তাহাজ্জুদের নামাজ
এস, এ, এ
বিভিন্ন মুস্তাহাব নামাজের বিভিন্ন মর্যাদা রয়েছে। তবে এর মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বোৎকৃষ্ট নামাজ হচ্ছে তাহাজ্জুদের নামাজ। তাহাজ্জুদের নামাজ নবী করিম (সা.)-এর ওপর ওয়াজিব ছিল। উম্মতের ওপর এটি ওয়াজিব না হলেও সব মুস্তাহাব নামাজের মধ্যে এটিই উত্তম। তাহাজ্জুদ অর্থ ঘুম থেকে জাগা আর তাহাজ্জুদের সময় হলো ইশার নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে তারপর অর্ধেক রাতের পর নামাজ আদায় করা। সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের সময় থাকে। গভীর রাতে ঘুম থেকে জেগে নামাজ আদায়ে সাওয়াব বেশি। পবিত্র কালামে পাকে এরশাদ হয়েছে, যারা শেষ রাতে ইবাদাত ও প্রার্থনা করেন তাদের প্রশংসা স্বরূপ কিয়ামত দিবসে বলবেন: ‘তারা রাতের সামান্য অংশই নিদ্রায় অতিবাহিত করত এবং রাতের শেষ প্রহরে তারা ক্ষমা প্রার্থনা করত। (সূরা আয যারিয়াত আয়াত নং ১৭-১৮)
রাসূল (সা.)-কে সম্বোধন করে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক আরো বলেছেন: এবং রাতের কিছু অংশ তাহাজ্জুদ পড়তে থাকুন। এ আপনার এক অতিরিক্ত কর্তব্য। আশা করা যায়, আপনার প্রভু আপনাকে মাকামে মাহমুদে অধিষ্ঠিত করবেন। (সূরা আল ইসরা আয়াত নং ৭৯)
তাহাজ্জুদ নামাজের উপকারিতা:
১- তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার কারণে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং ফেরেস্তাদের বন্ধুত্ব অর্জন করা সম্ভব।
২- আল্লাহ তার উক্ত বান্দাদের জন্য ফেরেস্তাদের কাছে গর্ববোধ করেন।
৩- তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়কারির অবস্থান আসমানবসিদের কাছে নক্ষত্রের ন্যায়।
৪- তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়কারির আত্মা নুরানি হয়।
৫- তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়কারির দোয়া দ্রুত কবুল হয়।
৬- তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়কারির তওবা কবুল হয় এবং তার গুনাহকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।
৭- তাহাজ্জুদের নামাজ গুনাহের জন্য কাফফারা স্বরূপ।
৮- তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়কারির চেহারা নূরানি হয়।
৯- তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়কারির দৈহিক এবং আত্মিক উন্নতি হয়।
১০- তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়কারির চোখের জ্যেতি বৃদ্ধি পায়।
১১- তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়কারির আচরণে নবি এবং আওসিয়াদের গুণাবলি পরিলক্ষিত হয়।
১২- তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়কারি নবির সুন্নতের উপরে আমল করে।
১৩- মানুষের অন্তরে তার জন্য ভালবাসার সৃষ্টি হবে।
১৪- আয়ু বৃদ্ধি পাবে।
১৫- রিযিক ও রুজি বৃদ্ধি পাবে।
১৬- তাহাজ্জুদের নামাজ হচ্ছে এক প্রকারের সাদকা।
১৭- তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়কারির আমলে চারটি বড় সৎকর্মের সমপরিমাণ সওয়াব লিখা হবে।
১৮- আল্লাহর নির্দেশে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়কারির পিছনে ফেরেস্তারা জামাতে দাড়ায়।
১৯- তাহাজ্জুদের নামাজ হচ্ছে পুল সিরাত অতিক্রমের মাধ্যম এবং বেহেশতের চাবি স্বরূপ।
২০- কেয়ামতের দিন সকলে শরিরে বস্ত্র না থাকলেও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়কারির শরির বস্ত্র থাকবে।
তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার সময়:
১- তাহাজ্জুদের নামাজ মধ্য রাত থেকে নিয়ে সুবহে সাদিকের পূর্ব সময় পর্যন্ত পড়া যেতে পারে। তবে সবচেয়ে উত্তম সময় হচ্ছে সূবহে সাদিকের পূর্বে।
২- সূবহে সাদিকের পূর্বে তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য বিষেশভাবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
৩- তাহাজ্জুদের নামাজ রাতের যেকোন সময়ে পড়া যেতে পারে তবে উত্তম হচ্ছে সূবহে সাদিকের পূর্বে পাঠ করা।
তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার পদ্ধতি:
তাহাজ্জুদের নামাজ হচ্ছে মোট ১১ রাকাত।
১- ৮ রাকাত ফজরের নামাজের ন্যায় নামাজে শাব-এর নিয়তে পড়তে হবে।প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার পরে সুরা ইখলাস পাঠ করতে হবে। দ্বিতিয় রাকাতটিও অনুরূপভাবে পাঠ করতে হবে।অনুরূপভাবে অবশিষ্ট নামাজগুলো পাঠ করতে হবে।
২- ২ রাকাত শাফ-এর (شَفع)নিয়তে পাঠ করতে হবে। প্রথম রাকাতে সুরা ফাতেহার পরে সুরা নাস পাঠ করতে হবে এবং দ্বিতিয় রাকাতে সুরা ফাতেহার পরে সুরা ফালাক পাঠ করতে হবে।
৩- ১ রাকাত বিতর-এর (وِتر)নিয়তে পাঠ করতে হবে। উক্ত এক রাকাতে সুরা ফাতেহার পরে ৩ বার সুরা ইখলাস ১ বার সুরা ফালাক এবং ১ বার সুরা নাস পাঠ করতে হবে। উক্ত নামাজের কুনুতে উত্তম হচ্ছে ৪০ জন জিবিত অথবা মৃতব্যাক্তির নাম উচ্চারণ করা। কুনুতে বলতে হবে (اللّهُمَّ اغفِر لِفُلَان )আল্লাহুম্মাগ ফিরলি-এর পরে জিবিত অথবা মৃত ব্যাক্তির নাম উচ্চারণ করতে হবে। অতঃপর রুকু, সেজদা, তাশাহুদ ও সালামের মাধ্যেমে নামাজকে শেষ করতে হবে।