সালাতুল তারাবী
ইসলামে প্রথম বেদআতী নামাজ
সহীহ্ আল বুখারী, ২য় খন্ড,
প্রকাশক : আধুনিক প্রকাশনী,
প্রকাশকাল: আগষ্ট/২০০৮,
কিতাবুস সাওম অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৭১, তারাবীহ নামাজের ফযীলত, পৃষ্ঠা ২৭৭-২৭৯।
প্রচলিত তারবীর নামাজে নিম্নের বিষয়গুলী
লক্ষ্যনীয় :-
* রমজানের চাঁদ দেখে তারাবীর নামাজ শুরু করা হয় এবং শাওয়ালের চাঁদ দেখে তারাবীর নামাজ সমাপ্তি টানা হয় কিন্তু উল্লেখিত হাদীসগুলিতে শুরু এবং সমাপ্তির এমন কোন নির্দিষ্ট দিক-নির্দেশনা নাই
* এশার নামাজের পর এবং বিতির নামাজের পূর্বে তারাবীর নামাজ পড়া হয় কিন্তু উল্লেখিত
হাদীসের বর্ণনায় তারাবীর নামাজ পড়তে হয় মধ্য রাতের পর ! এ সংক্রান্ত (১৮৬৯
নং) হাদীসে দেখা যায়, রাসূল (সা.) তারাবীর
নামাজ শুরু করেছেন মধ্যরাত হতে !
* (১৮৬৮ নং) হাদীস অনুযায়ী জামাতবদ্ধ হয়ে
তারাবীর নামাজ পড়ার সুন্নাত রাসূল (সা.)-এর
ওফাতের প্রায় সাড়ে ৯ বছর পর প্রচলিত হয়। অথচ তা “সুন্নাত-এ-রাসূল” হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে!
* জামাতের নামাজের জন্য একামতের ব্যবহার বাধ্যতামূলক কিন্তু উল্লেখিত হাদীসগুলিতে একামতের এমন কোন দিক-নির্দেশনা নাই।
* জামাতের নামাজের জন্য ইমাম প্রয়োজন হয় কিন্তু উল্লেখিত (১৮৬৮ নং) হাদীস অনুযায়ী
নামাজের ইমামের পরিবর্তে ক্বারীর উল্লেখ
রয়েছে।
* ২০ অথবা ৮ রাকাত তারাবীর নামাজ ‘সুন্নাত-এ-রাসূল’ হিসাবে প্রচলন আছে কিন্তু উল্লেখিত (১৮৭০নং) হাদীস অনুযায়ী রাসূল (সা.) ১১ রাকাতের বেশী তারাবীর নামাজ পড়েন নাই। আবার এভাবে রাসূল (সা.) সারা বছর ব্যাপি ১১ রাকাত নামাজ আদায় করতেন, যা ‘তাহাজ্জুত’হিসাবে সুপ্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ রসূল (সঃ) যে নামাজ পড়তেন তা তারাবী ছিল না, ছিল তাহাজ্জত।
* (১৮৬৭ নং) হাদীস অনুযায়ী হাদীস বর্ণনাকারী এবং তারাবীর হুকুম জারীকারী ব্যাক্তিগন এই নামাজের ব্যপারে ছিলেন উদাসীন। তাঁরা জামাতের তদরকী করার উদ্দেশ্যে দূরে দাঁড়িয়ে দেখতেন, আর বলতেন, “এটি একটি উত্তম বিদআত”।ইসলামের এমন কোন বিধান কি আছে যা নেতাদের
জন্য নফল অথচ আম-জনতার জন্য বাধ্যতামূলক?
* খতম তারবী : এ তারবীর নামাজে সমগ্র কোরআন পাঠ করা হয়। তবে কথা হলো প্রচলিত খতম তারবীর নামাজকেও যদি ‘সুন্নাত-এ-রাসূল’ হিসাবে চালিয়ে দেয়া হয় তবে কিছু প্রশ্ন সৃষ্টি হয়। যেমন, রাসূল
(সা.) ৬৩ বৎসরের জীবনে শেষ ২৩ বছর ব্যাপি কোরআন নাজিল হয়। তাঁর জীবনের শেষ বছরের বরিউল আওয়াল মাসে ১২ তারিখেই জন্ম এবং মৃত্যু (!) হলে পরবর্তি ৫ মাস অর্থাৎ রবিউল সানি, জামাদিউল আওয়াল, জামিদুস সানি, রজব, শাবান
মাসগুলিতে বিশেষ করে বিদায় হজ্জে যে সকল
আয়াত নাজিল হয়েছিল তা তো তিনি পূর্ববতী
রমজানের তারাবীর নামাজে পড়তে পারেননি
তাহলে ‘খতম তারাবী’ কিভাবে ‘সুন্নাত-এ-রাসূল’ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হল?
* নামাজের রোকন অনুযায়ী প্রতি রাকাতে ২টি
সেজদা বাধ্যতামূলক, যা কম বেশি করা নামাজ ভঙ্গের কারণ সেখানে খতমে তারাবীতে সেজদার আয়াত তেলাওয়াতকালে সরাসরি অতিরিক্ত ১৪টি সেজদা করা হয়। যার ফলে নামাজে ধারাবাহিকতা নষ্ট হয়। এক্ষেত্রে রোকন অমান্যের দায়ে গোনাহগার হতে হয় কিনা?
