ইমাম হুসাইন (আ.)’র কবরের প্রথম জিয়ারতকারী কে ছিলেন?
উত্তর: বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)’র বিখ্যাত সাহাবি হযরত জাবের বিন আবদুল্লাহ আনসারি (রা.) ও আতিয়ে কুফি ছিলেন ইমাম হুসাইন (আ.)’র কবরের প্রথম জিয়ারতকারী। জাবের (রা.) সে সময় ছিলেন অতি বৃদ্ধ এবং দৃষ্টি-শক্তিহীন।
জাবের যখন কারবালায় পৌঁছে ফুরাতের পানিতে গোসল করলেন এবং লম্বা পোশাক পরে গায়ে সুগন্ধি মাখেন। এরপর প্রতি পদক্ষেপে মহান আল্লাহর জিকির করতে করতে ইমাম হুসাইন (আ.)’র পবিত্র কবরের পাশে পৌঁছেন। তিনি সঙ্গী আতিয়েকে বললেন, আমার হাত হুসাইনের কবরের ওপর রাখ। আতিয়ে তা করার পরই তিনি বেহুঁশ হয়ে পড়েন। আতিয়ে জাবের (রা.)’র মাথায় পানির ছিটা দেয়ার পর তাঁর হুঁশ ফিরে আসে। হুঁশ ফেরার পর তিনি তিন বার দুঃখ-ভারাক্রান্ত কণ্ঠে বললেন: হুসাইন! হুসাইন! হুসাইন!
এরপর বললেন: কেন জবাব দিচ্ছ না? তিনি আরো (আ.) বলেন: যে হুসাইন নিজের রক্তে রঞ্জিত এবং যার দেহ ও মাথা বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে তার কাছ থেকে জবাব আশা করছি।
এরপর জাবের ইমাম হুসাইনকে উদ্দেশ করে বলেন: ” আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তুমি শ্রেষ্ঠ নবীগণের সন্তান ও মহান বিশ্বাসী বা মু’মিনদের সন্তান। তুমি হেদায়াত ও খোদাভীতির পথিকৃতের সন্তান। তুমি কাসা ও আবার তথা রাসূল (সা.)’র চাদর এবং আলখাল্লার নীচে স্থান পাওয়া ৫ সদস্যের মধ্যে পঞ্চম। তুমি মহান আমিরুল মু’মিনিনের এবং ফাতিমা জাহরা (সা.)’র সন্তান। আর কেনই বা এমনটি হবে না, কারণ, রাসূলগণের সর্দার সাইয়্যেদুল মুরসালিন নিজ হাতে তোমাকে খাবার খাইয়েছেন এবং তুমি পরহিজগারদের কোলে বড় হয়েছ। মু’মিনের বুকের দুধ পান করেছ ও পবিত্র জীবন যাপন করেছ এবং পবিত্র থেকেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছ; আর মুমিনদের হৃদয়গুলোকে তোমার বিচ্ছিন্নতার মাধ্যমে শোকাহত করেছ। তাই তোমার প্রতি সালাম এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি তোমার ওপর বর্ষিত হোক। তুমি সে পথেই গিয়েছ যে পথে গিয়ে তোমার ভাই হযরত জাকারিয়া ইবনে ইয়াহিয়া নবী (আ.) শহীদ হয়েছিলেন।”
এরপর রাসূল (সা.)’র সাহাবি হযরত জাবের (রা.) বলেন:
”সালাম তোমাদের আত্মার প্রতি যারা হুসাইনের পাশে (শহীদ হয়ে) সমাহিত হয়েছ! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে তোমরা নামাজ কায়েম করেছিলে ও জাকাত আদায় করেছিলে এবং সত কাজের আদেশ দিতে ও অসত কাজে নিষেধ করতে। তোমরা কাফিরদের সঙ্গে জিহাদ করেছিলে এবং আমৃত্যু খোদার ইবাদত করে গেছ।
তিনি আরো বলেন: আমি সেই আল্লাহর কসম দিচ্ছি যিনি রাসূল(সা.)-কে ন্যায্যত রাসূল হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন, তোমরা শহীদরা যে কষ্ট ও মুসিবতের শিকার হয়েছ আমরা তার শরিক।
এ সময় আতিয়ে বলেন, আমি হযরত জাবেরকে বললাম: আমরা তো কিছুই করিনি ইমামের সাহায্যের জন্য, আমরা ঘরে বসেছিলাম আর তাঁরা তথা ইমাম ও তাঁর সঙ্গীরা শত্রুদের তিরের মোকাবেলা করেছেন।
জাবের বললেন: হে আতিয়ে! যে কেউ কোনো দলের কাউকে ভালবাসে, সে তাদের সঙ্গের লোক হিসেবে বিবেচিত হয়। যে কোনো একটি দলের কাজকে পছন্দ করে সে তাদের সেই কাজে শরিক ছিল বলে ধরা হয়।”
ইসলামী বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম হুসাইন (আ.)’র কর্তিত শির মুবারক তাঁর শাহাদতের পর চল্লিশতম দিনে সিরিয়া থেকে কারবালায় ফিরিয়ে আনা হয় এবং তা ইমামের পবিত্র শরীরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়। ইমাম জয়নুল আবেদিন অলৌকিকভাবে কুফার কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে ইমাম হুসাইন (আ.)সহ কারবালার অন্যান্য শহীদদের লাশ দাফন করেছিলেন। অবশ্য কোনো কোনো বর্ণনামতে, বনি আসাদ গোত্রের লোকেরা পাশের গ্রাম থেকে এসে জানাজা ও দাফন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছিল। তবে আগের বর্ণনার তুলনায় এই বর্ণনাটি অপেক্ষাকৃত দুর্বল।