ৫৩ / ৫ , হাদিস নং – ২৬৯৭ , হাদিস নং – ২৫১৪ , খন্ড – ৫৩ , আধ্যায় – ৫ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / সহীহ আল মুসলিম – খন্ড – ৩০/৮ , হাদিস নং – ১৭১৮, ৪৩৪৩ , ৪৩৪৪ , খন্ড -৩০ , অধ্যায় – ৮(ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / মেশকাত শরীফ , হাদিস নং – ১৪০ / আহমদ ইবনে হাম্বল , হাদিস নং – ২৬০৯২ ।

অর্থাৎ এমন আমল বা ইবাদত করা যেটা রাসুলের (সাঃ) যুগে ছিল না এবং যেটা শরীয়ত অর্থাৎ কোরআন ও হাদিসের সাথে সাংঘর্ষিক ।

অপর হাদিসে রাসুল (সাঃ) বলেন –

“নিঃসন্দেহে সর্বোত্তম কথা হচ্ছে আল্লাহর কিতাব , সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে রাসুলুল্লাহর (সাঃ) পদ্ধতি । আর নিকৃষ্ট কাজ হচ্ছে শরীয়তে নতুন কিছু সৃষ্টি করা । এবং প্রত্যেক বিদআত হচ্ছে সুস্পষ্ট ভ্রষ্টতা ।”

সূত্র – সহীহ আল মুসলিম – হাদিস নং – ৮৬৭ , ১৮৭৫ , খন্ড – ৮ , জুমু-আহ , অধ্যায় -১৩(ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / মেশকাত শরীফ , ৫ম আধ্যায় , কিতাব ও সুন্নাহকে আকড়ে ধরা , হাদিস নং – ১৪১ ।

অর্থাৎ শরীয়াতে বা ইসলামে নতুন কোন কিছু সৃষ্টি করাই হচ্ছে বিদআত ।

রাসুল (সাঃ) বলেছেন –

“সর্বনিকৃষ্ট কাজ বিদআত , প্রত্যেক বিদআত হচ্ছে ভ্রষ্টতা , আর ভ্রষ্টতার পরিনাম সরাসরি জাহান্নাম ” ।

সূত্র – নাসাঈ- হাদিস নং – ১৫৭৮ , খন্ড -১৯, অধ্যায়-২২ , নবীর (সাঃ) খুতবা কিরূপ ছিল ।

রাসুল (সাঃ) বললেন –

“যে আমার সুন্নাহ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে সে আমার দলভুক্ত নয় ।”

সূত্র – সহীহ আল বুখারী- হাদিস নং – ৫০৬৩ , ৪৬৯৩ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / সহীহ আল মুসলিম , ১৪/১ হাদিস নং – ১৪০১ ।

রাসুল (সাঃ) বলেছেন –

“কিয়ামতের দিন নবী (সাঃ) ও বিদআতিদের মাঝে পর্দা সৃষ্টি হবে । বিদআতিরা হাউযে কাওছারের পানি পান করা হতে বঞ্চিত হবে” ।

সূত্র – সহীহ আল বুখারী – হাদিস নং – ৬৫৮৪, ৬৫৭৪ , ৭০৫০, ৭০৫১ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) / সহীহ আল মুসলিম – অধ্যায়- ৪৪/৯ , হাদিস নং – ২২৯০, ২২৯১, ৫৭৬৮ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) ।

রাসুল (সাঃ) বলেন যে , যে ব্যক্তি দ্বীনের মধ্যে নতুন কিছু আবিস্কার করবে অথবা নব আবিস্কারকের আশ্রয় দিবে সেই ব্যক্তির উপর আল্লাহ এবং সকল ফেরেশতা ও মানুষের অভিশাপ বর্ষিত হবে । ঐ ব্যক্তির ফরজ ইবাদত , তওবা এবং নফল ইবাদত কবুল করা হবে না ।

সূত্র – সহীহ আল বুখারী , কিতাবুল জিযিয়াহ , হাদিস নং – ৩১৮০ ।

রাসুল (সাঃ) আরও বলেন যে , নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বানী আল্লাহর কিতাব এবং সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছে মুহাম্মাদের (সাঃ) আদর্শ । এবং সর্বনিকৃষ্ট বিষয় হল দ্বীনের মধ্যে নব উদ্ভাবিত বিষয় সমূহ । আর প্রতিটি নব উদ্ভাবিত বিষয় সমূহ হল বিদআত । বিদআত হল সম্পূর্নরুপে ভ্রষ্টতা এবং প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিনাম হচ্ছে জাহান্নাম ।

