বিশ্বাসীদের বল তাদের দৃষ্টি আনত করতে এবং বিনীত হতে… এবং বিশ্বাসী নারীদেরকে তাদের দৃষ্টি অবনত করতে ও বিনয়ী হতে বল এবং সুন্দর অঙ্গের ততটুকু প্রদর্শন করতে বল যতটুকু দৃশ্যমান।…’ (সূরা নূর : ৩০-৩১)
পর্দা এমন জিনিস নয় যা বিশেষ বয়স ও বিশেষ অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পালন করতে হবে এবং এটা এমন বিষয়ও নয় যে, হঠাৎ করে সাবালেগা অবস্থায় চাপিয়ে দেওয়া হবে। শৈশব থেকেই ধীরে ধীরে ইসলামের পর্দা ব্যবস্থার ও বিনম্র আচরণের শিক্ষা শুরু করতে হবে।
ছোট শিশুরাও নিজেদের এবং অপরের পোশাক-আশাকের প্রতি লক্ষ্য করে থাকে। পোশাকাদি ছেঁড়া ও ময়লা হলে শিশুরা সেটা লক্ষ্য করে এবং পোশাকের রং বা ধরন আকর্ষণীয় কিনা এটা লক্ষ্য করতেও তারা ভুলে যায় না। তারা এবং অন্যরা যখন বিনম্র পোশাক পরিধান করে না সেটাও তাদের অন্তরে দাগ কাটে। উদাহরণস্বরূপ উল্লেখ করা যায় যে, এক উঠতি বয়সের বাচ্চা যদি বিজ্ঞাপনে বা টেলিভিশনে আঁটসাট পোশাক পরিহিতা মহিলার ছবি দেখে নিজের পিতামাতাকে আংশিক অনাচ্ছাদিত বস্ত্রে দেখে তখন সে অনেক ক্ষেত্রেই হতবুদ্ধি হয়ে যায়। বালক-বালিকা সবাই অভব্যতা লক্ষ্য করে।
ইসলামি সমাজে লালিত-পালিত শিশুরা বিনম্র পোশাককে গ্রহণ করে জীবনের এক চরম বাস্তবতা হিসেবে। এ ধরনের পরিবেশে যেখানে অধিকাংশ মহিলারা পর্দা পালন করেন সে পরিবেশে গড়ে ওঠা যুবতী মেয়েরা তাদের সে আদর্শ অনুকরণ করতে গিয়ে নিজেদের জন্য আবরণী বস্ত্র দাবি করে।
সকলেই অবশ্য ইসলামি পরিবেশ বসবাস করে না, তাই মুসলমান হিসেবে এটা পিতামাতারই দায়িত্ব যে, তাদের বাচ্চাদের ইসলামি পরিবেশে মানুষ করা। যতদূর সম্ভব অল্প বয়স থেকেই বাচ্চাদেরকে মুসলমান হিসেবে তাদের ভবিষ্যৎ ভূমিকা সম্বন্ধে জ্ঞান দিতে হবে। ইসলামের ভদ্রোচিত পোশাকের ব্যাপারে তাদের উৎসাহিত করতে হবে, শিখাতে হবে এর প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে।
অধুনা অ-ইসলামি সমাজে যুবতী মেয়েদের উৎসাহিত করা হয় যৌন উদ্দীপক পোশাকাদি ব্যবহারের জন্য, যা নৈতিকতাবিরোধী মূল্যবোধের জন্ম দেয়। এ সকল বালিকা শেষাবধি করুণ ঘটনারাজির শিকারে পরিণত হয়। বলাৎকার, ধর্ষণ, জারজ সন্তান এবং গর্ভপাত হচ্ছে অসংখ্যের মধ্যে গুটিকয়েক নির্মম করুণ ফল যেগুলো একটি সুষ্ঠু সুন্দর নৈতিক পরেবেশ হলে এড়ানো যেত।
আপনার সন্তানের জন্যও কেবল পোশাক সংক্রান্ত ব্যাপারেই নয়- আচার-ব্যবহারের ব্যাপারেও বিনম্রতা শিক্ষা এবং পর্দা পালনে অভ্যস্ত করার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এ প্রসঙ্গে সর্বোত্তম উদাহরণ হচ্ছে পিতা-মাতা। যদি শিশুর পিতা অথবা মাতা নৈতিকতাবিরোধী কাজ করেন, যেমন ধরুন পর্দা পালন না করেন, মদপান করেন কিংবা বাচ্চাদের সম্মুখে বাছ-বিচারহীনভাবে ছায়াছবি দেখেন তখন তাঁরা বাচ্চাদের কাছ থেকে সুনৈতিকতাসম্পন্ন আচরণ আশা করতে পারেন না। সন্তানরা তাঁদের পিতামাতার কর্মময় জীবনের আদর্শ অনুকরণ করে, তাদের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আদর্শ হচ্ছে পিতা-মাতা।
বিপরীত পক্ষে পিতা-মাতা যদি বাস্তব জীবনের কর্মকাণ্ডে নিষ্ঠার পরিচয় দেন, সৎ এবং সম্মানজনক জীবন-যাপন করেন, তাঁদের সন্তানরাও তখন তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে। এটা সত্য যে, যেহেতু বাচ্চারা অনুকরণপ্রিয় তাই তাঁদের কর্মকাণ্ড যদি সততা ও নিষ্ঠাপূর্ণ হয় তবে তারা বিশেষ করে তাদের পিতা-মাতাদের অনুকরণ করবে। মুসলমানদের সন্তানদেরকে আত্মমর্যাদাবোধে উদ্বুদ্ধ করতে হবে, তাদের গর্বিত হতে হবে মুসলমান হিসেবে। তারা যেহেতু অবিশ্বাসী ও শিষ্টাচারবিরোধীদের হতে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, এজন্য তারা সম্মানিত। গৌরব ও মর্যাদাবোধ পিতামাতার মাধ্যমেই উদাহরণ হিসেবে তাদের মধ্যে অঙ্কুরিত ও বিকশিত হতে হবে।
সন্তানদের মধ্যে পর্দার ধারণা অতি শৈশবেই সৃষ্টি করতে হবে এবং সাবলগত্বে পৌঁছার পূর্বেই তাতে অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। আজকের শিশুরাই ভবিষ্যতের বংশধর যারা দায়িত্বশীল বয়ঃপ্রাপ্ত নাগরিকে পরিণত হবে। বাচ্চাদের যদি বিনম্রতা ও পবিত্রতা শিক্ষা দেওয়া হয় তবেই ভবিষ্যৎ সমাজের নৈতিকতা নিশ্চিত হবে।
‘অবশ্য আত্মসমর্পণকারী পুরুষ ও আত্মসমর্পণকারী নারী, মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী, অনুগত পুরুষ ও সত্যবাদী নারী, ধৈর্যশীল পুরুষ ও ধৈর্যশীল নারী, বিনীত পুরুষ ও বিনীত নারী, দানশীল পুরুষ ও দানশীল নারী, রোযা পালনকারী পুরুষ ও রোযা পালনকারী নারী, যৌন অঙ্গ হিফাযতকারী পুরুষ ও যৌন অংগ হিফাযতকারী নারী, আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী- এদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও প্রতিদান।’ (সূরা আহযাব : ৩৫)
(নিউজলেটার, জানুয়ারি ১৯৮৬)