* নিয়্যাত : “নাওয়াতুয়ান উসাল্লিয়া লিল্লাহী
তাআ’লা রাকাতায় সালাতিল তারাবী সুন্নাতী
রাসূলিল্লাহী তা’আলা . . .” যেখানে রাসূল (সা.)-এর সূন্নাতে তারাবীর নামাজ-ই নাই এমনকি উল্লেখিত হাদিস ৪টিতে আরবী শব্দ ‘তারাবী’রও উল্লেখ নাই সেখানে তাঁর (সা.) নামে মিথ্যা নামাজের নিয়্যাত’এবং ‘নামাজ’প্রচলন করে যারা গোনাহগার হয়েছেন আর বর্তমানে আমরা যারা সেই প্রচলিত ধারায় এ বেদতী নামাজ আদায় করছি তাদের অবস্থা আখেরাতে কি হবে বিষয়টি একটু নিরবে ঠান্ডা মস্তিস্কে ভেবে দেখার বিনীত
অনুরোধ রইল।
* সালাতুল তারাবী (১৮৬৮নং) হাদীস অনুযায়ী
“সুন্নাত-এ-ফারুকী”অর্থাৎ হযরত ওমর ফারুক (রা.)-এর সুন্নাত কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা
“সুন্নাত-এ-রাসূল”হিসাবে প্রতিষ্টিত করা হয়েছে।
* (১৮৬৮নং) হাদীস অনুযায়ী তারাবীর নামাজে জামআত’-এর প্রবর্তক হযরত ওমর ফারুক (রা.) হওয়ার সত্ত্বেও আমারা জামাতে দাঁড়িয়ে নিয়্যাতের সময় রাসূল (সা.) এর নামেই নিয়্যাত করিছি.
* (১৮৬৯ নং) হাদীস অনুযায়ী মুসলমানদের উপর কোন কিছু ওয়াজিব হওয়ার ব্যপারে রাসূল (সা.) ভিত হতে পারেন কিনা?
* (১৮৬৯ নং) হাদীস অনুযায়ী যেখানে স্বয়ং রাসূল (সা.) তারাবী নিয়মিত না করার পরামর্শ
দিয়েছিলেন সেখানে আমাদের উপর জামাত’এবং ‘খতম তারাবী’কে বাধ্যতামূলক করে নিয়েছি কেন?
* সবচেয়ে আর্শ্চায্যের বিষয় হল উল্লেখিত
হাদীসগুলিতে আবারী “তারাবী”শব্দটি উল্লেখ
নাই। বাংলা অনুবাদে ব্রাকেট বন্ধনীতে
“তারাবী”শব্দটি জোরপূর্বক অনুবাদ এবং ছাপানো হয়েছে। এ জালিয়াতি আপনার নিকট স্পষ্ট হয়ে যাবে যখন আপনি একই হাদীস গ্রন্থের ১ম খন্ডের “সালাতুল তাহাজ্জুত”অধ্যায়ে (৬৮৫, ৬৮৭ এবং ১০৫৮নং) হদীস তিনটির প্রতি দৃষ্টিপাত করবেন।ব্রাকেট বন্ধনীতে “তারবী”শব্দটি “তাহাজ্জুত”-এ রুপান্তর হয়ে যাবে। প্রমান দেখুন . . .
* (১৮৬৮নং) হাদীসে হযরত ওমর ফারুক (রা.)-ই বলছেন যে, ইহা একটি উত্তম বেদঅত। আর ইসলামে বেদ’আত-এর অনুপ্রবেশ এবং চর্চা যে কি ভয়াবহ তা নিম্নের হাদীসগুলি প্রমান হিসাবে যথেষ্ট :-
ক. রাসূল (সা.) বলেন : “যে ব্যক্তি আমাদের এ
(দিনের) কাজে এমন কিছু উদ্ভাবন করবে যা তাতে ছিল না, তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।”[সহীহ মুসীলম,হাদীস নং-১৭১৮]
খ. রাসূল (সা.) বলেন : “প্রতিটি নবাবিষ্কৃত
ইবাদাতই বিদ’আত, আর প্রতিটি বিদ’আতই হলো ভ্রান্ত পথভ্রষ্টতা।” [সহীহ আবু দাউদ, আত্-তিরমিযী ও ইবনু মাজাহ্]
গ. রাসূল (সা.) বলেন : “সব গোমরাহীই
জাহান্নামের পথে।”[সহীহ নাসায়ী]
উল্লেখিত হাদীসে “বিদ’আত”-কে রাসূল (সা.)
গোমরাহ বা জাহান্নামী বলেছেন, ‘উত্তম’বা ‘অধম’বেদ’আত নিদৃষ্ট করেন নাই। আসুন সর্বশেষে পথভ্রষ্টতার বিষয়ে আল্লাহর সিদ্ধান্ত কি জেনে নেই।
ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻟِﻤُﺆْﻣِﻦٍ ﻭَﻻَ ﻣُﺆْﻣِﻨَﺔٍ ﺇِﺫَﺍ ﻗَﻀَﻰ ﭐﻟﻠَّﻪُ ﻭَﺭَﺳُﻮﻟُﻪُ
ﺃَﻣْﺮﺍً ﺃَﻥ ﻳَﻜُﻮﻥَ ﻟَﻬُﻢُ ﭐﻟْﺨِﻴَﺮَﺓُ ﻣِﻦْ ﺃَﻣْﺮِﻫِﻢْ ﻭَﻣَﻦ ﻳَﻌْﺺِ ﭐﻟﻠَّﻪَ
ﻭَﺭَﺳُﻮﻟَﻪُ ﻓَﻘَﺪْ ﺿَﻞَّ ﺿَﻼَﻻً রআ“
ﻣُّﺒِﻴﻨﺎً আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন
মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্য নিজদের ব্যাপারে অন্য
কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর
আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই
পথভ্রষ্ট হবে।”[সূরা আহযাব, আয়াত-৩৬]
ইহা যখন বিদআত তাহলে সবাই মিলে বন্ধ করা হয়না কেনো?
সত্য উপলব্ধি করতে পেরেছেন এটাই সার্থকতা!!!