সূত্র – সহীহ আল মুসলিম / সুনান আন নাসায়ী ।

রাসুল (সাঃ) বলেন যে , আল্লাহ বিদআতি ব্যক্তির রোজা , নামাজ , সাদাকা , হজ্ব , উমরাহ , জিহাদ , ফিদইয়া , ন্যয় বিচার ইত্যাদি কিছুই কবুল করেন না । ঐ ব্যক্তি ইসলাম থেকে এভাবে খারিজ হয়ে যাবে যেরুপে আটা থেকে পশম পৃথক হয়ে যায় ।

সূত্র – ইবনে মাজাহ , হাদিস নং – ৫০ ।

শরীয়তের দৃষ্টিতে বিদআত নিন্দনীয় (অপছন্দনীয়) একটি বিষয় এবং তা শরীয়তের বিধান মতে হারামের অন্তর্ভুক্ত । সুতরাং বিদআতকে হাসান (পছন্দনীয়) ও কাবিহ (অপছন্দনীয়) এ দুইভাগে ভাগ করা সঠিক নয় ।

কিন্ত আহলে সুন্নাতের আলেমদের মতে বিদআত ‘হাসান’ও ‘কাবিহ’এ দুইভাগে বিভক্ত ।

সূত্র – ইবনে আসির , আন নেহায়া , ১ম খণ্ড ,পৃ. ৭৯ ।

বিদআতকে বৈধ ও অবৈধ অর্থাৎ পছন্দনীয় ও অপছন্দনীয় এরূপ বিভাজনের কোন বৈধতা নেই । কারন বিদআত হল এমন বিষয় যার কোন শরীয়তগত ভিত্তি নাই । অর্থাৎ এমন কোন বিধান সৃষ্টি করা যার উৎস কোরআন ও সুন্নাতে খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই বিদআত হচ্ছে এরূপ একটি বিধান নিঃসন্দেহে আল্লাহর নিকট অপছন্দনীয় ও হারাম বলে গণ্য ।

মানবজাতির সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক বিশ্বনবী (সাঃ) বলেছেন , যে এই মাসে নফল নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেবেন ।

যে একটি ফরজ নামাজ আদায় করবে তাকে অন্য মাসের সত্তুরটি ওয়াজীব নামাজ আদায়ের সওয়াব দান করবেন ৷

এ পবিত্র মাসে অবশ্যই আমাদেরকে বেশী বেশী ইবাদত বান্দেগী করতে হবে তাই বলে এমন কোন পদ্ধতিতে নয় যা নবী (সাঃ) নিজেও করেন নি বা করতেও বলেন নাই ।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) পবিত্র রমজানের ফজিলত , গুরুত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন , পবিত্র রমজান মাস দয়া , কল্যাণ ও ক্ষমার মাস ৷

এ মাস মহান আল্লাহর কাছে শ্রেষ্ঠ মাস ৷

এ মাসের দিনগুলো সবচেয়ে সেরা দিন , এর রাতগুলো শ্রেষ্ঠ রাত এবং এর প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত মূল্যবান ৷ রহমত বরকত ও মাগফিরাতের মাস তথা পবিত্র রমজান মাসে আল্লাহর দস্তরখান আমাদের জন্যে উন্মুক্ত ৷ তিনি তোমাদেরকে এ মাসে সম্মানিত করেছেন । এ মাসে তোমাদের প্রতিটি নিঃশ্বাস মহান আল্লাহর গুণগান বা জিকিরের সমতুল্য । এ মাসে তোমাদের ঘুম প্রার্থনার সমতুল্য । এ মাসে তোমাদের সৎকাজ এবং প্রার্থনা বা দোয়াগুলো কবুল করা হবে ।

তাই মহান আল্লাহর কাছে আন্তরিক ও পবিত্র চিত্তে প্রার্থনা কর যে , তিনি যেন তোমাদেরকে রোজা রাখার এবং কোরআন তেলাওয়াতের তৌফিক দান করেন ।

গুনাহর জন্যে অনুতপ্ত হও ও তওবা কর এবং নামাজের সময় মোনাজাতের জন্যে হাত উপরে তোল । কারণ নামাজের সময় দোয়া কবুলের শ্রেষ্ঠ সময় ।

এ সময় মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের দিকে রহমতের দৃষ্টিতে তাকান । এ সময় কেউ তাঁর কাছে কিছু চাইলে তিনি তা দান করেন । কেউ তাঁকে ডাকলে তিনি জবাব দেন । কেউ কাকুতি-মিনতি করলে তার কাকুতি মিনতি তিনি গ্রহণ করেন ।

কেননা পবিত্র কোরআনে সুরা গাফিরের (মুমিন) ৬০ নম্বর আয়াতে তিনি নিজেই বলেছেন –

” — তোমরা আমাকে ডাকো , আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব , নিশ্চয় যারা আমার আমার ইবাদত হতে বিমুখ , তারা লাঞ্চিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে — ৷”

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.